বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় - বুকে ব্যথার ঔষধ

অনেকরই  মাঝেমধ্যে বুকের মাঝখানে ব্যথা হয়। এটি একদম স্বাভাবিক কোন বিষয় হতে পারে আবার কোনো গুরুতর সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। তাই বুকের মাঝখানের এই ব্যথাকে কখনোই অবহেলা করা উচিত হবে না।

বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয়

বুকের মাঝখানে ব্যথা অনেক কারণেই হতে পারে। যদি আপনার মনে হয় যে এটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ (যেমন বুকের তীব্র ব্যথা, যা হাত, কাঁধ বা পিঠে ছড়িয়ে যায় শ্বাসকষ্ট হয়, বমি বমি ভাব হয় বা অতিরিক্ত ঘাম), তাহলে দেরি না করে জরুরি ভালো ডাক্টরের কাছে যান এবং চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

যেকোনো ধরনের বুকের ব্যথা হলে, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে অনেকেই হৃদরোগ হয়েছে বলে মনে করেন। যদিও অনেক সময় এটা হৃদরোগ হতে পারে, তবে ব্যথার অন্য অনেক কারণও হতে পারে।

আর আজ আমরা সে বিষয় জানবো। আসলে কি কারণে আমাদের বুকের মাঝখানে ব্যাথা হয়  এবং এর সমাধান বা ওষুধ কি?

বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয়

বুকের ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা, যার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে এটি কার্ডিয়াক বা অ-কার্ডিয়াক উভয় কারণেই হতে পারে। এটি হতে পারে অ্যাসিডিটি, পেশীর টান, হৃদরোগ, বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে। হৃদরোগ থেকে শুরু করে পাকস্থলীর সমস্যা পর্যন্ত, বুকের ব্যথার কারণ অনেক কিছু হতে পারে।

বুকের ব্যথা হলে কী করবেন?

  • হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে প্রথমেই শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। উদ্বেগ বা প্যানিক পরিস্থিতি আরও খারাপ অবস্থার কারণ হতে পারে। কাজ বন্ধ করে যেখানে আছেন সেখানেই বসে পড়ুন বা শুয়ে পড়ুন।
  • আস্তে আস্তে শ্বাস গ্রহণ করুন এবং বুক ভোরে শ্বাস গ্রহণ করুন। গভীর শ্বাস নেওয়ার ফলে ফুসফুসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবেশ করে, যা বুকে জমে থাকা চাপ থেকে কিছুটা আরাম দেয়।
  • বেশি করে পানি খান। সাথে স্যালাইন খেতে পারেন। যদি ডিহাইড্রেশনের কারণে বুকের ব্যথা হয়, তাহলে পানি খাওয়ার পর আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
  • ব্যথা কমানোর জন্য নিজে থেকে কোনো ওষুধ খাবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে এবং বড় ধরণের বিপদ ঘটতে পারে।
  • যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, বমি বমি ভাব হয় বা অতিরিক্ত ঘাম হয়, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যান। এটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে, যেটার জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।

অ্যাসিডিটির কারণে বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয়

অ্যাসিডিটি বা যেটাকে আমরা বদহজমি বলি। অ্যাসিডিটি কমানোর জন্য কোনো অ্যান্টাসিড গ্রহণ করতে পারেন আবার লেবু পানি কিংবা লেবু চা খেতে পারেন। এটা ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম। অতিরিক্ত মশলাদার, ভাজা বা ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।

কার্ডিয়াক সমস্যার কারণে বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয়

যদি আপনার আগে থেকে হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, এবং আপনার ডাক্তার নাইট্রোগ্লিসারিন ঔষধ দিয়ে থাকেন তাহলে নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট খেয়ে নিন। যদি আপনার সাথে পোর্টেবল অক্সিজেন থাকে, তাহলে তা ব্যবহার করুন। যদি ব্যথা অব্যাহত থাকে এবং আরও খারাপ হতে থাকে তাহলে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন এবং হাসপাতালে নিয়ে যান।

যদি পেশীজনিত কারণে ব্যথা হয় তাহলে হালকা ম্যাসাজ করুন ম্যাসাজ  করলে পেশীর টান কমতে পারে। হালকা স্ট্রেচিং করুন কারণ হালকা স্ট্রেচিং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

বুকের ব্যথার সাথে যদি শ্বাসকষ্ট, ঘাম, মাথা ঘোরা, বা বমির মত উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে জরুরি চিকিৎসা নিন।

আরো পড়ুন: পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - পেট ব্যাথা কমানোর দোয়া

বুকের মাঝখানে ব্যথার কারণ কি

  • হার্ট অ্যাটাক, এনজাইনা ইত্যাদি হৃদরোগের লক্ষণ হিসেবে বুকের ব্যথা হতে পারে।
  • নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি রোগেও বুকের ব্যথা হতে পারে।
  • অ্যাসিড রিফ্লাক্স, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি পাকস্থলীর সমস্যায় কারণে বুকের ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • বুকের মাংসপেশি বা পাঁজরের হাড়ের কোনো সমস্যা হলেও বুকের ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপ মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণেও বুকের মাঝখানে ব্যথা হতে পারে।
  • ভারী কাজ করতে গিয়ে বুকের মাংশপেশী কিংবা রগে টান লেগেও বুকে ব্যাথার সৃষ্টি হতে পারে।

হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা

  • হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে প্রথমেই শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
  • আস্তে আস্তে শ্বাস গ্রহণ করুন এবং বুক ভোরে শ্বাস গ্রহণ করুন।
  • বেশি করে পানি পান করুন।
  • অ্যান্টাসিড গ্রহণ করুন (যদি প্রয়োজন হয়)
  • পরিচিত কাউকে জানিয়ে রাখুন

বুকে ব্যথা হলে কি খাওয়া উচিত

বুকে ব্যথা হলে প্রথমেই বুঝতে হবে এর কারণ কী। কারণের ওপর ভিত্তি করে খাবারের পরিকল্পনা করতে হবে। তবে কিছু সাধারণ খাবার এবং পানীয় রয়েছে যা বুকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণে হয়ে থাকে।

বুকে ব্যথা হলে কি খাওয়া উচিত

অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের কারণে ব্যথা হলে:

  • কলা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে এবং পেটের অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।
  • ওটমিল খেতে পারেন। এটা সহজে হজমযোগ্য এবং পেটকে শীতল রাখতে সহায্য করে।
  • প্রোটিনের চমৎকার উৎস যা সহজে হজম হয় এবং অ্যাসিডিটি বাড়ায় না।
  • সিদ্ধ করা সবজি যেমন গাজর, বীট বা আলু খেতে পারেন।
  • দই পেটে ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে এবং অ্যাসিডিটি কমাতে সহায্য করে।
  • আদার চা প্রাকৃতিকভাবে হজমে সহায়ক এবং গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির কারণে সৃষ্ট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • হালকা গরম পানি পেটে জমে থাকা গ্যাস কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং বুকে ব্যাথা থেকে আরাম দেয়।

হার্ট সম্পর্কিত সমস্যার কারণে ব্যথা হলে:

  • হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য কম লবণযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো, কারণ লবণ রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
  • ফল ও সবজি, বিশেষ করে যারা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, যেমন কলা, আপেল, এবং পালং শাক, হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • আদা এবং রসুন হার্টের জন্য উপকারী এবং রক্ত সঞ্চালনে সহায়ক হতে পারে।
  • মাছ, বিশেষ করে স্যামন বা ম্যাকারেল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

সাধারণ যে খাবারগুলা এড়িয়ে চলবেন:

বুকের ব্যথা হলে অতিরিক্ত মশলাদার খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দিতে পারে। ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল বুকের ব্যথা বাড়াতে পারে, তাই এগুলি এড়িয়ে চলবেন।

আরো পড়ুন: দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় - গ্যাসট্রিক দূর করার উপায়

বুকের মাঝখানে ব্যথার ঔষধ

বুকের মাঝখানে ব্যথার ঔষধ নির্ভর করে ব্যথার কারণের ওপর। যেহেতু বুকের ব্যথার বিভিন্ন কারণ হতে পারে- যেমন অ্যাসিডিটি, পেশীর টান, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি, তাই সঠিক ঔষধ নির্ধারণ করার আগে ব্যথার কারণ নির্ণয় করা জরুরি।

অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের কারণে:

অ্যান্টাসিড: বুকের জ্বালাপোড়া বা অ্যাসিডিটির কারণে ব্যথা হলে, অ্যান্টাসিড (যেমন: রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল) ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলি পেটের অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

প্রোটন পাম্প ইনহিবিটারস (PPI): ওমিপ্রাজল, এসোমিপ্রাজল প্রভৃতি ঔষধ গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাঞ্জাইনার কারণে:

নাইট্রোগ্লিসারিন: যদি আপনার ব্যথা হৃদরোগজনিত (যেমন অ্যাঞ্জাইনা) বলে মনে হয়, নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট ব্যবহার করতে পারেন। এটি হার্টের রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

অ্যাসপিরিন: অ্যাসপিরিন রক্তের জমাট বাঁধা কমাতে সাহায্য করে এবং এটি হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে জরুরি ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পেশীর টান সংক্রান্ত কারণে:

পেইন রিলিভারস: প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন সাধারণ পেশীজনিত ব্যথা বা অস্থি সংক্রান্ত ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়।

মাসল রিল্যাক্সেন্ট: বুকের পেশী টান বা কস্টোকন্ড্রাইটিসের কারণে ব্যথা হলে মাসল রিল্যাক্সেন্ট যেমন ডাইক্লোফেনাক বা মেপ্রোবামেট ব্যবহৃত হতে পারে।

মানসিক চাপ বা প্যানিক অ্যাটাকের কারণে:

অ্যান্টি-অ্যানজাইটি মেডিসিন: প্যানিক অ্যাটাক বা উদ্বেগজনিত কারণে বুকের ব্যথা হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি-অ্যানজাইটি ঔষধ যেমন লোরাজেপাম বা আলপ্রাজোলাম নিতে পারেন ।

যদি আপনার  কখনো বুকের মাঝে ব্যাথা অনুভূত হয় তবে।  চিন্তিত না হয়ে ডাক্তার এর পরামর্শ নিন এবং ওষুধ সেবন করুন। সাথে ঘরোয়া চিকিৎসা গুলা অনুসরণ করুন। মনে রাখবেন ডাক্তার এর পরামর্শ ব্যাতিতকোনো ওষুধ সেবন এবং অতিরিক্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।

লেখকের শেষ বক্তব্য

বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।


পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
comment url