আপনার অণ্ডকোষ কি ঝুলে যাচ্ছে? এই সমস্যাটি এখন অধিকাংশ পুরুষেরই দেখা দিচ্ছে যা তাদেরকে এক প্রকার অস্বস্তিতে ফেলছে। তবে এই নিয়ে চিন্তা না করে, এই সমস্যার সঠিক কারণ ও সমাধান সম্পর্কে জেনে তা প্রতিকার করাটা জরুরি।
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা অন্ডকোষ ঝুলে থাকার কারণ, ঝুলে যাওয়া অন্ডকোষ টাইট করার উপায় এবং এর সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
অন্ডকোষ ঝুলে থাকার কারণ কি?
অণ্ডকোষ দেহের বাইরে ঝুলে থাকার প্রধান কারণ হলো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ। ভালো মানের শুক্রাণু তৈরির জন্য শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। তাই, যখন শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তখন অণ্ডকোষ নিচের দিকে ঝুলে গিয়ে শরীর থেকে দূরে থাকে, যাতে তা ঠান্ডা থাকতে পারে।
আবার, যখন পরিবেশ ঠান্ডা থাকে, তখন অণ্ডকোষ শরীরের কাছাকাছি উঠে আসে উষ্ণ থাকার জন্য। কিছু সমস্যার মধ্যে হাইড্রোসিল ও হার্নিয়াও উল্লেখযোগ্য। হাইড্রোসিল-এর কারণে অণ্ডকোষের চারপাশে তরল জমে যায়, যা সাধারণত প্রদাহ বা কোনো আঘাতের কারণে হতে পারে। অন্যদিকে, হার্নিয়া হলে পেটের ভেতরের কোনো অংশ অণ্ডকোষের দিকে চলে আসে। এটি সাধারণত বেশি চাপ দিলে, যেমন কাশি বা হাঁচির সময়, অনুভূত হয়।
অন্ডকোষ ঝুলে যায় কেন
অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা সাধারণত খুবই স্বাভাবিক এবং চিন্তার কিছু নেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি কোনো শারীরিক সমস্যার কারণেও হতে পারে। নিচে প্রধান কারণগুলো আলোচনা করা হলো।
অণ্ডকোষের প্রধান কাজ হলো শুক্রাণু উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা। শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে কিছুটা কম তাপমাত্রা প্রয়োজন। যখন চারপাশের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তখন অণ্ডকোষ শরীর থেকে দূরে ঝুলে গিয়ে নিজেকে ঠাণ্ডা রাখে। আবার যখন ঠাণ্ডা লাগে, তখন অণ্ডকোষ উপরের দিকে উঠে আসে, যাতে শরীরের কাছাকাছি থেকে উষ্ণ থাকতে পারে।
অণ্ডকোষকে ধরে রাখার জন্য দুটি পেশি কাজ করে, যাদের নাম হলো ক্রেমাস্টার এবং ডার্টস মাসল। যখন শরীর আরাম করে বা গরম অনুভব করে, তখন এই পেশিগুলো শিথিল হয়ে যায়, ফলে অণ্ডকোষ ঝুলে যায়। এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া।
আবার বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের পেশি এবং টিস্যুগুলো দুর্বল হয়ে যায়। অণ্ডকোষের পেশিগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই বয়স্কদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ বেশি ঝুলে থাকতে পারে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে অণ্ডকোষে রক্ত জমা হতে পারে, যা অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়ার একটি কারণ হতে পারে। একইভাবে, ভারী জিনিস বহন করার কারণেও ত্বক ও পেশিতে চাপ সৃষ্টি হয়, যার ফলেও অণ্ডকোষ ঝুলে যেতে পারে।
এছাড়াও, কিছু ওষুধ, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এবং কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে, এই বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত না হয়ে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি এই ঝুঁকি কমাতে পারেন। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিজের যত্ন নিন। মানব শরীরের পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিক, তাই সচেতন থাকা এবং সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়া বা অস্বাভাবিক মনে হওয়া কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- ভ্যারিকোসিল: অণ্ডকোষের শিরাগুলো ফুলে গেলে এটি হয়, যা অনেকটা পায়ের ভেরিকোজ ভেইনের মতো। এর কারণে অণ্ডকোষ একদিকে বেশি ঝুলে যেতে পারে।
- হাইড্রোসিল: অণ্ডকোষের চারপাশে তরল জমার কারণে এটি ফুলে যায়, যার ফলে অণ্ডকোষ ঝুলে থাকতে পারে। সাধারণত এটি ব্যথাহীন হয়।
- স্পার্মাটোসিলে: এটি হলো অণ্ডকোষের উপরের অংশে একটি সিস্ট। এটি ব্যথাহীন এবং অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
