কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয় (আপডেট তথ্য জানুন)

প্রবাসী লোন বলতে মূলত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিশেষায়িত লোন সুবিধা বোঝায়, যা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে। এই লোনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রবাসীদের আর্থিক প্রয়োজন মেটানো এবং তাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ তৈরি করা।

কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয়

প্রবাসী লোন প্রবাসীদের এবং তাদের পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুযোগ পায়। তবে, লোন নেওয়ার আগে অবশ্যই যোগ্যতা ও লোন নিতে কি কি লাগবে তা জেনে নেওয়া উচিত। নিজের আর্থিক সক্ষমতা, লোনের উদ্দেশ্য এবং পরিশোধের পরিকল্পনা ভালোভাবে যাচাই করে তবেই লোন নেওয়া উচিত। আজকের আমরা জেনে নিব কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয় সেই সম্পর্কে।

কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয়

বাংলাদেশের অনেক সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের লোন সুবিধা দিয়ে থাকে। এসব লোন সাধারণত প্রবাসীদের বিদেশ যাত্রা, দেশে পুনর্বাসন, গৃহনির্মাণ বা ক্রয়, অথবা অন্যান্য ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে।

আপনারা যারা বিদেশে যাওয়ার জন্য সাধারণত ভিসা পেয়েছেন তাদের জন্য প্রবাসী লোন। আপনার লোন পেতে বৈধ ভিসা থাকতে হবে, ভিসার মেয়াদের উপর ভিত্তি করে কত টাকা লোন দেওয়া হবে, সেটা সাধারণত নির্ধারণ করা হবে। একটা বিষয় মাথায় রাখবেন সেটা হলো, কোন ব্যাংক আপনাকে ভিসা পেতে সহযোগিতা করবে না। নিজে ভিসা ম্যানেজ করার পর লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয় তা নিচে উল্লেখ করা হলঃ

সোনালী ব্যাংক পিএলসি: সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম, প্রবাসীদের জন্য বিশেষ প্রবাসী কর্মসংস্থান লোন প্রকল্প পরিচালনা করে। সোনালী ব্যাংক মূলত বিদেশ গমনের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ যেমন, ভিসা, বিমান ভাড়া, রিক্রুটিং এজেন্সির চার্জ ইত্যাদি মেটাতে এই লোন দিয়ে থাকে।

সোনালী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন হিসেবে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়, যা সাধারণত ২৪ থেকে ৩৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া, সোনালী ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন বিনিয়োগ লোনও দিয়ে থাকে, যা দেশে ব্যবসা করার জন্য ব্যবহার করা যায়।

পূবালী ব্যাংক পিএলসি: পূবালী ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য জনপ্রিয় প্রবাসী নিবাস লোন সুবিধা প্রদান করে। এই লোনের উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশে ফ্ল্যাট কেনা, বাড়ি নির্মাণ বা বিদ্যমান বাড়ির সংস্কারের জন্য এই লোন নেওয়া যায়। এই লোনের কিস্তি বিদেশে বসেই বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করা যায়, যা প্রবাসীদের জন্য একটি বড় সুবিধা। ব্যাংকটি সাধারণ ব্যক্তিগত লোনও দিয়ে থাকে, যেখানে প্রবাসীরা তাদের পারিবারিক প্রয়োজনে রেমিটেন্স প্রবাহের ভিত্তিতে লোন নিতে পারেন।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড: এই ব্যাংক প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল এবং তারা প্রবাসীদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য বিশেষ গৃহলোন সুবিধা প্রদান করে, যেখানে প্রবাসীরা বিদেশে বসেই বাংলাদেশে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ বা কেনার জন্য লোন নিতে পারেন। লোনের কিস্তি বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের সুযোগ থাকে। এছাড়া, ব্যাংকটি প্রবাসীদের জন্য আরও কিছু বিনিয়োগ এবং ব্যক্তিগত লোন সুবিধা দিয়ে থাকে।

জনতা ব্যাংক পিএলসি: জনতা ব্যাংক বিভিন্ন ধরণের লোনের পাশাপাশি প্রবাসীদের জন্যও কিছু সুবিধা রাখে। প্রবাসীরা বাংলাদেশে বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য এই লোন নিতে পারেন। এক্ষেত্রে তাদের বিদেশে আয়ের উৎস বিবেচনা করা হয়। জনতা ব্যাংক বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও কৃষি লোনও দিয়ে থাকে, যেখানে প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগের সুযোগ পেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ-  সবচেয়ে কম সুদে লোন দেয় কোন ব্যাংক

অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি: অগ্রণী ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য দুটি প্রধান লোন প্রকল্প পরিচালনা করে। অগ্রণী ব্যাংক লোন ফর ওভারসিজ ওয়ার্কার, এটি বিদেশগামী কর্মীদের জন্য একটি অভিবাসন লোন, যা বিদেশ গমনের খরচ মেটাতে ব্যবহৃত হয়। এই লোনটি বিশেষভাবে প্রবাসী ফেরতদের জন্য প্রকল্প করা হয়েছে, যারা দেশে ফিরে আত্মকর্মসংস্থান বা ছোট ব্যবসা শুরু করতে চান। কিছু ক্ষেত্রে, বাড়ি বা জমির দলিল এবং কোনো জামানত ছাড়াই ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়ার সুযোগ থাকে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক: প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হলো একটি বিশেষায়িত সরকারি ব্যাংক, যা শুধুমাত্র প্রবাসীদের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য কাজ করে। বিদেশ গমনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন লোন এবং ৯% সুদে এই লোন দেওয়া হয়। বিদেশ ফেরত কর্মীদের দেশে ছোট ব্যবসা বা কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন দেয়। আবার অভিবাসী কর্মী ব্যতীত সাধারণ জনগণও জামানতসহ এই ব্যাংক থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারেন, যার সুদের হার ৯%।

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি: ব্র্যাক ব্যাংক বেসরকারি খাতের একটি জনপ্রিয় ব্যাংক। এটি রেমিটেন্স উপার্জনকারী প্রবাসীদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য ব্যবহার করা যায়।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসি: ডাচ-বাংলা ব্যাংকও প্রবাসীদের জন্য লোন সুবিধা প্রদান করে। তাদের রেমিটেন্স গ্রাহকরা বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত লোন এবং গৃহলোন সুবিধা পেতে অগ্রাধিকার পান। এক্ষেত্রে রেমিটেন্সের পরিমাণ ও স্থায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি: মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক দের জন্য বিশেষ লোন সুবিধা প্রদান করে। এর মধ্যে গৃহলোন এবং অন্যান্য বিনিয়োগ লোন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক। প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন শরীয়াহভিত্তিক বিনিয়োগ প্রকল্প এবং আবাসন লোন সুবিধা প্রদান করে থাকে। ইসলামী ব্যাংক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আহরণেও অন্যতম প্রধান ব্যাংক।

লোন নেওয়ার আগে, প্রতিটি ব্যাংকের নির্দিষ্ট লোন, সুদের হার, শর্তাবলী, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং প্রক্রিয়াকরণ ফি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি ব্যাংকের প্রবাসী লোনের উদ্দেশ্য এবং শর্ত ভিন্ন হতে পারে, তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ব্যাংক এবং লোনের ধরন বেছে নিতে ব্যাংকগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা উচিত।

প্রবাসী লোন নেওয়ার যোগ্যতা

প্রবাসী লোন পাওয়ার যোগ্যতা বিভিন্ন ব্যাংক এবং লোনের ধরনের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তবে, সাধারণত কিছু সাধারণ যোগ্যতা ও শর্তাবলী রয়েছে যা বেশিরভাগ প্রবাসী লোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:

  • আবেদনকারীকে অবশ্যই একজন বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে।
  • বয়স সাধারণত ১৮ বা ২১ বছর থেকে শুরু করে ৬৫-৭০ বছর পর্যন্ত বয়সসীমা হতে হবে। 
  • অভিবাসন লোনের ক্ষেত্রে, আবেদনকারীকে বিদেশে চাকরির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত বা ভিসাপ্রাপ্ত হতে হবে। 
  • অন্যান্য প্রবাসী লোনের ক্ষেত্রে, আবেদনকারীকে বৈধভাবে বিদেশে কর্মরত বা বসবাসকারী হতে হবে এবং বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রমাণ থাকতে হবে।
  • লোন পরিশোধের জন্য আবেদনকারীর একটি নিয়মিত এবং স্থিতিশীল আয়ের উৎস থাকতে হবে। কেননা ব্যাংক সাধারণত আবেদনকারীর মাসিক আয়ের উপর ভিত্তি করে লোন পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করে।
  • সাধারণত, যে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া হবে, সেই ব্যাংকে আবেদনকারীর একটি সঞ্চয়ী বা চলতি হিসাব থাকতে হবে।
  • আবেদনকারীকে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লোন খেলাপি হওয়া যাবে না। কেননা ব্যাংক CIB রিপোর্ট সংগ্রহ করে এটি যাচাই করে।
আরো পড়ুনঃ-  কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি বিস্তারিত জানুন

