আমরা অনেকেই বলে থাকি ২ লক্ষ টাকা লোন নিতে চাই। তবে আপনি জানেন কী? বর্তমান সময়ে ২ লক্ষ টাকা লোন নেওয়া খুবই সহজতর একটি মাধ্যমে হয়েছে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন দিয়ে থাকে। সাধারণত, পার্সোনাল লোন, SME লোন, এবং কিছু বিশেষ প্রকল্পের আওতায় এই লোন পাওয়া যায়।
জামানত ছাড়াই দীর্ঘ সময়ের সুযোগ নিয়ে ২ লক্ষ টাকা লোন সম্ভব। আজকের এই আর্টিকেলে আজ আমরা আপনাকে মনের দ্বিধা দূর করবো ও আপনার মনের “২ লক্ষ টাকা লোন নিতে চাই “ প্রশ্নের সঠিক উওর জানাবো তাহলে আলোচনাটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে জেনে নেওয়া যাক।
২ লক্ষ টাকা লোন কী?
২ লক্ষ টাকা লোন হলো ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক বা অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া একটি অল্প পরিমাণের লোন পরিসেবা। এই লোনটি সাধারণত স্বল্প বা মধ্যমেয়াদি হয় ও সহজ শর্তে পাওয়া যায়। যারা জরুরি অর্থের প্রয়োজন অনুভব করেন, তারা ২ লক্ষ টাকা লোন নিতে চাই বলে আবেদন করে থাকেন। এই লোনের মাধ্যমে গ্রাহকেরা তাদের ব্যবসা শুরু, শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যক্তিগত খরচের জন্য ব্যবহৃার করে থাকেন। এটি বিভিন্ন ধরনের লোনের আওতায় পড়তে পারে, যেমন:
ব্যক্তিগত লোন: এটি একটি জামানতবিহীন লোন যা ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করে। যেমন – চিকিৎসা খরচ, সন্তানের শিক্ষা, বিবাহ, ছোটখাটো মেরামত বা অন্য কোনো জরুরি আর্থিক প্রয়োজন। অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক এই ধরনের লোন দিয়ে থাকে।
ক্ষুদ্র উদ্যোগ লোন: ছোট ব্যবসা শুরু করা বা চলমান ব্যবসাকে সম্প্রসারণের জন্য এই লোন নেওয়া হয়। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসার মূলধন বা কার্যপরিচালনার জন্য এই লোন গ্রহণ করেন।
বিশেষ স্কিমের লোন: কিছু ব্যাংক বা সরকারি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর (যেমন – বেকার যুবক, বিদেশগামী কর্মী, বিদেশ ফেরত কর্মী) জন্য বিশেষ স্কিমের আওতায় ২ লক্ষ টাকার লোন প্রদান করে। যেমন:
- কর্মসংস্থান ব্যাংক: বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের আওতায় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন লোন দেয়, যার মধ্যে ২ লক্ষ টাকাও অন্তর্ভুক্ত।
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক: বিদেশগামী কর্মীদের জন্য অভিবাসন লোন সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা বা বিদেশ ফেরতদের জন্য পুনর্বাসন লোন সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন দিয়ে থাকে।
২ লক্ষ টাকা লোনের সাধারণ বৈশিষ্ট্য
- জামানত: এই পরিমাণ লোন প্রায়শই জামানতবিহীন হয়ে থাকে, অর্থাৎ এর জন্য কোনো সম্পত্তি বন্ধক রাখার প্রয়োজন হয় না। তবে, ব্যাংক আয়ের প্রমাণপত্র, ভালো ক্রেডিট হিস্টরি, এবং কিছু ক্ষেত্রে একজন জামিনদার চাইতে পারে।
- সুদের হার: জামানতবিহীন হওয়ায় এর সুদের হার সাধারণত জামানতযুক্ত লোনের চেয়ে কিছুটা বেশি হতে পারে।
- পরিশোধের মেয়াদ: পরিশোধের মেয়াদ সাধারণত স্বল্প থেকে মধ্যম মেয়াদের হয়, যেমন ১ বছর থেকে ৫ বছর। মাসিক কিস্তিতে এই লোন পরিশোধ করতে হয়।
- যোগ্যতা: লোন পেতে হলে আবেদনকারীর একটি নিয়মিত আয়ের উৎস থাকতে হবে, ভালো ক্রেডিট হিস্টরি থাকতে হবে এবং লোন পরিশোধের সক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে।
মূলত ২ লক্ষ টাকা লোন হলো একটি মধ্যম আকারের লোন যা বিভিন্ন আর্থিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয় এবং এর জন্য প্রায়শই কোনো বড় জামানতের প্রয়োজন হয় না।
বাংলাদেশের কোন কোন ব্যাংক ২ লক্ষ টাকা লোন দেয়?
