ফ্রিজ আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। প্রতিটা পরিবারে ফ্রিজ অতি গুরত্বপূর্ন, ফ্রিজ ছাড়া বর্তমানে কেউ যেন চলতে পারে না বললেই চলে। ফ্রিজ আমরা যারা ব্যবহার করছি অথবা যারা নতুন কিনতে যাচ্ছি। তাদের সবার ফ্রিজ ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে ফ্রিজ ব্যবহার করতে হবে। ফ্রিজ ব্যবহারের কিছু সঠিক নিয়ম আছে যেগুলো অবশ্যই আমাদের ফ্রিজ ব্যবহার করার আগে জানতে হবে। কারন ফ্রিজ ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে না জেনে ফ্রিজ ব্যবহার করলে আমাদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। এজন্য আজ আমরা আপনাদের সামনে আলোচনা করবো নতুন ফ্রিজ ব্যবহারের নিয়ম কি এবং তার সাথে ফ্রিজ সম্পর্কে যাবতীয় কিছু তথ্য জানিয়ে দিব।
আশা করি এ নিয়ম গুলো জেনে আপনি যদি ফ্রিজ ব্যবহার করেন তাহলে ফ্রিজে কোনো সমস্যা হবে না। চলুন তাহলে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
নতুন ফ্রিজ ব্যবহারের নিয়ম
ফ্রিজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই উপকারি একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র। ফ্রিজের মধ্যে দীর্ঘদিন খাবার সংরক্ষন করা হয় এবং যারা চাকরিজীবি তাদের প্রতিদিনের রান্নার ঝামেলা থেকে মুক্তি দিচ্ছে ফ্রিজ। সংসার শুরু করতেই গেলে প্রথমে প্রয়োজনের তালিকায় আসছে ফ্রিজ। ফ্রিজের চাহিদা দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে, বিশেষ করে কুরবানির ঈদ আসলেই ফ্রিজ কেনার ধুম পড়ে। তবে ফ্রিজ আমরা যারা কিনছি অবশ্যই ফ্রিজ ব্যবহারের নিয়ম আমাদের জানতে হবে। সঠিক নিয়মে ফ্রিজ ব্যবহার না করলে আমাদের অনেক বিপদে পড়তে হয়। তাই নতুন ফ্রিজ ব্যবহারের কয়েকটি গুরত্বপূর্ন নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন-
- ফ্রিজ কিনে এনে প্রথমেই ফ্রিজ রাখার জন্য সঠিক জায়গা নির্বাচন করুন। এমন জায়গায় ফ্রিজ রাখতে হবে, ফ্রিজ যেন দালানের সাথে না ঘেষে এবং নড়াচড়া না করে। ফ্রিজ যেন স্থিরভাবে একজায়গায় থাকে এবং খোলামেলা স্থানে ফ্রিজ থাকা ভালো।
- বাসায় ফ্রিজ এনে সাথে সাথে ফ্রিজ লাইনের সাথে সংযুক্ত করবেন না। কারন রাস্তায় ফ্রিজ গাড়ির ঝাঁকুনিতে গ্যাসের সংকুচিত হয়। ফলে সাথে সাথে ফ্রিজের লাইন দিলে গ্যাসলাইন বন্ধ হয়ে ফ্রিজের সমস্যা হতে পারে। তাই বাসায় আনার কয়েক ঘন্টা পর ফ্রিজ চালু করুন।
- নতুন ফ্রিজ ব্যবহার করার সময় মাল্টিপ্লাগে ফ্রিজ অন করবেন না। এভাবে ফ্রিজ ব্যবহার করলে ফ্রিজের মাল্টিপ্লাগ পুড়ে যেতে পারে। তাই মাল্টিপ্লাগের পরিবর্তে ফ্রিজ ব্যবহারে ডাইরেক্ট বোর্ড সংযোগ চালু করতে হবে।
- ফ্রিজের ভেতর সবসময় পরিষ্কার রাখবেন, তবে খুব তাড়িতাড়ি ফ্রিজ পরিষ্কার করা ভালো নয়। এজন্য সাবধানে খাবার রাখবেন যাতে ফ্রিজের ভিতরে রক্ত না লাগে। তাই আপনি পলিব্যাগগুলো ভালো মানের অথবা ডাবল করে ব্যবহার করবেন।
- ঘরের মেঝেতে সরাসরি ফ্রিজ ব্যবহার করবেন না। এখন ফ্রিজ রাখার জন্য আলাদা স্ট্যান্ড পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো কিনে নিবেন।
- অনেক সময় ফ্রিজের লাইন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেয়, ফ্রিজের লাইন চেক করলে দেখলেই বুঝতে পারবেন কি সমস্যা হয়েছে।
