বাংলাদেশের অনেক মানুষ বর্তমানে আমেরিকায় অভিবাসী হিসাবে বসবাস করে থাকেন। তাছাড়া আমেরিকায় অনেকে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী ভাবেও বসবাস করে থাকেন। তাই আমেরিকায় উপার্জিত টাকা বিভিন্ন প্রয়োজনে দেশের আত্নীয় স্বজনদের কাছে পাঠাতে হয়।
অনেকেই আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানাই অনেক রকমের ঝামেলায় পরে থাকেন। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম সম্পর্কে।
আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম
বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর অনেক নিয়ম রয়েছে। সেই সকল নিয়মের মধ্যে বহুল জনপ্রিয় এবং সুরক্ষিতভাবে টাকা পাঠানোর কিছু উপায় নিচে দেওয়া হলো:
মোবাইল ব্যাংকিং: আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর উপায়গুলোর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং অন্যতম। কেননা আমাদের দেশে এখনো অনেক মানুষ আছে যারা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনে অভ্যস্ত না। আর যেহেতু মোবাইল ব্যাংকিং আমাদের দেশে অনেক সহজলোভ্য তাই মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অনেক লেনদেন হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত মোবাইল ব্যাংকিং গুলোর মধ্যে অন্যতম- বিকাশ, লগদ, রকেট, উপায় ইত্যাদি।
ব্যাংক: আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর উপায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুরক্ষিত এবং নিয়ম বন্ধিত উপায় হচ্ছে ব্যাংক। মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা অন্যান্য টাকা পাঠানোর নিয়মগুলোয় অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের লিমিট থাকলেও ব্যাংক ব্যবহার সেই ঝামেলা নেয়। তাছাড়া ব্যাংক ব্যবহার করে দেশে টাকা পাঠালে দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক উন্নয়ন স্বাধন হয়ে থাকে। কেননা আমেরিকা কিংবা দেশের বাইরে থেকে যে অর্থগুলো দেশে আসে সেগুলো আমাদের অর্থনীতিতে রেমিটেন্স হিসাবে যোগ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচরিত সরকার অনুমোদিত ব্যাংকগুলো এই ধরনের রেমিটেন্স লেনদেন করার সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে।
ওয়ার্ল্ডরেমিট ওয়েবসাইট: ওয়ার্ল্ডরেমিট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠাটে পারবেন। ওয়ার্ল্ডরেমিট ওয়েবসাইট মুলক একটি বিশ্বস্ত মানি ট্রান্সফার প্লাটফ্রম। ওয়ার্ল্ডরেমিট ওয়েবসাইট ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোন দেশে খুব দ্রুততম সময়ে নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার ডিভাইস ব্যবহার করে লেনদেন সংগঠিত করতে পারবেন। মুলত ওয়ার্ল্ডরেমিট ওয়েবসাইট নিজস্ব একাউন্ট এ্যাক্সেস এর মাধ্যমে এই লেনদেন গুলো করা হয়। ওয়ার্ল্ডরেমিট ওয়েবসাইটে কম ফি এবং দ্রুততম সময়ে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে অর্থ পাঠাতে পারবেন। তাছাড়া ওয়ার্ল্ডরেমিট ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট গেটওয়ে থাকার কারনে বিশ্বের যেকোন জাইগায় ব্যবহারের অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে প্লাটফ্রমটি।
সেন্ডওয়েভ অ্যাপ: সেন্ডওয়েভ অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো যায় এবং সেন্ডওয়েভ অ্যাপ এ টাকা পাঠাতে কোন প্রকার চার্জও কাটে না। সেন্ডওয়েভ মুলত একটি মোবাইল অ্যাপ। সেন্ডওয়েভ অ্যাপ ব্যবহার করে মুহর্তের মধ্যে অর্থ লেনদেন করা যায়। লেনদেন করার জন্য প্লেস্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় সকর তথ্য দিয়ে অ্যাপটি চালু করে নিলেয় আপনি খুব সহজেই এটি ব্যবহার করতে পারবেন। সেন্ডওয়েভ অ্যাপে সর্বনিম্ন ও দ্রুত টাকা স্থানন্তর হয়ে থাকে। সেন্ডওয়েভ অ্যাপের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ১ডলার পর্যন্ত লেনদেন করতে পারবেন। তাছাড়া লেনেদেনে কোন প্রকার কাস্টমার সার্ভিসের প্রয়োজন হলে ২৪ঘন্টা কস্টমার সার্ভিস প্রদান করে সেন্ডওয়েভ অ্যাপ।
বিকাশে আমেরিকা থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