বাংলাদেশে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন অনেক ব্যাংকই প্রদান করে থাকে, বিশেষ করে ব্যক্তিগত লোন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ লোনের আওতায়। এই লোনগুলো সাধারণত জামানতবিহীনও হতে পারে, যা আবেদনকারীর আয় এবং ক্রেডিট হিস্টরির ওপর নির্ভর করে। এখানে কিছু প্রধান ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হলো যারা ২ লক্ষ টাকা বা তার বেশি লোন প্রদান করে:
বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ: প্রায় সব বাণিজ্যিক ব্যাংকই ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিগত লোন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা লোন দিয়ে থাকে। এদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যাংক হলো:
- ব্র্যাক ব্যাংক
- এবি ব্যাংক
- সিটি ব্যাংক
- ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড
- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
- ওয়ান ব্যাংক পিএলসি
- অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি
- সোনালী ব্যাংক পিএলসি
- জনতা ব্যাংক পিএলসি
- রূপালী ব্যাংক পিএলসি
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
উপরের ব্যাংকগুলো ছাড়াও, আরও অনেক ব্যাংক ২ লক্ষ টাকা বা তার বেশি পরিমাণে লোন প্রদান করে থাকে।
বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহ
কর্মসংস্থান ব্যাংক: মূলত বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য লোন দেয়। এই ব্যাংক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন লোন প্রদান করে থাকে, তাই ২ লক্ষ টাকাও এর মধ্যে পড়ে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক: বিদেশগামী কর্মীদের জন্য অভিবাসন লোন সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা এবং বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের জন্য পুনর্বাসন লোন সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রদান করে।
আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজন এবং আপনার আয়ের ওপর ভিত্তি করে, এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে যেকোনো একটির সাথে যোগাযোগ করে আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত লোনটি খুঁজে বের করতে পারেন।
২ লক্ষ টাকা লোন নেওয়ার যোগ্যতা
২ লক্ষ টাকা লোন পাওয়ার জন্য অবশ্যই আবেদনকারীর যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। ২ লক্ষ্য টাকা লোন নিতে যেসকল যোগ্যতা থাকতে হবে তার মধ্যে রয়েছে:
- বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- বয়স ১৮-৬০ বছরের মধ্যে (কিছু ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য)।
- লোন পরিশোধের ক্ষমতা ও ভালো আর্থিক আচরণ।
- প্রকল্প পরিচালনার অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে).
- অন্য কোনো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানে লোনখেলাপী না হওয়া।
- লোন পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
- বৈধ আয়ের উৎস থাকতে হবে।
- বেতনভোগীর ক্ষেত্রে একটি নিয়মিত এবং স্থিতিশীল মাসিক আয় থাকতে হবে এবং ২ লক্ষ টাকার জন্য মাসিক আয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বা তার বেশি হওয়া প্রয়োজন।
- ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে একটি বৈধ ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে এবং ব্যবসা প্রতিষ্টানের নামে ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে।
- যে ব্যাংক থেকে লোন নিচ্ছেন, সেই ব্যাংকে আপনার একটি সচল ব্যাংক হিসাব থাকা প্রয়োজন হতে পারে।
উল্লিখিত যোগ্যতা পূরণ করলে ২ লক্ষ টাকা লোন নিতে চাই বলে আবেদনকারীরা সহজেই লোন পেতে পারেন।
২ লক্ষ টাকা লোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
২ লক্ষ টাকা লোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্ভর করে আপনি কোন ব্যাংক থেকে এবং কী ধরনের লোন নিচ্ছেন । তবে, সাধারণত জামানতবিহীন এই ধরনের লোনের জন্য কিছু মৌলিক কাগজপত্র প্রায় সব ব্যাংকের ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয়।
এখানে ২ লক্ষ টাকা লোনের জন্য সাধারণত যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো চাওয়া হয়, তার একটি বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো:
