আর কিছুদিন পরে হতে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল, মেডিকেল, কৃষি ভর্তি পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা এই সময়ে শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সময়টা একজন শিক্ষার্থীর জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এরপরই ঝাঁপিয়ে পড়বে ভর্তি যুদ্ধ নামক এক রণক্ষেত্রের দিকে। ধৈর্য, পরিশ্রম, তীব্র সাধনা দিয়ে তারা অর্জন করতে পারবে সাফল্যের। এই লড়াই যেন টিকে থাকার লড়াই।
অনেক শিক্ষার্থীর কিছু ভুল এবং প্রস্তুতির অভাবে পরাজয় মেনে নিতে হয়। কিছু শিক্ষার্থী সাফল্যের হাসি হাসবে। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা এডমিশনে কোন জায়গায় চান্স হবে না আবার কিছু শিক্ষার্থী চান্স পাবে। এই সময়ে পরিশ্রমের পাশাপাশি বুদ্ধি দিয়ে পড়াশোনা করা উচিত। একজন শিক্ষার্থী এই অল্প সময়কে কিভাবে কাজে লাগাতে পারে সেই দিকনির্দেশনায় দেওয়া হবে। এই সময়টাতে শর্টকাট টেকনিক সহ আরো বিভিন্ন উপায় করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে বাড়িতে বসে বসে সময় দেখে পরীক্ষা প্র্যাকটিস করা উচিত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্ন মূলত মূল বই থেকে করা হয়। পরীক্ষায় ভালো কিছু করতে হলে নিচের অবশ্যই মেনে চলার চেষ্টা করবে।
স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা
এডমিশন সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক ভাবে অনেক চাপে থাকে। অধিক পড়াশোনার জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এগুলো করা যাবে না। একজন ভর্তি পরীক্ষার্থীর দৈনিক 6 থেকে 7 ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। নিয়মিত পানি পান করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় কোনভাবেই অসুস্থ হওয়া যাবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব। স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা নিয়ে কোন কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব না। হতাশ হওয়া যাবে না এবং মানসিক চাপে থাকা যাবে না। মন প্রফুল্ল রাখতে হবে। নিয়ম মতো ঘুমোতে যাওয়া এবং সকালে তাড়াতাড়ি ওঠতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
দুই নৌকায় পা দেওয়া যাবে না
অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা একই সঙ্গে মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরী এবং সেই কাঙ্খিত পৌঁছানোর জন্য সর্বোচ্চ মনোযোগ পরিশ্রম দিতে হবে। একসঙ্গে দুই দিকের জন্য নিতে গেলে দুটোর মধ্যে একটারো ভালো প্রস্তুতি। একই সঙ্গে অনেক কিছুরই প্রস্তুতি নিলে দিনশেষে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না। তাই লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরী। লক্ষ্য নির্ধারণ করা থাকলে সেই লক্ষ্য অনুযায়ী এগোতে সুবিধা হয় এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। মেডিকেল পরীক্ষার জন্য একরকম প্রস্তুতি নিতে হয় আবার প্রকৌশল বিদ্যালয়ের জন্য আরেক রকম নিতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ব্যাংক গুলো আলাদা হয়ে থাকে। তাই নিজের অনুযায়ী পড়াশোনা উচিত।
বেশি করে পড়াশোনা করা
এডমিশন সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। একটা সম্পূর্ণ জন্য প্রয়োজন প্রচুর প্রচুর অনুশীলন করা। অনুশীলন করার সময় একটা বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী একই টপিক বা যেন রিভিশন বারবার দেওয়ানা হয়। যেরকম একই নিয়মের দশটি অংক রিভিশন দেওয়ার চেয়ে 10 রকমের 10 টা অংক রিভিশন দেওয়া দেওয়া ভালো। যে যত বেশি অনুশীলন করবে সে তত বেশি এগিয়ে থাকবে। সব ধরনের টপিক ও বিষয়কে সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যেন অল্প সময়ে সব টপিকের রিভিশন দেওয়া যায় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যে বিষয়ে দুর্বল বা কম বুঝে সেসব বিষয়ে বেশি অনুশীলন করা উচিত। প্রতিদিন পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এ সময়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই বেশি করে পড়াশোনা করে তাই সব সময় চেষ্টা করতে হবে নিজের সর্বোচ্চ সময় নিয়ে পড়াশোনা করা।
