মাছের ডিম খুবই সুস্বাদু একটি খাবার, মাছের ডিম পচ্ছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছেন। তবে এ খাবার আমরা খেতে পচ্ছন্দ করলেও আমাদের এই ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকের জানা নেই। কিন্তু আমরা যাই খাবার খাই না কেন অবশ্যই খাবারের আগে যেনে নিতে হবে, খাবারের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
মাছের ডিম নিশ্চয় আপনিও খান? কিন্তু জানেন কি এ ডিমের সঠিক উপকারিতা সম্পর্কে? কিংবা এ ডিম খেলে কোনো ক্ষতি হয় কি না? তাহলে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন মাছের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
মাছের ডিমের উপকারিতা
আমাদের প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে মাছের ডিম। এ ডিম খেতে যেমন সুস্বাদু তেমন এ ডিমের রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের স্বাস্থের জন্য উপকারী। মাছের ডিমের মধ্যে রয়েছে ওমেগো থ্রি ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন বি ১২, বি৬, ভিটামিন সি, এ’, ডি’, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়ামসহ আরও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। এসব পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের শরীরের মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টির চাহিদা মেটায় এবং শরীর পায় নানান উপকার। জেনে নেওয়া যাক মাছের ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: মাছের ডিমের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো মানবশরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মস্তিষ্ক ভালো রাখে: মস্তিষ্ক সুরক্ষায় মাছের ডিমের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে মাছের ডিমের মধ্যে থাকা একধরনের ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্ক ভালো রাখতে সাহায্য করে।
চোখের স্বাস্থ ভালো রাখে: মাছের ডিমের মধ্য থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন এ, যার কারনে এ ডিম খাওয়ার ফলে চোখের স্বাস্থ ভালো থাকে।
হাড় শক্ত হয়: মাছের ডিমের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ডি’ যা খাওয়ার ফলে আমাদের হাড় শক্ত করে। হাড় ছাড়াও দাঁত শক্ত ও মজবুত রাখে মাছের ডিম।
হার্টের স্বাস্থ ভালো রাখে: মাছের ডিমের মধ্যে থাকা ওমেগো থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ডি’ হার্ট কে বিভিন্ন সমস্যার হাত থেকে প্রতিরোধ করে এবং হার্টের স্বাস্থকে ভালো রাখে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: গবেষণা থেকে প্রমানিত মাছের ডিম ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে।
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে: মাছের ডিমের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো মানবদেহের রক্ত পরিষ্কার করে ও রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। যার ফলে এটি খেলে অ্যানিমিয়া রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
উপরের বলা উপকারিতা ছাড়াও মাছের ডিমের আরও বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। তাই মাছের ডিম খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করবেন।
গর্ভাবস্থায় মাছের ডিম খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থার সময়টায়, গর্ভবতী মায়েরা খাবার নিয়ে বেশি চিন্তিত। কোন খাবার গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর আর কোন খাবার গর্ভের শিশুর জন্য উপকার এ নিয়ে মায়েরা বেশ চিন্তিত থাকে। তবে অবশ্যই এ বিষয়ে চিন্তিত হওয়া প্রয়োজন, সচেতন হয়ে খাদ্য তালিকায় খাবার নির্বাচন করা জরুরি। লোকমুখে শোনে অনেকেই মাছের ডিম গর্ভাবস্থায় খেতে চান না, তবে সঠিক তথ্য জানেন কি গর্ভাবস্থায় মাছের ডিম খাওয়া যাবে কি না? বিস্তারিতভাবে জেনে নিন গর্ভাবস্থায় মাছের ডিম খাওয়া যাবে কি না।