- ফ্রিজের ওপরে অনেকেই কিছু রাখতে চান ফুলদানি বা অন্য কিছু। তবে ফ্রিজের ওপর কিছু রাখবেন না।
- ফ্রিজে খাবার সংরক্ষন করার সময় বিশেষ করে ঈদের সময় কাদাকাদি করে ফ্রিজে মাংস রাখবেন না। তবে ফ্রিজ যে ফাঁকা রাখবেন তা নয়, পলিব্যাগে ছোট ছোট পুটলা করে মাংস গোছিয়ে রাখবেন। এতে কিছুটা হলেও জায়গা ফাঁকা থাকবে।
- বরফ জমানো খাবার ফ্রিজ থেকে বের করে সবগুলো রান্না করে নিতে হবে, দ্বিতীয় বারের মতো ফ্রিজে রাখা যাবে না। এজন্য ছোট ব্যাগে পরিমাপমতো রাখবেন।
- শাক-সবজি, ফলমূল সবসময় নরমালে রাখবেন, ডিপে রাখবেন না। ডিপে রাখা কাঁচা শাক-সবজি ও ফলমূলে স্বাদ ও গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায়।
- ফ্রিজে সরাসরি গরম খাবার রাখা যাবে না, এতে ফ্রিজের কুলিং সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায়। রান্না করার পর ঠান্ডা হলে রাখবেন তাতে কোনো সমস্যা হবে। আর খাবার রাখার সময় অবশ্যই ঢাকনা বাটিতে খাবার সংরক্ষন করবেন। এতে ফ্রিজ এবং খাবার দুটোই ভালো থাকে।
- ফ্রিজের মধ্যে রাখা জিনিস পঁচে গেলে সেটা তখনি সরিয়ে ফেলুন । পঁচা কোনো কিছু ফ্রিজের মধ্যে রাখলে ফ্রিজ বেশিদিন টিকসই হয় না।
- মাছ, মাংস ফ্রিজে রাখার সময় অবশ্যই সেগুলো পরিষ্কার করে ফ্রিজে রাখবেন। যাতে রক্ত অথবা ময়লা লেগে না থাকে।
- ঘন ঘন ফ্রিজের দরজা বারবার খুলবেন না, চেষ্টা করবেন কম খোলার। বারবার ফ্রিজের দরজা খুললে ফ্রিজের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসতে সময় লাগে।
- ফ্রিজের দরজা খুব জোরে লাগাবেন না এবং অকারনে ফ্রিজ অন অফ করবেন না।
- শক্ত বা ধারালো কোনো জিনিস দিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করবেন না এবং লেবু পানি অথবা ভিনেগার দিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করবেন। আর ফ্রিজ পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই লাইন অফ করে পরিষ্কার করবেন।
- ফ্রিজের পাশে গ্র্যাসের কোনো জিনিস অথবা গ্যাসের চুলা রাখা যাবে না।
উপরের নিয়মগুলো ফলো করে ফ্রিজ ব্যবহার করবেন, তাহলে আপনার ফ্রিজে কোনো সমস্যা হবে না এবং ফ্রিজ দীর্ঘদিন টেকসই হবে।
ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত
ফ্রিজ আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে একটি। আমাদের প্রায় সবার বাড়িতেই এখন ফ্রিজ রয়েছে। তবে ফ্রিজ ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আমাদের সবার জানা নেই। ফ্রিজ ব্যবহার করতে ফ্রিজের একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় হলো ফ্রিজের রেগুলেটর। প্রত্যেক ফ্রিজে তাপমাত্রা বাড়ানো বা কমানের জন্য রেগুলেটর থাকে। ফ্রিজ ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই আমাদের রেগুলেটরের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। রেগুলেটর ব্যবহারের নিয়ম না জেনে ফ্রিজ ব্যবহার করলে ফ্রিজে খাবার নষ্ট হয়ে যায় এবং ফ্রিজের ক্ষতি হয়। তাই রেগুলেটর কখন কততে রাখবো সে বিষয় আমাদের জানতে হবে।
