নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিতর্ক – নতুন কারিকুলাম কেন প্রয়োজন

বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে যেগুলো আমরা প্রতিনিয়ত নানান ধরণের সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখতে পারছি। এটা নিয়ে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। অনেক অভিভাবক মনে করছেন যে শিক্ষা ব্যবস্থার দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আগের সেই শিক্ষা ব্যবস্থা আর নেই।

নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিতর্ক

আপনি কি নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিতর্ক ও নতুন কারিকুলাম কেন প্রয়োজন সেই বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনারা নতুন কারিকুলাম বা কারিকুলামের নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু টপিক আজকের এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিতে পারবেন। তাহলে আসুন আমরা আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমেই নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিতর্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিতর্ক

শিক্ষা হচ্ছে মূলত প্রতিতা জাতির এবং প্রতিটা সমাজের মেরুদণ্ড। আসলে আমাদের এই বাংলাদেশে নতুন কোন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন হওয়া মানেই কোন না কোন ধরণের বিতর্ক সৃষ্টি হতেই হবে। নতুন কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম নিয়ে নানান কারণে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

অনেকেই জানতে চায় যে, নতুন কারিকুলাম শিক্ষার মানের উন্নতি করতে পারবে কিনা। এছাড়াও অনেকের শিক্ষার নতুন নতুন পদ্ধতিমূলক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কারণ হতে পারে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি হতে দেখা দেয়।

নতুন শিক্ষাকারিকুলামে পরীক্ষার পদ্ধতি

আমাদের বাংলাদেশে চাপ কমানোর উদ্যোগ হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থা দিন দিন বিপ্লবের মুখোমুখি হচ্ছে। গত ২০২৩ সালে থেকে NCTB একটি নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন বা উদ্ভাবন করেছে। এই নতুন শিক্ষাক্রমের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দিক হচ্ছে মূলত পরীক্ষার পদ্ধতি।

এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমানো এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, তাদের সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। চলুন তাহলে নতুন শিক্ষাকারিকুলামে পরীক্ষার পদ্ধতি কেমন হবে তা জেনে নেই।

আরো পড়ুনঃ-  পিএইচডি করার যোগ্যতা কি - পিএইচডি করার খরচ

১ম থেকে ৩য় শ্রেণি কোনো পরীক্ষা নেই

নতুন শিক্ষাক্রমের ১ম থেকে ৩য় শ্রেণি অবদি কোনো পরীক্ষা উপস্থিত হবে না। বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন ধারাবাহিকতার উপর শতভাগ মূল্যায়ন করা হবে। এই ধারাবাহিকতা নির্ভর করবে মূলত একজন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি, প্রেজেন্টেশন কুইজ, টেস্ট, গৃহকার্য,  প্রজেক্ট কাজ ইত্যাদির উপর।

চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়ন

৪র্থ ও ৬ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ২ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার হবে। একটি হলো শিখনকালীন মূল্যায়নকরা হবে।

অন্যটি পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়ন, যেটা শিক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হবে। এই ২ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, কৌশল, দক্ষতা, বোধ, মানসিক, জনশীলতা, সমালোচনা ক্ষমতা,দক্ষতা, সিদ্ধান্ত ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হবে।

নতুন কারিকুলাম কেন প্রয়োজন

এক দিক থেকে বলতে গেলে নতুন কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম এর অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। এর মাধ্যমে বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলে এগিয়ে যাওয়া যায়। নতুন কারিকুলামের শিক্ষা ব্যবস্থাটা উন্নত করাটা আমাদের বাংলাদেশের জন্য অত্যান্ত জরুরি। কারণ যদি নতুন কারিকুলাম সঠিকভাবে প্রণয়ন না করা তাহলে আমাদের যতটুকু শিক্ষার চাহিদা মেটানো দরকার সেটি অর্জন করাটা কঠিন হয়ে যাবে।

তাই সকল শিক্ষার্থীদের অবশ্যই আধুনিক দক্ষতা অর্জন করার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাই বলা যায় এজন্য নতুন কারিকুলাম এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। আশা করছি নতুন কারিকুলাম কেন প্রয়োজন তা বুঝতে পেরেছেন। এবার চলুন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষকদের ভূমিকা কি সেই বিষয়ে একেবারে বিস্তারিভাবে জেনে নেওয়া যাক।

নতুন কারিকুলাম কেন প্রয়োজন

নতুন কারিকুলামে শিক্ষকদের ভূমিকা

নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাদের মাধ্যমেই শিক্ষা ব্যবস্থা চালানো হয়ে থাকে। শিক্ষকদের উপর নির্ভর করে নতুন কারিকুলামের এর সফলতা। এজন্য শিক্ষকদের নতুন কারিকুলাম সম্পর্কে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ করাতে হবে।

এছাড়াও এই ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রমের সাথে পরিচিত হওয়া, পাঠ্যপুস্তক, শিখন সামগ্রী, তাদের বিষয়বস্তু মূল্যায়ন পদ্ধতি ও শিক্ষক সহায়িকা নিয়ে সঠিক ধারণা গড়ে তোলা খুবই জরুরি। তো আশা করছি এই অংশ থেকে নতুন কারিকুলামে শিক্ষকদের ভূমিকা তা বুঝতে পেরেছেন। এবার চলুন, নতুন শিক্ষাক্রমের সুবিধা কি সেই বিষয়ে একেবারে বিস্তারিভাবে জেনে নেওয়া যাক।

আরো পড়ুনঃ-  পড়ালেখায় সফল হওয়ার উপায় - একজন আদর্শ ছাত্রের বৈশিষ্ট্য

নতুন শিক্ষাক্রমের সুবিধা

ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন করা যায়: শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি ডিজিটাল চাহিদা পূরণ করাই হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমের মূল উদ্দেশ্য। ডিজিটাল প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জন করতে পারলে, বিভিন্ন ধরণের যেকোন ধরণের সমস্যার মোকাল্বেলা করা সম্ভব। এবং এর পাশাপাশি সৃজনশীলতা বাড়ানোর জন্য এই নতুন শিক্ষা কারিকুলামটি ডিজাইন ও প্রনয়ণ করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত-কৃত শিক্ষা: নতুন কারিকুলাম কৃত শিক্ষা ব্যবস্থার উপর নজর দেয়া হয়েছে। এর সাহায্যে প্রতিটা শিক্ষার্থীগণ নিজ নিজ গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। এবং এর পাশাপাশি সহজেই নিজের লক্ষ্য যেতে সক্ষম হবে।

ব্যবহারিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব: বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রম ব্যবহারিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের বাস্তব জীবনের যত প্রকারের সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান করতে পারবে, এর পাশাপাশি তারা আরও বেশি দক্ষতা অর্জন করবে।

টেকনোলজির ব্যবহার: বর্তমানে টেকনোলজির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই শিক্ষা ক্ষেত্রে টেকনোলজির ব্যবহারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে অনেক অধ্যয়ন করতে পারবে এবং বিভিন্ন কাজে দক্ষ হতে পারবে।

নতুন শিক্ষাক্রমের অসুবিধা

প্রাথমিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ: নতুন শিক্ষাক্রম এর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর পাশাপাশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর বেশ কিছু প্রভাব পড়তে পারে। তাদের জন্য প্রথমদিকে এটি বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

কারণ কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করার সময় আমাদের অভিজ্ঞতা না থাকলে নানান রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এক্ষেত্রে এটি অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ: নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রতিটা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াটা খুবই জরুরি। কেননা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে হলে তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ না দিলে শিক্ষার মান হ্রাস পাবে।

আর্থিক ব্যয়: নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হবে। যা আসলে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বোঝা হয়ে দাড়াবে অর্থের অভাবে।

আরো পড়ুনঃ-  হাতের লেখা সুন্দর করার উপায় - পরীক্ষায় দ্রুত লেখার উপায়

নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে সমস্যাগুলো কি কি

এই শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়নে বেশ কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা সমাধান না করলে সঠিক উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। আসুন তাহলে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে হলে আগামীতে কি কি সমস্যার মধ্যে পড়তে হগতে পারে সেই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ: নতুন শিক্ষাক্রমের মূল অংশ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা। এই পদ্ধতিতে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিজস্ব শেখার পদ্ধতি অনুযায়ী শেখাতে হবে, যা আগের শিক্ষাক্রমের চেয়েও বেশি দক্ষতা ও সৃজনশীলতা প্রয়োজন। তবে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে বাস্তবায়ন করতে প্রতিটা শিক্ষকদের অনেক বেশি প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, যা এখন অবদি সম্পূর্ণ ভাবে নির্বাহ হয়নি।

শিক্ষকদের নিয়োগ: নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হল দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষরা যোগ্যতার অভাবের মধ্যে রয়েছেন।

নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে লেখকের মতামত

আমরা ইতিমধ্যে নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিতর্ক ও নতুন কারিকুলাম কেন প্রয়োজন সেই সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনারা নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। আপনি যদি পোষ্টের কোন অংশ বুঝতে না পারেন তাহলে পোষ্টের নিচে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা আপনার কমেন্টের উত্তর দিতে সবসময় প্রস্তুত।

নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিতর্ক সম্পর্কে আশা করছি আপনারা সকলে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি এই পর্যন্তই। আবারও আপনাদের সাথে নতুন কোন তথ্য নিয়ে অবশ্যই হাজির হবো। বিভিন্ন তথ্যবহুল সম্পর্কিত অন্যেন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করার অনুরোধ রইল।

Leave a Comment