মোবাইল আমাদের নিত্যজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হওয়ায় দিনেদিনে এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। অনেকেই হয়তো জানেন না, একজন ব্যক্তি দিনে ৫০ থেকে ১০০ বার হাতে থাকা মোবাইল ফোন আনলক করে থাকেন। মোবাইল ফোনের দিকে আমাদের হাত কারনে কিংবা অকারনে চলে যায়। অনেকের কাছে হাতে থাকা মোবাইল দেখাতেই সব শান্তি খুজে পাই।
কিন্তু সবসময় এই মোবাইল ব্যবহার করা কতটা ক্ষতিকর সেটা হয়তো আপনার ধারণাও নেই৷ মোবাইলের ক্ষতিকর রেডিয়েশন আমাদের শরীরের উপর মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু আপনারা এই স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি অনেকেই উপেক্ষা করেন। এ সমস্যা সত্ত্বেও মোবাইল এর ব্যবহার কমে নি বরং মোবাইলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ দিনে দিনে বেড়েই চলছে।
মোবাইল রেডিয়েশন কি
মোবাইল ফোন থেকে মূলত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত হয়। যা রেডিও ওয়েভ তরঙ্গের মাধ্যমে একটি সচ্ছ সিগন্যাল পাঠানো হয়। আমরা যখন মোবাইল ফোনে কথা বলি, তখন মোবাইল ডিভাইসে থাকা ট্রান্সমিটারটি আমাদের মুখ থেকে যে শব্দটি বের হয় সেটি গ্রহণ করে নিয়ে ধারাবাহিক সাইন ওয়েভে সংকেতায়িত করে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, মোবাইল এর অত্যাধিক ব্যবহার রেডিয়েশনের মাত্রা বৃদ্ধি করে থাকে। যার থেকে হতে পারে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এজন্য মোবাইল এর রেডিয়েশনের বিষয়টি একদম হালকাভাবে নেবার কিছু নেই। তাহলে চলুন আমরা নিচের অংশ থেকে মোবাইলের রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায় কি তা বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।
মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়
সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত অর্থাৎ সবসময় আমাদের কাছে মোবাইল থাকে। কারণ মোবাইল এর মাধ্যমে পুরো বিশ্বকেই এখন হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশন আমাদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।
ক্ষতিকর এই রেডিয়েশন মূলত নির্গত হয় কল করার সময় অর্থাৎ ওপাশে রিং বাজার সময়ই। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই মারাত্মক হুমকি স্বরুপ। তাই আসুন আমরা জেনে নেই মোবাইল রেডিয়েশনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় সমূহ।
ফোন থেকে নিজেকে দূরে রাখুন
মোবাইলের এই রেডিয়েশন যথেষ্ট ভয়াবহ। আর অবশ্যই এই ভয়াবহ বিষয়টি থেকে বাঁচতে আপনাকে প্রথমেই ফোন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কানে ফোন দিয়ে কথা বলা একেবারেই উচিত নয়।
আর হেডফোন কিংবা স্পিকার ব্যবহার করে কথা বললে রেডিয়েশন এর ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকটা এড়ানো যায়। এছাড়াও ঘুমানোর সময় মুঠোফোনটি বালিশের নীচে একদমই না রেখে। অত্যন্ত কয়েক ফিট দূরে রাখতে হবে। এবং চেষ্টা করো কাজ হয়ে গেলে ফোনটি সুইচ অফ করে রাখতে।
মোবাইলের ব্যবহার সীমিত করুন
প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার কখনই ঠিক না। এক্ষেত্রে আপনার সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার করলে শারিরীক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহারের সাথে রেডিয়েশনের যোগসূত্র রয়েছে। আর এজন্য প্রয়োজন না হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। ফোন ব্যবহার একদম সীমিত করুন। যখন প্রয়োজন হবে শুধুমাত্র তখনই মোবাইল ব্যবহার করুন।
টেক্সট চেক, কল রিসিভ বা অন্যান্য কাজের জন্য বারবার মোবাইল ব্যবহার করবেন না। আপনি চাইলেই আপনার সুবিধা হলে টেক্সটের কাজগুলো ভয়েসে করতে পারেন। এতে মোবাইল এর ব্যবহার যেমন সীমিত করা যাবে ঠিক তেমনি রেডিয়েশনের হাত থেকেও আপনি কিছুটা হলেও রেহাই পাবেন।
আবদ্ধ পরিবেশে মোবাইল ব্যবহার নয়
আবদ্ধ ঘরে কিংবা এরকম আবদ্ধ পরিবেশে কোন ভাবেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। এতে রেডিয়েশন নির্গত হয়ে থাকে। এছাড়াও ধাবত ক্ষেত্রেও মোবাইল এর রেডিয়েশন নির্গত হয়ে থাকে।
ব্যাটারি লো হলে মোবাইল ব্যবহার না করা
নেটওয়ার্ক না থাকা কিংবা খুব কম থাকা একটি সাধারণ ঘটনা। খুব দুর্বল নেটওয়ার্ক কিংবা কথা কেটে কেটে যাচ্ছে ইত্যাদি বিষয় খুবই সাধারণ। এমন অবস্থায় অথবা দুর্বল নেটওয়ার্কে মোবাইল ফোনে কথা না বলায় ভাল।
এক্ষেত্রে টেক্সট ম্যাসেজ অথবা ভয়েস ম্যাসেজে কাজ সারতে হবে। আবার লো ব্যাটারিতে কখনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। মোবাইলে ব্যাটারি কম থাকলেও কিন্তু উচ্চ মাত্রায় রেডিয়েশন নির্গত হয়ে থাকে।
বিশেষ করে ১৫% কিংবা তার কম চার্জ থাকলে মোবাইল ফোন থেকে অধিক মাত্রায় রেডিয়েশন নির্গত হয়ে থাকে। তাই খুব বেশি জরুরি কোন সমস্যা না হলে এই অবস্থায় ফোন ব্যবহার করবেন না।
