শরীরের রক্ত বৃদ্ধির উপায় - কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে

মানবশরীরে রক্ত খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি উপাদান। শরীরে রক্তের ঘাটতি হলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। তাই শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত থাকা আবশ্যক। শরীরে রক্ত কিভাবে বৃদ্ধি পায়, কি খেলে রক্ত বাড়ে অনেকের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা নেই।

কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে

তবে শরীর সুস্থ থাকতে রক্তের মান কম হলে, শরীরে অচল হয়ে পড়ে। তাই জানতে হবে কিভাবে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি পায় এবং কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে। বিষয়গুলো যদি সম্পূর্নভাবে জানতে চান, তাহলে আজকের অর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। কারণ আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো শরীরের রক্ত বৃদ্ধির উপায় ও কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে।

শরীরের রক্ত বৃদ্ধির উপায়

রক্ত হলো এক ধরনের তরল যোজক কলা। দেহের অভ্যন্তরীন গুরুত্বপূর্ন অংশগুলোর মধ্যে রক্ত একটি। রক্ত মানবশরীরের জন্য খুবই উপকারি একটি উপাদান। শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন কাজ রক্ত দ্বারা সম্পাদিত হয়। দেহের বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদনে রক্তের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, শ^সনমূলক কাজ রক্ত করে থাকে, দেহের রেচন পদার্থসমূহ রক্তের মাধ্যমে অপসারিত হয়, দেহের তাপমাত্রা রক্ষা করে, আয়রনের সমতা বজায় রাখে, শরীরের কোনো অংশ ক্ষত হলো সেটা সারাতে রক্তের ভূমিকা রয়েছে, এসব ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ন কাজ রক্ত মানবশরীরে করে থাকে।

শরীরে রক্ত কমে গেলে শরীরে বিভিন্ন ক্ষতি হয়। শরীরে রক্তের ঘাটতি বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে। পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় না থাকলে রক্তের পরিমাণ কমে যায় এবং শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত থাকা অবশ্যক। এমন অনেক খাবার আছে, যেগুলো খাওয়ার ফলে শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সে খাবারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

আরো পড়ুন: হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার - হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

শরীরে রক্ত হয় কি খেলে

মানবদেহের জন্য রক্ত খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি উপাদান। যা শরীরের মধ্যে থেকে, শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ করে ও শরীরে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বহন করে। মানবশরীর রক্ত ছাড়া চলতে পারে না, বলা যায় বাঁচতে পারে না। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। আর সে অক্সিজের রক্তের মাধ্যমে সরবরাহ হয়। তাই বেঁচে থাকার জন্য শরীরের রক্তের মান বেশি থাকতে হবে, কমে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শরীরে সৃষ্টি হয়। এমন কয়েকটি খাবার আছে যেগুলো খাদ্য তালিকায় থাকলে রক্ত হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক শরীরে রক্ত হয় কি খেলে।

সবজি: প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তাজা সবজি রক্ত বাড়াতে রাখতে হবে। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে, রক্তের পরিমাণ কমে যায়, আর তাজা সবজির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা খেলে রক্ত বৃদ্ধি পায়। তাজা সবজিগুলোর মধ্যে ব্রকলি, আলু, কুমড়ো, টমেটো প্রভৃতি খাবারগুলো রাখবেন।

শুকনো ফল: শুকনো ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে কিসমিস, অ্যাপ্রিকট, খেজুর প্রভৃতি। এ খাবার গুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আয়রন ও আঁশ রয়েছে, যার কারণে এ খাবারগুলো খেলে শরীরে রক্ত হয়।  

বাদাম: যে কোনো ধরনের বাদাম যেমন কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, চিনা বাদাম, আখরোট এ খাবারগুলো খেলে রক্ত হয়। 

শস্যজাতীয় খাবার: শস্যজাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে চাল, গম, ওটস এবং বার্লি এগুলো খেলে রক্ত হয়। এ খাবারগুলো আয়রনের অন্যতম উৎস যা খাওয়ার ফলে শরীরে রক্ত বাড়ে। 