- বৈধ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি (২-৪ কপি)।
- বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ (ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভার সার্টিফিকেট)
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- প্রশিক্ষণ/অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
- জামিনদারের তথ্য ও কাগজপত্র (প্রয়োজন হলে)
- আয়ের প্রমাণপএ প্রদান করতে হবে।
২ লক্ষ টাকা লোনের জন্য আবেদন করার আগে, আপনার পছন্দের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত। কারণ, প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে, যার ফলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ভিন্নতা থাকতে পারে।
২ লক্ষ টাকা লোন নেওয়ার উপায়
২ লক্ষ টাকা লোন নিতে হলে আগ্রহী ব্যক্তিকে প্রথমে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) শাখায় যোগাযোগ করতে হবে। আবেদনকারীকে আবেদন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক আবেদন যাচাই করে ৭-১৫ দিনের মধ্যে লোনটি অনুমোদন করবেন। যারা ২ লক্ষ টাকা লোন নিতে চাই বলে থাকেন তারা সহজ ধাপ অনুসরণ করে লোনের আবেদন করতে পারেন। যেমন:
- আপনার পছন্দের ব্যাংকের শাখা অফিসে যোগাযোগ করুন।
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিন।
- ২ লক্ষ টাকা লোন অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
- এরপরে আপনার লোন যখন অনুমোদন হবে তখন লোনের টাকা এককালীন বা ধীরে ধীরে উত্তোলন করার সুযোগ রয়েছে।
২ লক্ষ টাকা লোন হিসেবে কি লোন পাওয়া যায়?
২ লক্ষ টাকা লোন সাধারণত পার্সোনাল লোন, মাইক্রো লোন, এসএমই লোন বা অভিবাসন লোন হিসেবে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিদেশগামী কর্মীদের জন্য জামানতবিহীন লোন দেয়।
ব্র্যাক ব্যাংক এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য এই লোন প্রদান করে। ২ লক্ষ টাকা লোন যাদের বিশেষ প্রয়োজন তারা যারা আবেদন করে থাকেন। গ্রাহকেরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত লোন বেছে নিতে পারেন।
২ লক্ষ টাকা লোন নেওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা
২ লক্ষ টাকা লোন নেওয়ার যেমন সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। তেমনি ২ লক্ষ টাকা নেওয়ার অসুবিধাও রয়েছে। ২ লক্ষ টাকা লোন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এর সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই ভালোভাবে জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। নিম্নে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে:
সুবিধা
- তাৎক্ষণিক আর্থিক সমাধান পাওয়া যায়
- জামানতের প্রয়োজন হয় না।
- আবেদন প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে থাকে
- ক্রেডিট স্কোর উন্নত করার সুযোগ থাকে
- ছোট ব্যবসার জন্য সহায়ক হতে পারে।
- অনেক ক্ষেত্রে জামানত ছাড়াই লোন পাওয়া সম্ভব।
- ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা যায়।
- সরকারি ব্যাংকে সুদের হার তুলনামূলক কম।
অসুবিধা
- মাসিক কিস্তি পরিশোধে আর্থিক চাপ পড়তে পারে।
- সময়মতো কিস্তি না দিলে অতিরিক্ত ফি দিতে হতে পারে।
- কিছু ক্ষেত্রে বেশি কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
- জামানত না লাগলেও গ্যারান্টারের প্রয়োজন হয়
- লোন খেলাপি হলে আইনি পদক্ষেপ হতে পারে
২ লক্ষ টাকা লোন নেওয়ার আগে আপনার মাসিক আয় এবং খরচ সঠিকভাবে মূল্যায়ন করুন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি মাসিক কিস্তিগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে পরিশোধ করতে পারবেন। লোনের উদ্দেশ্য, সুদের হার এবং শর্তাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।
লেখকের শেষ মতামত
আশা করছি, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আমাদের “ ১ লক্ষ টাকা লোন নিতে চাই এই প্রশ্নের উওর জানাতে পেরেছি। তবে লোন নেওয়ার পূর্বে বিবেচনা করুন লোনটি আপনার প্রয়োজন কিনা। লোন প্রয়োজন নাহলে লোন গ্রহণ করা উচিত নয়।
২ লক্ষ টাকা লোনের জন্য আবেদন করার আগে, আপনার পছন্দের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট লোনের পণ্য, সুদের হার, পরিশোধের মেয়াদ এবং অন্যান্য শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত।