নার্সিং পড়ার সুবিধা অসুবিধা – নার্সিং পড়ার যোগ্যতা

সেবামূলক একটি পেশার নাম হচ্ছে নার্সিং। বর্তমানে এ পেশার চাহিদা বাড়তেই আছে। আপনি কি নার্সিং পড়তে চান? তাহলে নার্স হতে বেশ কিছু তথ্য সম্পর্কে আপনার জানা উচিত। সে তথ্যগুলো আমরা আজকে আমাদের আর্টিকেলে তুলে ধরেছি।

নার্সিং পড়ার সুবিধা অসুবিধা

নার্সিং পড়ার কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। আপনি যদি নার্সিং পড়তে চান তাহলে, নার্স হতে সেগুলো জানা প্রয়োজন। আজকের আর্টিকেলে আমরা নার্সিং পড়ার সুবিধা অসুবিধা এবং নার্সিং পড়ার যোগ্যতা বিষয়গুলো আলোচনা করবো। যেগুলো নার্সিং পড়ার জন্য আপনার অনেক উপকারে আসবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

নার্সিং পড়ার সুবিধা অসুবিধা

আমাদের দেশে সরকারি হাসপতাল সহ, অনেকগুলো বেসরকারী হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। যার কারনে নার্স এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।  ক্যারিয়ার গঠনের জন্য যা আপনি বেছে নিবেন, সেটা সঠিক কি না তা বিবেচনা করা উচিত। তাই যারা নার্সিং পড়তে চাইছেন তারা অনেকেই জানতে চান নার্সিং পড়ার সুবিধা অসুবিধা কি। নার্সিং পড়ার আগে অবশ্যই বিষয়গুলো জেনে রাখা উচিত। নার্সিং পড়ার সুবিধা ও অসুবিধা দুটো দিগই রয়েছে, সেগুলো জেনে একজন শিক্ষার্থীর নার্সিং এ ভর্তি হওয়া উচিত। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক নার্সিং পড়ার সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কি কি।

নার্সিং পড়ার সুবিধাগুলো হলোঃ

  • নার্সিং এর চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি রয়েছে।
  • নার্সিং পড়ার পর বেকরত্বের সুযোগ অনেক কম, কোথাও না কোথাও আপনার চাকরি হয়ে যাবে। অর্থ্যাৎ নার্সিং পড়া শেষ হলে আপনার চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, বাকিটা ভাগ্য। তবে আপনাকে ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা অর্জন করতে হবে।
  • বড় হাসপাতালগুলোতে নার্সিং সুপারভাইজার, নার্স ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করার সুযোগ থাকে।
  • বিদেশের হাসপাতালগুলো থেকেও কাজ করার সুযোগ আসে।
  • নার্সিং পড়তে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন, আপনার শরীরকে সুস্থ রাখার অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছারাও আপনার পরিবারকে স্বাস্থ সচেতনে পরামর্শ দিতে পারবেন।
  • নার্স থেকে আপনি ডাক্তারও হতে পারবেন যদি আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে।

নার্সিং পড়ার  অসুবিধাসমূহঃ

  • রাতের ডিউটি অনেক সময় করতে হয়।
  • শারিরিক ও মানসিক চাপ থাকে। যাদের অধিক ধৈর্য, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না।
  • ছুটির সুযোগ একেবারেই কম থাকে, নেই বললেই চলে।
  • ছোঁয়াচে রোগ গুলোর মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অধিক পরিশ্রম করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ-  এডমিশন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু টিপস

যেকোনো ধরনের চাকরিতে সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। নার্সিং পড়ার সবথেকে বড় একটি সুবিধা হলো আপনার চাকরি নিশ্চিত হবে, যদি আপনি চেষ্টা করেন। নার্সিং পেশা তেমন কষ্ট নয়, শুধু আপনাকে ধৈর্যতার সাথে করতে হবে।

বিএসসি নার্সিং পড়ার খরচ

জনসেবাই যারা আনন্দ পায়, তাদের জন্য নার্সিং পেশা বেছে নেওয়া ভালো। বাংলাদেশ মেডিকেল স্বাস্থসেবার একটি পদ হলো নার্সিং। নার্স হতে হলে আপনাকে নার্সিং এ যোগ্যতা থাকতে হবে। এর জন্য নার্সিং এ আপনাকে পড়তে হবে। নার্সিং পড়ে নিজের ক্যারিয়ার সহজেই গঠন করতে পারবেন। ছেলে অথবা মেয়ে উভয় নার্স হতে পারবেন। বিএসসি নার্সিং পড়তে গেলে খরচ কত হয় সে বিষয়ে অনেকের ধারনা নেই। তবে বিএসসি নার্সিং পড়ার খরচ সম্পর্কে জেনে এ লাইনে পড়া ভালো। কারণ আপনি যে লাইনেই পড়ুন না কেন আগে আপনাকে জানতে হবে, সে লাইনে পড়ার আপনার সামার্থ আছে কি-না। তো চলুন বিএসসি নার্সিং পড়ার খরচ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

বিএসসি নার্সিং কোর্সের সময়সীমা চার বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ কোর্সে নার্সিং পড়তে কত খরচ হবে সে  সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না। কারণ নার্সিং পড়তে খরচ কত হবে সেটা নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠানের ওপর। তবে খরচের আনুমানিক ধারনা দিতে পারি। বিএসসি নার্সিং যদি আপনি সরকারি কলেজগুলো থেকে করতে চান তাহলে ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। আর ডিপ্লোমা নার্সিং করতে সরকারি কলেজগুলোতে কোর্স ফি দিতে হয় না, বরং প্রতি মাসে তারা কিছু টাকা ভাতা হিসেবে দিয়ে থাকে, তাই সেখানে খরচ হয় না।

বেসরকারী কলেজ থেকে বিএসসি নার্সিং কোর্স যদি আপনি করতে চান, তাহলে খরচের পরিমান বেশি হবে। সেক্ষেত্রে কলেজভেদে খরচ ৩ থেকে ৫ লক্ষ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

নার্সিং পড়ার যোগ্যতা

বিএসসি নার্সিং পড়ার যোগ্যতা

নার্স সম্মানজনক একটি পেশা। চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে একজন নার্সকে ক্লিনিক, হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকের আউটডোরে কাজ করতে হয়। ক্যারিয়ার হিসেবে এ পেশা বেছে নেওয়া ভালো কারন এ পেশার ব্যপক চাহিদা রয়েছে। এছারাও এ পেশায় অনান্য পেশার মতোই পদন্নতি রয়েছে এবং বেতন বাড়ারও সুযোগ রয়েছে। তাই উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর বিএসসি নার্সিং কোর্স অনেকেই করতে চাইছেন। আর এ কোর্স করতে অনেকেই জানতে চান, বিএসসি নার্সিং পড়ার কি কি যোগ্যতা লাগে। তো চলুন জেনে নিন বিএসসি নার্সিং পড়ার যোগ্যতা কেমন হওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ-  পিএইচডি করার যোগ্যতা কি - পিএইচডি করার খরচ

আবেদনকারীর বিএসসি নার্সিং পড়ার যোগ্যতা: বিএসসি নার্সিং পড়তে হলে আপনাকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ হতে হবে এবং বিজ্ঞান বিভাগ থেকে হতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের আগে  এবং বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আপনি না পড়লে ,  বিএসসি নার্সিং পড়ার জন্য আবেদন আপনি করতে পারবেন না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বমোট নূন্যতম জিপিএ যোগফল হতে হবে ৭.০০। তবে মাধ্যমিক অথবা উচ্চ মাধ্যমিক কোনো বোর্ড পরীক্ষায় জিপিএ ৩.০০ এর কম হলে আবেদনের সুযোগ পাবে না। আর আরেকটি বিষয় হলো দুই পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে জিপিএ ৩.০০ হতে হবে।

বিএসসি নার্সিং এর কাজ

জনগনের স্বাস্থ পরিচর্যা নার্সিং পেশার মাধ্যমে করা হয়। মানবসেবায় নার্সদের সবসময় আতœত্যাগি হতে হয়। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনির চিকিৎসা বিভাগে এবং ব্যক্তিগত বিভাগে নার্সরা কাজ করে থাকে। নার্সরা কি ধরনের কাজ করে থাকে অনেক নার্সিং পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা জানতে চান। নার্র্সিং পড়তে সিদ্ধান্ত নিলে আপনার জেনে রাখা উচিত, বিএসসি নার্সিং এর কাজ কি। কারণ নার্সিং পেশায় নিযুক্ত হয়ে আপনাকে এসব কাজগুলোই করতে হবে। সে কাজগুলো যদি আপনার পচ্ছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে নার্সিং পেশা বেছে নিতে পারেন। চলুন জেনে নিন বিএসসি নার্সিং এর কাজ কি।

বিএসসি নার্সিং এর কাজ:

  • হাসপতাল, ক্লিনিকের ইনডোর ও আউটডোরে, অপারেশন থিয়েটারে সাধারণত একজন নার্সকে কাজ করতে হয়।
  • ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোগিদের স্বাস্থ সেবা দেওয়া এবং স্বাস্থ পরীক্ষা করা।
  • সঠিক নিয়মে রোগিকে ওষুধ খাওয়ানো।
  • রোগির অবস্থা কেমন থাকবে সে বিষয়ে ডাক্তারকে জানানো।
  • রোগির অপারেশনের সময়ে ডাক্তারের পাশে থেকে ডাক্তারকে সাহায্য করা।
  • ফ্লোর পরিদর্শন করা।
  • রোগির সমস্যাগুলো ভালোভেবে জেনে শুনে ব্যবস্থা নেওয়া।
  • অপারেশন টেবিলে রোগিকে পোঁছাতে কাজ করা।

উপরের বলা কাজগুলো একজন বিএসসি নার্সএর উল্লেখযোগ্য প্রধান কাজ।

বিএসসি নার্সিং এর বেতন

ক্যারিয়ার গড়ার বড় একটি সুযোগ হলো নার্সিং পেশা বেছে নেওয়া। তাই অধিকাংশ মেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর নার্সিং পেশাকে বেছে নেই। বিএসসি নার্সিং শেষ করার পর কানাডা সহ বেশ কিছু দেশে চাকরির সুযোগ আসতে পারে। এর জন্য ইংরেজিতে পারদর্শী হতে হবে। সরকারি অথবা বেসরকারিগুলোতে চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হয় নার্সিং কোর্স যারা শেষ করে। বিএসসি নার্সিং যারা পড়তে চান, অনেকেই জানতে আগ্রহী বিএসসি নার্সিং এর বেতন কত। জেনে নিন বিএসসি নার্সিং এর বেতন কত।

বিএসসি নার্সিং এর বেতন:  বিএসসি নার্সিং এর বেতন কত হবে সেটা নির্ভর করবে কাজের ধরন, আপনি বিএসসি করছেন নাকি ডিপ্লোমা করেছে বা আপনার কাজে অভিজ্ঞ আছে কিনা। নার্স হিসেবে যদি আপনি প্রথমে ওটি সিস্টার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিযুক্ত হন তাহলে শুরুর দিকে মাসিক বেতন ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। অপরদিকে বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালগুলোতে একজন নার্সদের মাসিক বেতন শুরু থেকেই ১৪,০০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ-  ক্যাডেট কলেজে পড়ার খরচ - ক্যাডেট কলেজ লিস্ট

চাকরিতে জয়েন্ট করার প্রথমেই বেতনের দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। কাজ ভালোভাবে গুরুত্ব দিয়ে করবেন এবং শিখবেন। ধৈর্য ধরে কাজ করলে পরবর্তীতে ভালো পদে চাকরির সুযোগ পাবেন এবং বেতনও বেশি হবে।

বিএসসি নার্সিং এর ভবিষ্যৎ

সেবামূলক একটি পেশার নাম হচ্ছে নার্সিং। মানবসেবায় নিজেকে আতœনিয়োগ করায় হলো নার্স। দায়িত্বের সাথে এ পেশায় কাজ করতে হয়। এ পেশাতে শুধু যে সেবা করবেন সেটা নয়, আপনার ক্যারিয়ার হিসাবেও রয়েছে ভবিষ্যৎ এর হাতছানি। বিএসনি নার্সিং এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী। তো চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক বিএসসি নার্সিং এর ভবিষ্যৎ কেমন হবে।

বিএসসি নাসিং কোর্স শেষ করার পর একজন নার্স এর ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়। কারন আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে যে অনুযায়ী একজন অভিজ্ঞ নার্স এর প্রয়োজন হয়, সে অনুযায়ী নার্স পাওয়া যায় না। তাই নার্স এর চাকরি পাওয়া সহজ হয়। বিদেশে যেমন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও  মধ্যপ্রাচের দেশগুলোতে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ নার্সের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। তাই বিএসসি নার্সিং শেষ করার পর ভবিষ্যৎ এ বাইরের দেশে যাওয়ার সুযোগ থাকে।

বিএসসি নার্সিং এ পদোউন্নাতির সুযোগ রয়েছে। একজন নার্স প্রথমে যদি সিনিয়র স্টাফ পদে নিযুক্ত হন, তাহলে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে নার্সিং সুপারভাইজার পদমর্যাদা পেয়ে থাকেন। পরবর্তীতে এ পদ থেকেও পদোউন্নতির সুযোগ থাকে। নার্সিং কলেজের প্রভাষক, ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল, হাসপাতালে নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট পদে, পদোউন্নতির সুযোগ রয়েছে।

পরিশেষে বলতে চাই যারা নার্সিং পড়ে কিছু করতে চান, তাদের ভালো নার্সিং কলেজে ভর্তি হবে। আমাদের দেশে যোগ্য নার্সের চাহিদা অনেক বেশি, শুধু দেশেই নয়, সারাবিশে^ একজন অভিজ্ঞ নার্সের চাহিদা রয়েছে। তাই ভালো আয়ের সুযোগ পেতে নার্সিং পেশাকে বেছে নিতে পারেন আপনিও।

লেখকের শেষ বক্তব্য

নার্সিং পড়ার সুবিধা অসুবিধা – নার্সিং পড়ার যোগ্যতা সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি নার্সিং পড়ার সুবিধা অসুবিধা – নার্সিং পড়ার যোগ্যতা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।

Leave a Comment