যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায়

বর্তমানে যৌতুকের মিথ্যা মামলা অনেক হারে বেড়েছে। ফলে নিরপরাধ মানুষেরাও যৌতুকের মিথ্যা মামলায় শাস্তি পাচ্ছে। তাই যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে সবার জেনে রাখা উচিত। আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচিত বিষয় হচ্ছে যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায় সম্পর্কে।

যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায়

আজকের আর্টিকেলটি পড়লে জেনে যাবেন যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায় কি। এছারাও আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পড়ার মাধ্যমে জেনে যাবেন যৌতুক সম্পর্কিত আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন তথ্যগুলো। তো চলুন আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়–ন এবং বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিন।

যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায়

দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হলে বেশিরভাগ নারীরা যৌতুকের মামলা দিয়ে থাকে। তবে এ বনিবনার জন্যে কি শুধুমাত্র স্বামীরায় দায়ী? তবু মিথ্যা মামলার সাথে জড়িয়ে যেতে হয় অনেক পুরুষকেই। ফলে পুরুষদের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। তবে পুরুষদের যাতে যৌতুকের মিথ্যা মামলায় সম্মুখীন হতে না হয়, সেজন্য যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচার জন্য কিছু করণীয় বিষয় আছে যেগুলো যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচতে করতে হবে। তো চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায়গুলো কি কি।

যৌতুকের মিথ্যা মামলা আপনার নামে করা হয়েছে তার মানে এই নয় যে আপনি অপরাধী না হয়েও শাস্তি পাবেন। আপনার নামে মামলা হয়েছে আপনি শাস্তি পাবেন কি পাবেন না সেটা আদালতের সিধান্ত। তাই মিথ্যা মামলায় আপনাকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। যৌতুকের মিথ্যা মামলা যখন আপনার নামে করা হবে এবং আপনার বিরুদ্ধে মামলার নোটিশ আসবে তখন প্রথমে আপনি জানবেন মামলাটি থানায় করা হয়েছে নাকি আদালতে। এরপর ভালো একটি আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে এজহারের কপি তুলবেন। এরপর আদালতে আতœসমর্পন করে জামিন চাইতে পারবেন। তবে অনেক সময় আদালত থেকে জামিন দেওয়া হয় না তখন আপনি হাইকোর্ট বিভাগে জামিন হতে পারবেন। সেটা থেকে জামিন নিয়ে, জামিনের পর একজন বিজ্ঞ এডভোকেটের সাহায্য নিয়ে মামলার পরবর্তী ধাপগুলোতে উপস্থিত হবেন এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।

আপনার নামে যে মিথ্যা মামলা করবে তার বিরুদ্ধে আপনি মামলা করতে পারবেন। আর পরবর্তীতে যখন আপনি সত্য প্রমাণিত হবেন এবং মামলা রায়ের যে জাবেদা নকল রয়েছে সেটা তুলে আপনি আপনার নামে যিনি যৌতুকের মামলা করেছিলেন তার নামে আপনি মামলা করেন তাহলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। যৌতুক নিরোধ আইন ধারা-৬ এ বলা হয়েছে কোনো ব্যাক্তি যদি কারও বিরুদ্ধে যৌতুকের মিথ্যা মামলা করে থাকে তাহলে সে ব্যক্তির ৫ বছরের কারাদন্ড হবে পাশাপাশি ৫০০০০ টাকা জরিমানা করা হবে।  বাংলাদেশে এ ধরনের আইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সুতরাং আপনার নামে যদি যৌতুকের মিথ্যা মামলা করা হয়, তাহলে আপনি ভালো একটি আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে আদালতে আগাম জামিন করে মামলা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন এবং পরবর্তীতে আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে মামলাটি লড়ে যাবেন। শুধু আপনার দলির ও সাক্ষ্যপ্রমাণ ঠিক থাকা লাগবে। তবে মামলা থেকে বাঁচতে পালানোর মতো ভুল কাজ করবেন না। মনে রাখবেন মিথ্যা মামলা করাও কিন্তু একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আরো পড়ুন: নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় - অভ্যাস পরিবর্তন করার উপায়

মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তি

বর্তমানে বাংলাদেশে মিথ্যা মামলায় হয়রানিমূলক কর্মকান্ড প্রায় হতে দেখা যাচ্ছে। এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা আইনকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে মানুষকে হয়রানিতে ফেলে দেয়। এরকম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে অনেক পুরুষকে যৌতুকের মিথ্যা মামলার কারনে। এছারাও রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনসহ আরও বেশ কিছু সম্পর্কে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। তবে মামলা যে কারনে হোক না কেন মিথ্যা মামলাকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ধরা হয়েছে এবং এর জন্য রয়েছে শাস্তি। মিথ্যা মামলার কারনে কেউ হায়রানির শিকার হলে তিনিও আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন এবং মিথ্যা মামলার দায়ে তাকে আদালত থেকে শাস্তি দেওয়া হবে।

যৌতুক নিরোধ আইন: কোনো নারী যদি যৌতুকের মিথ্যা মামলা করে থাকে এবং পরবর্তীতে যার ওপর মামলা করা হবে তিনি নির্দোষ প্রমান হন। তাহলে যিনি মামলা করবেন তার ওপর শাস্তি প্রদান করা হবে আদালত থেকে। যৌতুকের মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তি হিসেবে, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ এর ধারা ৬ এ বলা হয়েছে, ৫ বছরের কারাদন্ড এবং ৫০০০০ টাকা জরিমানা।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন: যদি কোনো ব্যাক্তি নারী ও শিশু নির্যাতনের মিথ্যা মামলা করে কাউকে হয়রানিতে ফেলার চেষ্টা করে এবং সেটা প্রমানিত হয়। তাহলে ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ১৭ (১) ধারায় অভিযোগকারী ব্যাক্তিকে সাত বছরের কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হবে।

শিশু আইন: কোনো শিশুর সম্পর্কে যদি মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে কোনো ব্যাক্তিকে আসামি বানিয়ে হয়রানিতে ফেলা হয়, তাহলে আসামীকৃত ব্যক্তি যদি মামলার লড়ায়ে নির্দোষ প্রমাণ হন। তাহলে মিথ্যা অভিযোগকারী ব্যক্তিকে শিশু আইন ২০১৩ এর ৮৩ ধারায় ২৫ হাজারের বেশি ক্ষতিপূরন এবং ৬ মাসের জেল দেওয়া হবে।

উপরের এসব মামলা ছাড়াও যেকোনো মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তি রয়েছে। তাই যার ওপর মিথ্যা মামলা করা হবে তাকে বসে না থেকে ভালো একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে মিথ্যা মামলার সাথে লড়তে হবে।

আরো পড়ুন: অন্যের কাছে নিজের গুরত্ব বৃদ্ধির উপায়

যৌতুক মামলার খরচ

যৌতুক দেওয়া অথবা নেওয়া কিংবা যৌতুকের জন্য প্ররোচনা দেওয়া অপরাধমূলক কাজ এবং এর জন্য রয়েছে আইনগত শাস্তি। বাংলাদেশের যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০ এর ধারা ৩ মোতাবেক যৌতুকের সাতে জড়িত সকল ধরনের প্ররোচন, প্রদান বা গ্রহনকারী ব্যাক্তিকে কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। সমাজে যৌতুক প্রথার মতো জঘন্য কাজের অবসান করাতে এ উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।

বাংলাদেশের যৌতুক মামলা দমন করতে  এ আইনি ব্যাবস্থা চালু করা হয়েছে। তাই কোনো নারী যদি যৌতুকের শিকার হন তাহলে আইনিভাবে তিনি মামলা করতে পারবেন। যৌতুক মামলা যারা করার সিধান্ত নিয়ে থাকেন অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যৌতুক মামলার খরচ সম্পর্কে। তো চলুন নি¤েœর আলোচনা থেকে জেনে নিন যৌতুকের মামলার খরচ সম্পর্কে।

যৌতুক মামলার খরচ নির্ধারিত হয় কয়েকটি বিষয়ের ওপর তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায় না এ মামলায় কত টাকা খরচ হয়। যেমন ধরন আইনজীবীর ফি যৌতুক মামলার জন্য দিতে হয়। সে ফি আবার আইনজীবীর দক্ষতা, অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। এছারা মক্কেলের সামার্থ, পরিশ্রমের পরিমানের ওপর যৌতুক মামলার খরচ নির্ভর করে। আরও রয়েছে অতিরিক্ত খরচ হিসেবে কোট ফি, ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি, নোটারি চার্জসহ অনান্য সব প্রশাসনিক খরচ। এগুলো বিষয়ের ওপর যৌতুকের মামলার মোট খরচ নির্ভর হয়ে থাকে। তবে যৌতুক মামলার খরচ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আপনার পরিচিত আইনজীবীর পরামর্শ নিতে পারেন।