ডিম: উচ্চমাত্রায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলোর মধ্যে ডিম একটি। তাই ডিম খাওয়ার ফলে শরীরের রক্তের মান বৃদ্ধি পায়।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য: ভিটামিন সি এর ঘাটতি শরীরের থাকলে রক্তের পরিমান কমে যায়। তাই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এ জাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে লেবু, কমলা লেবু, মালটা, আঙুর, স্ট্রবেরি, টমেটো, ইত্যদি খাবারে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। 

প্রানিজ খাদ্য: প্রানীজ খাবারগুলো মধ্যে কলিজা, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এসব খাবার রক্ত বাড়াতে খাবেন।

কলাই বা শুটিজাতীয় খাদ্য: শুটি জাতীয় খাবারগুলো মধ্যে রয়েছে সয়াবিন, বিনজাতীয় খাদ্য এবং ছোলা এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। যার কারণে এ খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় থাকলে রক্ত হয়।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: শরীরে রক্ত হওয়ার জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ন। আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলো মধ্যে লাল মাংস, ডিম, কলিজা, কচু, পালংশাক, আলু সিদ্ধ ইত্যাদি খাবার তালিকায় রাখুন।

শরীরের রক্ত বৃদ্ধিও উপায়

কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে

সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে আমাদের শরীরে রক্তের মান ঠিক থাকা লাগবে। খাদ্য তালিকায় যদি সঠিক খাবার নিয়মিত রাখা যায়, তাহলে রক্তের মান ঠিক থাকবে এবং রক্ত বাড়বে। রক্ত বাড়ার জন্য এমন কিছু ফল রয়েছে যেগুলো নিয়মিত খেলে শরীরের রক্তের ঘাটতি পূরন হবে। বিশেষ করে আয়রন ও ভিটামিন সি জাতীয় ফল রক্ত বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে।

কমলা: ভিটামিন সি জাতীয় ফলগুলোর মধ্যে অনত্যম উৎস হলো কমলা, যা রক্ত উৎপাদনে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কমলা থাকলে রক্তস্বল্পতা দূর হয় এবং রক্ত বাড়ে। 

ডালিম: ডালিমে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও ফাইবার যা রক্ত বৃদ্ধিতে সহয়ক ভূমিকা রাখে এবং মানবদেহে রক্ত চলাচল ঠিক রাখে। তাই রক্ত বাড়াতে ডালিম ফল খেতে পারেন। 

লাল আঙুর: আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফাইবারের ভালো উৎস হলো লাল আঙ্গুর যা খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে। তাই রক্ত বাড়াতে যদি ফল খেতে চান তাহলে লাল আঙ্গুর খাবার তালিকায় রাখবেন। 

লেবু: লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা খাওয়ার ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে। তাই রক্ত বৃদ্ধি করতে ও শরীরে রক্তের ঘাটতি পূরণ করতে লেবু খাবেন। 

স্ট্রবেরি: স্ট্রবেরি খুবই স্বাস্থকর একটি ফল। স্ট্রবেরিতে থাকা পুষ্টি উপাদান শরীরে রক্তের বৃদ্ধি ঘটায় এবং রক্তের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতাকে উন্নত করে। 

মালটা: মালটায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা রক্ত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছারাও যাদের রক্তে চর্বির পরিমান বেশি তাদের রক্তে চর্বির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে মালটা ফল। 

আপেল: রক্ত বাড়াতে আপেল খুবই উপকারি একটি ফল। আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা খাওয়ার ফলে হিগ্লোবিন বাড়ে। 

জাম্বুরা: জাম্বুরায় থাকা ভিটামিন সি রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছারাও রক্তকে পরিষ্কার করতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে জাম্বুরা।

উপরের বলা ফলগুলো রক্ত বাড়াতে নিয়মিত খাবেন। এ ফলগুলো শুধু শরীরে রক্ত বাড়ায় না, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। 