ফ্রিজ ব্যবহার করার সময়, ফ্রিজের রেগুলেটর সবসময় একই রকম রাখা যাবে না। গরম শীতে অর্থাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের ফ্রিজে রেগুলেটরের মাত্রা বদল করতে হবে। অতিরিক্ত গরম অথবা অতিরিক্ত শীতে ফ্রিজের পাওয়ার একই রাখা যাবে না। অনেকেই আছে শীতকালে ফ্রিজের পাওয়ার একেবারেই ০’ তে রেখে দেন। তবে এ ভুল আপনার কখনই করবেন না, এতে ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যায়। ফ্রিজের তাপমাত্রা রাখতে হবে ফ্রিজের রেগুলেটরের মাত্রা অনুযায়ী। কারন প্রত্যেক ফ্রিজে রেগুলেটরের মাত্রা একই রকম থাকেনা। তবে মাত্রা খুব একটা কম বেশি হয় না। ফ্রিজের রেগুলেটরের মাত্রা যদি সর্বনিম্ন ১ এবং সর্বচ্চো ৭ হয় সেক্ষেত্রে তাপমাত্রা যেমন রাখবেন তা আপনাদের সামনে আলোচনা করা হলো।
গরমে রেগুলেটরের সঠিক মাত্রা
অতিরিক্ত গরমে বাইরের তাপমাত্রা বেশি থাকে, ফলে খাদ্য বেশিদিন বাইরে যেমন সংরক্ষন করা যায় না। তেমনি রেগুলটেরের মাত্রা কম থাকলে খাবার বেশিদিন ফ্রিজে সংরক্ষন কারা যায় না। তাই সঠিক মাপে রেগুলেটরের মাত্রা রাখতে হবে। অতিরিক্ত গরমে ফ্রিজের রেগুলেটরের মাত্রা ২.৫ অথবা ৫ নম্বরের রাখতে হবে। খাবারের পরিমান যদি বেশি থাকে তাহলে পাওয়ার একটু বেশি দিবেন, খাবার কম থাকলে পাওয়ার একটু কমিয়ে দিবেন। তবে ২.৫ এর নিচে না রাখাই ভালো।
শীতকালে রেগুলেটরের মাত্রা
অতিরিক্ত শীতে ফ্রিজের রেগুলেটর ১.৭ থেকে ৩ পর্যন্ত রাখতে পারেন। ফ্রিজে খাবারের পরিমান বেশি থাকলে ৩ রাখবেন এবং খাবার কম থাকলে ১.৭ মধ্যে রাখতে পারবেন। শীতকালে খাদ্য সংরক্ষনের সমস্যা কিছুটা কমে তাই রেগুলেটরের পাওয়ার কম থাকলে খাবার নষ্ট হবে না।
অতিরিক্ত গরমও না আবার শীতও না তাহলে, তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ মধ্যে রাখবেন।
উপরের নিয়মগুরো ফলো করে ফ্রিজের রেগুলেটরের মাত্রা নির্ধারন করবেন। তাহলে ফ্রিজ নষ্ট হবে না, খাদ্য বেশিদিন সংরক্ষন করা যাবে এবং বিদ্রুৎ বিল কম আসবে।
ফ্রিজে বরফ না জমার কারন
ফ্রিজ ব্যবহার করার সময় কিছু সমস্যা আমরা দেখতে পাই। তার মধ্যে একটি সমস্যা হচ্ছে ফ্রিজে বরফ না জমা। এর থেকে সমাধান পেতে হলে অবশ্যই আমাদের প্রথমে জানতে হবে ফ্রিজে বরফ না জমার কারন কি। ফ্রিজে বরফ না জমার বিভিন্ন কারন রয়েছে, চলুন কারনগুলোর সাথে আমরা পরিচিত হয়।
- সব ফ্রিজের মধ্যে রেগুলেটর থাকে যেটির সাহায্যে আমরা ফ্রিজের পাওয়ার কম এবং বাড়িয়ে থাকি। যদি কোনো কারনে রেগুলেটরের সমস্যা হয়, তাহলে ফ্রিজে বরফ জমবে না।
- ফ্রিজের গ্যাস লাইনে সমস্যা হলে ফ্রিজে বরফ জমবে না। ফ্রিজ বেশিদিন ধরে ব্যবহার করার পর এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। দীর্ঘদিন ফ্রিজ ব্যবহার করার পর ফ্রিজের গ্যাস লাইন লিক হয়ে যেতে পারে। ফলে ফ্রিজে বরফ জমে না।
- ফ্রিজের দরজায় সমস্যা হলে ফ্রিজে বরফ জমে না। দরজায় সমস্যা হলে বাইরের বাতাস ফ্রিজে প্রবেশ করে এবং ফ্রিজের ভেতরের ঠান্ডা বাতাস বাইরে বের হয়ে যায়, ফলে ফ্রিজে বরফ জমতে দেয় না।
- ফ্রিজের কম্প্রেসরের সমস্যা হলে, ফ্রিজে বরফ জমে না। ফ্রিজে বরফ জমার কাজটি কম্প্রেসর করে থাকে, ফলে সেটির সমস্যা হলে বরফ জমে না।
- ফ্রিজে প্রচুর পরিমানে লোড আছে তবে পাওয়ার কমে রাখা আছে, সেক্ষেত্রে ফ্রিজের মধ্যে বরফ জমবে না। ফ্রিজ দীর্ঘদিন ভালো রাখতে ফ্রিজ অতিরিক্ত লোড না করাই ভালো।
