বাড়িতে যেসব গৃহপালিত পাখি পালন করা হয়, সেসবের মধ্যে কবুতর বেশ জনপ্রিয়। আপনারা যারা কবুতর পালনে আগ্রহি, যারা কবুতর পালন করতে চান তাদের জন্য আমাদের আজকের আর্টিকেল। কেননা আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো কবুতর পালন পদ্ধতি সম্পর্কে।
কবুতরকে মানুষ পচ্ছন্দ করে, তাই অনেকেই শখ করে এ পাখি পালন করে থাকে। তবে শখের পাশাপাশি কবুতর পালন করে আর্থিকভাবে লাভবানও হওয়া যায়। কবুতর পালন করে যদি আপনি সফল হতে চান, তাহলে কবুতার পালনের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। আজকের আর্টিকেলে আমরা কবুতর পালনের পদ্ধতিসহ কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করবো। যেখান থেকে আপনি কবুতর পালনের পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন।
কবুতর পালন পদ্ধতি
বর্তমানে কবুতর পালন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অল্প জায়গায় অল্প পুঁজিতে কবুতর পালন করা যায়।সঠিক যত্ন নিলে অল্প সমেয়র মধ্যে এ পাখি ডিম দেয়, আর সে ডিম থেকে অল্প দিনেই বাচ্চা বের হয়ে খাওয়ার উপযোগি হয়। কবুতরের বাচ্চার মাংস খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি খাবার যার ফলে বাজারেও এ পাখির চাহিদা রয়েছে। এ পাখি পালনে ব্যয় কম হয় সেক্ষেত্রে এ পাখির বাচ্চার দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাই এ পাখি বানিজ্যিকভাবে পালন করলে সহজেই বেকারত্ব দূর হয়। কবুতর পালনের পদ্ধতি সম্পর্কে নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন।
কবুতর পালনের সময় কবুতরের জন্য সঠিক ঘর, সঠিক খাবার এবং রোগ শনাক্তসহ চিকিৎসার প্রয়োজন। কবুতর পালনে এসব বিষয়ের দিকে বিশেষভাবে গরুত্ব দেওয়া জরুরি। কবুতর পালন তিন পদ্ধতিতে করা যায়- ১.মুক্ত ২.আবদ্ধ ৩. অর্ধআবদ্ধ।
মুক্ত পদ্ধতিতে কবুতর পালন: এ পদ্ধতিতে কবুতর পালনে কবুতরগুলো সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়। সারাদিনের খাবার তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে জোগাড় করে নেয়। এ পদ্ধতিতে কবুতর পালনে খাবারের খরচ কম, হয় না বললেই চলে। তবে সন্ধায় অল্প করে খাবার এবং পানি দিয়ে রাখতে হবে।
আবদ্ধ পদ্ধতিতে কবুতর পালন: খাঁচার মধ্যে রেখে এ পদ্ধতিতে কবুতর পালন করা হয়। সারাদিনে খাঁচার মধ্যে থেকে কোনো সময়ের জন্য এ কবুতর ছাড়া হয় না। এ পদ্ধতিতে খাবার খরচ বেশি হয়, তবে এ পদ্ধতিতে কবুতর পালন করলে কবুতরের রোগ বালাই কম হয় এবং সহজেই রোগ শনাক্ত করা যায়।
অর্ধআবদ্ধ পদ্ধতিতে কবুতর পালন: এ পদ্ধতিতে কবুতর পালনে কবুতরের ঘরে থাকে পাশাপাশি কবুতর ঘরের সামেনে বড় করে উঠান থাকে। সে উঠান ঘেরা থাকে, উঠানেই কবুতরগুলো ঘুরে বেড়ায়। এ পদ্ধতিতে কবুতরকে সারাদিনের খাবার বেশি করে দিতে হয়।
এই তিন পদ্ধতির মধ্যে যেকোনো একটি পদ্ধতি বাছাই করে কবুতর পালন করতে পারেন। তবে যে পদ্ধতিতেই কবুতর পালন করুন না কেন সঠিক খাবার ও সঠিক ঘর নির্বাচন করতে হবে।
