আমাদের অনেকের জানা নেই বাচ্চা কীভাবে ফর্সা হয়, কী ব্যবহার করলে সুন্দর ও সুস্থ থাকে, আজকের আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। বাচ্চা গর্ভে আসার পর থেকেই মায়েরা এসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকে। সুস্থ, সুন্দর বাচ্চা আমরা সবাই চাই। শিশুকে ফর্সা করার জন্যে প্রয়োজন বিশেষ যত্নের। বাচ্চা গর্ভে আসার পর থেকেই মায়েদের খাওয়া দাওয়ার বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে।
এছারাও বর্তমান যুগে বাচ্চাদের ব্যবহার করার জন্যে অনেক তেল, সাবান পাওয়া যাচ্ছে যা বাচ্চাকে ফর্সা করে। প্রিয় শ্রোতা, কীভাবে বাচ্চারা ফর্সা হয়, আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন। চলুন বিস্তারিত জানা যাক-
নবজাতকের গায়ের রং পরিবর্তন হয় কেন
বংশগতি, জলবায়ুর প্রভাব, হরমোনের প্রভাবে নবজাতকের রং পরিবর্তন হয়। আমরা সচারচর দেখি বাচ্চা যে রঙ নিয়ে প্রথমে জন্ম নেয় সেই রং বাচ্চার থাকেনা। আস্তে আস্তে বাচ্চার রঙ পরিবর্তন হয়। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুইভাবে বাচ্চার গায়ের রঙ পরিবর্তন হয়।
বেশিরভাগ নবজাতক নীল চোখ নিয়ে জন্মায়। সেই রং বাচ্চার থাকেনা। বাচ্চাদের বয়স বাড়ার সাথে এ রং পরিবর্তন হয়। ৬ মাস বয়সে আসল রং হয়। বাচ্চা জন্মের পর ত্বকের রং ফ্যাকাসে গোলাপি থেকে গাঢ় বাদামি পর্যন্ত হয়। বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে এ রং পরিবর্তন হয়। ত্বকে মেলানোসাইট নামে একটি বিশেষ কোষ থাকে যা বাচ্চার রং বদল করে। রং বদলের একটি বিশেষ কারন হলো রোদ। রোদ ত্বকের মেলানোসাইট মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাচ্চা কালো হয়ে যায়। মেলানোসাইটের মাত্রা কম হলে বাচ্চা ফরসা হয়। ঔষধের প্রভাবেও বাচ্চার রং পরিবর্তন হয়।
কী খাবার খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফরসা হয়
বাচ্চার সুন্দর ত্বক আমরা সবাই চায়। বাচ্চার গায়ের রং ফরসা করার গুরত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে খাবার। আপনার সঠিক খাবার বাচ্চার গায়ের রং ফরসা করে। কী খাবার নির্বাচন করলে বাচ্চার গায়ের রঙ ফরসা হবে তা আপনাদের সামনে তুলে ধরব-
দুধ: গর্ভবতি মায়েদের দুধ পান করা জরুরি। দুধ শিশুর শরীর গঠন করে এবং শিশুকে ফর্সা করে।
ডিম: যদি বাচ্চাকে ফর্সা করতে চান তাহলে প্রতিদিন নিয়ম করে ডিম খাবেন।
চেরি: স্ট্রোবেরি , ব্লাক বেরি, ব্লু বেরি, চেরি ফলে বাচ্চা সুন্দর হয়।
টমেটো: টমেটো খেলে সূর্যের আলোর ক্ষতির প্রভাব থেকে বাচে। ফলে বাচ্চাকে ফরসা হতে সাহায্য করে।
নারিকেলের সাদা শাঁস: নারিকেলের সাদা শাঁস খাবেন বাচ্চা ফরসা হবে। তবে এটি অতিরিক্ত খাওয়া যাবেনা।
ঘি: ঘি খেলে গর্ভবতি মায়েদের প্রসব যন্ত্রনা কম হয়। এছারাও এটি খেলে বাচ্চা ফরসা হয়।
মৌরি: মৌরি ভেজানো পানি বাচ্চার ত্বক উজ্জল করে। গর্ভবতি মায়েরা প্রতিদিন সকালে ৩ মি.লি এ পানি খাওয়া উচিত।
বাদাম: বাদাম বাচ্চার গায়ের রং পরিষ্কার করে। তাই নিয়মিত বাদাম খাবেন।
কিসমিস: নিয়মিত কিসমিস খাবেন। কিসমিস বাচ্চার গায়ের রং উজ্জল করে।
ভিটামিন সি’ সমৃদ্ধ লেবু খাবেন। এছারা প্রোটিনযুক্ত আলু, চিংড়ি মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস, ওটস, টুনা মাছ, ছোলা, সয়াবিন,পনির, মসুর ডাল, কাজুবাদাম, খাদ্যতালিকায় থাকলে বাচ্চার গায়ের রং ফরসা হয়। সঠিক খাবার , নিয়মিত যত্ন এ দুটি বিষয়ের ওপর বাচ্চা সুস্থ ও সুন্দর হয়।
শিশুর ত্বক ফরসা করার উপায়
পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন, নিয়মিত যত্ন শিশুর ত্বককে ফরসা করে তোলে।
গরম তেল: শিশুর ত্বক ফরসা করতে গরম তেল ম্যাসাজ করুন। তেলের সাথে হালকা কাঁচা হলুদ মেসাবেন। এই তেল সরিষা, অলিভ অয়েল বাদামের হতে পারে তাতে সমস্যা নেই।
ঘরোয়া বডি প্যাক: শিশুর ত্বক ফরসা করতে হলুদ, দুধ ও চন্দনের গুড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে শিশুর ত্বকে ব্যবহার করুন।
ময়েশ্চারাইজার ক্রিম: শিশুর ত্বক যাতে শুষ্ক না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। বাজারে অনেক ময়েশ্চারাইজার ক্রিম পাওয়া যায়। কোনটি ক্রিম ব্যবহার করবেন। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
দুধের সর ও বাদাম: এ দুটি উপকরন ত্বকে লাগাতে পারেন শিশুর ফরসা হওয়ার জন্য উপকারি।
শিশুর ডায়াপার: শিশুর ডায়াপার নিয়মিত চেক করুন। অধিক সময় ধরে ডায়াপার পড়লে চামড়ায় র্যাশ বেড়িয়ে শিশুর ক্ষতি করে।
বিছানা ও কাপড়: নিয়মিত শিশুর বিছানা গরম পানিতে পরিষ্কার রাখুন। পরিষ্কার শিশুর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে।
বেবি ওয়াইপ: শিশুর ত্বক পরিষ্কার করার জন্য বেবি ওয়াইপ ব্যবহার করবেন না। এর পরিবর্তে পরিষ্কার নরম কাপড় ব্যবহার করুন। হালকা গরম পানিতে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে আলতো করে মুছুন। গোসলের পর শিশুর ত্বক মশ্চেরাইজার ব্যবহার করুন।
আপনার শিশুকে সবসময় পরিষ্কার রাখুন, যত্ন নিন তাহলে শিশুর ত্বক উজ্জল থাকবে।
গর্ভের বাচ্চা ফরসা হওয়ার উপায়
প্রতিটি গর্ভের মায়ের ইচ্ছা থাকে যেন তার গর্ভের সন্তান ফরসা হয়। বাচ্চা ফরসা করার জন্যে আমরা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারি। মেলানোসাইট হরমান, আবহাওয়া, পরিবেশ, নির্ভর করে বাচ্চা ফরসা হয়ে থাকে। পুষ্টিকর, প্রোটিনযুক্ত খাবার, ভিটামিন সি’ যুক্ত খাবার খেতে হবে। চেরিজাতীয় ফল খাবেন। এছারাও নিয়মিত ঘুম, পরিমান মতো পানি খাবেন।
পানি খেলে কী ত্বক ফরসা হয়
মানব সাস্বের জন্যে গুরত্বপূর্ণ বিষয় হলো পানি। দেহে পানি সল্পতা দেখা দিলে আমাদের ত্বকের গ্লো নষ্ট হয়ে যায়। তাই সঠিক নিয়মে পানি পান ত্বক ফরসা করে। সকাল বেলা খালি পেটে পানি খাবেন। পানির সাথে লেবু ও মধু খেতে পারেন। খাবারের সাথে সাথে পানি খাবেন না। খাবার শেষ করে পানি খাবেন। অতিরিক্ত গরমে আমরা ফ্রিজের পানি খেয়ে থাকি। এটা খাওয়া যাবেনা। পানি মুখে দিয়ে নাড়াচাড়া করে খাবেন। পানি পান করলে আপনার ত্বক সুস্থ থাকে। পর্যাপ্ত পানি আপনার ত্বকের ব্রন, মেছতা দূর করে ত্বককে উজ্জল ও মসৃণ দেখায়। তাই যতটুকু সম্ভব বেশি বেশি পানি পান করুন।
বাচ্চাদের ফরসা হওয়ার লোশন
শিশুর যত্ন নিতে আপনাকে সংবেদনশীল হতে হবে। সব ধরনের লোশন শিশুদের ব্যবহার করা উচিত নয় । শিশুদের ত্বক খুব কোমল হয়। শিশুদের ত্বকে প্রতিদিন মশ্চেরাইজার লাগাতে হয়। বাচ্চাদের সবথেকে কার্যকরী লোশনের নাম হলো (Dermadew Baby Lotion) চিকিৎসকেরা এটি ব্যবহারে পরামর্শ দিয়েছেন। গোসলের পরে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এ লোশনটি ব্যবহার করবেন। এই লোশন ব্যবহারে বাচ্চার ত্বক মসৃণ ও উজ্জল রাখে। এ ক্রিম এ রয়েছে অ্যালোবেরা, ভিটামিন ই’, অ্যালমন অয়েল, টারমেরিক ও রাইজ ব্যান অয়েল। এই ক্রিম শিশুর ত্বককে মশ্চেরাইজার করে থাকে। এছারাও বাচ্চাদের ত্বকে Himalaya Baby Lotion, Dove Baby Lotion, Johnson’s Baby Lotion ব্যবহার করতে পারেন। এসবগুলোতে ক্ষতিকর কোনো উপাদান নেই। উপরে আমি চারটি লোশনের কথা বলেছি। এটির মধ্যে যেকোনো একটি ব্যবহার করলে আপনার বাচ্চার ত্বক মশ্চেরাইজার রেখে বাচ্চাবে ফরসা করে। তবে (Dermadew Baby Lotion) কে ডাক্তাররা বেশি গুরত্ব দিয়ে থাকেন।