যদি অণ্ডকোষের ঝুলে থাকার সাথে ফোলা, ব্যথা, কোনো পিণ্ড বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ সময়মতো চিকিৎসা না হলে কিছু সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।
অন্ডকোষ ঝুলে গেলে করণীয় কি
অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়া সাধারণত একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য এমনটা হয়ে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে যদি এর সঙ্গে অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
যদি অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়ার সঙ্গে কোনো ব্যথা, ফোলা, পিণ্ড বা অন্য কোনো অস্বস্তি না থাকে, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় বা গোসলের সময় এটি বেশি ঝুলে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে আলাদা করে কিছু করার প্রয়োজন নেই।
যদি অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়ার সঙ্গে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- যদি হঠাৎ করে অণ্ডকোষে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। এটি টর্শন-এর লক্ষণ হতে পারে।
- অণ্ডকোষে বা অণ্ডথলিতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ফোলা বা শক্ত পিণ্ড অনুভব করলে।
- অণ্ডকোষে যদি ভারি বা টানটান অনুভূতি হয়, বিশেষ করে একদিকে বেশি ঝুলে থাকলে। এটি ভ্যারিকোসিল-এর লক্ষণ হতে পারে।
- এছাড়াও অন্যান্য লক্ষণ যেমন জ্বর, বমি বমি ভাব বা প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়ার মতো লক্ষণ দেখা গেলে।
যদি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার মতো কোনো গুরুতর লক্ষণ না থাকে, তবে কিছু সাধারণ ব্যবস্থা নিতে পারেন। টাইট বা বেশি ঢিলেঢালা অন্তর্বাসের পরিবর্তে তুলনামূলক আরামদায়ক আন্ডারওয়্যার পরতে পারেন। এটি অণ্ডকোষকে কিছুটা সুরক্ষা দেবে এবং অতিরিক্ত ঝুলে যাওয়া রোধ করবে।
আবার হালকা ফোলা বা অস্বস্তি থাকে, তাহলে একটি পরিষ্কার কাপড়ে বরফ মুড়িয়ে হালকাভাবে সেঁক দিতে পারেন। এতে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। অণ্ডকোষের স্বাস্থ্য একটি সংবেদনশীল বিষয়। তাই যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে ভালো।
ঝুলে যাওয়া অন্ডকোষ টাইট করার উপায়
অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়া পুরুষদের জন্য একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। গরম আবহাওয়া বা শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে অণ্ডকোষ নিচের দিকে ঝুলে আসে। এর কারণ, এভাবে শরীর শুক্রাণুকে সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে পারে।
আবার, ঠান্ডা আবহাওয়ায় বা ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে এলে অণ্ডকোষ শরীরের কাছাকাছি উঠে আসে, যাতে শুক্রাণুর জন্য সঠিক তাপমাত্রা বজায় থাকে। এই প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক এবং এর ফলে কোনো সমস্যা বা স্বাস্থ্যঝুঁকি সাধারণত দেখা যায় না। এটি শরীরের একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি, যা পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
অনেক পুরুষই অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়ার কারণে চিন্তিত হন, কিন্তু এটি কোনো রোগ নয় বরং একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটি মূলত তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল, এবং এর মাধ্যমে শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় থাকে। গরমকালে যখন শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তখন অণ্ডকোষ নিচে ঝুলে গিয়ে শরীর থেকে একটু দূরে থাকে।
এর ফলে শুক্রাণুর তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং তারা সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে। আবার শীতকালে বা ঠান্ডা পরিবেশে অণ্ডকোষ শরীরের কাছাকাছি চলে আসে, যাতে শুক্রাণুগুলো শরীরের তাপমাত্রায় গরম থাকে এবং কোনো ক্ষতি না হয়।
যদিও অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়া কোনো সমস্যা নয়, কিছু পুরুষ এই কারণে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করতে পারেন। যদি এমনটা হয়, তাহলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অনেক সময় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই এই ধরনের অবস্থার মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।