কবুতরের ঘর তৈরি: প্রথমে আপনি ভেবে নিবেন যে কোন পদ্ধতিতে আপনি কবুতর পালন করবেন। এ তিন পদ্ধতির মধ্যে যে পদ্ধতিতে আপনি কবুতর পালন করবেন সে অনুযায়ী ঘর নির্মান করতে হবে। তবে প্রত্যেক ঘর তৈরিতে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন সেগুলো হলোÑ এমন ভাবে ঘর তৈরি করতে হবে যাতে ক্ষতিকর প্রানী অথবা পাখি প্রবেশ করে কবুতরের কোনো ক্ষতি না করতে পারে। এর জন্য শক্ত ও উঁচু করে ঘর নির্মাণ করতে হবে। প্রতি জোড়া কবুতরের জন্য এক বর্গফুট করে জায়গা রাখনে আপনার কবুতরের সংখ্যা অনুযায়ী পুরো ঘরের মাপ হবে। ঘরের সামনে বারান্দা অবশ্যই রাখবেন কারন হাঁটা চলা করলে কবুতর বেশি বাড়ে। ঘরের চারপাশে খর রাখবেন, যাতে ডিম পাড়ার সময় খড় কবুতর সংগ্রহ করতে পারে। ঘর সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন এতে কবুতরের রোগ বালাই কম হবে।
কবুতরের খাবার: কবুতরের খাদ্যতালিকায় গম, ভুট্টা, মটর, চাল, ধান, সরিষা এসব দানাদার খাবার রাখবেন। কবুতরের স্বাস্থ ভালো রাখতে মিশ্র খাবার তৈরি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক খাবারগুলোর সাথে ধিনুকের চূর্ণ, হাড়ের গুড়া, চুনাপাথর ও লবন মিশিয়ে দিতে পারেন। বাজারে কবুতরের জন্য মিশ্র খাবার পাওয়া যায়, সেগুলোতে পর্যাপ্ত পুষ্টি কবুতর পায় চাইলে সেগুলো কিনতে পারেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ঘাস অথবা সবজি কুচি কুচি করে কেটে দিবেন এতে কবুতরের হজম ভালো হয়। একটি কবুতর ছোট হলে ৪০ গ্রাম মতো খায় এবং বয়স্ক কবুতর দৈনিক ৬০ গ্রাম খাবার খায়। এভাবে কবুতরের খাবার নিশ্চিত করতে পারেন। তবে বাইরে ঘুরে কবুতর খাবার সংগ্রহ করলে, সেক্ষেত্রে একটু কম দিতে পারেন। আর খাবারের পাশাপাশি পানি অবশ্যই দিবেন।
উপরের নিয়ম অনুসারণ করে কবুতর পালন করবেন, আশা করি সফল হতে পারবেন। কবুতর পালনে কবুতরের কিছু রোগ বালাই হয় সেগুলো বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি আপনাকে পড়তে হবে।
কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা
আমরা আমাদের বাড়িতে বিভিন্ন গৃহপালীত পশুপাখী পালন করে থাকি। আর প্রত্যেক গৃৃহপালীত পশুপাখির রোগবালাই হয়ে থাকে, এটা স্বাভাবিক। সে রোগ বালাই কবুতরের মধ্যেও দেখা দেয়। কবুতর পালন করতে হলে সে রোগগুলোর সাথে আমাদের পরিচিত হতে হবে এবং জানতে হবে এ রোগগুলোর চিকিৎসা কি। বিভিন্ন রোগে কবুতর আক্রান্ত হতে পারে তবে এ রোগগুলোর চিকিৎসা রয়েছে। সঠিক চিকিৎসা নিয়ে রোগ থেকে কবুতরকে মুক্তি দেওয়া যায়। চলুন তাহলে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে।
কবুতুরের রোগ ও চিকিৎসা
রানীক্ষেত: এ রোগটি কবুতরের ভাইরাসজনিত একটি রোগ। এ রোগে আক্রান্ত কবুতর নিশ্চুপ হয়ে থাকে, ঝিমাবে, জ¦র আসে, পায়খান স্বাভাবিক থাকে না এবং খাবার ধীরে ধীরে কমে যাবে।
চিকিৎসা: রানীক্ষেত রোগ প্রতিরোধ করতে কবুতরকে নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। এছারাও এ রোগ প্রতিরোধে প্রানী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রানীক্ষেত রোগের টিকা দিতে হবে। রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত কবুতরকে রেনামাইসিন এবং আরডিভি নামক ভ্যাকসিন দিতে হবে।
ফাউল কলেরা: ব্যাকটেরিয়া জনিত কবুতরের একটি রোগের নাম হলো ফাউল কলেরা। এ রোগে আক্রান্ত কবুতরের শ্বাসকষ্টে সমস্যা হয় ফলে কবুতর হা করে থাকে। এছারাও হাঁচি, গলায় শব্দ, মুখে ফেনা এবং কবুতরের ডানা কাঁপতে থাকার মতো লক্ষন এ রোগে আক্রান্ত কবুতরের মাঝে দেখা যায়।
চিকিৎসা: এ রোগে আক্রান্ত কবুতরকে সালফার ড্রাগ দিতে হবে এবং প্রানী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টিকা প্রদান করতে হবে। এছারাও বাড়িতে প্যারাসিটামল ও রেনামাইসিন এ ওষুধ দুটি দিতে পারেন।
গুটি বসন্ত: এ রোগে আক্রান্ত কবুতরের চোখে, ঠোঁটের চারপাশে এবং পায়ে গুটি আকারের ক্ষত দেখতে পাওয়া যায়। সঠিক চিকিৎসা না নিলে কবুতর খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে মারা যায়।
চিকিৎসা: এ রোগের চিকিৎসায় আক্রান্ত কবুতরকে এন্টিবায়োটিক, এমাইনো এসিড, টপিক্যাল ওয়েন্টমেন্ট প্রানী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আপনার কবুতরের বয়স অনুযায়ী খাওয়াবেন।
কৃমি: কবুতরের শরীরে কৃমির সংক্রামন মারাত্মক একটি রোগ। এ রোগে আক্রান্ত কবুতরের মলের মধ্যে কৃমি দেখতে পাওয়া যায়। সঠিক চিকিৎসা না নিলে কবুতর মারা যায়।
চিকিৎসা: এ রোগের আক্রান্ত কবুতরকে আলাদা করে রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ওষুধ দিতে হবে। পরিষ্কার খাবার ও পানি দিতে হবে।
প্যরাটাইফোসিস বা সালমেনেলোসিস: কবুতরকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত করলে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত কবুতর ঝিমায়, পায়খানা সবুজ রঙের চুনের মতো হয় বা পায়ূপথ ভেজা হয়ে থাকে, অনেক সময় পা ও পাখা প্যারালাইজড হয়ে যায়।
চিকিৎসা: এ রোগে আক্রান্ত কবুতরকে পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়াবেন এবং ভেটেনারি মেডিসিন অনুযায়ী ইরোকট পাউডার আক্রান্ত কবুতরকে ১ গ্রামের ৪ ভাগের এক ভাগ পানিতে মিশিয়ে তিনবেলা খাওয়াতে হবে।
ডিপথেরিয়া: কবুতরের ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি রোগ হলো ডিপথেরিয়া। এ রোগে আক্রান্ত কবুতরের নাক ও মুখ দিয়ে পানি ঝড়বে, শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হবে, জ্বর হবে এবং হাঁচি কাশি দিবে তার সাথে নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হবে।
চিকিৎসা: এ রোগের ওষুধ হিসেবে এন্টি-টক্সিন ব্যবহার করতে পারেন। এসব ছাড়াও প্রানী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এন্টিবায়োটিক দিতে পারেন।
উপরের বলা রোগ ছাড়াও কবুতরের আরও বিভিন্ন রোগ হয়। যেকোনো রোগের চিকিৎসায় বাড়িতে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াবেন এতে আক্রান্ত কবুতরকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করা যাবে।
কবুতররের রোগ বালাই হলেও এসব রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব আর খুব সহজেই কবুতর রোগে আক্রান্ত হয় না। কবুতরের রোগ বালাই যাতে না হয় সেজন্য কবুতরকে ভিটামিন জাতীয় খাবার দিতে হবে, কবুতরের ঘর, খাবার ও খাবারের পাত্র পরিষ্কার রাখতে হবে এবং পরিষ্কার পানি কবুতরকে দিতে হবে। খামারের ভেতর ও চারপাশে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে, আক্রান্ত কবুতরকে ভালো কবুতর থেকে আলাদা করতে হবে এবং মারা গেলে যেখানে সেখানে ফেলে না দিয়ে পুঁতে দিতে হবে। এছারাও রোগ প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত টিকা বা বুস্টার ডোজ দিতে হবে।
কেন কবুতর পালন করবেন