সময় ব্যবস্থাপনা করা
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে জয় লাভ করতে গেলে অনেক জানতে হয়। তার মধ্যে হচ্ছে সময় ব্যবস্থাপনা অন্যতম।কিভাবে কম সময়ের মধ্যে উত্তর করা যায় তার জন্য প্রয়োজন অনুশীলন। বেশি অনুশীলন করলেই একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে সময়মতো পরীক্ষা শেষ করতে পারে। এর জন্য শর্টকাট টেকনিকসহ আরো উপায় অবলম্বন করতে হয়। প্রয়োজনে বাড়িতে বসে বসে সময় দেখে দেখে পরীক্ষা দিতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সেট করে নিজেকে করতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা না থাকাই অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা ভর্তি পরীক্ষায় ভালো উত্তর করতে পারে না ফলে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স হয়না। যদি বুদ্ধি দিয়ে শর্টকাট টেকনিক সহ পরীক্ষার উত্তর দেয় তবে সময়ে সব উত্তর দিতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার সময় অনেক কম দেওয়া থাকে সেই জন্যই অনেক শিক্ষার্থী উত্তর জানা থাকা সত্বেও উত্তর দেওয়ার সময় পাই না।
আত্মবিশ্বাসী হওয়া
আত্মবিশ্বাসী না হলে এই যুদ্ধে টিকে থাকা অনেক কঠিন। তাছাড়া যেকোনো কাজ করতে গেলে আত্মবিশ্বাসী হওয়া জরুরী। নিজের আত্মবিশ্বাস নিজেকেই বাড়াতে হবে। প্রতিদিন নিজেকে একবার হলেও বলতে হবে আমি পারবো। এই সময়ে নিজেকে অন্য কারো সাথে তুলনা করা যাবে না। অন্যের সাথে করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করি নিজের উপর আত্মবিশ্বাস নিয়ে পড়াশোনা করে যেতে হবে তবেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক ভালো শিক্ষার্থী ও আছে যারা আত্মবিশ্বাস না থাকাই এডমিশন পরীক্ষা খারাপ দিয়ে দেই, পরীক্ষায় অনেক প্রশ্নের ভুল উত্তর দেয় ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনা। তাই আত্মবিশ্বাসী হওয়া অতি জরুরী।
কোচিং এর গুরুত্ব
বাংলাদেশে এখন এডমিশনের জন্য বিভিন্ন শহর এলাকা এবং গ্রামেও এডমিশন কোচিং সেন্টার খুলেছে।এই কোচিংগুলো পরীক্ষার্থীদের যুদ্ধের রাস্তা চিনিয়ে দেয়। তাই ভালো একটা কোচিং দেখে ভর্তি হওয়া উচিত। কিন্তু কোচিংয়ে ভর্তি হলেও নিজের যুদ্ধ নিজেকেই করতে হয়, কোচিং শুধু রাস্তা চিনিয়ে দেয়। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করলে একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন পদ্ধতি একটা ভালো ধারণা লাভ করে। এরপর যদি সে নিজেকে তৈরি করে তুলতে পারে তাহলে কোচিং এর কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু এটা ফিক যে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতরি সময় অসংখ্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করতে হয়। বাসায় বসে নিজে নিজে এত পরীক্ষা দেওয়া হয় না। যদি কোন কোচিং প্রাইভেটের সাথে যুক্ত থাকো তবে সেখানকার টিচার পারীক্ষাগুলো ভালোভাবে নেয়। এছাড়াও নিজের দর্বল দিকগুলো বের করতে হবে এবং দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় েএই সময়টুকু একজন এডিমশন শিক্ষার্থীর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইটুকু সময় কে কাজে লাগাতে হবে। এসময় সব ধরনের গ্যাজেট থেকে নিজেকে দুরে রাখতে হবে। করাণ প্রতিটি মুমুর্ত অনেক মূল্যবান। অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না। প্রতিদিন একবার হলেও গনমাধ্যমগুলো শিরোনাম পড়া উচিত। অনেক সময় বিভিন্ন বিশ্বাবিদ্যালয়ের নিয়ম কানন পাল্টানো হয় এগুলোতেও খেয়াল রাখেতে হবে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় মূল বই থেকেই প্রশ্ন বেশি আসে তাই এই সময়ে মূল বইকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এই নিয়মগুলো ফলো কররে ভর্তি পরীক্ষায় কোন সমস্যা হবে না।
লেখকের শেষ বক্তব্য
এডমিশন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু টিপস সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি এডমিশন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু টিপস সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।