বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট বিভাগ এবং সিলেট বিভাগের মধ্যেই সিলেট জেলার অবস্থান। সিলেট বাংলাদেশের একটি সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রস্থল। প্রকৃতির বিভিন্ন সৌন্দর্য এ জেলার মধ্যে রয়েছে আর এ জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এখানে ভ্রমন করতে আসে। আপনিও কি সিলেট ভ্রমন করতে চান? জানতে চান সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত এবং সিলেটে কি কি দর্শনীয় স্থান রয়েছে? তাহলে বিস্তারিত জানতে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে সিলেট সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আপনিও জানতে পারবেন, চলুন তাহলে বিস্তারিত শুরু করি।
সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত
সিলেট বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ। বাংলাদেশের সবথেকে বৃহত্তম জেলা বলা হয় সিলেট জেলাকে। এ জেলার আয়তন প্রায় ৩,৪৫২ বর্গ কিলোমিটার। সিলেট জেলা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লিলাভূমি সিলেট জেলা। প্রকৃতির এ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য অনেক মানুষ এ অঞ্চলে ঘুরতে আসে। সিলেট জেলাতে প্রচুর পরিমাণে কমলালেবু, চা, সাতকরা উৎপন্ন হয়। আরও রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্যবাহী খাবার, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, বেতশিল্প, এবং বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের জন্মস্থান এ সিলেট জেলায়। এসবের জন্য সিলেট জেলা বিখ্যাত।
সিলেট জেলার বিখ্যাত ব্যাক্তিবর্গের মধ্যে যারা রয়েছেন তারা হলেন-
বিখ্যাত শিক্ষাবিদের মধ্যে ছিলেন:
- গোবিন্দচন্দ্র দেব
- মোহাম্মদ জাফর ইকবাল
- অনুদ্বৈপায়ন ভট্রাচার্য
- দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ
মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন:
- মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী
- মোহাম্মদ আবদুর রব
- গোবিন্দচন্দ্র দেব
গীতিকার ও সাহিত্যকদের মধ্যে ছিলেন:
- হাসন রাজা (বাউল শিল্পী)
- দিলওয়ার (কবি)
- শাহ আবদুল করিম (বাউল শিল্পী)
- সৈয়দ মুজতবা আলী (লেখক)
- হেমাঙ্গ বিশ্বাস (গন সংগীত শিল্পী)
- রুনা লাইলা , প্লেব্যাক গায়িকা)
- শুভ্র দেব, প্লেব্যাক সংগীতশিল্পী)
- সঞ্জীব চৌধুরী (সংগীতশিল্পী ও সাংবাদিক)
- সালমান শাহ (চলচিত্র অভিনেতা)
ধর্মীয়দের মধ্যে ছিলেন:
- হযরত শাহজালাল (মুসলিম সাধক)
- হযরত শাহপরান রাঃ (মুসলিম সাধক)
- আল্লামা মুশাহিদ আহমদ বায়ামপুরি (আলেম)
- আব্দুল লতিফ চৌধুরি ফুলতলী (আলেম)
বিজ্ঞানী ও ক্রীয়াবিদদের মধ্যে ছিলেন:
- আতাউল করিম (বিজ্ঞানী)
- জামিলুর রেজা (বিজ্ঞানী)
- অলোক কাপালি (বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল)
- এনামুল হক জুনিয়র (বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল)
- কায়সার হামিদ ( মোহামেডানের একজন প্রাক্তন ফুটবলার)
- নাজমুল হোসেন (বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল)
- রাজেন সালেহ (বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল)
আরও অনেক বিখ্যাত লোকের জন্মস্থান সিলেট জেলায়। এছারাও সিলেট জেলায় রয়েছে বিখ্যাত কিছু দর্শনীয় স্থান এবং বিখ্যাত খাবার যেগুলোর কারনে সিলেট জেলা বিখ্যাত। সেুগুলোর বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
সিলেট ভ্রমনের উপযুক্ত সময়
বাংলাদেশে জনপ্রিয় ভ্রমন কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে সিলেট জেলা। জেলা প্রশাসনের মতে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ পর্যটক এ জেলায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে ভ্রমন করতে আসে। প্রকৃতির বিভিন্ন রূপে সজ্জিত হয়ে আছে সিলেট জেলা। বড় বড় পাহাড়ের সারি, পাহাড়ী রাস্তা, সবুজ মাঠ, ঝর্না, বিভিন্ন নদী, পাথর, রাতে সিলেটের অপরূপ সৌন্দর্য একেবারে মনোমুগ্ধকর। তাইতো পর্যটকদের কাছে সিলেট খুবই পচ্ছন্দের একটি জায়গা। অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন সিলেট ভ্রমনের উপযুক্ত সময় কখন। সেক্ষেত্রে বলতে চায় বর্ষার মৌসুমে, বর্ষার শেষের দিকে অর্থ্যাৎ জুন অথবা সেপ্টেম্বর মাস সিলেট যাওয়ার উপযুক্ত সময়। তবে আপনি যেকোনো সময় ভ্রমন করতে পারেন।
প্রকৃতি আবার নতুন করে যেন সাজে বর্ষার মৌসুমে, যেকোনো জায়গা বেশি সুন্দর লাগে বর্ষার সময়। বর্ষার মৌসুমে সিলেটের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। সিলেট জেলায় বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলোতে যেমন-রাতারগুল, লালাখাল, বিছনাকান্দি, জাফলং এবং বিভিন্ন ঝর্নাগুলোতে বর্ষার মৌসুমে যে হারে পানি থাকে অনান্য মৌসুমে তেমন পানি থাকে না। আর এসব স্থান পানির জন্যই সৌন্দর্যময় হয়ে উঠে। পানির ছোঁয়ায় এসবের সৌন্দর্য দ্বিগুন বেড়ে যায়। এছারাও বর্ষার পানিতে সিলেটের সাদা পাথর এক অনন্য অপরূপ রূপ নেয়। চারদিকে অসংখ্যা ছোট বড় পাহাড়, তার মধ্যে স্বচ্ছ নীল পানি। মেঘেদের খেলা এবং চারদিকে সবুজের সমাহার। সবমিলিয়ে প্রকৃতি যেন নতুন করে সেজেছে, তাই সিলেট যাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষার শেষ সময়ে।
আপনারা যারা সিলেট ভ্রমন করতে চান তারা বর্ষার মৌসুমে সিলেট যাবেন। তাহলে সিলেটের অপরূপ সৌন্দর্য ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
জাফলং কিসের জন্য বিখ্যাত
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং অবস্থিত, এটি সিলেট নগরী থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে রয়েছে। ভ্রমন পিপাসুদের জন্য জাফলং খুবই বিখ্যাত একটি জায়গা। জাফলং এর অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এর নাম দেওয়া হয়েছে প্রকৃতির কন্যা। সিলেট জেলায় যারা ভ্রমন করতে যায়, সেখানকার সব দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জাফলং সবার পচ্ছন্দের শীর্ষে থাকে। ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্ত পাহাড়ের পাদদেশে এটি অবস্থান করছে।
