রোজায় স্বাস্থ্যকর খাবার – স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়

রমজানের সারাদিন যেন আপনার অনেক এনার্জি থাকে সে জন্য কোন ধরনের খাবার খাবেন? কেমন রুটিন ফলো করতে পারেন? আজাকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো রোজায় স্বাস্থ্যকর খাবার – স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় এর কার্যকারী কিছু বিষয় সম্পর্কে।
রোজায় স্বাস্থ্যকর খাবার

ইফতারে কী খাবেন, কী খাবেন না

আমরা অনেকেই খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করি এটা খুবই ভালো কিন্তু সাথে আপনি আরেকটা কাজ করতে পারেন যাতে খেজুর খেতে অনেক মজা হবে পুষ্টি অনেকগুণ বেড়ে যাবে। খেজুরের আঁটি টা বের করে সেখানে একটা কাঠবাদাম ঢুকিয়ে দিবেন। বিশ্বের সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারের তালিকা মধ্যে গবেষণায় এক নম্বর এসেছে কাঠবাদাম। চিনির শরবত বা চিনি দিয়ে বানানো জুস খাবার পরিবর্তে পানি খেয়ে পারে যাদের সুযোগ আছে তারা ডাবের পানি খেতে পারেন। ডাবের পানিতে পটাশিয়াম থাকে যেটা আপনার সারাদিনের ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। আমাদের শরীরে আলাদা করে চিনি খাওয়ার কোন প্রয়োজন বা উপকারিতা নেই বরং অতিরিক্ত চিনি খেলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। খেজুর পানি খাওয়ার পরে আপনি কিছু ফলমূল খেতে পারেন যে ধরনের ফল আপনার জন্য সহজলভ্য সেইটাই খেতে পারেন যেমন কলা, পেঁপে, আনারস, তরমুজ, পেয়ারা, আপেল, কমলা। আপনার ভালো লাগে নানা ধরনের ফলে নানান রকমের পুষ্টি থাকে তাই পরিবর্তন করে করে পুরো রোজার মাসটা বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
ডুবো তেলে ভাজা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই খাবারগুলোর মধ্যে অনেক পরিমাণে ট্রান্সলেট থাকতে পারে। ট্রান্সলেট হচ্ছে সবচেয়ে বিপদজনক অল্প পরিমাণে খেলেও শরীরে অনেক বড় ক্ষতি করে। গবেষণায় দেখা গেছে আপনি দিনে যে পরিমাণ ক্যালোরি খান তার মাত্র 2% যদি ট্রান্সলেট থেকে আসে তাহলে হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ে।এছাড়াও ট্রানস্ফার ইনসুলিন রেজিস্টেন্স চুরি করতে পারে ক্ষতিকর কোন অস্ত্র বানাতে পারে সুরের প্রদাহ তৈরি করতে পারে। ক্ষতিপূরণ দিতে গেলে আলোচনা তো অনেক লম্বা হয়ে যাবে মোটকথা আপনি সারাদিন রোজা রেখে এত কষ্টের পরে এই খাবারগুলির দ্বারা নিজের ক্ষতি না করাই উত্তম।
সারাদিন উপবাসের পরেই যে আপনার খাবার পেটে গেল সেইটা ব্রেইনের বুঝতে কিছুটা সময় লাগে বিরোধী নেয়ার ফলে ওভারহিটিং বা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। রোজার সময় অতিরিক্ত খাবার খাওয়া খুবই একটা কমন সমস্যা এ কারণে অনেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় আবার অনেকের ওজন বেড়ে যায়। যারা রোজার সময় ওজন কমাতে চান তাদের জন্য বিরতি নিয়ে খাবার খাওয়া খুবই উপকারী হবে। একটা জিনিস বিশেষভাবে বলতে চাই অনেকেই মনে করেন যে সারাদিন রোজা রাখার পর এ বড় একটা খাওয়া দিতে হবে কিন্তু অতিরিক্ত ওজন অস্বস্তির কারণ হতে পারে। যদি আপনি সবজি লাল চালের ভাত মাছ মাংস খান তাহলে আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি আপনি পেয়ে যাবেন।

