বর্তমান সময়ে এসে আমরা অধিকাংশ মানুষেরাই চাই স্মার্ট পদ্ধতিতে ইনকাম করতে। তেমনি একটি স্মার্ট ইনকামের পদ্ধতি হচ্ছে মূলত ট্রেডিং। আর এই ট্রেডিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের চাহিদা দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে। আমরা হয়তো অনেকেই জানি ট্রেডিং মানে ইন্টারনেট থেকে অর্থ উপার্জন জগতে একটি সুপরিচিত নাম। তাই হয়তো ট্রেডিং শব্দটার সাথে অপনারা কমবেশি সকলেই পরিচিত। এছাড়াও আপনারা হয়তো নিশ্চয় শুনেছেন যে ট্রেডিং করে অনলাইন থেকে আয় করা যায়।
কিন্তু ঠিক কোন কোনো ধাপ অবলম্বন করে কিংবা কোন উপায়ে ট্রেডিংয়ে আগানো উচিৎ? এই প্রশ্নটি আমাদের সকলের মনে জাগে, কি ঠিক তাই তো? ডিজিটাল যুগে এসে প্রায় সব মানুষ অনলাইন থেকে খুব সহজেই অর্থ উপার্জন করছে। আর অনলাইন জগতে আয় করার সেরা প্লাটফর্ম এর নাম ট্রেডিং। তাই আপনিও এই ট্রেডিং থেকে কীভাবে টাকা ইনকাম করবেন সেই প্রদ্ধতি এই ব্লগে জানতে পারবেন।
উপস্থাপনা
সত্যিকার অর্থে বলতে আগে বেচা কেনা করার জন্য মুদ্রার খুব একটা প্রচলিত ছিল না। একটি সেবার বিনিময়ে অন্য সেবা সহজেই পাওয়া যেত। কিন্তু যখন থেকে মুদ্রা কিংবা ধাতুর মুদ্রা বাজারে আসল তখন থেকেই মুদ্রার প্রচলিত দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। যেমন এখন একটি মুদ্রা রয়েছে যা সম্পূর্ণ আধুনিক মুদ্রা যা ক্রিপটোকারেন্সি নামে পরিচিত।
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ট্রেডিং করার জন্য শেখা শুরু করেন, কিন্তু কিছু দিন পর সঠিক উপায় বা মাধ্যম না পেয়ে, নানা রকম প্রশ্ন মাথায় নিয়ে চিন্তিত হয়ে যান। তারা এইটা ভেবে আশা হারিয়ে ফেলে যে আমি ট্রেডিং কিভাবে করব?
এজন্য মূলত আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই আমাদের আজকের এই লেখাটিতে আমরা ট্রেডিং কিভাবে করব এই সম্পর্কে আলোচনা করার পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে কি, ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয়, ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ, ট্রেডিং কি হালাল নাকি হারাম ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। তো চলুন আর দেরি না করে প্রথমে ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে কি তা জেনে নেওয়া থেকে শুরু করা যাক!
ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে কি
আমরা অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি বলতে অনলাইনে ইনকাম করার মাধ্যমকে বুঝি। কিন্তু আসলে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে কি? মূলত এটি একটি ব্যক্তিগত ডিজিটাল মুদ্রা। যা নতুন লেনদেনের উপায়। ‘ক্রিপ্টো (Crypto)’ শব্দের অর্থ গোপন (Secret) এবং “কারেন্সি (Currency)” শব্দের অর্থ যার বিনিময়ে পণ্যের আদান প্রদান করা হয়।
এটি একটি ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা হিসেবে পরিচিত, যা শক্তিশালী এক ধরণের ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি সরকার কিংবা কোন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর নিয়ন্ত্রণে নয়, বরং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিকেন্দ্রীকৃতভাবে পরিচালিত করা হয়। এর মাধ্যমে অনলাইনে বিভিন্ন সেবা ও পন্য কেনা-বেচা করা হয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও অন্যতম হচ্ছে বিটকয়েন। তবে ইথেরিয়াম, রিপলসহ আরও অনেক প্রকারের ক্রিপ্টোকারেন্সি কয়েন রয়েছে। এটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও, এর মূল্য ওঠানামা করে তাই এটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রেডিং কিভাবে করব
ট্রেডিং করে এখন অধিকাংশ মানুষ মাসে লক্ষাধিক অর্থ উপার্জন করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমি ট্রেডিং কিভাবে করব? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে ট্রেডিং শুরু করতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হবে। সেগুলি ধাপ নিম্নে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলোঃ
শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জন করা: ট্রেডিং শুরু করার আগে বাজারের বিশ্লেষণ কীভাবে করতে হয় তা ভালোমতো জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যেমন ফরেক্স, স্টক মার্কেট এবং অন্যান্য ট্রেডিং মার্কেট সম্পর্কে জানতে হবে। আপন চাইলে অনলাইন কোর্স এবং ইউটিউবে ভিডিও দেখে ট্রেডিংয়ের প্রাথমিক ধারণা নিতে পারেন।
বাজার এবং সম্পদ নির্বাচন করা: আপনি আসলে কোন মার্কেটে ট্রেডিং কাজ করে ইনকাম করতে চান তা ঠিক করতে হবে। এছাড়া, কোন মুদ্রায় ট্রেড করতে আগ্রহী বিভিন্ন মুদ্রা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
একটি ব্রোকার নির্বাচন করা: এরপর আপয়াঙ্কে বিশ্বস্ত একটি ব্রোকার প্ল্যাটফর্ম বেছে নিতে হবে যাতে আপনি সেই মাধ্যমে ট্রেডিং করতে পারেন। আন্তর্জাতিকভাবে এবং আমাদের বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ব্রোকার প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেমন মেটাট্রেডার, বিনান্স, eToro, ইত্যাদি।
ট্রেডিং কৌশল নির্ধারণ করা: এরপরে আপনার ট্রেডিং কৌশলকে ঠিক কতে হবে। আপনি দীর্ঘমেয়াদী, স্বল্পমেয়াদী, কিংবা প্যাসিভ বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে।
টাকা বিনিয়োগ করা: আপনি যখন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হবেন, ঠিক তখন আপনার ব্রোকার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে ট্রেডিং শুরু করতে হবে। প্রথমে বেশি বিনিয়োগ না করে কম বিনিয়োগ দিয়ে করে শুরু করুন।
বাজার পর্যবেক্ষণ করুন করা: তারপর আপনাকে নিয়মিত বাজারের অবস্থা বাজার পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেমন ট্রেডিং চার্ট, বাজারের খবর, এবং এছাড়াও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক। এতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অনেক সহজ হবে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করা: প্রতিটি ট্রেডের জন্য আপনাকে সঠিক প্রফিট টার্গেট ও স্টপ-লস সেট করতে হবে। ট্রেডিং করার সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয়
বর্তমান সময়ে খুব সহজেই টাকা ইনকামের জন্য ক্রিপ্টো কারেন্সি তে বিনিয়োগ করার মত সহজ মাধ্যম আর অন্য কোথাও নেই। এজন্য আমরা হয়তো অনেকেই খুব সহজেই টাকা ইনকাম করার জন্য ক্রিপ্টো কারেন্সিতে অনেক বিনিয়োগ করে ক্রিপ্টো কারেন্সি বেচাকেনা শুরু করে থাকি।
বিভিন্ন ট্রেডার রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের প্যাটার্ন সনাক্ত করে এবং মার্কেট এনালাইসিস করে খুব সহজে অনেক আয় করে। মূলত বিভিন্ন কারেন্সি ট্রেডিং এর মাধ্যমে ব্যবসা করে আর করাকে ক্রিপটো কারেন্সি ব্যবসা বলা হয়। বিটকয়েন ইথারিয়াম ছাড়াও আরও অনেক ধরনের ক্রিপ্টো কারেন্সি রয়েছে যা ক্রিপ্ট কারেন্সি ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা কেনা বেচা করা হয়।
তবে এখন অনেক ধরনের হ্যাকার বের রয়েছে যারা নানান উপায় অবলম্বন ব্যবহার করে অবৈধ কাজ সম্পন্ন করতেও এই ক্রিপ্টো কারেন্সিতে ট্রেডিং করে আয় করে থাকে। কারণ এই ক্রিপ্টোকারেন্সি তে যারা লেনদেন করে তাদের নিজের ব্যক্তিগত পরিচয় দিতে হয় না। অনেকেই ট্রেডিং করে এবং প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা ইনকাম করে থাকে। যা মূলত ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবসার মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ
আমাদের বাংলাদেশে ক্রিপটো কারেন্সি তে বিনিয়োগ করা একেবারেই অবৈধ। কিন্তু বিশ্বের অনেকগুলো দেশে এই কয়েনের বৈধতা রয়েছে। এজন্য বিনিয়োগকারা যারা প্রতিনিয়ত ক্রিপ্টো কারেন্সিতে বিনিয়োগ করে থাকেন তারা মূলত ক্রিপ্টো কারেন্সি ক্রয় করে নিজেদের কাছে স্টোর করে রেখে দেন।
তারপর পরবর্তীতে যখন এর মান এবং দাম বৃদ্ধি পেলে বেশি লাভের জন্য তারা সেই মার্কেটের দাম অনুযায়ী বিক্রি করা শুরু করেন। অনেকগুলো ক্রিপ্ট কারেন্সি রয়েছে তার মধ্যে বিটকয়েন লাইট কয়েন, ইতালিয়ান কয়েন ইত্যাদি। এগুলো কয়েন আপনি বিভিন্ন ধরনের প্লাটফর্ম থেকে ক্রয় করতে পারবেন।