আরো পড়ুন: চোখের সমস্যা দূর করার উপায় - চোখের পাওয়ার কেন কমে

কোন সবজি খেলে রক্ত হয়

আমাদের স্বাস্থ ভালো রাখতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবজি রাখা প্রয়োজন। নিয়মিত সবজি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকে এবং রক্ত চলাচল ঠিক থাকে। আর শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। দুর্বলতা, মাথা ব্যাথা, মাথা ঘুরানো, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া এ ধরনের সমস্যাগুলো শরীরে রক্ত কম হলে হয়ে থাকে। এ সমস্যাগুলো যাতে না হয়, এজন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবজি জাতীয় খাবার রাখা জরুরি। এমন কিছু সবজি আছে যেগুলো খেলে রক্ত হয়। আপনার শরীরে যদি রক্ত কম হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের বলা সবজিগুলো খাবার তালিকায় রাখুন উপকার পাবেন। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন সবজি খেলে রক্ত হয়।

পালংশাক: পালংশাক আয়রনের ভালো একটি উৎস। এটি খেলে খুব সহজেই রক্তে আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায়, রক্ত বেশি হয় এবং শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে থাকে। তাই পালংশাক নিয়মিত খাবার তালিকায় রাখবেন।

কচুর লতি: কচুর লতিতে ফাইবার বা আঁশ ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। নিয়মিত যদি কচুর লতি খাওয়া যায় তাহলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে রক্ত তৈরি করে। 

ব্রকলি: ব্রকলি খুবই স্বাস্থ উপকারি একটি খাবার। ব্রকলিতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আঁশ ও ফোলেট রয়েছে এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিস সি ব্রকলি থেকে পাওয়া যায়। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ব্রকলিতে থাকার কারণে, এটি খাওয়ার ফলে রক্ত হয়। 

লেটুস: লেটুস স্যালাড, স্যুপ, স্যান্ডউইচ ও র‌্যাপ বানিয়ে খাওয়া হয়। এ খাবার রান্না করে অথবা কাঁচা দুইভাবেই খাওয়া যায়। লেটুস নিয়মিত খেলে শরীরে রক্ত তৈরি হয়, তাই শরীরে রক্তের মাত্রা ঠিক রাখতে লেটুস খাবেন। 

কঁচু: মানবশরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো কঁচুর মধ্যে রয়েছে। আর সে উপাদানগুলো মানবশরীরে রক্ত তৈরিতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। 

কঁচুর শাক: কঁচু শাক থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি এ শাকে থাকার কারণে এটি খেলে শরীরে রক্ত হয়। এ খাবারটি যেমন পুষ্টিকর তেমনি খেতেও সুস্বাদু। 

আলু: আলু সেদ্ধ থেকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যা খেলে শরীরে রক্ত তৈরি হয় পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াসহ বিভিন্ন শারিরিক উপকারিতা আলু সেদ্ধ থেকে পাওয়া যায়। 

কুমড়ো: কুমড়ো আয়রনের ভালো উৎস, যা খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়। পাশাপাশি রক্তে আয়রনের মাত্রা ঠিক থাকে এবং রক্ত বৃদ্ধি পায়। 

টমেটো: রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে টমেটো খুবই উপকারি একটি খাবার। টমেটো থেকে প্রচুর পরিমাণে  ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যার কারণে রক্ত তৈরিতে এ সবজি বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। 

নিয়ম করে উপরের বলা সবজিগুলো যদি খাবার তালিকায় রাখতে পারেন, তাহলে শরীরে রক্ত হবে। এ খাবারগুলো শুধু শরীরে রক্ত হওয়াতে সহায়তা করে না, পাশাপাশি শরীরকে বিভিন্ন রোগ  থেকে প্রতিরোধ করে।