আমেরিকা থেকে অনেকেই চান দেশে তাদের আত্বীয় স্বজনদের কাছে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে। কিন্তু কিভাবে পাঠাবেন বুঝে উঠতে পারেন না। অনেকের আত্বীয় স্বজনদের ব্যাংক একাউন্ট না থাকায় বিকাশ ব্যবহারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকেন। বিকাশে আমেরিকা থেকে টাকা পাঠানোর জন্য আপনাকে আমেরিকায় নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থিত যেকোন একটি এক্সচেঞ্জ হাউজে যেতে হবে। সেখানে যাওয়ার পরে তাদের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বললে, বর্তমানে আমেরিকা ডলারের কারেন্সি চেক করে আপনাকে জানাবে প্রতি ডলারে বাংলাদেশি কত টাকা হাতে পাবে আপনার বাংলাদেশে অবস্থিত ব্যাক্তি। এরপর সবকিছু ঠিকঠাক হরে কত টাকা আপনি পাঠাতে চান তাদেরকে জানালে তারা আপনাকে একটি রেমিটেন্স ফরম প্রদান করবে। ফর্মটি পাওয়ার পরে, যে ব্যাক্তিতে টাকা পাঠাচ্ছেন তার নাম ও বিকাশ মোবাইল নম্বর সহ সকল তথ্য ভালোমত যাচাই-বাচাই ফরমটি পুরন করবেন। ফরমটি পূরন করে এক্সচেঞ্জ হাউজের কর্মকর্তাদের হাতে দিলে তারা পূনরায় ফরমটি চেক করে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মূহুর্তেই আপনার ফরমে দেওয়া সেই বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দিবে। টাকা পাঠানের পরে অবশ্যই আপনার বাংলাদেশে অবস্থিত সেই ব্যাক্তির সাথে কথা বলে টাকা পেয়েছে কিনা যাচাই বাছাই করে তারপরে এক্সচেঞ্জ হাউজ ত্যাগ করবেন।
তাছাড়া এক্সচেঞ্জ হাউজ ব্যাতীত বর্তমানে অনেক অনলাইন ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ ব্যবহার করে বিকাশে আমেরিকা থেকে টাকা পাঠানোর অনেক রকম ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি টাকা পাঠানোর জন্য যে পথ ব্যবহার করুন না কেন, অবশ্যই সেই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে কত খরচ হয়
আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে কিংবা যেকোন দেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতো কোন প্রকার খরচ হয় না। তবে আপনি যে এক্সচেঞ্জ হাউজ ব্যবহার করে টাকা পাঠাবেন সেই এক্সচেঞ্জ হাউজ তাদের সার্ভিস চার্জ নিয়ে থাকে। তাছাড়া আপনি যখন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করবেন সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে টাকা উঠানোর সময় সেই মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী চার্জ দিয়ে টাকা ক্যাশ করতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিং ছাড়া অন্যান্য প্লাটফ্রমগুলোতে লেনদেন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের বর্তমান লেনেদেন শর্তাবলি আগেই যাচাই করে নিবেন।
আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা আসতে কতদিন সময় লাগে
আজকের আর্টিকেলে উল্লেখিত আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম গুলোর মধ্যে সবগুলো ক্ষেত্রেই টাকা মুহর্তের মধ্যেই চলে আসে। তবে অনেক সময় অনলাইন ভিত্তিক লেনদেন হওয়ার কারনে ৫-১০ মিনিট দেরি হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মোবাইল ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে সাথে সাথেই হস্তানন্তর হয়ে যায়, আবার অনেক সময় ব্যাংকে লেনদেনে ৫-১০ মিনিট সময় লেগে থাকে।
আমেরিকা ১ ডলার বাংলাদেশে কত টাকা
আমেরিকা ১ ডলার বাংলাদেশে কত টাকা এটা নির্ধারিত করে বলে দেওয়া প্রাই অসম্ভব। কেননা বিভিন্ন সময় ডলারের রেট পরিবর্তন হতে থাকে। তবে আপনি যখন আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠাবেন তখনকার বর্তমান ডলারের রেট আগে জেনে নিবেন। ডলারের বর্তমান রেট বিভিন্ন ভাবে চেক করা যায়। আপনি এক্সচেঞ্জ হাউজ গুলোর সাথে যোগাযোগ করে ডলার থেকে বাংলাদেশী টাকার রেট জানতে পারেন অথবা গুগল করেও জানতে পারবেন। বর্তমানে আমরা যখন আর্টিকেলটি পোস্ট করছি এখনকার রেট অনুযায়ী আমেরিকার ১ ডলার বাংলাদেশে ১১৭ টাকা সমপরিমান। আশা করি আমেরিকান ডলার এবং বাংলাদেশী টাকার মান সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত ধারনা পেয়েছেন।
লেখকের শেষ বক্তব্য
আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়মগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যয় সতর্কতা অবলম্বন করবেন। লেনদেন করার সময় যাকে টাকা পাঠাচ্ছেন তার কাছ থেকে অবশ্যই ভালোভাবে টাকা পেয়েছে কিনা যাচাই করে এক্সচেঞ্জ হাউজ ত্যাগ করবেন। তাছাড়া এক্সচেঞ্জ হাউজের ফরম পূরন করার সময় প্রদানকৃত তথ্যগুলো ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে নিবেন যাতে করে ভুল বসত আপনার কষ্টে উপার্জিত টাকা ভুল জাইগায় চলে না যায়।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।