- সার্কিট বোর্ডে সমস্যা হলে ফ্রিজে বরফ জমবে না।
এসব কারনগুলোর জন্য আপনার ফ্রিজে বরফ জমে না, এসব কারনগুলো মাথায় রেখে বাড়িতেই আপনি ফ্রিজ পরীক্ষা করে নিতে পারেন। তবুও যদি সমস্যা না ভালো হয়, তাহলে যারা ফ্রিজ সার্ভেসিং করে তাদেরকে দিয়ে ফ্রিজ দেখিয়ে নিবেন।
ফ্রিজ ভালো রাখার উপায়
দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করতে ফ্রিজ খুবই গরত্বপূর্ন একটি জিনিস। ফ্রিজ শুধু ব্যবহার করলেই হবে না, নিতে হবে সঠিক যত্ন। সবকিছুর যত্ন নিতে হয় তা নাহলে সময়ের আগে সেটা নষ্ট হয়ে যায়, ফ্রিজও এর ব্যতিক্রম নয়। ফ্রিজও সঠিক যত্নের অভাবে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফ্রিজ ব্যবহার করতে অবশ্যই আমাদের জানতে হবে কীভাবে ফ্রিজ ভালো রাখবো। ফ্রিজ ভালো রাখার উপায় আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো-
- ফ্রিজ ভালো রাখতে ফ্রিজের দরজা অতিরিক্ত খুলা থেকে বিরত থাকুন। ফ্রিজে খাবার ভালোভাবে গুছিয়ে রাখলে এবং একটু সতর্ক থাকলেই আমাদের ফ্রিজ তেমন খোলাখোসা করতে হবে না।
- সরাসরি রান্না করা গরম খাবার ফ্রিজে রাখবেন না এবং রান্না করা খাবার ঢাকনা বাটিতে রাখবেন। খাবার ভালোভাবে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখবেন, ফ্রিজ ভালো থাকবে।
- ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমতে দেওয়া যাবে না, অতিরিক্ত বরফ জমার ফলে ফ্রিজের ঠান্ডা করার ক্ষমতা কমে যায়।
- দেয়াল থেকে ফ্রিজ দূরে রাখুন।
- সপ্তাহে একবার ফ্রিজ পরিষ্কার করবেন, অতিরিক্ত বরফ এবং ফ্রিজে জমা ময়লা তাড়াতাড়ি ফ্রিজকে নষ্ট করে দেয়।
- ফ্রিজ ভালো রাখতে ফ্রিজের রেগুলেটরের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সঠিক তাপমাত্রা দিয়ে ফ্রিজে খাবার রাখতে হবে।
- ফ্রিজের কনডেন্সারের কয়েল পরিষ্কার না থাকলে ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই কনডেন্সার নিয়মিত পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন।
- ফ্রিজের ওপর ভারি কিছু রাখবেন না, অন্য কিছু না রাখায় ভালো। তবে ফ্রিজের ওপরে ময়লা যেন না জমে সেজন্য কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন।
- খাবার বের করার সময় অনেক্ষন ধরে ফ্রিজের দরজা খুলে রাখবেন না।
ফ্রিজ ব্যবহারে প্রায় এ ভুলগুলো আমরা করে থাকি। ফলে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের শখের জিনিস নষ্ট হয়ে যায়। তবে উপরের বলা টিপসগুলো একটু সতর্ক হয়ে মেনে চললে আমরা ফ্রিজ দীর্ঘদিন ভালো রাখতে পারবো এবং বিদুৎ খরচ কম আসবে।
ফ্রিজ নষ্ট হওয়ার কারন
ফ্রিজ আমরা ব্যবহার করতে করতে অনেক সময় দেখি ফ্রিজের ভেতর ঠান্ডা হতে সময় লাগছে খাবার জমছে না, ফ্রিজের ভেতরে প্রচুর শব্দ করছে এসব সমস্যা প্রায় ফ্রিজে দেখতে পাওয়া যায়। ফ্রিজ কিনার অল্প কিছুদিনের মধ্যে ফ্রিজে সমস্যা দেখা দিলে, এ সমস্যার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। আমাদের সাবধানতার কারনে ফ্রিজে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ফ্রিজ যেন তাড়াতাড়ি নষ্ট না হয় সেজন্য আমাদের সাবধান থাকতে হবে এবং ফ্রিজ নষ্ট কি কারনে হচ্ছে সেগুলো জেনে, সেগুলো করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ফ্রিজ কি কারনে নষ্ট হচ্ছে সে কারন গুলো না জানার কারনে আমাদের ফ্রিজ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তাই চলুন জেনে নিই ফ্রিজ নষ্ট হওয়ার কারনগুলো কি।