মাছের ডিম অনেক গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় খেতে চান না। গর্ভবতী মায়েদের এ নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে যে মাছের ডিম গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে না। এজন্য গর্ভবতী মায়েরা মাছের ডিম গর্ভাবস্থার সময়টায় একেবারে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে এটি ঠিক নয়, মাছের ডিম গর্ভাবস্থায় খাওয়া গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর দুজনের জন্য উপকারী।
শুধু মাছের ডিম নয়, এমন অনেক পুষ্টিকর খাবার রয়েছে যেগুলো গর্ভবতী মায়েদের খেতে দেওয়া হয় না। যেমন ডিম খেলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হয়, মৃগেল মাছে মৃগীরোগ হয় প্রভৃতি। এগুলো মূলত একটি কুসংস্কার । তবে গর্ভের মায়ের কোনো স্বাস্থঝুঁকি বা কোনো রোগে আক্রান্ত হলে মাছের ডিম খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। শুধু মাছের ডিম নয়, যেকোনো খাবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নির্বাচন করা উচিত। কিন্তু একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মা অনান্য খাবারের মাতো মাছের ডিমও খেতে পারবেন, এতে গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর কোনো ধরনের স্বাস্থঝুঁকি হবে না। তাই গর্ভাবস্থায় সপ্তাহে একদিন মাছের ডিম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
মাছের ডিমের রেসিপি
মাছের ডিম সাধারনত আমরা ঝোলের সাথে রান্না করে খাই। কিন্তু প্রতিদিন এক নিয়মে মাছের ডিম খেতে যেন আর ভালো লাগছেনা। আপনিও কি প্রতিদিন একই নিয়মে মাছের ডিম খেতে চান না? তাহলে জেনে নিন মাছের ডিমের রেসিপি সম্পর্কে।
১. মাছের ডিমের কাবাব রেসিপি
উপকরণ: মাছের ডিম, কাঁচা লঙ্কা কুচি, পেঁয়াজ কুচি, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুড়ো, ধনেপাতা কুচি, জিরের গুঁড়ো, নুন, কাবাব মসলা, চালের গুড়ো, অল্প লেবুর রস, তেল। এসবগুলো উপাদান পরিমানমতো নিয়ে নিন।
রান্নার নিয়ম: শুধু তেল ছাড়া উপরের সবগুলো উপকরণ একসাথে একটি পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর চুলায় কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে মিশ্রনগুলো সামান্য নিয়ে বলের মতো করে ভাসানো তেলে ভেজে নিন। এভাবে খুব সহজেই তৈরি হয়ে যাবে মাছের ডিমের কাবাব। এ কাবাব পোলাও অথবা সস দিয়ে খাওয়া যায়।
২. মাছের ডিমের কারি রেসিপি
উপকরণ: ইলিশ মাছের ডিম বা যেকোনো মাছের ডিম, কাঁচা লঙ্কা ফালি, পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুড়ো, মরিচ গুড়ো, ধনেগুড়ো, জিরে গুড়ো, ধনে পাতা কুচি, ঘি, নুন, তেল।
রান্নার নিয়ম: মাছগুলোকে পরিষ্কার করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর একটি কড়াইয়ে তেল নিয়ে, তেলের মধ্যে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে বাদামী রঙে ভেজে নিন । এবার কড়াইয়ে ভাজা পেঁয়াজে অল্প পানি দিয়ে সবগুলো মসলা হলুদ, মরিচ, ধনে গুড়ো ও লবণ পরিমাণমতো নিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। মসলগুলো কষানোর পর তাতে মাছের ডিম দিয়ে আরেকটু কষুন। এবার তেল ভেসে উঠলে জিরে গুরো, ফালি কাঁচা লঙ্কা, ধনে পাতা কুচি ও ঘি দিয়ে একটু রান্না করুন। কিছুক্ষন পর নামিয়ে নিন, এভাবে বানিয়ে নিন মাছোর ডিমের কারি রেসিপি। গরম ভাতের সাথে এ রেসিপি খুবই মজাদার।
৩. মাছের ডিমের পাতুরি রেসিপি
উপকরণ: মাছের ডিম, অল্প পেঁয়াজ কুচি, পোস্ত বাটা, সরষে বাটা, কাঁচা লঙ্কা কুচি, অল্প নারিকেল কুচি, লবণ, অল্প কাসুন্দি, হলুদ গুড়ো, সর্ষের তেল, কলা পাতা।
