পড়ালেখায় সফল হওয়ার উপায় – একজন আদর্শ ছাত্রের বৈশিষ্ট্য
মানুষের জীবন একটা যানবাহনের মতো। যানবাহন যেমন এক জায়গা থেকে কোন জায়গায় যেতে থাকে তেমনি মানুষের জীবনেও একটার পর একটা ধাপ আসে। সে ধাপগুলোর মধ্যে শিক্ষা জীবন একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। শিক্ষাজীবন মূলত শৈশব থেকেই শুরু হয়ে যায়। এই সময়ে যারা কঠোর পরিশ্রম করে এবং নিয়ম মাফিক চলাফেরা করে তারাই জীবনী সাফল্য দেখতে পারি। সাফল্য একটা সোনার হরিণের মতো হয়ে গেছে। এ সাফল্যের পেছনে সবাই ছুটছে। কিন্তু পরিশ্রম না করলে জীবনে সাফল্য কখনোই আসে না। সাফল্য জিনিসটাকে ঘুড়ির সাথে তুলনা করা যায়। ঘুড়িকে যত উপরে ওড়ানোর চেষ্টা করবেন ততই আপনাকে আকাশের বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হবে এক কথায় সুতায় টান দিতে হবে। বাতাসের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে ঘড়িটা নিচে নামতে থাকবে। ঠিক তেমন করে আমরা যদি পরিশ্রম না করি,অলস জীবন যাপন করি আর এভাবেই সাফল্যের চিন্তা করে জীবন কাটায় তবে কখনোই জীবনে সাফল্য আসবে না।
শিক্ষা জীবনে সাফল্য আনতে গেলে আমাদের কিছু কাজ আছে যেগুলা রেগুলার করতে হবে।আজাকের এই ব্লগে আমরা জানবো পড়ালেখায় সফল হওয়ার উপায় – একজন আদর্শ ছাত্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
জীবনে যেকোনো কাজ করতে চাইলে শরীর সুস্থ থাকা প্রয়োজন। শরীর যদি সুস্থ না থাকে পড়াশোনাতে মন বসবে না। পড়াশোনার জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যের সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাস গুলো জড়িত থাকে। আমরা খুব সহজেই বদ অভ্যাস জড়িয়ে পড়তে পারি, সু অভ্যাসের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হয়। সাফল্যের জন্য শরীরের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও আমাদের নিয়ম মতো ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন খেলাধুলা করতে হবে এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। শরীর যদি আমাদের সুস্থ স্বাভাবিক না থাকে তবে আমাদের পড়াশোনা, স্কুলে যাওয়া আসা সবকিছুতেই প্রভাব পড়ে। একজন ভালো শিক্ষার্থী হতে গেলে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, পড়াশোনা করতে হয় অনেক। এসবের জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। শরীর সুস্থ থাকলেই শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তি এবং সৃজনশীলতার বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে।
পড়াশোনার গুরুত্ব
মানুষ হিসেবে আমাদের অনেক জ্ঞান বুদ্ধি আল্লাহতালা দিয়েছেন কিন্তু আমরা সবকিছুই জানিনা। আল্লাহ তায়ালার দেওয়া এই জ্ঞানকে বাড়াতে হলে আমাদের শিখতে হবে, প্রচুর পরিমাণে বই পড়তে হবে।পড়ার টেবিলে বিভিন্ন ধরনের বই সাজিয়ে রাখতে হবে এবং সেগুলো পড়তে। সাধারণ জ্ঞান বাড়ানোর জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, ফিকশন, নন ফিকশন সব ধরনের বই পড়তে হবে। শুধু পড়ার ক্লাসের সিলেবাসের মধ্যেই ডুবে থাকলে হবে না। ক্লাসের পড়া শেষ করে জ্ঞানমূলক বই পড়তে হবে। এসব বই পড়লে আমরা বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান অর্জন করতে পারি যেমন সাধারণ জ্ঞান, ইংলিশ, ইতিহাস ইত্যাদি। তাই শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি পড়াশোনা করতে হবে। সফল শিক্ষার্থী হতে গেলে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পড়াশোনা কম পড়লে একজন শিক্ষার্থী দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ে আর বেশি পড়াশোনা করলেই একজন খারাপ শিক্ষার্থীও আস্তে আস্তে সফলতার দিকে যেতে পারে।
সকল বিষয়বস্ত সহজভাবে দেখা
যেকোনো কঠিন পড়াকে সহজভাবে দেখতে হবে। পড়াশোনা কে কঠিন ভাবলে সেটা আরো কঠিন হয়ে যায়। তাই বাংলা, ইংলিশ, অংক, ভূগোল, রসায়নের মতো বইগুলোকে সহজভাবে শিখতে হবে। ছোট বাচ্চারা সবকিছুতেই সহজভাবে তাই তারা জীবনের সরলতা খুঁজে পাই। তাই তাদের মত ভাবার অভ্যাস গোড়ে তুলতে হবে। যেকোনো কঠিন সূত্র টেকনিক দিয়ে মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এমনকি যেগুলা মুখস্ত বিষয় সেগুলোও নিজের টেকনিককে কাজে লাগিয়ে মনে রাখতে হবে। এভাবে টেকনিক দিয়ে পড়াশোনা করলে অনেক কঠিন বিষয়ক জিনিস তাড়াতাড়ি মুখস্ত হয়ে যায়। তাইপড়াশোনার ক্ষেত্রে যেকোনো জিনিস সরলভাবে নিতে হবে তবেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সহজ আর হবে।
সময়ের কাজ সময়ে করা
সাফল্যের জন্য আজকের কাজ আজকে করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কাল করবো বলতে গেলে বিপদ। ভবিষ্যৎ কিংবা অতীত বলে তেমন কিছু নাই, সবটাই বর্তমান ভাবা উচিত। প্রতিদিনের হোমওয়ার্ক প্রতিদিন যদি করতে পারেন তবে আপনার জন্য দারুন একটি ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন যদি করতে পারেন তবে আপনার সিলেবাস শেষ করা কোন ব্যাপার হবে না। তাছাড়া প্রতিদিন একটু একটু করে নিজের পড়া বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। একজন ভালো ছাত্র হওয়ার জন্য সবাই আশা করি কিন্তু পরিশ্রম করে কয়জন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মোবাইল, টিভির সাথে অলস জীবনযাপন করে। পড়া জমিয়ে রাখলে সেই পড়া কমপ্লিট করা অনেক কঠিন হয়ে যায় তাই শিক্ষার্থীদের উচিত প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন করা উচিত । অর্থাৎ একটা শত্রু মনে রাখতে হবে যে আজকের কাজ আজই, কালকে নয়।
চরিত্র গঠন
জীবনে সাফল্য আনতে গেলে একজন চরিত্রবান মানুষ হওয়া জরুরী। সারাদিন রাত বই পড়লেও একজন ভালো শিক্ষার্থী হওয়া যায়না যদি সেই শিক্ষার্থী চরিত্রবান না। একজন ভালো শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেক ভালো গুণাবলী রয়েছে। সে সকল গুণাবলী অর্জন করতে পারলি আপনি একজন ভালো ছাত্র উঠতে পারবেন। আপনারা কি জানেন student শব্দের পূর্ণরূপ কি? না জানা থাকলে চলুন জেনে নেই। S-Study (অধ্যায়ন) T-Truthfulness (সত্যবাদিতা ) U-Unity ( ঐক্য ) D-Discipline (শৃঙ্খলা ) E-Energy (শক্তি ) N-Neat and clean ( পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ) T-Treasure (মহামূল্যবান) একজন সফল হতে গেলে যেমন পড়াশোনা করা দরকার ঠিক তেমনি একজন ভালো চরিত্রের ছাত্র হওয়াও জরুরী। আপনাদের পড়াশোনার পাশাপাশি হতে হবে মেধাবী, মনের মধ্যে একতাবদ্ধ ও শৃঙ্খলা, থাকতে হবে শারীরিক ও মানসিক শক্তি নিতে হবে শরীর ও ও মনের যত্ন। তাছাড়া সত্যবাদী হতে হবে এবং গুণ থাকতে। এটা মনে রাখতে হবে যে আপনি দেশ জাতির মূল্যবান সম্পদ। একজন আদর্শ ও সফল ছাত্র হই দেশের অবস্থা পাল্টাতে পারবেন।
নিয়মানুবর্তিতা ও ধৈর্যশীলতা
যে কোন কাজের জন্যই প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয় এবং নিয়ম মাফিক করতে হয়। নিয়মমতো পড়াশোনার রুটিন তৈরি করে সেই অনুযায়ী ধৈর্য নিয়ে পড়া পড়তে হবে। নিয়মমতো ক্লাস করতে হবে।একজন ভালো শিক্ষার্থীর ধৈর্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন শিক্ষার্থী যতই ভালো হোক না কেন ধৈর্য হারালে সেই শিক্ষার্থী সামনে এগোতে পারবে না। ধৈর্য ধরে পড়াশোনা করলে সৃষ্টিকর্তা তার প্রতিদান অবশ্যই দিবে। তাই হতাশাগ্রস্ত না হয়ে সৃষ্টিকর্তা কে স্মরণ করে ধৈর্য নিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া নিয়ম মেনে পরিকল্পনা অনুযায়ী পড়াশোনা করলে সফলতা আসবে ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে বলবো ছাত্রজীবন হলো সোনালী সময়। ছাত্র জীবনে ছোট ছোট প্রচেষ্টার মাধ্যমে জীবনে সাফল্য আনা যায়। ছাত্রজীবনে সাফল্য আনতে গেলে আরেকটা জিনিস অতি গুরুত্বপূর্ণ যেটা হচ্ছে মনের আত্মবিশ্বাস। মনের মধ্যে যদি প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও আস্থা থাকে তবে সাফল্য একদিন আসবেই আসবে। আত্মবিশ্বাস হচ্ছে ভালো শিক্ষার্থীর বড় গুন। তাই সকল ছাত্রের উচিত আত্মবিশ্বাস নিয়ে, ধৈর্যের সাথে নিয়ম মেনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। ভালো ছাত্রের প্রতিটা বিষয় জানার থাকতে হবে প্রতিদিন নতুন তথ্য জেনে নিয়ে অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এসব নিয়ম মেনে চলতে পারলে সফল শিক্ষার্থী হতে পারা যাবে করা যায়।
লেখকের শেষ বক্তব্য
পড়ালেখায় সফল হওয়ার উপায় – একজন আদর্শ ছাত্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে কার্যকারী কিছু টিপস তুরে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি পড়ালেখায় সফল হওয়ার উপায় – একজন আদর্শ ছাত্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।