জাফলং এর এক পাশে পাহাড় অপরপাশে পিয়াইন নদী। পাহাড়ের গা ঘেঁষে ঝর্না প্রবাহিত আর নদীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রঙ-বেরঙের পাথর, তার সাথে রয়েছে পাহাড়ের ওপর দিয়ে মেঘেদের বয়ে চলা, প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্য জাফলং এ ছেয়ে আছে। জাফলং থেকে দেখতে পাওয়া যায় ভারতের সীমান্ত এলাকার উঁচু উঁচু পাহাড়, ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতু, বর্ষায় প্রবাহমান জলপ্রবাদ, শীতে স্বচ্ছ নীলাভ জল সবকিছুই মুগ্ধ করার মতো এসব কারনে পর্যটকদের আর্কর্ষন করে। জাফলং এর কাছেই আছে মায়াবী ঝর্না, খাসিয়া পল্লী, খাসিয়া রাজবাড়ি ও সমতলের চা বাগান, জাফলং গেলেই এসব দেখতে পাওয়া যায়। তবে জাফলং এর পাথর বেশি দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়, বলা হয়ে থাকে জাফলং এই পাথরের জন্যই বিখ্যাত। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুর বৈচিত্রময় মাধুর্যে জাফলং সারাবছর ভ্রমনের জন্য আকর্ষনীয় একটি স্থান।
তাই আপনারা সিলেট গেলে অবশ্যই জাফলং থেকে ঘুরে আসবেন।
সিলেটের বিখ্যাত খাবার
সিলেট জেলায় শুধু বিখ্যাত স্থানের জন্য খ্যাত নয় তার সাথে রয়েছে বিখ্যাত খাবার। এসব খাবার পর্যটকদের কাছে খুবই পচ্ছন্দের একটি খাবার। প্রত্যেক জেলায় নির্দিষ্ট কোনো বিখ্যাত খাবার রয়েছে, সিলেট জেলাও এর ব্যাতিক্রম নয়। চলুন জেনে নিই সিলেটের বিখ্যাত খাবার গুলো সম্পর্কে-
সাতকরা: সিলেটের বিখ্যাত খাবারের তালিকায় রয়েছে সাতকরা। সাতকরা টক ও সুগন্ধি জাতীয় একটি উপাদান এর আকৃতি কমলালেবুর মতো। রান্নার স্বাদ বাড়াতে এটি ব্যবহার করা হয়। সাতকরা মূলত মাংস, মাছ ডাল হিসেবে রান্না করা হয় অনেকেই এর আচার তৈরি করেও খায়। তবে সাতকরা দিয়ে তৈরি গরুর মাংস বেশি জনপ্রিয়। সাতকরায় রয়েছে ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম। সাতকরা টুকরো টুকরো করে কেটে ভেতরের রস, আঁশ বিচি ফেলে দিয়ে শুধু খোসায় খাওয়া হয়। বাড়ি ফেরার পথে আপনিও রান্নায় ব্যবহারের জন্য কয়েকটি সাতকরা কিনে নিতে পারেন।
আখনি: সিলেট জেলার বিখ্যাত খাবারের মধ্যে রয়েছে আখনি। সুগন্ধি চাল দিয়ে এই বিখ্যাত খাবারটি সিলেটে তৈরি করা হয়। চালের সাথে ঘি, গরম মসলাসহ বিভিন্ন স্বাদের মসলা, বিভিন্ন রকমের সবজি এবং গরু,খাসির অথবা মুরগির মাংস মিশিয়ে বিষেশভাবে রান্না করা হয়। অনেকটাই বিরিয়ানির মতো করেই রান্না করা হয় আখনি।
কমলালেবু: সিলেটে প্রচুর পরিমাণে কমলা চাষ করা হয়, সিলেটে বসাবাসকারী লোকেরা জানান সিলেটের মাটি কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগি। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপ গ্রাম কমলা চাষে সবথেকে বেশি বিখ্যাত। এখানকার প্রায় প্রত্যেক পরিবার কমলা চাষের উপর নির্ভর করে জীবিকা অর্জন করে। সেখানকার কমলা রসালো এবং খেতে দারুন সুস্বাদু।
তুশা শিন্নি: সিলেট অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হলো তুশা শিন্নি। এটি মিষ্টি জাতীয় একটি খাবার এবং খেতে খুবই সুস্বাদু। এ খাবারটি ময়দার আটার সাথে চিনি, তেল, ঘি, কিশমিশ এবং বিভিন্ন স্বাদের মসলা পানির সাথে মিশিয়ে তৈরি করা হয়।
সাত রং চা: সিলেটের সাত রঙ চা ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার, এটি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত চা। সিলেট গেলেই চা প্রেমিদের পচ্ছন্দের শীর্ষে থাকে সিলেটের সাত রং চা। অনান্য চায়ের থেকে এ চায়ের স্বাদ একটু ভিন্ন, তিন ধরনের চা পাতা, দারুটিনি, দুধ, লেবু, লবঙ্গ একং মসলার স্বাদে এ চা তৈরি হয়ে থাকে। এ চা এক কাপে সাত ধরনের রঙে এবং সাত ধরনের স্বাদে তৈরি হয়ে। এ চায়ের নাম শুনলেই দেখতে এবং খেতে মন চাই অনেকের।
হাঁস বাঁশ: সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে খুবই সুস্বাদু একটি খাবার হাঁশ বাঁশ। হাঁসের মাংসের সাথে বাঁশ কোরল কুচি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন বাটা, পাঁচফোরন, গরম মসলাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলার গুড়ো দিয়ে এ খাবার তৈরি করা হয়। এ খাবার তৈরির প্রধান উপকরন হলো হাঁসের মাংস এবং বাঁশ কোরল কুঁচি। গরম গরম ভাতের সাথে এ খাবার পরিবেশন করা হয়, স্বাদের একেবারেই আলাদা, বুঝতেই পারবেন না যে বাঁশ খাচ্ছেন।
চুঙ্গা পিঠা: সিলেটের বিখ্যাত খাবারের মধ্যে রয়েছে চুঙ্গা পিঠা। এ পিঠা আতপ চালের গুড়ি দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এটি বাঁশের চুঙ্গার ভিতরে দিয়ে তৈরি হয় বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে চুঙ্গা পিঠা। শীতের মৌসুমে এ পিঠার কদর বেশি হয়ে থাকে
এসব খাবার ছাড়াও হুটকি শিরা, হাতকরা, মুঘলোই পরোটা, পোলাও, কোরমা, কালিয়া, বিরিয়ানী, ফাল, চিকেন টিক্কা মাসালা, খিচুরি, কোফতা, জরদা, ফিরনি, পায়েসসহ আরও অনেক বিখ্যাত খাবার সিলেট জেলায় রয়েছে, এসব খাবারের স্বাদ আসলেই অতুলনীয়। এককথায় বলা যায় সিলেট জেলায় টক, ঝাল, মিষ্টি, নোনতা বিভিন্ন স্বাদের খাবার পাওয়া যাবে।
সিলেট দর্শনীয় স্থান
অপরূপ পাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট জেলা। প্রকৃতির সৌন্দর্যের পাশাপাশি সিলেট জেলায় রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। সিলেট জেলায় এসব দর্শনীয় স্থানসমূহ সিলেট পর্যটকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। নি¤েœ সিলেট জেলার কিছু দর্শনীয় স্থানের নাম উল্লেখ করা হলো-
জাফলং: জাফলং সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অবস্থিত। জাফলং পাহাড় আর নদীর সম্মিলনে অবস্থান করছে বলেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই পচ্ছন্দের একটি পর্যটনকেন্দ্র। পিয়াইন নদীর অববাহিকায় জাফলং এর অবস্থান। পিয়াইন নদীর স্তরের পাথর, ভারতের পাহার টিলা, ডাউকি পাহাড় তার সাথে ডাউকি ব্রিজ, উঁচু থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝর্নার গতি । এছারাও জাফলং এর মধ্যে রয়েছে পাথর, শ্রমজীবী মানুষদের পাথরের কাজ করে আয় করে থাকে। এসব মিলিয়ে জাফলং কে প্রকৃতির কন্যা নামে অভিহিত করা হয়।
রাতারগুল: সিলেটের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে রাতারগুল জলাবন। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় এটি অবস্থিত, এ জলাবনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর। সবুজের অপার সমারহ এ বনের মধ্যে। চারদিকে সবুজ গাছ এবং তার মধ্যে পানি অসাধারন একটি দৃশ্য। গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে হিজল গাছ, করচ, বরুণ, ছাতিম, গুটি জাম, বট গাছসহ আরও বিভিন্ন ধরনের গাছ। এ গাছগুলোতে বসে থাকে বিভিন্ন রঙ বেরঙের পাখি। জলের ধারে দাড়িয়ে থাকে অসংখ্য নৌকা, সেই নৌকায় চড়ে রাতারগুল জলাবনের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা সত্যি মজাদার।
