আপনি কি পাসপোর্ট করার নিয়ম ও পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের এই ব্লগপোষ্টটি আপনার জন্য। আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা বিদেশে কাজে কিংবা ভ্রমনে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের হয়তো জানা নেই যে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে। মূলততাদের সুবিধার কথা ভেবে এই বিষয়ে আলোচনা করব।
আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে জেনে নেয়ার পাশাপাশি পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে, পাসপোর্ট এর ধরন সমূহ, শিশুদের ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে,সরকারি চাকরিজীবীদের ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে, হারানো পাসপোর্ট পেতে কি কি লাগে ইত্যাদি বিষয়ে একটি ক্লিয়ার ধারনা জানতে পারবেন। তো কথা না বাড়িয়ে প্রথমে পাসপোর্ট এর ধরন সমূহ জেনে নেই।
পাসপোর্ট এর ধরন সমূহ
বাংলাদেশের তিন ধরনের পাসপোর্ট তৈরি হয়। যথাঃ
- শিশুদের পাসপোর্ট।
- প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট।
- সরকারি কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট।
বয়স হিসাবে আবেদনকারীর পাসপোর্ট এর ধরন আলদা আলাদা হয়ে থাকে। প্রতিটা ক্ষেত্রে নতিপত্র একই থাকলেও সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে একটু বেশী ডকুমেন্টস হিসাবে NOC ও GO প্রয়োজন হয়।
ই পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগে
আগে MRP পাসপোর্ট প্রক্রিয়া চালু ছিল। তখন পাসপোর্ট করতে যে সকল কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়তো বর্তমানে ই পাসপোর্ট চালু হওয়ার পর কিছু কাগজপত্রের পরিবর্তনে এসেছে। ই পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগে তা নিচে উল্লেখ করে দেয়া হলঃ
- জাতীয় পরিচয় পত্র (NID Card)
- ই পাসপোর্ট আবেদনের সামারি (Application Summary)
- পাসপোর্ট আবেদনের ফরম (Application Form)
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান/ ব্যাংক ড্রাফট কপি
- নাগরিকত্ব সনদ/ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট
- পেশাগত সনদের ফটোকপি
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ক্ষেত্রে ইউটিলিটি বিলের কপি লাগবে (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি)।
এই নতিপত্র ছাড়াও বয়স ভেদে পাসপোর্ট এর জন্য প্রয়োজনীয় নতিপত্র আলাদা হয়ে থাকে। যেমন সরকারি চাকরিজীবী এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ই পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সম্পর্কে নিচের অংশে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
শিশুদের ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
শিশুদের যেহেতু জাতীয় পরিচয় পত্র থাকে না যার ফলে তাদের ই পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে অনলাইন বার্থ সার্টিফিকেট এবং এর পাশাপাশি তার বাবা-মায়ের ভোটার আইডি কার্ড এর কপি অবশ্যই সংযুক্ত করে দিতে হবে। মানেই এইটা একেবারে বাধ্যতামূলক। কারণ পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি সংযুক্ত করার ফলে শিশুদের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সঠিকভাবে বিবেচিত হবে। ই পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে শিশুদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো নিচে দেওয়া হল-
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পিতা-মাতার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি
- অ্যাপ্লিকেশন সামারি
- আবেদনের কপি
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের A Challan কপি
- এক কপি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের (3R সাইজ) প্রিন্ট কালার ছবি
- পিতা মাতার ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
সরকারি চাকরিজীবীদের ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
একজন সাধারণ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ই পাসপোর্ট করতে যেগুলো ডকুমেন্টস প্রয়োজন। সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রেও ই পাসপোর্ট করতে একই ডকুমেন্টস প্রয়োজন এবং সাথে আরো কিছু অতিরিক্ত ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হয়। নিচে যারা সরকারি চাকরিজীবী তদের ই পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে তা উল্লেখ করা দেয়া হলো-
- জাতীয় পরিচয় পত্র (NID Card)
- ই পাসপোর্ট আবেদনের সামারি (Application Summary)
- পাসপোর্ট আবেদনের ফরম (Application Form)
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান/ ব্যাংক ড্রাফট কপি
- নাগরিকত্ব সনদ/ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট
- পেশাগত সনদের ফটোকপি
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ক্ষেত্রে ইউটিলিটি বিলের কপি লাগবে (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি)।