কোন মাছ খেলে শরীরে রক্ত হয়

মাছ বাঙালিদের প্রিয় একটি খাবার। মাছ আমাদের শরীরের জন্য অত্যান্ত প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য। মাছে থাকা পুষ্টিউপাদান ও ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। আমিষের ভালো উৎস হলো মাছ, আমাদের শরীরে যে পরিমান আমিষ প্রয়োজন, তা সম্পূর্ন মাছ থেকে পাওয়া যায়। মাছ মানবশরীরের রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সব ধরনের মাছ খেলে শরীরে রক্ত তৈরি হয় তবে এমন কিছু মাছ আছে যেগুলো খেলে শরীরে সহজেই রক্ত তৈরি হয়। অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন কোন মাছ খেলে শরীরে রক্ত হয়। চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নিন কোন মাছ খেলে শরীরে রক্ত হয়।

যে মাছগুলো খেলে শরীরে রক্ত তৈরি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো শিং মাছ। শিং মাছ আমাদের সবার পরিচিত একটি মাছ, তাই এটি পাওয়া খুব একটা কঠিন নয়। এ মাছের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান মানবশরীরে রক্ত তৈরিতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। তবে শুধু শিং মাছে রক্ত বাড়ে এমন টা নয়, অনান্য সব ধরনের মাছগুলো নিয়মিত খাবার তালিকায় থাকলে শরীরে রক্ত হয়। সামুদ্রিক মাছগুলো খেলেও শরীরে রক্ত হয়, রক্তের পরিমান বাড়াতে সামুদ্রিক মাছগুলো খাবেন। সামুদ্রিক মাছগুলোর মধ্যে ইলিশ, ছুরি, লইট্টা, কোরাল, সোনালী বাটা, ফলিচান্দা, চেলা, টুনা, রূপচাঁদা, স্যামন ও বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি। এ ধরনের সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে লৌহ থাকে যার কারণে দ্রুত রক্তে হিগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।

তবে এ ধরনের মাছগুলো নিয়মিত না খেতে চাইলে, অনান্য মাছগুলোও খেতে পারেন। অনান্য সব ধরনের মাছ যদি আপনি খান, তাহলেও  শরীরে রক্ত হবে।

শরীরে রক্ত কম হওয়ার লক্ষন

শরীরে রক্তের ঘাটতি বড় একটি সমস্যা। শরীরে রক্তের ঘাটতি হলে সেটাকে অ্যামোনিয়া বলা হয়। শরীরে রক্ত কমে যাওয়া এটি কোনো রোগ নয় বরং রোগের উপসর্গ। এ সমস্যাই ছোট থেকে বড় সবাই ভুগতে পারে। শরীরে রক্ত কমে যাওয়ার বড় একটি কারণ হলো পুষ্টিকর খাবার খাবার তালিকায় না রাখা। পুষ্টিহীনতায় ভুগার কারনে শরীরে রক্ত কমে যায়। এছারাও শরীরে রক্ত কম হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কোনো কারণে যদি শরীরে  অতিরিক্ত  রক্তক্ষরন হয় তাহলেও রক্ত কমে যায়। শরীরে রক্ত কমে গেলে বেশ কিছু লক্ষন শরীরের মধ্যে প্রকাশ পায়। জেনে নিন শরীরে রক্ত কম হওয়ার লক্ষনগুলো কি-

  • শরীরে রক্ত কম হলে ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়। মুখ, মাড়ি, ঠোঁট এসব অংশ ফ্যাকাশে দেখায় শরীরে রক্ত কমে গেলে। 
  • হ্রদস্পন্দন স্বাভাবিকের থেকে কমে যায় এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হয়। 
  • শরীরে রক্ত কমে গেলে চুল পড়ার সমস্যা হতে দেখা যায়।
  • অল্প পরিশ্রমে শরীর ক্লান্ত হয়ে যাবে, যদি আপনার শরীরে রক্তের ঘাটতি থাকে। 
  • শরীরে রক্ত কমে গেলে, শরীর দুর্বল অনুভূত হয় এবং কোনো কাজ করার আগ্রহ থাকে না। 
  • হাঁটতে সমস্যা হয় এবং অল্প হাঁটলেই হাঁপিয়ে যাবে। 
  • খাওয়ার রুচি কমে যায়, রক্ত কম হলে। 
  • অনেক  সময় হাত পা ঠান্ডা হতে দেখা যায়, শরীরে রক্ত কমে গেলে। 
  • মুখের মধ্যে ঘা হয় এবং খাবার গিলতে অসুবিধা হয়। 
  • মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে। 
  • বুকে ব্যাথা ও চাপের সৃষ্টি হয়।
  • চোখে ঝাপসা দেখার মতো এ লক্ষনগুলো প্রকাশ পায় শরীরে রক্ত কমে গেলে।

