মসজিদে প্রবেশের দোয়া - মসজিদে প্রবেশের সুন্নত সমূহ
মসজিদে প্রবেশ ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া ও কিছু সুন্নত রয়েছে। আর সে দোয়া ও সুন্নতগুলো প্রত্যেক মুসলিমের জানা আবশ্যক। যাদের এ বিষয়গুলো জানা নেই, তারা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পড়বেন। কারণ আমরা আজকের আর্টিকেলে মসজিদে প্রবেশের দোয়া ও মসজিদে প্রবেশের সুন্নতসমূহ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো।
মসজিদ হলো মুসলিম জাতির জন্য শ্রেষ্ঠ একটি জায়গা। সেখানে প্রবেশ করার সময় কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো মুসলিম উম্মাহদের পালন করা উচিত। কি সে নিয়ম? অনেকের বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারনা নেয়। চলুন তাহলে বিস্তারিতভাবে জেন নেওয়া যাক, মসজিদে প্রবেশের সুন্নত ও নিয়মগুলো সম্পর্কে।
মসজিদে প্রবেশের সুন্নত সমূহ
মসজিদ হলো মহান আল্লাহ তায়ালার ঘর, পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গা হলো মসজিদ। যেখানে গিয়ে পাঁচওয়াক্ত সালাত আদায় ও আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগি করা হয়। সকল পুরুষদের মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করার প্রতি গুরুত্বরোপ করা হয়েছে। যারা প্রকৃত মুমিন তারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়েই আদায় করে এবং মসজিদের সাথে তাদের একটা আন্তরিক ভালোবাসা থাকে। রাসূল সা. বলেছেন-যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে থাকে সে আরশের ছায়ার স্থান পাবে। রাসুল সা. এ কথাটি দ্বারা মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে বিষেশভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
একজন প্রকৃত ইমাদার ব্যক্তির মসজিদ যাওয়া যেমন জরুরি তেমনি মসজিদে প্রবেশের সুন্নত সমূহগুলো পালন করাও জরুরি। তাই আপনারা যদি প্রকৃত ইমানদার হয়ে থাকেন এবং রাসূল সা. কে ভালোবেসে থাকেন তাহলে মসজিদে প্রবেশের সুন্নত সমূহগুলো জেনে অবশ্যই তা পালন করতে হবে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক মসজিদে প্রবেশের সুন্নত সমূহগুলো কি কি।
- মসজিদে প্রবেশের সময় শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ পড়ে নিতে হবে।
- এরপর রাসুল সা. এর ওপর দুরুদ পড়তে হবে।
- দুরুদ পড়ার পর মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়ে নিতে হবে।
- মসজিদে ডান পা আগে দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
- ইতেকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করতে হবে।
- জুতা খুলে মসজিদে প্রবেশ করা।
- পাক পবিত্র হয়ে মসজিদে প্রবেশ করা সুন্নাত।
- মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল নামাজ আদায় করে মসজিদে বসা।
- মসজিদে দুনিয়াবি কোনো গল্প গুজোব না করা।
- মুখে অথবা শরীরে দুর্গন্ধ থাকা অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ না করা। রাসুল (সা.) কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ নিষেধ করেছেন।
- নামাজে ব্যাঘাত হয় এমন কোনো কাজ না করা।
- কারও সাথে ঝগড়া বা তর্ক না করা।
উপরের বলা সুন্নাহগুলো মসজিদে প্রবেশের সময় মনে রাখবেন এবং সেগুলো পালন করবেন।
আরো পড়ুন: কীভাবে আল্লাহর প্রিয় হবো - আল্লাহর প্রিয় বান্দা কারা
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সুন্নত
মুসলিমদের সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদ আল্লাহর কাছে প্রিয় একটি জায়গা, সেখানে কোনো বান্দা গিয়ে ইবাদত করলে মহান আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। মসজিদে প্রবেশ করার এবং মসজিদ থেকে বের হওয়ার কিছু সুন্নাত আছে যেগুলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পালন করতেন। তাই একজন খাঁটি মুমিন ব্যাক্তির সেসব সুন্নাহগুলো পালন করতে হবে। সে সুন্নাহগুলো পালন করলে মহান আল্লাহ তায়ালা সে ব্যক্তির মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেয়। মসজিদে প্রবেশের সময় করনীয় সুন্নাহগুলো আগেই আলোচনা করেছি। এখন জেনে নিন মসজিদ থেকে বের হওয়ার সুন্নতসমূহ গুলোর সম্পর্কে।
- মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় প্রথমে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়ে বের হওয়া।
- এরপর রাসুল (সা.) এর উপর দুরুদ শরীপ পাঠ করা।
- তারপর মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া পড়া।
- মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে রাখা, এরপর ডান পায়ে জুতা আগে পড়া এবং বাম পায়ে পরে জুতা পড়া।
উপরের বলা সুন্নাহগুলো মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় প্রত্যেক মুসলিমকে করতে হবে। কারণ এ সুন্নাহগুলো আল্লাহর কাছে প্রিয় এবং আমাদের প্রিয় নবী এগুলো করতেন।
মসজিদে প্রবেশের দোয়া
