সবাই চাই লম্বা চুল। কিন্তু কীভাবে মেয়েদের চুল লম্বা হয়? মেয়েদের চুল ঘন করার তেল কী? এর সঠিক তথ্য আমাদের জানা নেই। আজকের আর্টিকেলে চুল লম্বা করতে কী উপকরণ ব্যবহার করবেন। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। বিস্তারিত জানতে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
চুলের যত্নে প্রতিদিনের করণীয়
সুন্দর লম্বা , ঘন চুল পেতে চাইলে চুলের যত্ন হোক প্রতিদিন। যত্ন ছাড়া চুল সুন্দর করা যায়না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুরু করুন চুলের যত্ন। ঘুম থেকে উঠার পর চুল থাকে এলোমেলো বা জট বেঁধে থাকে। ঘুম থেকে উঠে নিজের চুল পরিপাটি করে আঁচরিয়ে নিবেন। চুলের যত্ন নিতে ব্যবহার করুন সঠিক চিরুনি। কাঠের চিরুনি ব্যবহার করা ভালো। চুলে কোনো সময় অতিরিক্ত ময়লা বাধতে দেওয়া যাবেনা। এর জন্যে নিয়মিত শ্যাম্পু করবেন। গোসলের পর অনেকেই আমরা ভেজা চুল আঁচরিয়ে ফেলি এটা চুলের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এ সময় চুলের গোড়া নরম থাকে ফলে চুল পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ভেজা চুল আঁচরাবেন না। গোসলের পর হালকা শুকানোর পর আঁচরিয়ে নিবেন। চুল সবার একধরনের হয়না, তাই আপনার চুলের ধরন অনুনাযায়ী হেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করবেন। ভালো করে মাসাজ করে শ্যাম্পু করুন যাতে চুলে ময়লা না থাকে। চুলকে রোদ ধুলাবালি, থেকে সবসময় সুরক্ষিত রাখুন। কারন ধুলাবালি রোদ আপনার চুলে জমাট বাঁধায়। এর ফলে আপনার চুল পড়ে। তাই রোদ ধুলাবালি থেকে চুলকে দূরে রাখুন। চুলে নিয়মিত গোসলের পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এতে চুল মসৃণ থাকে। তবে সতর্কতার সাথে চুলে কন্ডিশনার লাগাবেন। যাতে চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার না যায়। চুলে একই কোম্পানির হেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। সপ্তাহে ২-৩ দিন চুলে তেল মালিশ করুন। তেলটা হালকা গরম করে ব্যবহার করবেন। এতে আপনার চুল লম্বা হবে। চুলের যত্নে আমরা ড্রেয়ার, আয়রন এরকম অনেক ধরনের যন্ত্র আমরা ব্যবহার করে থাকি। সবসময় ব্যবহার করা ঠিক নয়। চাইলে মাঝে মধ্যে ব্যবহার করবেন। এসব যন্ত্র ব্যবহারে চুলের উপর ধকল যায়। ফলে চুলের বাড়তি যত্ন নিতে হয়। গোসলের জন্য চুলে গরম পানি ব্যবহার করবেন না, ঠান্ডা পানিতে চুল পরিষ্কার করুন। গরম পানি চুলের জন্য ক্ষতিকর। ঘুমানোর আগে চুলে আমরা বেণী করে থাকি। তবে আঁটসাঁট বেণী করা যাবেনা। এতে চুল ভেঙে যায়। চুলের জন্য পুষ্টিকর খাবার খাবেন। চুলের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন খাওয়া অত্যবশক। খাদ্যভ্যাস ঠিক থাকলে চুল সুস্থ ও সুন্দর থাকে। পুষ্টিকর খাবার না খেলে চুল ঝড়ে পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। তাই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। খাদ্যতালিকায় কোন কোন খাবার থাকলে চুল সুস্থ ও সুন্দর থাকে জেনে নিই। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডিম রাখতে হবে। ডিম প্রোটিনের উৎস। ডিমে আছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। আয়রন চুলের গোড়া শক্ত করে।
মিষ্টি আলু: ভিটামিন ভিটামিন এ’ সমৃদ্ধ খাবার হলো মিষ্টি আলু। ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খেলে মাথার খুশকি, চুলকানি হবে না ফলে চুল সুস্থ থাকবে।
লেবু: ভিটামিন সি’ চুলের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। তাই সি এর চাহিদা পুরনে লেবু, কমলালেবু এসব খাবেন।
বাদাম: বাদামে প্রচুর বায়োটিন আছে। যা চুল বৃদ্ধি করে এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়।
এছারাও পালংশাক, ডাল, মুরগির মাংস, গাজর, শসা, ক্যাপসিকাম, মটরশুঁটি, পেয়ারা পেঁপে , দুধ জাতীয় খাবার, ওটস ইত্যাদি খাবেন। সুন্দর স্বাস্থ্যবান চুল পেতে আপনাকে খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। তাই পুষ্টিকর খাবার খান, চুলের যত্ন নিন।
চুল লম্বা করার জন্য কোন তেল ব্যবহার করতে হবে
চুল লম্বা করার জন্যে প্রয়োজন বিশেষ যত্নের সেই যত্ন আমরা তেল দিয়েও নিতে পারি। চলুন জেনে নিই চুল লম্বা ও মজবুত করার জন্য কোন তেলগুলো ব্যবহার করবেন-
নারিকেল তেল: আমরা অনেকেই নারিকেল তেল ব্যবহার করতে চাইনা। কিন্তু এই নারিকেল তেল চুলের গোড়া মজবুত করে, চুলের আগা ফাটা কমায়, চুল দ্রুত বৃদ্ধি করে। নারিকেল তেলের সাথে আপনি নিম পাতা, আমলকি, মেথি মিক্স করে রাতে লাগাবেন। পরদিন সকালে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
তিলের তেল: তিলের তেল আয়ুর্বেদিক উপাদানে তৈরি করা হয়। ফলে এ তেল ব্যবহারে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
অ্যালমন্ড অয়েল: বাদাম তেলে ভিটামিন ই’ থাকে। ভিটামিন ই’ চুল পড়া থেকে রক্ষা করে, চুলের গোড়া শক্ত করে।
কাস্টর অয়েল: কাস্টর অয়েলে রয়েছে ভিটামিন ই’, অ্যান্টিঅক্সাইড এবং প্রোটিন যা চুল পড়া কমায়, চুল লম্বা হয়।
অলিভ অয়েল: এ তেল চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায় এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চুল ময়েশ্চারাইজার থাকে।
পেঁয়াজের তেল: পেঁয়াজের তেলে প্রচুর সালফল আছে। এটি চুল ভেঙে যাওয়া, চুল পাতলা হওয়া প্রতিরোধ করে।
রোজমেরি অয়েল: এই তেলের রোজমেরিক এবং ক্যাফেইক এসিড মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন করে। ফলে চুল পড়ার পরিমাণ কমে যায়, সেই সঙ্গে চুল লম্বা করে।
তেল ব্যবহারের সঠিক নিয়ম: সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন চুলে তেল ব্যবহার করুন। রাতে তেল ভালো করে ব্যবহার করে সারারাত রেখে দিন। পরদিন সকালে উঠে ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
উপরে আমি কয়েকটি তেলের কথা বলেছি। চাইলে আপনি এর যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞরা নারিকেল তেল চুলের জন্য ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে নারিকেল তেলের মিশ্রন তেলটা। এটি চুলের পুষ্টি জোগায়।
চুলে কী দিলে চুল লম্বা ও ঘন হয়
লম্বা ও ঘন চুল আমাদের সবার প্রিয়। তবে অনেকের চুল লম্বা হচ্ছেনা পড়ে যাচ্ছে, পাতলা হয়ে যাচ্ছে চুল। কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান, ভেষজ তেল ও পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে চুল লম্বা ও ঘন করা যায়। যারা এ সমস্যায় ভুগছেন তারা নিচের উপাদানগুলো ব্যবহারে এ সমস্যার সমাধান পাবেন।
পেঁয়াজের রস চুলের জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ন একটি উপাদান। এ রস চুলকে ঘন ও লম্বা দেখায়। নারিকেল তেল ও পেঁয়াজের রস একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন, শুকানোর পর ধুয়ে ফেলুন। মেথি চুল ঘন ও উজ্জল করে। মেথিকে ভিজিয়ে রেখে ব্লেন্ড করে চুলে ব্যবহার করুন। এতে চুল ভালো থাকবে। চুলের যত্ন নিতে কমপক্ষে সপ্তাতে একবার মেন্দি লাগান। এটি ভেতর থেকে চুলকে মজবুত করে। পাতি লেবুর রসও চুলের জন্য বেশ উপকারি। শ্যাম্পু করার আগে ভালো ভাবে চুলে লাগিয়ে নিন। এরপর ২০ মিনিট মতো রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরফলে আপনার চুলের রূক্ষভাব ও খুশকি দূর করবে।
প্রাকৃতিক এসব উপাদান ছাড়াও চুল লম্বা ও ঘন করতে প্রয়োজন সঠিক খাবার ও সঠিক তেল। আমাদের দেশের মেয়েরা প্রায় চুলে তেল দেননা। লম্বা চুল পেতে চাইলে প্রাকৃতিক উপাদানের পাশাপাশি তেল ব্যবহার করা উপযোগি। চুলে তেল ব্যবহারে চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হয়। এছারাও চুলের পুষ্টি জোগাতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাবেন। ভিটামিন সি’, ভিটামিন ই’, প্রোটিনযুক্ত খাবার, ফ্যাটি এসিড খাবেন। ফলে চুল লম্বা ও ঘন হবে।
চুল লম্বা করার ঘরোয়া সহজ উপায়
চুল নারীদের সৌন্দর্য বাড়ায়। ঘন, উজ্জল, লম্বা সিল্কি চুল আমরা সবাই পছন্দ করি। সঠিক যত্ন, সঠিক তেল আমাদের চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। কিছু ঘরোয়া উপায় জানা থাকলে আমাদের চুল লম্বা করা যায়-
১. আমাদের সবার পরিচিত একটি জিনিস হলো লবঙ্গ। এটি নিয়মিত চুলে ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ করে। এটি ব্যবহারের নিয়ম হলো পানি, লবঙ্গ, তেজপাতা একসাথে দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে, এরপর এটি ঠান্ডা হওয়ার পর তেজপাতা ও লবঙ্গ ফেলে দিয়ে সেই পানি চুলে ব্যবহার করুন।
২. পেঁয়াজের রস তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। ফলে চুল লম্বা হবে।
৩. মেথি ও কালোজিরা চুলের জন্যে উপকারি। মেথিতে আয়রন ও কালোজিরায় ভিটামিন বি’ রয়েছে। মেথি ও কালোজিরা একসাথে মিশিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে মেথি ও কালোজিরা ভিজানো পানি আপনার চুলে লাগিয়ে নিন।
৪. অ্যালোভের চুল পড়া রোধ করে। অ্যালোভেরায় অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন, জিংক, কপার থাকে যা চুলের জন্যে উপকারি। অ্যালোভেরা জেলের সাথে কাস্টর অয়েল এবং মেথির গুড়ো মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে ভালো করে চুলে লাগিয়ে নিন। পরদিন সকালে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৫. আমলকির রস চুলে লাগান। চুল পড়া বন্ধ হয়ে নতুন চুল গজাবে।
৬. একটা পাকা কলার সঙ্গে মধু, নারিকেল তেল মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৭. অ্যাভোকাডোয় রয়েছে ভিটামিন বি’ ও ই’ যা চুলের স্বাস্থের জন্য ভালো। একটি পাকা অ্যাভোকাডোর বীজ বের করে তাতে টক দই মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। ১ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
৮. মেহেদির গুড়া, আমলকির গুড়া এবং মেথির গুড়া হালকা কাচা পানির সাথে মিশিয়ে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ব্যবহার করুন। ২০ মিনিট মতো রেখে ধুয়ে ফেলুন।
উপরে আমি চুল লম্বা, ঘন এবং চুল পড়া কমাতে কয়েকটি ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করেছি। এর যেকোনো একটি প্রতিদিন সময় করে করবেন। তাহলে চুল লম্বা হবে।
ডিম দিয়ে চুল লম্বা করার উপায়
ডিম চুলের জন্যে খুবই স্বাস্থকর। ডিমে থাকে এক ধরনের ফ্যাটি এসিড। যা চুল পড়া রোধ করে। ডিম প্রোটিনের উৎস যা চুলের স্বাস্থ ভালো রাখে। এর জন্য সপ্তাহে প্রায় একবার করতে পারেন ডিমের হেয়ার প্যাক। ডিম দিয়ে তৈরি করা যায়-
১. ডিম ও তেল দিয়ে তৈরি হেয়ার প্যাক। এ দুটো উপকরন ভালো করে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। কিছুক্ষন লাগিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে আপনার চুল লম্বা হবে।
২. ডিমের সাথে মধু ও লেবু মিশিয়ে হেয়ার প্যাক বানিয়ে চুলে লাগান। নতুন চুল গজাবে।
৩. ডিম ও দইয়ের মিশ্রনে চুলের স্বাস্থ বাড়ে।
৪. ডিম ও কলার মিশ্রন চুলকে ময়েশ্চারাইজার বানাই। চুল দ্রুত লম্বা হয়।
৫. ডিমের সাদা অংশের সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৬. একটি ডিম, এক চা চামচ টক দই, গ্লিসারিন, লেবুর রস , মধু এবং তেল যেটা আপনি ব্যবহার করেন একসাথে মিশিয়ে আপনার চুলে গোড়া থেকে লাগিয়ে নিয়ে ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ডিমের প্যাকগুলো ব্যবহারে চুলের যা উপকার হয়-
১. রুক্ষ চুল সুন্দর হয়।
২. চুল পড়া বন্ধ হয়।
৩. চুলের আগা ফাটা রোধ করে।
৪. চুল ঘন হয়।
৫. চুল নরম ও ঝলমলে হয়।
৬. চুল মজবুত হয়
৭. কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে।
৮. চুল দ্রুত লম্বা হয়
স্বাস্থ্যকর চুল, ঘন ও লম্বা চুল এবং আপনার চুলকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে উপরের বিষয়গুলো ফলো করবেন।
লেখকের শেষ বক্তব্য
মেয়েদের চুল লম্বা করার উপায় – মেয়েদের চুল ঘন করার তেল সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি মেয়েদের চুল লম্বা করার উপায় – মেয়েদের চুল ঘন করার তেল সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।