- ফ্রিজের দরজা বারবার খুললে ফ্রিজ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
- ফ্রিজ পরিষ্কার না করলে ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যায়, দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিজ পরিষ্কার না করার কারনে ফ্রিজে অতিরিক্ত ময়লা জমে এবং ফ্রিজের দীর্ঘায়িত আয়ু কমিয়ে দেয়।
- ফ্রিজ দীর্ঘসময়ের জন্য বন্ধ করে রেখে দিলে ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যায়।
- ফ্রিজে সঠিক নিয়মে খাবার না রাখলে এবং ফ্রিজের ব্যবহার সঠিকভাবে না করলে ফ্রিজ অল্প দিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। (ফ্রিজ কিভাবে ব্যবহার করবেন আর্টিকেলের শুরুতে আলোচনা করা আছে)
- ফ্রিজের দরজাই একটি রাবার সিস্টেম সিল স্ট্রিপ থাকে সেটাতে ময়লা যেন না জমে লক্ষ্য রাখবেন। অতিরিক্ত ময়লা জমে ফ্রিজের দরজা ঠিকমতো লাগবেনা, ফলে আপনার ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যাবে।
ফ্রিজ ব্যবহার করার সময় অবশ্যই সাবধানতার সাথে এবং সঠিক নিয়মে ফ্রিজ ব্যবহার করবেন। ফ্রিজে সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে সার্ভেসিং করাবেন, তাহলে সমস্যা আর বাড়বে না।
ফ্রিজ পরিষ্কার করার নিয়ম
ফ্রিজের ব্যবহার বর্তমান সময়ে খুবই গুরত্বপূর্ন। বর্তমান ব্যস্ত সময়ে দীর্ঘদিন খাবার সংরক্ষন এবং সময় বাঁচাতে ফিজের উপকারিতা অনেক। ফ্রিজ আমাদের কয়েকদিনের জন্য ব্যবহৃত জিনিস নয়। ফ্রিজ আমরা দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে চায়, আর দীর্ঘদিন ফ্রিজ ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই ফ্রিজের যত্ন এবং পরিষ্কার রাখতে হবে। ফ্রিজ দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করলে ফ্রিজে ময়লা জমে রোগ জীবানুর জন্ম নেয় এবং ফ্রিজ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমাদের ফ্রিজ পরিষ্কার রাখতে হবে, তবে ফ্রিজ পরিষ্কার করলেই হবে না জানতে হবে ফ্রিজ পরিষ্কার করার সঠিক নিয়ম। ফ্রিজ পরিষ্কারের নিয়ম জেনে পরিষ্কার করবেন। জেনে নিন ফ্রিজ পরিষ্কার করার নিয়ম-
ফ্রিজ পরিষ্কার করার সময় প্রথমে আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো ফ্রিজের লাইন পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করা। এরপর ফ্রিজের দরজা কিছুক্ষনের জন্য খোলা রাখুন তাহলে ফ্রিজে রাখা উপাদানগুলো এবং ফ্রিজে জমে থাকা বরফ সহজেই ফ্রিজ থেকে আলগা হয়ে যাবে। এখন ফ্রিজ থেকে সব খাবার সাবধানে বের করে নিন। খাবার বের করা হয়ে গেলে ফ্রিজের ড্রয়ার এবং তাক গুলো বের করে নিতে হবে। এখন বের করা ড্রয়ার এবং তাকগুলো কোমল ডিটারজেন দিয়ে ভালোভাবে পষ্কিার করে নিয়ে শুকাতে দিতে হবে। অতিরিক্ত রোদে শুকাতে দিবেন না এতে সরঞ্জামগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এবার ফ্রিজের ভেতর পরিষ্কার করবেন, ফ্রিজের ভেতরে থাকা পানিগুলো প্রথমে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিবেন। এরপর ফ্রিজের ভেতর ডিটারজেন ও পানি দিয়ে প্রথমে একবার ধুয়ে ফেলুন, ধোয়া হয়ে গেলে আবার কুসুম গরম পানিতে বেকিং সোডা অথবা ভিনেগার মিশিয়ে ফ্রিজের ভেতরটা ভালো করে মুছে নিন। ফ্রিজের ভেতর পরিষ্কার করার সময় দরজায় থাকা রাবারের সিল স্ট্রিপ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