তার মধ্যে অনেক জনপ্রিয় প্লাটফর্ম হচ্ছে ক্রিপটো কারেন্সি এক্সচেঞ্জ এবং ট্রাডিশনাল ব্রোকার। আপনি এগুলি প্লাটফর্ম থেকে এই কয়েন ক্রয় করে স্টোর করে রেখে দিতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন আপনাকে অনেক সিকিউর ভাবে স্টোর করে রাখতে হবে তা নাহলে হ্যাকারদের কবলে পরতে পারেন। এজন্য আপনাকে গোল্ড ওয়ালেট কিংবা হট ওয়ালেট ব্যবহার করতে হবে। যেগুলো আপনার ক্রিপটো কারেন্সির কয়েন গুলিকে নিরাপত্তা প্রদান করবে।
ট্রেডিং কি হালাল নাকি হারাম
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই মুসলমান। আর তাই আমাদের উচিত যেকোন কাজ করার আগে সেই কাজের হালাল এবং হারাম সম্পর্কে জেনে নেওয়া। ফরেক্স ট্রেডিং হচ্ছে মূলত নতুন একটি ব্যবসা তাই যারা ট্রেডিং নিয়ে জানেন তাদের মধ্যে এবং যারা জানেন না তাদের মধ্যেও একটি প্রশ্ন ঘুরপাক করতে পারে যে ট্রেডিং কি হালাল নাকি হারাম?
আপনাদের এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে মূলত এই ক্রিপ্টো কারেন্সি (cryptocurrency) হলো এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা যা কোন ধরনের সরকার কিংবা রাষ্ট্র থেকে উৎপাদিত নয়। এই কয়েন নানান ধরনের ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং জটিল এলগরিদম দিয়ে সম্পন্ন করে তৈরি হয়।
এজন্য ক্রিপ্টো কারেন্সির যেগুলো বিটকয়েন রয়েছে সেগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে একেবারেই হারাম। ইসলামিক পরিভাষায় বলা হয়েছে যে কোন ধরনের গায়িক শ্রম না করে এবং ঘাম ঝরানো ব্যতিত সকল ধরণের উপার্জিত অর্থ কিংবা অতিরিক্ত অর্থ সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ।
ক্রিপ্টোকারেন্সি আইন বাংলাদেশ
কোনো ভার্চুয়াল মুদ্রা বলেন আর ক্রিপ্টোকারেন্সি বলেন না কেন কোনটাই বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত নয়। অনুমোদিত নেই এমন মুদ্রায় লেনদেন করলে, আইনগত সমস্যায় পড়ার পাশাপাশি আপনাকে আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে হতে পারে। ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট (Foreign Exchange Regulation Act) এর আওতায় অনুমোদিত মুদ্রায় লেনদেনের যে বিধান বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোনো ধরণের ভার্চুয়াল সম্পদ কিংবা মুদ্রার স্থানান্তর, বিনিময় বা ট্রেডে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক কখনই অনুমোদন দেয়া হয়নি বা এর কোন ধরণের অনুমোদন নেই। ধরনের লেনদেন করে নির্দেশনা অমান্য করলে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এই নির্দেশনা অমান্য করার অপরাধের শাস্তি হতে পারে ৭ বছরের জেল কিংবা আর্থিক জরিমানা অথবা সেই ব্যক্তি উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে এমন বিধান করা রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে সারা বিশ্বজুড়ে এই ডিজিটাল মুদ্রা cryptocurrency এর বাজার বাড়ছে। এমন অনেক দেশ রয়েছে যারা এই ডিজিটাল মুদ্রাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও দিয়েছেন। তবে আমাদের বাংলাদেশে এই মুদ্রার লেনদেন একেবারেই নিষিদ্ধ।
ট্রেডিং সম্পর্কে লেখকের শেষ মতামত
ট্রেডিং সম্পর্কে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি উপকারি মনে হলে আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে এই তথ্যগুলো অবশ্যই শেয়ার করার চেষ্টা করবেন। এতে তারাও আপনার মাধ্যেমে এই তথ্য গুলো জেনে ট্রেডিং নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরে উপকৃত হতে পারবে।
আর আজকের পোষ্ট এই ছিল আমাদের ট্রেডিং ও ক্রিপ্টোকারেন্সি এর খুঁটিনাটি বিষয়াদি। আপনি যদি এই আর্টিকেলটি শুরু পড়েন তাহলে থাকলে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে কি, ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় ও ট্রেডিং কিভাবে করব, ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত জেনে গেছেন।