ধনী হওয়ার চেষ্টা প্রায় সকলেই করে থাকেন, তবে সবার চেষ্টা সফল হয় না। ইসলাম আমাদের প্রতিটি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমল করলে অবশ্যই আমরা ধনী হতে পারবো। তাই ধনী হওয়ার বিষয় নিয়ে কুরআন ও হাদীস কি বলে সেটা আমাদের জানতে হবে। যদি আপনি কুরআন ও হাদীস মেনে আমল করেন তাহলে খুব সহজেই ধনী হতে পারবেন। ইসলামে ধনী হওয়ার উপায় সম্পর্কিত হাদিস এবং কুরআন কি বলে এ নিয়ে আজকের আলোচনা। জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
ধনী হওয়ার ইচ্ছা প্রায় সবার, এর জন্য মানুষ প্রতি নিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই চেষ্টা কেউ সৎ পথে, কেউবা অসৎ পথে। তবে অসৎ পথে টাকা উপার্জন করার শিক্ষা কুরআন আমাদের দেয়নি। সবসময় সৎ পথে চলে, সঠিক ভাবে আমল করে টাকা উপর্জন করতে হবে। তাই আপনারা যদি ধনী হওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে ইসলামে ধনী হওয়ার উপায় কি, কীভাবে আমল করলে ধনী হওয়া যায় সে বিষয় গুলো আপনাদের জানতে হবে। চলুন বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে জেনে নিই।
ইসলামে ধনী হওয়ার উপায়
ইসলামে ধনী হতে নিষেধ করা হয়নি, তবে হালাল ভাবে উপর্জন করে ধনী হতে হবে। অবৈধ ভাবে যারা উপার্জন করে তাদের আল্লাহ তায়ালা পচ্ছন্দ করেন না। উপার্জন করতে গিয়ে টাকার লোভে অনেকেই আমরা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ি। তবে এটা ইসলামে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। অবৈধ ভাবে টাকা উপার্জন করলে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে এবং পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি। তাই শাস্তি থেকে বাঁচতে আমাদের ইসলামে ধনী হওয়ার উপায়গুলো জানতে হবে এবং ধনী হওয়ার জন্য সে অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। ইসলামে ধনী হওয়ার উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো হালাল ভাবে বৈধ পন্থায় ব্যবসা করা। হালালভাবে ব্যবসা করতে হলে কিছু পদ্ধতি এবং কিছু শর্ত মেনে ব্যবসা করতে হবে। তিন সিস্টেমে ব্যবসা করার চিন্তা করতে হবে।
মুশারাকা: দুই জনে যৌথ ব্যবসা করতে পারেন। দুই জনের মূলধনে এ ব্যবসা করতে পারেন, দুইজনের মূলধনের পরিমাপ সমান হলে লাভের টাকা দুইজনে সমান ভাবে নিবেন।
মুযারাবা: দুই জন মিলে এভাবে ব্যবসা করতে পারেন, কারও যদি সামর্থ না থাকে তাহলে সে এভাবে ব্যবসা করতে পারবে। একজন দিবেন মূলধন অপরজন শ্রম। এ পদ্ধতিতে লভ্যাংশ দুইজনের মধ্যে চুক্তিহারে বন্টিত হবে। রাসূল সা. এভাবে ব্যবসা করেছিলেন।
মুরাবাহা: লাভ লোকসানের ভিত্তিতে নগদ মূল্যে ক্রয় বিক্রয়ের একক ব্যবসা।
কয়েকটি শর্ত মেনে ব্যবসা করতে হবে, শর্তগুলো হলো-
- মিথ্যা বলে, প্রতারনা করে ব্যবসা করা যাবে না, সততার সাথে ব্যবসা করতে হবে।
- ব্যবসার পন্য বৈধ হতে হবে অবৈধ পন্য ব্যবহার করা যাবে না।
- ওজনে কম বা বেশি করা যাবে না।
- ব্যবসার সাথে সুদের কোনো কারসাজি থাকবেনা।
- কারো পন্য আত্মসাৎ করে ব্যবসা করা যাবে না, আমনতের খিয়ানত করা যাবেনা।
- ভেজাল উপায়ে ব্যবসা করা যাবে না।
এ ধরনের অপকর্ম করে ব্যবসা করার হুকুম ইসলামে নেই। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সা. বলেছেন যে ব্যক্তি ব্যবসায় মানুষকে ধোকা দেয় সে আমার উম্মত নয়।
ব্যবসা করতে হলে ব্যবসায়ীকে এ চারটি গুন থাকা লাগবে আমানতের খিয়ানত না করা, সত্য কথা বলা, উত্তম চরিত্র এবং বৈধ পন্য বা হালাল খাবার। এ চারটি গুন রেখে কেউ ব্যবসা করলে আল্লাহ তায়ালা তার ব্যবসায় বরকত দিবেন এবং পরকালেও এর জন্য পুরষ্কার রয়েছে।