লালাখাল: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় লালাখাল নদী অবস্থিত, এটি সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নদীর পাশে রয়েছে পাহাড়, পাহাড়ি ঘন সবুজ বন, মেঘেদের খেলা ও ঝর্নার চলার গতি তার সাথে চা বাগান এবং বিভিন্ন ধরনের গাছ পর্যটকদের গভীরভাবে কাছে টানে। লালাখাল নদীতে দেখা মিলে অসংখ্য নদীর বাঁক। এসব দেখার জন্য অনেক পর্যটক ভিড় জমায় এখানে।
মালনিছড়া চা বাগান: সিলেট জেলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একেবারেই কাছে মালনিছড়া চা বাগানের অবস্থান। এ চা বাগানের আয়তন ২ হাজার ৫০০ একর। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় চা বাগান রয়েছে, তবে সিলেটের চা বাগান তার মধ্যে অন্যতম। চা বাগানের সবুজের আবরন এবং আঁকাবাঁকা রাস্তা পর্যটকদের কাছে পচ্ছন্দের একটি স্থান। ভ্রমনপ্রিয় মানুষেরা সেখানে গিয়ে অনেকক্ষন সময় কাটায় এবং ছবি তোলে।
তামাবিল: সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় তামাবিল অবস্থিত, জেলা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে তামাবিলের অবস্থান। জাফলং থেকে ৫২ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই তামাবিল দেখতে পাবেন। তামাবিল থেকে ভারতের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখতে পাওয়া যায়। তামাবিল গেলে দেখতে পাবেন পথের ধারে বিশাল পাহাড় এবং ঝর্না, তামাবিলের মধ্যে রয়েছে স্বচ্ছ পানির লেক, তামাবিল জিরো পয়েন্ট, জৈন্তা হিল রিসোর্ট। এছারাও তামাবিল থেকে সরাসরি দেখতে পাওয়া যাবে ভারতের মেঘালয় রাজ্য।
বিছানাকান্দি: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় রুস্তমপুর ইউনিয়নে বিছানাকান্দি অবস্থিত। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যরে বহিপ্রকাশ ঘটেছে জলপাথরের ভূমি বিছানাকান্দিতে। বিছানাকান্দিতে রয়েছে অসংখ্য পাথর দেখে মনে হয় পাথরের বিছানা। বর্ষাকালে বিছানাকান্দির আসল সৌন্দর্য আপনারা উপভোগ করতে পারবেন। পাথরের মধ্যে জমে থাকে স্বচ্ছ পানি, পানির মধ্যে আপনি হাটলে মনে হবে কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন। বিছানাকান্দির অপরূপ সৌন্দর্য সত্যিই চমৎকার।
হাকালুকি হাওড়: সিলেট জেলার মৌলভীবাজারে হাকলুকি হাওড় অবস্থিত। বাংলাদেশের সবথেকে বড় হাওড় এটি। হাকালুকি হাওড়ের মধ্যে ছোট বড়সহ মোট ২৩৮ টি বিল রয়েছে। শীতকালের হাওড়ে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য রঙ-বেরঙের অতিথি পাখির আগমন ঘটে। অনান্য ঋতুতেই বিভিন্ন পাখি এখানে এসে বসে। বর্ষাকালে হাওড়ে জমে পানি এবং তার মধ্যে থাকে মাঝিসহ নৌকা। হাওড় সুন্দরভাবে উপভোগ করার জন্য সেখানে অনেক ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, সেসব টাওয়ারে উঠলেই হাওড়ের পুরো সৌন্দর্য সম্পূর্নভাবে দেখতে পাওয়া যায়।
লোভাছড়া: সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বেশ কিছু স্বচ্ছ পানির নদী আছে। তার মধ্যে লোভাছড়ার নদী অন্যতম, এবং তার পাশেই রয়েছে লোভছড়ার চা বাগান। এই নদীর পাশে রয়েছে ছোট বড় পাহাড়, উপজাতিদের টিলা, পাহাড়ি ঝর্না, নুড়ি পাথর এছারাও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য রয়েছে এ নদীর গা ঘেঁেষ। এজন্য পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয় এই লোভছড়া । এখানে সবুজ পাহাড় আর অসাধারন স্বচ্ছ পানি একবার দেখলে বারবার সেখানে মন টানবে যেতে।
ড্রিমল্যান্ড পার্ক: সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার হিলালপুরে ড্রিমল্যান্ড পার্ক রয়েছে। এটি সিলেট শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এ পার্কটি ১০০ একর জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত। এ পার্কে বিনোদনের জন্যই তৈরি করা হয়েছে, এ পার্কের মধ্যে রয়েছে ২৫ টি রাইড এবং ৯ টি ওয়াটার রাইড। আনন্দময় সময় কাটাতে আপনিও যেতে পারেন এ পার্কে, সব বয়সের জন্য এ পার্কটি উপযুক্ত। তাই আপনি পরিবার নিয়েই যেতে পারবেন সমস্যা নেয়।
এছারাও রয়েছে জাকারিয়া সিটি, মণিপুরি জাদুঘর, ভোলাগঞ্জ, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্না, পান্থুমাই ঝর্না,লক্ষনছড়া, জিতু মিয়ারি বাড়ি, আলী আমজাদের ঘড়ি, ক্বীন ব্রীজ, শ্রীমঙ্গল, হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার, হাসন রাজার বাড়ি, আদমপুর বন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, নীলাদ্রি লেক, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, বারেক টিলা, লালঘাট ঝর্না, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সিলেট জেলার মধ্যে রয়েছে। এসব দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য বলে বোঝানো যাবেনা, এর সঠিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে যেতে হবে সিলেট জেলায় এবং অবশ্যই সময় নিয়ে এ জেলা ঘুরতে আসবেন আর সবগুলো জায়গা ঘুরে দেখবেন।
ঢাকা থেকে সিলেট বাস ভাড়া
ঢাকা থেকে সিলেট যারা ভ্রমন করতে চান, ঢাকা থেকে বিভিন্ন বাস সরাসরি সিলেটে গিয়ে পৌঁছায়। ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল, মহাখালী অথবা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের যেকোনোটিতে থেকে সিলেট যেতে পারবেন আপনারা। এদের মধ্যে রয়েছে এসি, নন এসি এবং লোকাল বাস। ঢাকা থেকে যেসব বাস সিলেট যায় সেগুলো হলো- ইউনিক সার্ভিস লিমিটেড, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এনা পরিবহন, লন্ডন এক্সপ্রেস, গোল্ডেন লাইন পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, মামুন পরিবহন। সিলেট থেকে ঢাকা জন প্রতি বাসের ভাড়া হলো-
- শ্যামলী পরিবহন (নন এসি) – ৪৭০ টাকা
- হানিফ পরিবহন (নন এসি) – ৪৭০ টাকা
- গ্রীন লাইন পরিবহন (এসি)- ৯৫০ থেকে ১২০০ টাকা
- এনা পরিবহন (এসি) – ১২০০ টাকা
- লন্ডন এক্সপ্রেস (এসি) – ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা
উপরের আমরা কয়েকটি বাসের নাম উল্লেখ করেছি, তবে বাসের নাম অনুযায়ী ভাড়া কিছুটা কম বেশি হতে পারে।
লেখকের শেষ বক্তব্য
সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত – সিলেট দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত – সিলেট দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।