শিশুর জন্মের পর একটি সময়ের মধ্যে শিশুদের সাধারণত দাঁত উঠে। কারও তাড়াতাড়ি উঠে আবার কারও সময় লেগে যায়। শিশুর দাঁত উঠতে সময় লেগে গেলে মায়েদের চিন্তার শেষ নেই। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই এর সমাধান রয়েছে।
বাচ্চদের বিভিন্ন কারণের জন্য দাঁত উঠতে দেরি হয়। বাচ্চার দাঁত উঠতে দেরি হলে সে কারনগুলো জেনে সঠিক ব্যবস্থা নিলে এর সমাধান করা যায়। আজকের আর্টিকেলে আমরা বাচ্চাদের দাঁত না উঠার কারণ, বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষন এবং দাঁত উঠার সঠিক বয়সসহ বাচ্চার দাঁত ওঠা নিয়ে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছি। পুরো আর্টিকেলটি পড়লে বাচ্চার দাঁত ওঠা নিয়ে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। চলুন তাহলে বিস্তারিত শুরু করা যাক।
বাচ্চাদের দাঁত না উঠার কারণ
শিশুদের জন্মের পর থেকে মায়েদের চিন্তার শেষ নেই। শিশুর ঘুম, সুস্থতা, অসুস্থতা, খাবার এমনকি শিশুদের দাঁত ওঠা নিয়েও মায়েরা চিন্তিত। সাধারণত বাচ্চাদের বয়স ৬ মাস হলেই, বাচ্চাদের দাঁত দৃশ্যমান হতে শুরু করে। তবে একই বয়সে সব বাচ্চাদের দাঁত ওঠে না। কোনো বাচ্চার ক্ষেত্রে দেখা যায় দাঁত তাড়াতাড়ি উঠে আবার অনেক বচ্চার দাঁত দেরিতে উঠে। বাচ্চাদের দাঁত উঠতে দেরি হলে অভিভাবকেরা অনেক ভয় পেয়ে যায়। শিশুদের দাঁত উঠতে অতিরিক্ত সময় নিলে সত্যি এটা ভয়ের বিষয়। তবে কোনো শিশুর দাঁত দেরিতে উঠার পেছনে কতকগুলি কারণ রয়েছে। সে কারণগুলো অভিভাবকদের জানা দরকার। দেখে নিন বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ-
- শিশুদের দাঁত না ওঠার একটি কারণ হলো বংশগত কারন। বংশগত কারনেও অনেক সময় শিশুদের দাঁত উঠতে অনেক সময় লেগে যায়। বাবা অথবা মায়ের বংশে কারও দেরিতে দাঁত উঠে থাকলে, অনেক সময় দাঁত দেরিতে উঠতে পারে। আপনার শিশুর ক্ষেত্রে যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে দাঁত সময়ের মধ্যে না উঠলে ভয় পাবেন না। তবে ১৫ মাসের বেশি শিশুর বয়স হয়ে গেলে অপেক্ষা করা যাবে না, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- অনেক বাচ্চা পুষ্টিজনিত সমস্যাই ভুগলে, সে বাচ্চার দাঁত উঠতে সময় লেগে যায়। আপনার শিশু ঠিকমতো দুধ পান না করলে, পুষ্টিকর খাবার না খেলে বাচ্চার দাঁত উঠতে দেরি হয়। মায়ের বুকের দুধ থেকে অসংখ্যা পুষ্টি উপাদান বাচ্চারা পেয়ে থাকে। আর সে দুধ যদি বাচ্চারা না পান করে তাহলে বাচ্চাদের শরীরে পুষ্টির অভাব হয়। যার কারণে বাচ্চার দাঁত উঠতে দেরি হয়।
- যেসব গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চা সময়ের আগে, ওজন কম নিয়ে জন্মগ্রহন করে। সেসব মায়েদের বাচ্চার ক্ষেত্রে দাঁত উঠতে দেরি হয়।
- বাচ্চাদের শরীরে থাইরয়েড গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ না করলে, থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয় না। আর থাইরয়েড হরমোন তৈরি না হওয়ার কারণে, অনেক সময় বাচ্চাদের দাঁত ওঠেনা।
উপরের বলা কারণগুলোর সাথে আপনার বাচ্চাকে মিলিয়ে দেখুন, পর্যবেক্ষন করুন। অতপর আপনার বাচ্চার বয়স যদি ১৫ মাস পেরিয়ে গিয়েও দাঁত বের না হয়, তাহলে অবশ্যই আপনার বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন।
বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষন
বাচ্চাদের বয়স ৬ মাস পূর্ন হলেই, বাচ্চাদের দাঁতের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। এ বয়স থেকে শুরু করে কোনো বাচ্চার আবার ১৪ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায় দাঁত ওঠতে। বাচ্চার বয়স ৬ মাস হলেও অভিভাবকেরা বাচ্চার দাঁত বের হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ৬ মাস থেকে ১ বছর হয়ে গেলেই অভিভাবকেরা চিন্তা করতে থাকে। তখন অনেক মায়েদের জানতে ইচ্ছা হয়, বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষন কি। কি লক্ষণ বাচ্চাদের মধ্যে প্রকাশ পেলে বোঝা যাবে যে বাচ্চার দাঁত উঠছে। নিচে আমরা বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষন নিয়ে অলোচনা করেছি। তো জেনে নিন বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষনগুলো কি-