বাচ্চাদের ফরসা হওয়ার সাবান
বাচ্চাদের ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাবান একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। বাচ্চাদের ত্বকে সব ধরনের সাবান ব্যবহার করা যাবেনা। যে সাবানগুলোতে ক্ষতিকর উপাদান থাকে সেগুলো এড়িয়ে চলুন। বাচ্চার ত্বক অনেক কোমল। তাই আপনি গ্লিসারিন জাতীয় সাবান কিনুন। বাচ্চাদের ত্বকে ব্যবহার করবেন এমন কিছু সাবানের নাম আপনাদের সামনে তুলে ধরবো-
1. Refreshing Baby Soap
2. Himalaya Extra Moisturing Baby Soap
3. Johnson’s Baby Soap
4. Sebamed Baby Cleansing Bar
5. Chicco Baby Soap
6. Softens Baby Soap
উপরের বলা যেকোনো একটি সাবান বাচ্চার ত্বকের জন্যে ব্যবহার করবেন। সাবধানতার সাথে সাবান গুলো কিনবেন। সবসময় ব্রান্ডের সাবান কিনুন।
বাচ্চাদের ফরসা হওয়ার তেল
আপনার বাচ্চাকে ফরসা করার জন্যে লোশন ও সাবানের পাশাপাশি তেল ব্যবহার করা বেশি কার্যকর। ভেষজ তেল শিশুদের জন্যে ব্যবহার করুন। এমন তেলের ব্যবহার শিশুর ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জল করে। চলুন জেনে নিই বাচ্চাদের ফরসা হওয়ার জন্য কোন তেল ব্যবহার করবেন-
সরিষার তেল: যেসব বাচ্চাদের মাথায় কম চুল থাকে তাদের জন্য এ তেল বেশ উপকারি। এ তেল বাচ্চাকে সুস্থ রাখে সর্দি কাশি দূর করে। গরমে ব্যবহার না করায় ভালো।
অলিভ অয়েল: ডাক্তারের অনেকেই এ তেল মাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যে বাচ্চার মাথায় চুলকানি, খুশকি হয় তাদের এ তেল মাখাবেন।
ডাবর তেল: এ তেল দুর্বল বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
বাদাম তেল: এ তেলে ভিটামিন ই’ থাকে। এ তেল দিয়ে বাচ্চার শরীর ম্যাসাজ করলে বাচ্চার ত্বক মসৃণ হয়।
হিমালয়া: এ তেল বাচ্চার ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জল করে।
নারিকেল তেল: এ তেল শীতকালীন বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারি। তবে চুলে দেওয়ার জন্য যে তেল ব্যবহার করা হয় সেটা ব্যবহার করবেন না। শিশুদেও শরীরের জন্য বাজারে আলাদা তেল পাওয়া যায় সেটা কিনবেন।
সাবধানতার সাথে তেল কিনবেন, ক্ষতিকর উপাদান থাকে এসব তেল কিনবেন না। প্যাকেটের গায়ে Minarel Oil, Fragrarance, Presenvativaes এসব লিখা থাকলে ঔ তেল কিনবেন না।
বাচ্চা ফরসা হওয়ার দোয়া
গর্ভের বাচ্চাকে সুন্দর ও সুস্থ করতে চাইলে বেশি আমল ও দোয়া করুন। সৃষ্টিকর্তা চাইলে আপনার বাচ্চা ফরসা ও সুন্দর হবে। গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে আমরা বেশি বেশি দূয়া ও আমল করবো। তাহলে বাচ্চা সুন্দর ও নেককার হবে। গর্ভের বাচ্চা ফরসা করতে- “আল্লাহুম্মা জাম্মিলহু ইয়া নুর” এই দুয়াটি নিয়মিত ৭ বার পড়বেন। আল্লাহর গুনবাচক নামগুলো পড়বেন। নিয়মিত সূরা ইউসূফ পাঠ করবেন। তাহলে আপনার বাচ্চা সুন্দর হবে। গর্ভবতী মায়েদের সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত থাকতে হবে।
লেখকের শেষ বক্তব্য
বাচ্চাদের ফর্সা হওয়ার টিপস – বাচ্চাদের ফর্সা হওয়ার তেল সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি বাচ্চাদের ফর্সা হওয়ার টিপস – বাচ্চাদের ফর্সা হওয়ার তেল সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।