ইসলাম ধর্মের পাঁচটি রোকনের মধ্যে নামাজ হলো দ্বিতীয় রোকন। আর এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়েই আদায় করতে হয়। মসজিদে প্রবেশের সময় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলিম উম্মাহকে দোয়া শিখিয়েছেন। যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের সময় সে দোয়াটি পড়ে আল্লাহর রহমত তার উপর থাকে। হযরত আবু উসাইদ রা. থেকে বর্নিত, রাসূল সা. কলেছেন-যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন সে যেন বলে
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লি আবওয়াবা রহমাতিকা’
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।
মসজিদে প্রবেশের সময় নিচের দোয়াটিও পড়তে পারেন, কোনো কোনো বর্ননায় এ দোয়াটিও এসেছে। মসজিদে প্রবেশের সময় দুরুদ পড়ার সাথে এ দোয়াটি পড়বেন।
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রসুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাফতাল লি আবওয়াবা রহমাতিক।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি, দরুদ ও শান্তি আল্লাহর রসুলের ওপর বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।
অন্য বর্ননায় মসজিদে প্রবেশের যে দোয়াটি এসেছে সে দোয়াটি হলো-
উচ্চারণ: আউজুবিল্লাহিল আজিম, ওয়া বি ওয়াজহিহিল কারিম, ওয়া সুলতানিহিল কাদিম, মিনাশ শয়তানির রাজিম।
অর্থ: আমি বিতারিত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি মহান আল্লাহর এবং তার সম্মানিত সত্তার এবং সুদৃঢ় শক্তিমত্তার।
উপরে উল্লোখিত দোয়াগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি দোয়া মসজিদে প্রবেশ করার সময় বলতে পারেন। মসজিদে প্রবেশের দোয়া মসজিদের গেট থেকে পড়বেন না, যে অংশে নামাজ পড়া যায় সে জায়গায় দোয়াটি পড়বে। এ বিষয়টি ফুকাহায়ে কেরামের মত।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের মধ্য দিয়ে মুসল্লিরা একত্রিত হয় মসজিদে। নামাজের পাশাপাশি সেখানে মুসলিমরা আল্লাহর ইবাদত পালন করে থাকে। সেখানে শুধু মহান আল্লাহ তায়ালাকে শ্মরন করা হয়। সে জায়গায় কোনো ধরণের অশ্লীল কথাবার্তা বলা হয় না। কারণ মসজিদ হলো আল্লাহর ঘর, সর্বত্তোম জায়গা। সে মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় কিছু নিয়ম আছে, যেগুলো মুসলিমদের জন্য পালন করা আবশ্যক। সে নিয়মগুলোর মধ্যে একটি হলো মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া। মসজিদে প্রবেশের সময় যেমন দোয়া পড়ে প্রবেশ করতে হয় , অনুরূপভাবে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়তে হয়। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় কোন দোয়াগুলো পড়বেন জেনে নিন।
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাত, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদ্বলিক, আল্লাহুম্মা আসিমনি মিনাশ শায়ত্বনির রজিম।
অর্থ: আল্লাহর নামে বের হচ্ছি। আল্লাহর রাসুলের উপর দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাগুলো খুলে দিন। হে আল্লাহ, আমাকে বিতারিত শয়তান থেকে রক্ষা করুন।
শুধু নিচের আয়াতটুকুও মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় পড়তে পারেন। আয়াতটি হলো-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আলআলুকা মিন ফাদলিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার অনুগ্রহপ্রত্যাশী।
হাদিসে এসেছে , হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্নিত- হযরত মুহাম্মদ (সা.) মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় উপরের দোয়াগুলো পড়তেন। বান্দা যখন তা বলবে তখন শয়তান বলে, সে সারা বেলা আমার থেকে সুরক্ষিত অর্থ্যাৎ শয়তানের অনিষ্ট থেকে সে মুক্ত। ( সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৬)
মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় রাসুল (সা.) এর সুন্নতগুলো পালন করা অত্যবশকীয়। কারণ যারা রাসুল (সা.) এর সুন্নাত পালন করবে, তারা জান্নাতের অধিবাসি হবে। এক হাদিসে এসেছে রাসুল সা. বলেছেন- বানী ইসরাইলী বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল, আর আমার উম্মতেরা বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে, সকলেই জাহান্নামে যাবে কিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। সাহাবাগন জিজ্ঞাসা করলেন এ দল কারা? রাসুল সা. বললেন যারা আমার সুন্নতের উপর কায়েম থাকবে। ( তিরমিজি, হাদিস: ২৫৭৮)
এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, প্রত্যেক মুসলিমের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর সুন্নত পালন করা অত্যবশকীয়।
আরো পড়ুন: ইসলামে ধনী হওয়ার উপায় - দ্রুত ধনী হওয়ার আমল
লেখকের শেষ বক্তব্য
মসজিদে প্রবেশের দোয়া - মসজিদে প্রবেশের সুন্নত সমূহ সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি মসজিদে প্রবেশের দোয়া - মসজিদে প্রবেশের সুন্নত সমূহ সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।