ফ্রিজের ভেতর পরিষ্কার করা হয়ে গেলে বাইরের দিকটাও ভিনাগার মিশ্রিত পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এবার ফ্রিজের ভেতর ও বাইরের অংশ শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। পরিষ্কার করা হয়ে গেলে কয়েকটি লেবুর টুকরো ফ্রিজে কেটে রেখে দিন। এখন ফ্রিজের ড্রয়ার বা তাকগুলো আগের মতো করে ফ্রিজে সেট করুন। তারপর বের করে রাখা খাবারগুলো ফ্রিজে গুছিয়ে রেখে দিন। সবশেষে ফ্রিজের সুইচটি মনে করে অন করুন।
ফ্রিজের বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়
ফ্রিজ আমরা ব্যবহার করি ঠিক, তবে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ দেখে মাথা ঘুরে যায়। ফ্রিজ ব্যবহার করলে তো বিদ্যুৎ বিল আসবেই, তবে আমাদের অসতর্কতার জন্য অনেক সময় অতিরিক্ত বিল আসে। ফ্রিজের বিল যাতে অতিরিক্ত না আসে সেজন্য আমাদের সতর্ক থেকে ফ্রিজ ব্যবহার করতে হবে। জেনে নিন ফ্রিজের বিদ্যুৎ বিল কিভাবে কমাবেন।
- ফ্রিজের রেগুলেটর ঠিক মাপে না রাখলে বিদ্যুৎ বিল বেসি আসে, তাই বিল কমাতে রেগুলেটর সঠিক নিয়মে রাখতে হবে। গরমে রেগুলেটরের মাত্রা বেশি থাকে তবে আপনি যদি শীতকালেও বেশি দিয়ে রাখেন তাহলে বিল বেশি আসবে।
- ফ্রিজের দরজা সঠিক ভাবে না লাগালে ফ্রিজের বিল বেশি আসবে।
- ফ্রিজের বিদ্যুৎ বিল কমাতে গরম খাবার ফ্রিজে রাখা যাবে না। ফ্রিজে গরম খাবার রাখলে, খাবার ঠান্ডা হতে সময় লাগে ফলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে।
- ফ্রিজের দরজা কম খোলা হলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
- ফ্রিজে খাবার একেবারেই কম থাকলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। তাই ফ্রিজে সবসময় খাবার রাখার চেষ্টা করবেন, তবে একেবারে খাবার বেশি আঁটোসাটো করে রাখা যাবে না।
- ফ্রিজের চারপাশসহ ফ্রিজের উপর ফাঁকা রাখুন। এতে ফ্রিজের ভেতরে ঠান্ডা হওয়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয় না এবং বিদ্যুৎ বিল কম আসে।
- ফ্রিজে কোনো খাবার না থাকলে ফ্রিজ কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে রেখে দিন।
- ফ্রিজ নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
উপরের বলা তথ্যগুলো মাথায় রেখে সঠিক নিয়মে, সাবধানতার সাথে ফ্রিজ ব্যবহার করবেন ফ্রিজের বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
লেখকের শেষ বক্তব্য
নতুন ফ্রিজ ব্যবহারের নিয়ম – ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত সেই সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি নতুন ফ্রিজ ব্যবহারের নিয়ম – ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত সেই সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।