রোজায় পানিশূন্যতা রোধে করণীয়

পানিশূন্যতা এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যদি পানির দিকে খেয়াল না রাখেন তাহলে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। সেহরি পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ গ্লাস পানি খাবেন। তারাবি নামাজের সময় সাপেক্ষে পানির বোতল রাখতে পারেন। পানির পাশাপাশি পানি জাতীয় খাবার যেমন তরমুজ খেতে পারেন। শসা টমেটো এগুলো খেতে পারেন। ভালোভাবে খেয়াল রাখবেন যেন শরীরে পানিশূন্যতা না হয়। কারণ পানিশূন্যতা থেকে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।

সেহরিতে কী খাবেন, কী খাবেন না

সেহরিতে এমন খাবার আমাদের কে বেছে নিতে হবে যেটা অনেকক্ষণ পেতে থাকে। যে খাবার গুলোতে ফাইবার বেশি গ্লাইসেমিক ইনডেক্স পিসি আইকন। এতে যেটা হবে দিনে আমরা অল্প অল্প করে বেশি সময় পর্যন্ত এনার্জি পাবো। সাদা চালের ভাত খেলে সেটা খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায় অনেক সময় ধরে এনে দিতে পারে না একটু পরে দেখা দিয়েছে ক্ষুধা লেগে যায়। রাইস এর জন্য ভালো খাবার হলো লাল চালের ভাত দিয়ে আপনি ঘন ডাল খেতে পারেন, সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন। সাথে বাদাম খেতে পারেন, বাদামে ভালুকার থাকে হজম হতে সময় লাগে। এই খাবারগুলোতে যদি আপনার গলা বুক জ্বলে তাহলে সেগুলো অনেকেই সেহরিতে অতিভোজন করেন এটা গ্যাস্ট্রিক এর কারণ হতে পারে যেখানে ডাক্তারি ভাষায় বলি গ্যাস্ট্রো ইসোফেগাল রিফ্লাক্স দিসিজ। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা যায় তারা খাবার পরেই শুয়ে পরবেন না খাটের একপাশে একটু উঁচু করে সে দিকে মাথা দিয়ে শুবেন যাতে করে পেট থেকে মাথাটা একটু উপরের দিকে থাকে।

রোজায় ব্যায়াম প্রয়োজনীয়তা

এবার আসি আরেকটা বিষয় সেটা হলো ব্যায়াম। অনেকেই চিন্তা করেন ব্যায়াম করা যাবে না এটা একদমই সঠিক না রোজার মাসে নিয়মিত ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন কমপক্ষে আপনি সন্ধ্যার পর একটু সময় বের করবেন। সকালে ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম করতে পারেন। মোটকথা সুস্থ থাকতে শরীরচর্চা ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে।
আজকের আর্টিকেলে মোট চারটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম ইফতার, সেহরি, পানিশূন্যতা ও ব্যায়াম। এই বিষয় গুলোর উপর যদি আপনি মনোযোগ দিতে পারেন তাহলে আশা করছি আপনার একটা স্বাস্থ্যকর এবং এনার্জেটিক রমজান কাটবে।

রোজার নিয়ত

আরবি: نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

ইফতারের দোয়া

আরবি: بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিজের মাধ্যমে ইফতার করছি। (মুআজ ইবনে জাহরা থেকে বর্ণিত, আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮)

লেখকের শেষ বক্তব্য

রোজায় স্বাস্থ্যকর খাবার – স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে কার্যকারী কিছু টিপস তুরে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি রোজায় স্বাস্থ্যকর খাবার – স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

আরো পড়ুনঃ-  ইসলামে ঘুমানোর সঠিক নিয়ম - ঘুমানোর আগে সুন্নাত সমূহ

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।

Leave a Comment