বিভিন্ন সার্ভিস বন্ধ রাখুন
স্মার্টফোনের বিভিন্ন সার্ভিস রয়েছে যেমনঃ ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, জিপিএস, ইন্টারনেট সংযোগ ইত্যাদি প্রয়োজন শেষ হলে অফ রাখুন। কারণ এগুলোর রেডিয়েশন দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ক্ষতির কারণও হতে পারে।
সেই সাথে আপনার ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যেতে পারে প্রযুক্তি মাফিয়াদের কাছে। যার ফলাফল খুবই ভয়ঙ্কর।
নিম্নমানের হ্যান্ডসেট
বর্তমানে বাজারে অনেক নিম্নমানের হ্যান্ডসেটও পাওয়া যাচ্ছে। এসব হ্যান্ডসেট ব্যবহার করার মাধ্যমেও মোবাইল থেকে মারাত্মক রেডিয়েশন নির্গত হয়ে থাকে। তাই নিম্নমানের ফোন নেওয়ার আগে আপনাকে রেডিয়েশন লেভেল চেক করে নিতে হবে।
সময় নির্ধারণ
মোবাইল ফোন ব্যবহারে অবশ্যই আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। কেননা সারাক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার একদমই ঠিক নয়। আপনি দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। কারণ মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার রেডিয়েশনের জন্য দায়ী।
ঘুমের সময় ফোন নয়
আমরা অনেকেই ঘুমের সময় মোবাইল ফোন মাথার কাছে রেখে ঘুমায়। মাথার কাছে ফোন রাখলে তা ঘুমের পরিমাণ এবং গভীরতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে।
এছাড়াও আপনি মোবাইল নয় ঘড়িতে এলার্ম দেবার অভ্যাস করুন। আর অবশ্যই ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন রান্নাঘরে ও চুলা থেকে দূরে বা অন্য কোনও দূরত্বে রাখুন।
ওয়াইফাই রাউটার
আপনি কি আপনার শোবার ঘরে ওয়াইফাই রাউটার রাখছেন, রাখলেও আপনি এখনি অন্য খানে রাখেন। কারণ এতে প্রচুর রেডিয়েশন নির্গত হয়। আর অবশ্যই রাত এগারোটায় রাউটার বন্ধ করে দিন।
শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের থেকে দূরে রাখা
আপনার শিশুদের কোমল শরীরকে মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই তাদের মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখুন। খুব সহজেই শিশুরা স্মার্ট ফোন হাতে পেয়ে সব কিছুই ভুলে যায়।
ওদের জ্বালাতন থেকে বাঁচতে বড়রা প্রায়শই এটাই করে থাকে। কিন্তু মনে রাখবেন সাময়িক আনন্দ ভবিষ্যতের পক্ষে ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে । তাই যতটা সম্ভব শিশুদের কাছ থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করুন।
গর্ভবতী নারীদের ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করা অথবা দীর্ঘক্ষণ ধরে ফোন এ কথা বলা ত্যাগ করতে অনুরোধ করো । আর গর্ভবতী নারী কিংবা যে কোন রোগীর দুর্বল শরীরে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব বেশি পড়ার সম্ভাবনা থাকে বলে। তাদের খুব সীমিত ও নির্ধারিত সময়ের বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়।
মোবাইল ফোন নিরাপদে ব্যবহারে কি নিয়ম মানতে হবে
মোবাইল প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হলেও মোবাইল ব্যবহারে কিছু নিয়ম অবশ্যই মানতে হয়। যেমন প্রয়োজন ছাড়া বাচ্চাদেরকে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত না। সঠিক নিয়মে মোবাইলের চার্জ নিশ্চিত করা।
এক্ষেত্রে ফোনের মূল বা অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করুন। চার্জ দেবার সময় ফোনে কথা বলা একেবারেই উচিত নয়।
মোবাইল স্ক্রিন কতটুকু দূরত্বে থাকলে নিরাপদ
এর মূলত কোন সঠিক হিসাব নেই। আপনি নিজেই বুঝবেন কত কাছে আনলে মোবাইলের আলোতে আপনার চোখ জ্বালা শুরু করে দেয়। তবে, মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টিসীমার হিসেবে চোখ থেকে প্রায় ২৫ সে.মি দূরের বস্তু সবচাইতে স্পষ্ট দেখে, ব্যক্তিভেদে তা পরিবর্তন হতে পারে।
দূরত্বের এই হিসাব টা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং যে দূরত্বেই হোক না কতটা কম ব্যবহার করা যায় সে চেষ্টা করা উচিত।
মোবাইল রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব
মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে স্বাস্থ্য উদ্বেগ আরএফ বিকিরণ যথেষ্ট বেশি হলে, এটির একটি ‘থার্মাল’ প্রভাব থাকে, যার মানে এটি শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়। উদ্বেগ রয়েছে যে মোবাইল ফোন দ্বারা নির্গত RF বিকিরণের নিম্ন স্তরের কারণে মাথাব্যথা বা মস্তিষ্কের টিউমারের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
মোবাইল রেডিয়েশন সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি আমাদের এই পোষ্টটি মনযোগ সহকাড়ে পড়ে থাকেন, তাহলে এতক্ষণে হয়তো মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায় গুলি জেনে নিতে পেরেছেন।