সাধারণ মানুষের তুলনায় সরকারি কর্মকর্তাদের যেগুলো নতিপত্র লাগবে তা নিচে দেয়া হলঃ
NOC (No Objection Certificate): যারা সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন তাদের যদি একান্তই নিজের দরকারে পাসপোর্ট করতে করতে হয়। তাহলে এক্ষেত্রে তার কর্মস্থলের মন্ত্রণালয় বিভাগ হতে তাকে অনাপত্তি সনদপত্র নিয়ে পাসপোর্ট আবেদনে সাথে কানেক্টেড করতে হবে।
GO (Government Order): সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি কাজে বিদেশে যাওয়ার দরকার পরলে তাকে আবেদন ক্রয়ার সময় সরকারি আদেশপত্র জমা দিতে হবে।
পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে
অনেকে হয়তো জানেন না পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে এই কারণে অনেকে দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকে। আজ আপনাদের জানাতে চলেছি পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে বা কতদিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায় পাসপোর্ট ইস্যুর প্রক্রিয়া আপনার আবেদনের পরে শুরু হয়।
সাধারণত পাসপোর্ট ইস্যু করা হয় ৪ – ৬ সপ্তাহের মধ্যে। এটি আপনার আবেদনের সময়সূচি, পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম এবং অন্যান্য পরিস্থিতিতে ভিন্ন হতে পারে। পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে তা নির্ধারিত নয়, বিশেষ কারণে কিছুটা কম অথবা বেশি সময় লাগতে পারে।
যেমন হাজীরা মুসাফিরের সংখ্যা বেশি থাকলে বা কোনও পাসপোর্ট অফিসে অস্থায়ী সমস্যা বা অন্যান্য জরুরী পরিস্থিতি হয়ে উঠলে। পাসপোর্ট অফিসের নিকটবর্তী যোগাযোগ করে আপনি আপনার পাসপোর্ট এর বর্তমান স্ট্যাটাস জানতে পারেন এবং তারা কখন আপনার পাসপোর্ট তৈরি করা হবে সে সম্পর্কে আপডেট পাওয়া যাবে।
পাসপোর্ট ইস্যুর সময়সূচি একটি প্রক্রিয়ার সারিগ্রাহী অংশের মাধ্যমে কার্যকর হয়। এই প্রক্রিয়াটি পাসপোর্ট অফিসের নীতিমালার অধীনে চালিত হয় এবং সাধারণত একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। নিম্নলিখিত ধাপসমূহ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:
১. আবেদন জমা দেওয়া: পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য প্রথমে আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদন ফরম সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলি সংগ্রহ করে সঙ্গে নিতে হবে।
২. ডকুমেন্ট যাচাই ও ভেরিফিকেশন: আপনার জমাদান করা আবেদন ও ডকুমেন্টগুলি পাসপোর্ট অফিস দ্বারা যাচাই ও ভেরিফিকেশন করা হবে। আপনার ওয়েলফেয়ার প্রস্তাবনা এবং আবেদনপত্রে প্রদত্ত সমস্ত তথ্যগুলি পরীক্ষা করা হবে।
৩. ছবি নির্বাচন ও প্রয়োগ: আপনার সঠিক ছবি নির্বাচন করা হবে এবং আপনার আবেদনের জন্য প্রয়োগ করা হবে। ছবিতে আপনার মুখ পর্যালোচনা করা হবে এবং নির্দিষ্ট নির্দেশনাবলী অনুসারে ছবি তৈরি করা হবে।
৪. আবেদনের প্রক্রিয়ায় জরুরী তথ্য যাচাই: আবেদনের প্রক্রিয়ায় আপনার জরুরী তথ্য যাচাই করা হবে। তথ্য সঠিকতা ও যাচাইযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তথ্য পরীক্ষা করা হয়।
৫. পাসপোর্ট তৈরি: যদি সমস্ত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়, তবে আপনার পাসপোর্ট তৈরি করা হয়। পাসপোর্ট তৈরির পর তা আপনাকে সুপারিশকৃত পাসপোর্ট অফিসে ডেলিভারি করা হয়।
সাধারণত এই প্রক্রিয়া অন্তর্গত হওয়ার জন্য ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে সময় লাগে। তবে এটি ক্ষেত্রমত পরিবর্তিত হতে পারে এবং স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসের নীতিমালার উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে। আপনি পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করে আপনার আবেদনের বর্তমান স্থিতি এবং সময়সূচি জানতে পারেন। সুতরাং আমি হয়তো আপনাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে।
হারানো পাসপোর্ট পেতে কি কি লাগে?
আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যাদের পাসপোর্ট হারিয়ে যায়। এক্ষেত্রে তাদের করণীয় হচ্ছে স্থানীয় থানায়একটি জিডি করতে হবে। তারপরে থানার কাজ করা শেষে পাসপোর্ট এর তথ্য পেজের ফটোকপি, NID এবং জিডির কপি সহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কন্ট্যাক্ট করতে হবে। তারপর অফিস কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আপনাকে নতুন পাসপোর্ট প্রদান করবে।
পাসপোর্ট সম্পর্কে লেখকের মতামত
আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পারলেন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে, পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে,,হারানো পাসপোর্ট পেতে কি কি লাগে সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি এই পর্যন্তই। আবারও আপনাদের সাথে নতুন কোন তথ্য নিয়ে অবশ্যই হাজির হবো। বিভিন্ন তথ্যবহুল সম্পর্কিত অন্যেন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করার অনুরোধ রইল।