যৌতুক মামলার শাস্তি

যৌতুক মামলার শাস্তি

যৌতুক কে বলতে পারেন সামাজিক ব্যাধি। যৌতুক দেওয়া, নেওয়া এবং দাবি করা জঘন্যতম অপরাধ। তবে যুগ যুগ ধরে যৌতুক প্রথা চলে আসছে। যৌতুক আমাদের সমাজে এমন হয়েছে যে, নির্যাতন থেকে শুরু করে খুন পর্যন্ত করা হচ্ছে অনেক নারীকে এই যৌতুকের কারনে। এ যৌতুকের জন্য কত নারীর যে প্রান পর্যন্ত চলে যাচ্ছে সেটা আমরা খবরের কাগজ পড়লেই জানতে পারি। নারীর প্রতি অত্যাচার নির্যাতন দূর করতে আইনি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং এর জন্য রয়েছে শাস্তি।  যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ সালের আইনে যৌতুকের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

যৌতুকের শাস্তি: যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ সালের আইনে যৌতুক যে ব্যক্তি দাবি এবং দেওয়া-নেওয়া করবে তার শাস্তি হবে ৫ বছরের জেল ও এর পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।

যৌতুক মামলার জামিন

যেকোনো আইনি মামলায় অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে মুক্তি প্রদানের মাধ্যম হলো জামিন। যৌতুক মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনের যোগ্য হবে, তবে জামিন নির্ভর করবে প্রমাণের ওপর। সাংসারিক জীবনে একটু দ্বন্দ হলেই অনেক স্ত্রী রয়েছে যারা স্বামীর নামে যৌতুকের মামলা করে থাকেন। আর সে মামলা থেকে জামিন পেতে কি করবেন অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। যৌতুক মামলায় জামিন পেতে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিতে হবে এবং বেশ কিছু পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। যৌতুক মামলায় অভিযুক্ত ব্যাক্তি জামিন পাবে কি না কয়েকটি বিষয়ের ওপর তা বিবেচিত হবে। বিষয়গুলো হলো-

  • অভিযোগের প্রকৃতি
  • মামলার তদন্তের অবস্থা
  • অভিযুক্তের সমাজে অবস্থান 
  • প্রমাণের পর্যায়

যৌতুক মামলায় আগাম জামিনের ব্যবস্থা রয়েছে। এজন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে একজন ভালো আইনজীবীর পরামর্শ নিতে হবে, আগাম জামিনের জন্য আদালতে আবেদন জমা দিয়ে হবে এবং আবেদন গ্রহনযোগ্য হলে আদালতে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে।

আরো পড়ুন: টেনশন দূর করার উপায় - কি খেলে টেনশন দূর হয়

তালাকের পর দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

স্বামী-স্ত্রী বিবাহবন্ধনে যখন আবদ্ধ হয় তখন দেমমোহর খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। ইসলাম ধর্মের  আইন অনুযায়ী দেনমোহর নারীর বিশেষ অধিকার। তাই দেনমোহর স্বামীকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। তবে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন তালাকের পর দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম কি।

মুসলিম আইন অনুযায়ী দেনমোহর হলো একজন স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর হক। আর এ হক বিয়ের কথাবার্তা যখন চলবে, বিয়ের সময় কিংবা বিয়ের পর স্বামীদের পরিশোধ করতে হবে। বিয়ের সময় যদি দেনমোহর পরিশোধ করা না হয় তাহলে বিয়ের পর স্ত্রী যখন দেনমোহর দাবি করবে তখন পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু দাম্পত্য জীবনেও যদি দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে না পারে তাহলে তালাকের সময় সেটা পরিশোধ করতে হবে।

তবে প্রশ্ন হলো তালাকের পর দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম কি। এর উত্তরে বলা যায়, সরাসরি আপনি দেনমোহরের টাকা দিয়ে লিখিয়ে নিতে পারেন কিংবা পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে দিতে পারেন। এছারাও আদালতের অনুমতিক্রমে দেনমোহর কিস্তির মাধ্যমেও পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে। আর যদি তালাকের পর দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না করে তাহলে স্ত্রী দেনমোহরের মামলা স্বামীর নামে করতে পারবেন এবং এর জন্য শাস্তিও প্রদান করা হবে।

লেখকের শেষ বক্তব্য

যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায় সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায় সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
comment url