উপরের পদ্ধতিগুলো মেনে আপনাকে ব্যবাসা করতে হবে। সে আপনি যেকোনো ব্যবসা করতে পারেন বেকারির ব্যবসা, ফলের দোকান, আতর টুপি ও তসবির ব্যবসা, মুদিখানার দোকান, চায়ের দোকান ইত্যাদি তাতে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে আপনি ব্যবসায় সফল হতে পারবেন এবং ধনী হতে পারবেন। এছারাও কিছু আমল আছে যেগুলো করলে আপনি ধনী হতে পারবেন। সে সম্পর্কে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
রিজিক বৃদ্ধি ও ধনী হওয়ার আমল
আমরা সবাই চাই আমাদের জীবনযাপনে বরকত আসুক, রিজিক বৃদ্ধি হোক। এর জন্য মানুষ কতই না চেষ্টা করে থাকে। তবে মহান আল্লাহ না চাইলে কেউ আমরা রিজিকে বৃদ্ধি বৃদ্ধি ঘটাতে পারবোনা। তাই রিজিক বাড়ানোর জন্য কুরআন ও হাদিসে কিছু দোয়া ও আমল সম্পর্কে বলা হয়েছে যেগুলো করলে আমরা মহান আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করে রিজিকে বরকত আনতে পারবো। রিজিক বৃদ্ধির ও ধনী হওয়ার আমল-
আল্লাহকে ভয় করা: কেউ যদি আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে,আল্লাহর ভয় যদি অন্তরে রাখে এবং সেভাবে জীবনযাপন করে তাহলে আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার রিজিকে বরকত দিবেন, টাকা পয়সা বৃদ্ধি করবেন।
আল্লাহর উপরে ভরসা: মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন কেউ যদি আমার উপর ভরসা করে ব্যবসা করে তাহলে আমি আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।
দান সদাকা করতে হবে: যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা করবে আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার রিজিক বৃদ্ধি করবে এবং টাকা পয়সার বরকত দিবেন।
তওবা বা ইস্তেগফার: বান্দার তওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা খুব খুশি হন এবং বান্দার রিজিক ও টাকা পয়সার বরকত দেন। তাই বেশি বেশ আস্তাগফিরুল্লহ পাঠ করুন।
হজ্জ পালন: রাসূল সা. বলেছেন তোমরা লাগাতার হজ্জ পালন করতে থাকো। কারন এর দ্বারা এমনভাবে অভাব ও গুনাহ দূরীভূত হয় , যেমন ভাবে লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস: ৮১০) এ কথা দ্বারা আমরা বুঝতে পারি হজ পালনের মাধ্যমে আমাদের বরকত আসবে।
সময়মতো নামাজ আদায় করা: সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন; আর আপনি পরিবার পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার উপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে রিজিক চাইনা। আমি আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্য শুভ পরিনাম। ( সুরা ত্বহা আয়াত: ১৩২)
শোকর আদায়: সবসময় আল্লাহর ওপর খুশি থাকতে হবে এবং আল্লাহর শোকর আদায় করতে হবে। আল কোরআনে বলা আছে; যদি তোমরা শোকর আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের নিয়ামত বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন। (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৭)
বিয়ে করা: রাসূল (সা.) বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষকে সাহায্য করাকে আল্লাহ তায়ালা নিজ দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তিন শ্রেনীর অনত্যম হলো- বিয়ে করতে আগ্রহী সেই ব্যক্তি, যিনি বিয়ে করে পবিত্র জীবন যাপন করতে ইচ্ছুক। ( সূরা নূর, আয়াত: ৩২)
গরিব অসহায়ের প্রতি সদয়: গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো বান্দাকে মহান আল্লাহ তায়ালা ভালো বাসেন এবং তার ধন সম্পদ বাড়িয়ে দেয়।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা: আল্লাহ চাইলে সব করতে পারেন, তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।(সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০) তাই ধনী হতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
রিজিক বাড়াতে এই দোয়াটি পড়বেন, দোয়াটি হলো-আল্লাহুম্মাকফীনী বি হালালিকা আন- হারামিকা ওয়াআগনিণী বি-ফাদলিকা আম্মান সিওয়াক’।
