আপনি কি পাসপোর্ট করার নিয়ম ও পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের এই ব্লগপোষ্টটি আপনার জন্য। আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা বিদেশে কাজে কিংবা ভ্রমনে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের হয়তো জানা নেই যে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে। মূলত তাদের সুবিধার কথা ভেবে এই বিষয়ে আলোচনা করব।
আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে জেনে নেয়ার পাশাপাশি পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে, পাসপোর্ট এর ধরন সমূহ, শিশুদের ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে,সরকারি চাকরিজীবীদের ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে, হারানো পাসপোর্ট পেতে কি কি লাগে ইত্যাদি বিষয়ে একটি ক্লিয়ার ধারনা জানতে পারবেন। তো কথা না বাড়িয়ে প্রথমে পাসপোর্ট এর ধরন সমূহ জেনে নেই।
পাসপোর্ট কি
পাসপোর্ট হলো একটি আইডেন্টিটি ডকুমেন্ট যা কোনও দেশের নাগরিকদের বিদেশে ভ্রমণের সময় সনদপত্র হিসেবে ব্যবহার হয়। এটি দেশের সম্প্রতি ব্যবহৃত পাসপোর্ট অথবা যাত্রা দলের সদস্যের স্বাক্ষর, ছবি, নাম, জাতীয়তা, জন্মতারিখ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য সহ থাকে।
পাসপোর্টে আছে একটি আইডেন্টিটি নম্বর এবং এটি দেশের সম্প্রতি পাসপোর্ট প্রদান করার অধিকারী প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রতীত করার জন্য নির্ধারিত মেয়াদ। পাসপোর্ট ধারকদের কাছে এই দলিল দেয় যে তারা কোনও দেশে আপনার প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার অধিকারী হয়। যাত্রার সময় পাসপোর্ট দরকার হয় কারণ এটি যাত্রীর পরিচয় প্রমাণ করে এবং দেশে অবৈধ প্রবেশের প্রতিরোধ করে।
পাসপোর্ট প্রকারভেদ
পাসপোর্টের প্রকারভেদ দেশ থেকে দেশে ভিন্নতা দেখাতে পারে। তবে প্রকারভেদ নিম্নরূপ হতে পারে:
রেজুলার পাসপোর্ট: এটি সাধারণত যাত্রা এবং পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত প্রতি দেশের নাগরিকদের জন্য প্রদান করা হয়।
অফিশিয়াল পাসপোর্ট: এটি সরকারি কর্মকর্তাদের এবং সরকারি নির্দেশনালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য প্রদান করা হয়। এটি সরকারি বিষয়বস্তু বন্ধুত্ব ও পরিবেশ তত্ত্বের সম্পর্কে যাত্রা করতে ব্যবহৃত হয়।
ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট: এটি দূতাবাসে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের পরিবারের জন্য প্রদান করা হয়। এটি সরকারি ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্যিক ও আর্থিক কাজে যাত্রা করতে ব্যবহৃত হয়।
সার্ভিস পাসপোর্ট: এটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যাত্রার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন কার্যক্রম, মিশন বা সেবা সংশ্লিষ্ট কাজে যাত্রা করতে ব্যবহৃত হয়।
প্রতিটি পাসপোর্ট প্রকারভেদে আপনার প্রবেশের অধিকার এবং যাত্রার ধরন সম্পর্কে বিশেষ নিয়মাবলী আছে যা প্রযোজ্য হতে পারে। পাসপোর্ট প্রকারভেদ ও নিয়মাবলী প্রতিটি দেশের নিয়ামক প্রাধিকার বা পাসপোর্ট অফিস দ্বারা নির্ধারণ করা হয়।
পাসপোর্ট করার নিয়ম
পাসপোর্ট আবেদন পত্র প্রাপ্ত করতে পারেন বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে বা ফিজিক্যালি যে কোনও পাসপোর্ট অফিস থেকে। আবেদন পত্রটি অনলাইনে ডাউনলোড করতে নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- প্রথমে আপনাকে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে এরপর আবেদন পত্র অপশনে ক্লিক করে প্রবেশ করতে হবে।
- তারপর আবেদন পত্র ডাউনলোড লিঙ্ক খুঁজে বের করে সেটি ডাউনলোড করতে হবে। আপনি চাইলে সরাসরি এই লিঙ্ক ব্যবহার করতে পারেন: [পাসপোর্ট আবেদনপত্র ডাউনলোড]
- সেখানে অ্যাপ্লাই অনলাইন ফর ই-পাসপোর্ট/রি-ইস্যু অপশনে ক্লিক করলে আপনাকে সরাসরি আবেদন প্রক্রিয়াতে নিয়ে যাবে। সেখানে আপনাকে আবেদনের পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
- প্রথম ধাপে বর্তমান শহরের নাম ও থানার নাম সিলেক্ট করতে হবে।
- পরের ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে মূল ফরমটি ভালোভাবে পূরণ করে সাবমিট করতে হবে।
- তৃতীয় ধাপে মেয়াদ ও পাসপোর্টের পেইজের সংখ্যা মোতাবেক ফি জমা দিতে হবে। সব কাজ শেষ করা হয়ে গেলে আপনাকে ‘ফাইনাল সাবমিট’ অপশনে ক্লিক করে দিতে হবে। তখন আপনার সমস্ত তথ্য পাসপোর্টের কার্যালয় চলে যাবে।
- আপনার পাসপোর্ট হয়ে গেলে তারা মেসেজ করে জানিয়ে দিবে। তাদের মেসেজ পাওয়ার পরে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার পাসপোর্ট নিয়ে চলে আসবেন।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
এছাড়াও অতিরিক্ত সার্ভিস ফি প্রদান করতে হতে পারে, যেমন পাসপোর্ট সংশোধন, ত্তম পাসপোর্ট জমা, দ্রুত পাসপোর্ট প্রদান ইত্যাদি। এই ফির পরিমাণ সংশ্লিষ্ট সার্ভিসের প্রকার এবং জরুরি কেসে পরিবর্তিত হতে পারে। পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে তা বিভিন্ন মেয়াদ এবং পেইজ এর উপর নির্ভর করবে।
৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পেইজ
- রেগুলার ফি ৪০২৫ টাকা,
- জরুরী ফি ৬৩২৫ টাক
- অতিব জরুরী ফি ৮৬২৫ টাকা।
৫ বছর মেয়াদি ৬৪ পেইজ
- রেগুলার ফি ৬৩২৫ টাকা,
- জরুরী ফি ৮৬২৫ টাকা
- অতিব জরুরী ফি ১২০৭৫ টাকা।
১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পেইজ
- রেগুলার ফি ৫৭৫০ টাকা,
- জরুরী ফি ৮০৫০ টাকা
- অতিব জরুরী ফি ১০৩৫০ টাকা।
১০ বছর মেয়াদি ৬৪ পেইজ
- রেগুলার ফি ৮০৫০ টাকা,
- জরুরী ফি ১০৩৫০ টাকা
- অতিব জরুরী ফি ১৩৮০০ টাকা।
তাহলে আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে যে পাসপোর্ট করতে মেয়াদ এবং পেইজ এর উপর নির্ভর করে কত টাকা লাগে তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, আবেদনপত্র পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া নিয়ম জেনে নেওয়া যাক।
আবেদনপত্র পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া নিয়ম
পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়ার জন্য আপনার পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি আবেদন ফরমটি জমা দিতে পারেন:
১. আবেদন ফরম ডাউনলোড করুন: পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফরম ডাউনলোড করতে পারেন। আপনি সরাসরি এই লিঙ্ক ব্যবহার করতে পারেন: [পাসপোর্ট আবেদনপত্র ডাউনলোড]
২. আবেদন ফরম সম্পূরণ করুন: ডাউনলোড করা ফরমটিতে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন। তথ্যের মধ্যে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, পরিবারের তথ্য, ঠিকানা ইত্যাদি থাকবে। আপনার সঠিক নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ইত্যাদি নির্দিষ্টভাবে লিখুন। যদি কোনও তথ্য পরিবর্তন হয়ে যায়, তবে সরাসরি নতুন তথ্য সংশোধন করুন।
৩. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলি সংযুক্ত করুন: আবেদন ফরম সংযুক্ত করার সময়, আপনাকে পাসপোর্ট অফিসের নির্দিষ্ট দফা সাথে যেকোনও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংযুক্ত করতে হবে। সাধারণত নিম্নলিখিত ডকুমেন্টগুলি প্রয়োজন হতে পারে:
- জন্মনিবন্ধন সনদ (মূল এবং স্বাক্ষরিত অনুলিপি)
- জাতীয় পরিচয়পত্র (মূল এবং স্বাক্ষরিত অনুলিপি)
- বৈবাহিক সনদ (যদি প্রয়োজন হয়)
- সনাক্তকরণ চিঠি (বাংলাদেশে থাকার ক্ষেত্রে)
৪. আবেদনপত্র জমা দিন: সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা এবং সংযুক্ত ডকুমেন্টগুলি সহ আবেদনপত্রটি অফিসে জমা দিন। যেখানে আপনাকে একটি পাসপোর্ট ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া হবে। ইন্টারভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর, আপনি আপনার পাসপোর্ট সঠিক সময়ে পেতে পারেন।
পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন
পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন হলো পাসপোর্ট আবেদনকারীর ব্যক্তিগত ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্যের যাচাই করার পদ্ধতি। এটি পাসপোর্ট ইস্যু করার আগে পাসপোর্ট অফিস দ্বারা প্রয়োজনীয় ধাপ হিসাবে অবলম্বন করা হয়। পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আপনার নিম্নলিখিত কাগজপত্রগুলি প্রয়োজন হতে পারে তা নিম্নে দেয়া হলঃ
- আবেদনপত্রের স্বাক্ষরিত কপি সংযুক্ত করতে হবে।
- আবেদনকারীর নিজস্ব সঠিক পাসপোর্ট সাইজের একটি ছবি সংযুক্ত করতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ, বৈবাহিক সনদ (যদি থাকে) এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিদ্যুৎ/গ্যাস বিল, টেলিফোন বিল ইত্যাদি সংযুক্ত করতে হবে।
- প্রয়োজনে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ সংযুক্ত করতে হবে।
পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনের পরে, পাসপোর্ট অফিস আপনার আবেদনপত্র এবং সংযুক্ত কাগজপত্রগুলি যাচাই করবে এবং আবেদন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবেন। ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ হওয়ার পরে, পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়ে যাবে।
পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে লেখকের মতামত
আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা পাসপোর্ট করার নিয়ম, পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে, আবেদনপত্র পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া নিয়ম, পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং পাসপোর্ট এর স্ট্যাটাস চেক সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।
তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি এই পর্যন্তই। আবারও আপনাদের সাথে নতুন কোন তথ্য নিয়ে অবশ্যই হাজির হবো। বিভিন্ন তথ্যবহুল সম্পর্কিত অন্যেন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করার অনুরোধ রইল।