উপরের লক্ষনগুলো শরীরের মধ্যে প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। চিকিৎসকেরা রক্তশূন্যতার সঠিক কারণ খুজে বের করে, এ সমস্যার সমাধান করবেন।

আরো পড়ুন: দাঁতের ক্ষয় রোধের উপায় - দাঁতের ক্ষয় পূরন

হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

লহিত রক্ত কণিকার একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান হলো হিমোগ্লোবিন। রক্তের রং মূলত হিমোগ্লোবিনের কারনেও লাল হয়ে থাকে। আমাদের শরীরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন কাজগুলো হিমোগ্লোবিন করে থাকে। সে কাজগুলোর মধ্যে হিমোগ্লোবিনের প্রধান একটি কাজ হলো ফুসফুস থেকে অক্সিজের সরবরাহ করে আমাদের পুরো শরীরে তা পৌঁছে দেওয়া।  হিমোগ্লোবিন যদি আমাদের শরীরে স্¦াভাবিকের থেকে কমে যায়, তাহলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন আমাদের হতে হয়। মানবশরীরে যদি রক্ত কম হয়, তাহলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাটা কমে যায়।

 মানবশরীরে নারী পুরুষের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের শরীরে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো প্রতি ডেসি লিটারে ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম। অপরদিকে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হলো ১২ থেকে ১৫.৫ গ্রাম। এর থেকে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে শরীরে রক্ত দিতে হয়। এখন প্রশ্ন হলো হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়। অনেকের বিষয়টি সম্পর্কে ধারনা নেই যে হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়। তবে সকল মানুষের সেটা জেনে রাখা উচিত।  তো চলুন নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়।

হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কমে গেলে সেটাকে রক্তশূন্যতা বা অ্যামোনিয়া বলা হয়। আর  রক্তশূন্যতার সমস্যা শরীরে দেখা দিলে, শরীরে রক্ত দিতে হয়। তবে সবার ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা  একই পরিমাণে কম হলে রক্ত দিতে হয় না। যেমন ধরুন, অস্ত্রপাচরের আগে যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৮ গ্রাম থাকলে রোগিকে রক্ত দিতে হয়। গর্ভবতী নারীদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১১ এর থেকে কমে গেলে রক্ত দিতে হয়। আবার দীর্ঘদিন ধরে রক্তশূন্যতায় ভুগলে, সে সময় যদি কারও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৭ ডেসি লিটার থাকে তাহলে রোগিকে রক্ত দিতে হয়। তাই হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়, সে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক তথ্য একমাত্রা চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করার পর বলতে পারেন।

পরিশেষে কিছু কথা বলতে চাই, যেকোনো সমস্যা প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ করায় উত্তম। আমাদের জীবনযাত্রা যদি সঠিক হয়ে, খাদ্যভাস যদি আমরা সঠিক রাখি তাহলে শুধু রক্ত শূন্যতায় নয় বিভিন্ন রোগ থেকে আমরা বেঁচে থাকবো। শরীরে রক্ত কম হওয়ার বিশেষ কারন হলো শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকা, তাই আপনার শরীরে যদি রক্ত বৃদ্ধি করতে চান এবং রক্ত শূন্যতা থেকে বাঁচতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন।

আরো পড়ুন: রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় কখন - কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত

লেখকের শেষ বক্তব্য

শরীরের রক্ত বৃদ্ধিও উপায় - কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে সে সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি শরীরের রক্ত বৃদ্ধিও উপায় - কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে সে সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
comment url