উপরে উল্লেখিত আমল গুলো বিশ্বাসসের সহিত করবেন, আপনার রিজিক বৃদ্ধি হবে এবং ধনী হতে পারবেন।
কম বয়সে ধনী হওয়ার আমল
অল্প বয়সে ধনী হতে আমরা অনেকেই চাই। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এমন কিছু আমল সম্পর্কে বলা আছে যেগুলো করলে আমরা ধনী হতে পারবো। আর কম বয়সে ধনী হতে আমাদের সে আমল গুলো করতে হবে। অল্প বয়নে ধনী হওয়ার আমল-
- যদি কেউ আল্লাহ তায়ালার প্রতি পূর্ন বিশ্বাস এবং আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা রাখে, তাহলে তার এ আমলের মধ্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালা তাকে কম বয়সেই ধনী বানিয়ে দিবেন। আমরা সবসময় আল্লাহ তায়ালার কাছে চাইবো যেকোনো বিষয়।
- এই দোয়া পাঠ করলে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের অল্প সময়ে ধনী বানিয়ে দিবেন। দোয়াটি হলো- সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম’ আস্তাগফিরুল্লাহ। এ দোয়াটি পড়ার আগে এবং পড়ে দুরুদে ইব্রাহিম পড়তে হবে। এই ছোট আমলটি যদি আমরা করতে পারি তাহলে আল্লাহ রব্বুল আলামিন অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের ধনী বানিয়ে দিবেন।
- আল্লাহর গুনবাচক নামসমূহ গুলো বলে দোয়া করলে আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন এবং অল্প বয়সেই ধনী বানিয়ে দিবেন।
- সবসময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, যারা ক্ষমা চাই তারা আল্লাহর খুবই প্রিয়। তাই অল্প সময়ে কম বয়সে ধনী হতে চাইলে তওবা করুন।
আমাদের দেওয়ার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ। হালাল পথে হাঁটুন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন কম বয়সেই ধনী হতে পারবেন।
ধনী হওয়ার লক্ষন
আপনি ধনী হতে পারবেন কিনা সেটা কেবল সৃষ্টিকর্তায় জানে। তবুও আমাদের মধ্যে অনেকেই জানতে চাই কি লক্ষন দেখলে বুঝবো ধনী হওয়া যাবে। ধনী হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো লক্ষন নেই। তবে কিছু লক্ষন আছে যেগুলো দেখলে ধারনা করতে পারেন যে, সে ধনী হতে পারে। লক্ষনগুলো হলো-
- ধনী হওয়ার প্রথম লক্ষন হলে, স্বপ্ন পূরনের জন্য অবিরাম চেষ্টা এবং কঠোর পরিশ্রম করা।
- আয় দেখে ব্যয় করা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ না করা।
- কিভাবে আয় করবেন সেটা নিয়ে সবসময় চেষ্টা করতেই আছেন।
- সময়ের মূল্য দেওয়া ধনী মানুষের একটি লক্ষন। যারা ধনী হতে চায় তারা সময়ের মূল্য দেয় এবং সময়ের কাজ সময়ে করে।
- ধনী হওয়ার আরেকটি লক্ষন হলো তাড়াতাড়ি কোনো সিধান্থ গ্রহন না করা। কোনো বিষয়ে সিধান্ত নেওয়া আগে ভেবে চিন্তে নেওয়া।
- ধনী হওয়ার আরও একটি লক্ষন হলো ব্যর্থতাকে ভয় না পাওয়া এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া।
- আপনি যা চান তা অর্জন করতে পারেন, এটি ধনী হওয়ার একটি লক্ষন।
- খরচ কমানোর চেষ্টা এবং আপনি যা রোজগার করবেন তার কিছু অংশ সঞ্চয় করে রাখা।
উপরে কয়েকটি লক্ষনের কথা বলেছি সেগুলো যদি কারও মধ্যে না থাকে, তাহলে তার চিন্তার কোনো কারন নেই। এই লক্ষন গুলো সম্ভাব্য লক্ষন, নিশ্চিত লক্ষন নয়। কে কখন ধনী হবে সেটা একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালায় জানেন। তবে দোয়া ও আমল দিয়ে, কর্মের মাধ্যমে আপনার ভাগ্য পরিবর্তন হবে। তাই মহান আল্লাহর কাছে চাইলে, তিনি যদি চান তাহলে আপনি আমল ও দোয়ার ওসিলায় ধনী হতে পারবেন। (ইন শা আল্লাহ)
লেখকের শেষ বক্তব্য
ইসলামে ধনী হওয়ার উপায় – দ্রুত ধনী হওয়ার আমল সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি ইসলামে ধনী হওয়ার উপায় – দ্রুত ধনী হওয়ার আমল সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।