রান্নার নিয়ম: একটি পাত্রে মাছের ডিম নিয়ে তার সাথে সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর একটি কলাপাতার মধ্যে সর্ষের তেল সামান্য নিয়ে ব্রাশ করে নিন। এবার কলাপাতার মধ্যে ডিমের মিশ্রনগুলো পরিমাণমতো দিয়ে, চারদিক থেকে কলাপাতার মুখ বন্ধ করে সুতোর সাহায্যে বেধে নিন। এবার একটি কড়াইয়ে সর্ষের তেল অল্প নিয়ে বেধে রাখা কলাপাতা কড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে অল্প তাপ দিয়ে রান্না করুন। এবার ১০ মিনিট হয়ে গেলে উলটে দিন। কিছুক্ষন পর তৈরি হয়ে যাবে ডিমের পাতুরি।
এ ছিল মাছের ডিমের কয়েকটি রেসিপি। এবার মাছের ডিম বাড়িতে আনলে বড়া ও ঝোল ছাড়াও এ নিয়মে রান্না করে খেয়ে দেখুন।
মাছের ডিম খেলে কি ওজন বাড়ে
পুষ্টিগুনে ভরপুর মাছের ডিম, এ ডিমের মধ্যে রয়েছে নানান উপকার। তাই মাছের ডিম অনেকেই খাবার তালিকায় রাখতে চাই। তবে যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত তাদের খাদ্য তালিকায় কোন খাবার রাখবে এ নিয়ে ভাবনাই পড়ে যায়। মাছের ডিম খেতে ইচ্ছা করলেও ওজন বাড়ার ভয়ে অনেকেই খায় না। এজন্য মাছের ডিম খাওয়া আগে অনেকের প্রশ্ন মাছের ডিম খেলে ওজন বাড়ে কি না। সত্যি কি মাছের ডিম খেলে ওজন বাড়ে? নিচেরআলোচনা থেকে বিস্তারিত জেনে নিন।
মাছের ডিম খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ে না। তবে শর্ত হলো মাছের ডিম খেতে হবে সঠিক নিয়মে। যাদের কোনো স্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হাই প্রেসার, হার্টের রোগ ইত্যাদি রয়েছে তাদের এ খাবার খেতে হবে পরিমিত এবং মাসে দুইবার। অপরদিকে যাদের কোনো রোগ নেই তাদের জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন মাছের ডিম খাওয়ায় যথেষ্ট।
আর মাছের ডিম অবশ্যই ভাসা তেলে ভেজে রান্না করবেন না। অল্প তেল দিয়ে মাছের ডিম রান্না করে খাবেন। যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তাদের জন্য বেশি তেলে মাছের ডিম ভেজে খাওয়া মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে যারা সুস্থ রয়েছেন তারাও কম তেলে এ ডিম ভেজে খাবেন। উপরের বলা নিয়মে মাছের ডিম খাবেন ওজন বাড়ার কোনো আশঙ্কা থাকবে না।
মাছের ডিমের অপকারিতা
মাছের ডিম আমাদের সবার প্রিয় একটি খাবার। এ ডিমে রয়েছে অসংখ্যা উপকারিতা। তাই স্বাস্থ সচেতন মানুষেরা এ ডিম খাবার তালিকায় রাখতে চাই। তবে মাছের ডিম সবার জন্য উপকার বয়ে আনে না। সব খাবারের মধ্যে ভালো দিক ও খারাপ দিক রয়েছে, মাছের ডিমও তাই। কিছু মানুষ রয়েছে যাদের জন্য মাছের ডিম খাওয়া ক্ষতিকর। আবার অতিরিক্ত মাছের ডিম স্বাস্থঝুঁকি বাড়ায়। তাই মাছের ডিমের অপকারিতা জেনে মাছের ডিম আমাদের খাওয়া উচিত। । তো চলুন জেনে নিন মাছের ডিমের অপকারিতা সম্পর্কে।
- মাছের ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম রয়েছে। তাই নিয়মিত যদি আপনি মাছের ডিম খান, তাহলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- মাছের ডিম অতিরিক্ত খেলে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় এবং হার্টের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের মাছের ডিম নিয়মিত খাওয়া যাবে না, এতে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের মধ্যে কারও কারও ক্ষেত্রে মাছের ডিম থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।
এছারাও যারা কিডনি, হার্ট, অতিরিক্ত ওজনের সমস্যাই ভুগছেন তারা সাবধানতার সাথে মাছের ডিম খাবেন। এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মাসে দুইবার পরিমিত আকারে মাছের ডিম খাবেন। আর যাদের কোনো রোগ নেই তারাও এ ডিম অতিরিক্ত খাবেন না।
তবে মাছের ডিমের মধ্যে অপকারিতা থাকলেও এ ডিমের উপকার বেশি। এ ডিমের অসংখ্যা পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের শরীরে একাধিক রোগের ঝুঁকি কমায়। তাই এ ডিম আপনার খাবারে রাখতে হবে কিন্তু পরিমিত।