- বাচ্চাদের যখন দাঁত উঠার সময় হয়, তখন অনেক বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে যাওয়া।
- বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় হলে, বাচ্চাদের দাঁতের মাড়ি ফুলে ওঠে।
- বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময়, বাচ্চাদের অনেক বেশি মুখ দিয়ে লালা ঝরতে পারে।
- দাঁত ওঠার সময় হলে বাচ্চারা অস্বস্থিবোধ করবে এবং অকারণে কান্না করবে।
- দাঁত ওঠার সময়ে বাচ্চারা ঠিক মতো ঘুমাবে না, বারবার ঘুম ভেঙে যায়।
- বাচ্চাদের মেজাজের পরিবর্তন হতে দেখা যায়, যখন বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় হয়।
- বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময়ে বাচ্চাকে কোনো খাবার দিলে বাচ্চারা চিবাতে চেষ্টা করবে অথবা চিবানোর মাত্রা বাড়বে।
এসব ধরণের লক্ষন বাচ্চাদের মধ্যে দেখে ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করে নিতে পারেন। আপনার বাচ্চার দাঁত কখন ওঠছে ধারণা পেয়ে যাবেন।
বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স
বাচ্চারা জন্মের পর থেকে বাবা-মায়েদের একটাই চাওয়া বাচ্চা যেন সুস্থ থাকে। তাদের কোনো সমস্যা হলে বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ থাকে না। বাচ্চাদের নিয়ে এমন একটি চিন্তার বিষয় হলো, বাচ্চাদের দাঁত ওঠা নিয়ে। ৬ মাস থেকে শুরু করে বাচ্চাদের দাঁত ওঠা শুরু হয়। সে বয়স থেকেই সাধারণত বাচ্চাদের দাঁতের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। তবে একই বয়সে সব বাচ্চার দাঁত একই সময়ের মধ্যে উঠেনা। আর একটি বাচ্চার সবগুলো দাঁত বের হতে বেশকিছুদিন সময় লেগে যায়। বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স নিয়ে অনেক অভিভাবকেরা জানতে চান, যে বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স কখন। আসুন জেনে নিন বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স সম্পর্কে।
প্রায় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৬ মাস থেকে দাঁত ওঠতে দেখা যায়, তার আগে দেখা যায় না। তবে কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে ৪ মাসে দেখা গেছে। আবার অনেক বাচ্চায় আছে যাদের বয়স ৬ মাস , ৭ মাস পার হয়ে গেলেও দাঁত বের হতে দেখা যায় না। তবে এ বিষয় নিয়ে ভয়ের কিছু নেয়, এমনটা হওয়া স্বাভাবিক।
বাচ্চাদের প্রথম দাঁত বের হতে কিন্তু ১৫ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়, সেটা আপনারা জানেন কি-না। তবে এটাই সত্য, অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে। অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রে ১২ অথবা ১৫ মাসে প্রথম দাঁতের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। তবে আপনার শিশুর বয়স যদি ১৫ মাস হয়ে গিয়েও দাঁত বের না হয়, তাহলে বুঝবেন সত্যিই আপনার বাচ্চার দাঁত কোনো সমস্যার কারণে ওঠছে না। সেক্ষেত্রে আর বাড়িতে সময় নষ্ট করা যাবে না, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
শিশুদের দাঁত ওঠার একটি বয়সসীমা থাকে, সে সময়ের মধ্যে শিশুদের দুধ দাঁত বের হয়ে শেষ হয়ে যায়। সাধারণত শিশুদের বয়স ৩ বছর হলে, শিশুদের সবগুলো দুধ দাঁত বের হয়ে শেষ হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে দেখা যেতে পারে।
বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় জ্বর
বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় হলে, প্রথমে বাচ্চাদের দুধের দাঁত দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত বাচ্চাদের বয়স ৬ থেকে ৭ পূর্ন হলে প্রথম দাঁতটি মাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে আসে। বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময়, বাচ্চাদের মধ্যে কিছু লক্ষন বা উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায়, যার একটি হলো শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়।