গৃহপালিত সব ধরনের পাখিদের থেকে কবুতর পালন করতে মানুষ বেশি পচ্ছন্দ করে। কবুতরকে শান্ত পাখি বলা হয়। কবুতর পচ্ছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কম রয়েছে। তবে কবুতর পালনে অনেকেই আগ্রহী হলেও তাদের মনে প্রশ্ন আসে কেন কবুতর পালন করবো? কবুতর পালনের সুবিধা কি? তবে কোনো জিনিস পালন করার আগে অবশ্যই এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো। যারা কবুতর পালন করতে চাচ্ছেন তারা জেনে নিন কেন কবুতর পালন করবেন।
- কবুতর পালনে বিনিয়োগ কম এবং পালন করা খুবি সহজ। অল্প সময় ব্যয় করে অল্প খাবার দিয়ে এটি পালন করা যায়। অনেক কবুতর নিজের খাবার নিজেই সংগ্রহ করে।
- কবুতরের ঘর অল্প জায়গায়, অল্প খরচে তৈরি করা যায়।
- কবুতরের বিষ্ঠা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- কবুতরের প্রজনন কাল সংক্ষিপ্ত এরা ৫ থেকে ৬ মাস বয়সের মধ্যে ডিম দেয় এবং ডিম ফুটতে ১৯ দিন পর্যন্ত সময় নেয়। বছরে এক জোড়া কবুতর ১০ থেকে ১২ জোরা বাচ্চা দিয়ে থাকে।
- কবুতরের বাচ্চার বয়স ২৫ থেকে ২৬ দিন হলেই খাওয়ার উপযোগি হয়। কবুতরের বাচ্চার মাংস পুষ্টিকর এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর ব্যপক চাহিদা রয়েছে। তাই এ বাচ্চার বয়স ও ওজনের তুলনায় দাম বেশি হয়ে থাকে।
- বেকার যুবক ও নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের একটি সুন্দর মাধ্য হলো কবুতর পালন। বাড়ির মহিলারা সংসারের কাজ করে, কবুতর পালন করতে পারবেন।
- কবুতর পালনের মধ্যে দিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যাবে।
- বাড়িতে কবুতর পালন করলে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটে।
- সঠিক যত্ন নিলে কবুরের রোগ বালাই কম হয় এবং প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত বাচে।
সঠিকভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করলে কবুতর পালনে অনেক সুবিধা রয়েছে এবং অধিক লাভবান হওয়া যায়।
কোন কবুতর পালনে লাভ বেশি
কবুতর পালন একটি শখের ব্যবসা। এ পাখি পালন করতে প্রায় মানুষ পচ্ছন্দ করে থাকে। তবে বানিজ্যিকভাবে এ পাখি পালন করে বেশ লাভবান হওয়া যায়। বানিজ্যিকভাবে যারা কবুতর পালন করতে চায়। তাদের মাথায় প্রথমেই প্রশ্ন আসে কোন কবুতর পালনে লাভ বেশি হয়। চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক কোন কবুতর পালনে লাভ বেশি হয়।
যারা প্রথম কবুতর পালন করতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন, তারা কবুতর পালনে লাভবান হতে চাইলে অবশ্যই ভালো জাতের এবং সুস্থ কবুতর বাছাই করতে হবে। ভলো কবুতরের পালক চকচকে হয়, চোখ উজ্জল হয়, নাক শুষ্ক থাকবে অপরদিকে সর্দি থাকলে কবুতরের হাতে নিয়ে দেখবেন কোনো শব্দ করছে কিনা, অসুস্থ কবুতরের ডানা ঝুলে থাকে, পায়খানার রাস্তায় মল লেগে থাকে, কবুতরের গায়ে কোনো ক্ষত আছে কিনা দেখে নিবেন, এসব বিষয় বিবেচনা করে সুস্থ কবুতর কিনবেন।
কবুতরের জাত যেমন হোক না কেন, আপনি যদি সুস্থ কবুতর বাজার থেকে কিনে সঠিক পদ্ধতিতে পালন করে থাকেন। তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে লাভবান হতে পারবেন। সবথেকে লাভজনক জাতের কবুতর গুলো হলো- গিরিবাজ, লোটান, ময়ূরপঙ্খী, মুকি, সিরাজী, গোলা ইত্যাদি। এসব কবুতরের মধ্যে যেকোনো কবুতর আপনি পালন করতে পারেন। এছারাও এমন জাতের কবুতর আছে যেগুলো বছরে বেশি বাচ্চা দিয়ে থাকে এবং কম খাবার খায়, ফলে লাভ বেশি হয়। যে জাতের কবুতরগুলো বেশি বাচ্চা দিয়ে থাকে, সে জাতের কবুতর গুলো লাভবান হওয়ার জন্য বাছাই করতে হবো। পরবর্তী আলোচনা থেকে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয়।
কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয়
বর্তমানে সারাবিশ্বে ১২০ টি জাতের কবুতর রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে ২০ টি জাতের কবুতর দেখতে পাওয়া যায়। এ ২০ টি জাতের মধ্যে এমন কবুতর রয়েছে যারা বছরে বেশি ডিম দেয় এবং বাচ্চা দিয়ে থাকে। কবুতর যারা পালন করতে চান এবং কবুতর পালনে বেশি লাভবান হতে চান, তাদের অবশ্যই জানতে হবে কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয়। কারণ কবুতরের বাচ্চার বানিজ্যিকভাবে চাহিদা বেশি, তাই যত বেশি বাচ্চা বিক্রয় করা যাবে তত বেশি লাভবান হওয়া যাবে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয়-
বাংলাদেশে ২০ জাতের কবুতরের মধ্যে গিরিবাজ জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দিয়ে থাকে। এ জাতের কবুতর বছরে অনেকবার ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। এ জাতের কবুতরগুলোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়ে থাকে, ফলে এ কবুতর এবং বাচ্চাগুলোর রোগ কম হয়। এ জাতের কবুতর গুলো বাচ্চা ছোট থাকা কালিন সময়ে আবার ডিম দিতে সক্ষম হয়। এ জাতের কবুতরগুলো খাওয়ার ব্যাপারে বেশ এগিয়ে। এ জাতের কবুতরগুলো বেশি উড়তে পারে এবং পুষ্টিকর খাবার নিজেরাই জোগাড় করতে পারে। নিজেরা পুষ্টিকর খাবার খাই আবার বাচ্চাদেরও খাওয়াই, যার ফলে বাচ্চা তাড়াতাড়ি খাওয়ার উপযোগি হয়, তাড়াতাড়ি বাজারজাত করা যায় এবং তাড়াতাড়ি বড় হয়ে ডিম দেয়। এভাবে বংশবৃদ্ধির হার দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যে কারনে এ কবুতর পালনে বেশি লাভবান হওয়া যায়। আর একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন এ কবুতরে লাভবান হতে চাইলে প্রতিদিন এ জাতের কবুতরকে বাইরে উড়তে দিতে হবে।
তবে তার আগে আপনাকে সুস্থ ও সঠিক গিরিবাজ জাতের কবুতর ক্রয় করতে হবে। গিরিবাজ জাতের কবুতর আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সেগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে, সঠিক জাতের কবুতর আপনাকে কিনতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, কবুতর পালনে আপনি যদি লাভবান হতে চান। তাহলে অবশ্যই কবুতরের সঠিক পরিচর্যা, সঠিক খাবার, সঠিক ঘর, এবং বিভিন্ন রোগবালাইয়ের টিকা দেওয়া প্রয়োজন। সঠিক পরিচর্যা ও যতœ নিলেই আপনি কবুতর পালনে লাভবান হতে পারবেন। কবুতরের জাত সেখানে কোনো বিষয় না। তাই সফল ব্যবসায়ী হতে শুধু কবুতর নয়, যেকোনো গৃহপালিত পশুপাখির সঠিক যত্ন নিন।
লেখকের শেষ বক্তব্য
কবুতর পালন পদ্ধতি – কেন কবুতর পালন করবেন সে সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি কবুতর পালন পদ্ধতি – কেন কবুতর পালন করবেন সে সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।