তবে অতিরিক্ত অস্বস্তি বা যন্ত্রণার জন্য ডাক্তার ছোট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অণ্ডকোষকে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারেন। এই ধরনের অস্ত্রোপচার সাধারণত নিরাপদ এবং দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ ঝুলে থাকলে তা টেপ বা অন্য কোনো যন্ত্র দিয়ে সাময়িকভাবে সঠিক অবস্থানে রাখা যায়, তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
ঝুলে যাওয়া অণ্ডকোষের কিছু লক্ষণের মধ্যে ব্যথা বা অস্বস্তি, অণ্ডকোষের আকারের পরিবর্তন, ত্বকে লালভাব বা ফোলাভাব এবং অতিরিক্ত গরম অনুভূতি থাকতে পারে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো মারাত্মক নয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি কোনো সমস্যার কারণ হতে পারে।
যেমন, অণ্ডকোষের ক্ষতি, শুক্রাণু উৎপাদনে বিঘ্ন বা বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত ওজন, কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের প্রভাব, এবং পারিবারিক ইতিহাসও ঝুলে যাওয়া অণ্ডকোষের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এটি ঝুলে যাওয়ার জন্য সাধারণত বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
তবে যদি এর কারণে কোনো সমস্যা অনুভূত হয়, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ব্যথা বা ফোলাভাব থাকলে ডাক্তার পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন।
কি খেলে অন্ডকোষ ভালো থাকে
অণ্ডকোষের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট কোনো খাবার নেই। তবে, সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে এবং এমন কিছু পুষ্টিকর খাবার খেলে তা অণ্ডকোষের কার্যকারিতা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অণ্ডকোষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী খাবার
জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার: জিঙ্ক শুক্রাণু উৎপাদন এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি। জিঙ্ক-এর ভালো উৎস হলো বাদাম, বীজ, ডাল, মাংস এবং সামুদ্রিক খাবার (যেমন ঝিনুক)।
ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার: এই দুটি ভিটামিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন-সি-এর জন্য লেবু, কমলা, স্ট্রবেরি, টমেটো এবং ভিটামিন-ই-এর জন্য বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, পালংশাক খেতে পারেন।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা-৩ রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমায়। এটি অণ্ডকোষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারে। তেলযুক্ত মাছ (যেমন স্যামন, টুনা), ফ্ল্যাক্সসিড এবং চিয়া বীজ ওমেগা-৩-এর ভালো উৎস।
ফল ও শাকসবজি: রঙিন ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন থাকে, যা শরীরের সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করে। বিশেষ করে ব্রোকলি, পালংশাক, গাজর এবং বেরি জাতীয় ফল খুব উপকারী।
কোনো নির্দিষ্ট খাবার বা অভ্যাস অণ্ডকোষের সমস্যাকে পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে পারে না। যদি আপনার কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অন্ডকোষ ভালো রাখার উপায়
অণ্ডকোষ ভালো রাখার জন্য কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায় আছে। এগুলো মেনে চললে সামগ্রিক প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অন্ডকোষ ভালো রাখার সহজ উপায় নিচে আলোচনা করা হলঃ
- অতিরিক্ত টাইট বা আঁটসাঁট অন্তর্বাস পরলে অণ্ডকোষে চাপ পড়তে পারে, যা রক্ত চলাচলকে ব্যাহত করতে পারে। তাই সবসময় আরামদায়ক এবং ঢিলেঢালা অন্তর্বাস পরা উচিত।
- অণ্ডকোষ ও এর চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা খুব জরুরি। নিয়মিত গোসল করুন এবং শুকনো ও পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করুন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন জিঙ্ক, ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার, অণ্ডকোষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
- হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা অণ্ডকোষের কার্যকারিতা ভালো রাখে। কেগেল ব্যায়ামের মতো কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম পেলভিক পেশিগুলোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা অণ্ডকোষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
- খেলাধুলা বা ভারী কাজ করার সময় অণ্ডকোষে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে সুরক্ষিত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
- যদি অণ্ডকোষে কোনো ব্যথা, ফোলা বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে দ্রুত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
এই সহজ অভ্যাসগুলো মেনে চললে অণ্ডকোষের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।
অন্ডকোষ ভালো রাখার ব্যায়াম
অণ্ডকোষ ভালো রাখার জন্য সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট ব্যায়াম নেই। তবে কিছু সাধারণ ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ রয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে পেলভিক ফ্লোর এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এর ফলে অণ্ডকোষের স্বাস্থ্য ভালো থাকতে পারে। অণ্ডকোষের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে চার ধরণের ব্যায়াম করতে পারেন যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।
কেগেল ব্যায়াম: এই ব্যায়ামটি শ্রোণী এলাকার পেশিগুলোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এই পেশিগুলো মূত্রথলি এবং অণ্ডকোষের আশেপাশের অঙ্গগুলোকে সমর্থন করে। কেগেল ব্যায়ামের জন্য:
- প্রথমে প্রস্রাব করার সময় যে পেশিগুলো ব্যবহার করেন, সেগুলো সংকুচিত করুন।
- পেশিগুলোকে ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং এরপর ছেড়ে দিন।
- এভাবে দিনে ১০-১৫ বার এই ব্যায়ামটি করতে পারেন।
লেগ লিফ্ট: এটি শরীরের নিচের অংশের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে অণ্ডকোষসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্ত সরবরাহ উন্নত হয়। লেগ লিফ্ট ব্যায়ামের জন্য:
- মেঝেতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন।
- এবার একটি পা ধীরে ধীরে উপরে তুলুন এবং কিছুক্ষণ ধরে রাখুন, এরপর আবার নামিয়ে আনুন।
- এভাবে প্রতিটি পায়ে ১০-১৫ বার করে করুন।
হাঁটা এবং দৌড়ানো: নিয়মিত হাঁটা, জগিং বা দৌড়ানোর মতো কার্ডিও ব্যায়াম শরীরের সামগ্রিক রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এর ফলে অণ্ডকোষে অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছাতে পারে। ব্যায়ামের সময় ঢিলেঢালা বা আরামদায়ক অন্তর্বাস পরুন, যা বাতাস চলাচলে সাহায্য করে। অতিরিক্ত টাইট পোশাক বা অন্তর্বাস অণ্ডকোষে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আপনি যদি ভারী ওজন নিয়ে ব্যায়াম করেন, তাহলে সতর্ক থাকুন। অতিরিক্ত চাপ অণ্ডকোষে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আপনার যদি অণ্ডকোষে কোনো ব্যথা, ফোলা বা অস্বস্তি থাকে, তাহলে ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ কিছু গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যায়াম ক্ষতিকর হতে পারে। আর নিয়মিত এবং সঠিক জীবনযাপন অণ্ডকোষের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে জরুরি।
লেখকের শেষ মতামত
অণ্ডকোষ ঝুলে যাওয়া একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া, যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটে থাকে। এটি কোনো রোগ নয়। শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা যখন বেড়ে যায়, তখন অণ্ডকোষ নিচের দিকে ঝুলে গিয়ে ঠাণ্ডা থাকে। এর ফলে শুক্রাণুগুলো সঠিকভাবে তৈরি হতে পারে।
আবার, ঠান্ডা পরিবেশে অণ্ডকোষ শরীরের কাছাকাছি চলে আসে উষ্ণ থাকার জন্য। এর জন্য সাধারণত কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না। যদি কোনো অস্বাভাবিকতা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে ভালো। সঠিক জীবনযাপন অণ্ডকোষের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে জরুরি।