অনেক মায়েরাই প্রশ্ন করে থাকেন বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় জ্বর হয় কি-না। সেক্ষেত্রে বলতে চায়, দাঁত উঠলে শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায় তবে সেটাকে জ্বর বলা যাবে না। বাচ্চাদের মাড়ির ভেতর থেকে দাঁতগুলো বাইরে বের হয়ে আসে ফলে বাচ্চাদের মাড়িে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। আর সে কারণে বাচ্চাদের শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সাথে জ্বরের কোনো সম্পর্ক নেয়। চিকিৎসকের মতে-বাচ্চাদের ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আসে মায়ের বুকের দুধ থেকে। মায়ের বুকের দুধ থেকে যে পুষ্টি বা ইমোনোগ্লোবিন বাচ্চারা পায় সেখান থেকেই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে থাকে। কিন্তু বাচ্চাদেও ৭ বা ৯ বয়সের পর থেকে ইমোনোগ্লোবিনের মাত্রা কমতে শুরু করে, তখন বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আস্তে আস্তে কমে যায়। আর সে সময়টায় বাচ্চাদের জ্বর ও পাতলা পায়খানা হতে পারে। আর এ সময় কিন্তু বাচ্চাদের দাঁত ওঠা শুরু করে, তখন মায়েরা ভাবে দাঁত ওঠার কারনে বাচ্চার জ্বর হচ্ছে। তবে আসলে সেটা না, বাচ্চাদের ইমোনোগ্লোবিনের মাত্রা হঠাৎ করে কমে গেলে জ্বর আসে।
তাই সে সময় বাচ্চাদের জ্বর আসাকে স্বাভাবিক কোনো বিষয় মনে করবেন না। অন্য কোনো কারণে বাচ্চাদের জ্বর আসতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
বাচ্চাদের দাঁত ওটার সময় করণীয়
শিশুদের যখন দুধ দাঁত বের হতে শুরু করে, তখন শিশুরা অস্বস্তিবোধ করে। এছারাও বেশ কিছু লক্ষন তখণ শিশুদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। সে সময়টায় মায়েদের সতর্ক থাকতে হবে, বাচ্চার প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। বাচ্চার দাঁত বের হচ্ছে কি করবো? অনেক মায়ের প্রশ্ন থাকে। জেনে নিন বাচ্চার নতুন দাঁত ওঠা অর্থ্যাৎ দুধ দাঁত ওঠার সময় কি করবেন।
- বাঁচ্চাদের যখন নতুন দাঁত ওঠতে শুরু করে, তখন তাদের মুখের লালার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে লালা মুছে দিতে হবে।
- বাচ্চাদের যখন দাঁত ওঠার সময় হয়, তখন বাচ্চারা হাতের কাছে যা পায়, কামড় দেওয়ার চেষ্টা করে। তাই সে সময়ে বাচ্চাদের খেলনা সবসময় পরিষ্কার রাখবেন এবং এমন খেলনা দেবেন যাতে বাচ্চা মুখের মধ্যে আঘাত না পায়। বাচ্চাদের নরম ব্রিসলযুক্ত ব্রাশ পাওয়া যায়, খেলনা হিসেবে সেগুলো দিতে পারেন।
- বাচ্চার নতুন দাঁত ওঠলে মিষ্টি জাতীয় খাবার দেওয়া থেকে এড়িয়ে চলবেন।
- দাঁত ওঠার সময় শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে যায়। যদি তাপমাত্রা অধিক বেড়ে যায় তাহলে শিশুকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন।
- দাঁত ওঠার সময় বাচ্চাদের মাড়িতে ব্যাথা হয়, ব্যাথা যদি তীব্র হয়, বাচ্চারা সহ্য করতে না পারে এবং বাচ্চারা অধিক পরিমানে কান্না করে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময়, বাচ্চাদের মাড়ি আপনার হাতের আঙুল অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে ম্যাসাজ করবেন।
- বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময়, বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাইরের পুষ্টিকর খাবারগুলো অল্প অল্প করে দিতে হবে।
বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় উপরের বিষয়গুলো ফলো করবেন। আর মনে রাখবেন প্রত্যেক বাচ্চার ক্ষেত্রে কিন্তু একই বয়সে দাঁত বের হয় না। তবে যদি আপনার বাচ্চার বয়স ১৫ মাস হয়ে গেলেও প্রথম দাঁতের উপস্থিতি বোঝা না যায়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখকের শেষ বক্তব্য
বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ – বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষন সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ – বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষন সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।