কিছু লোনের ক্ষেত্রে একজন বা একাধিক জামিনদার প্রয়োজন হতে পারে। গ্যারান্টারকে সাধারণত লোন পরিশোধে সক্ষম এবং ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হয়। গ্যারান্টার হিসেবে সাধারণত পরিবারের সদস্য ব্যক্তি হতে পারেন।

মনে রাখবেন প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা থাকে এবং তারা তাদের ঝুঁকি মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে যোগ্যতা ও শর্তাবলী নির্ধারণ করে। তাই, লোন আবেদন করার আগে আপনি যে ব্যাংক থেকে লোন নিতে ইচ্ছুক, সেই ব্যাংকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।

প্রবাসী লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

প্রবাসী লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো লোনের ধরন এবং প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তবে, আমরা নিচে কিছু মৌলিক কাগজপত্র উল্লেখ করে দিচ্ছি যা প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয়।

  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • পাসপোর্ট সাইজের ৩ কপি ছবি (আবেদনকারী ও গ্যারান্টার উভয়ের)।
  • পাসপোর্টের ফটোকপি (ভিসা পেজ সহ)।
  • ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি)।
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট (সাধারণত শেষ ৬-১২ মাসের)।
  • সর্বশেষ আয়কর সনদ/আয়কর রিটার্ন জমার রশিদ (যদি প্রযোজ্য হয়)।
  • বেতন সার্টিফিকেট বা আয়ের প্রমাণপত্র।
  • ব্যবসা লোনের ক্ষেত্রে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি
  • পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদপত্র।
  • ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিক সনদপত্র
  • যে এজেন্সীর মাধ্যমে বিদেশ যাবেন, সেই এজেন্সীর প্রত্যয়নপত্র।
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট।
  • স্থানীয় পরিচিত কোন ব্যক্তির জামিন নামা

এখানে পরিচিত যে ব্যক্তিটি জামিননামা দিবে সেটা সম্পত্তি বন্ধকের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। জামিনদারের ছবি পৌরসভা বা ইউনিয়নের সনদপত্র, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, পাসপোর্ট এর ফটোকপি(যদি থাকে) জমা দিতে হবে। প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে এজন্য লোনের জন্য আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বা সরাসরি শাখায় যোগাযোগ করে সর্বশেষ এবং সঠিক তথ্য জেনে নিবেন। 

প্রবাসী লোন সুদের হার কত

প্রবাসী লোনের সুদের হার বিভিন্ন ব্যাংক এবং লোনের ধরনের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। বাংলাদেশে এই সুদের হার সাধারণত সরল সুদ হিসেবে গণনা করা হয় এবং এটি ৯% থেকে শুরু করে ১২% বা তারও বেশি হতে পারে। কিছু সরকারি বা বিশেষায়িত ব্যাংক যেমন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তুলনামূলক কম সুদে লোন দিয়ে থাকে, অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদের হার কিছুটা বেশি হতে পারে।

প্রবাসী লোন পরিশোধের নিয়ম এবং মেয়াদ

প্রবাসী লোনের পরিশোধের নিয়ম এবং মেয়াদ প্রতিটি ব্যাংক এবং লোনের ধরনের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। তবে, কিছু সাধারণ নিয়ম এবং মেয়াদ রয়েছে যা অধিকাংশ ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

প্রবাসী লোন পরিশোধের নিয়মাবলী:

মাসিক কিস্তি: অধিকাংশ প্রবাসী লোন মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। এই কিস্তিতে লোনের আসল এবং সুদ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিস্তির পরিমাণ লোনের মোট পরিমাণ, সুদের হার এবং পরিশোধের মেয়াদের ওপর নির্ভর করে।

রেমিটেন্সের মাধ্যমে পরিশোধ: অনেক ব্যাংক, বিশেষ করে যারা প্রবাসীদের জন্য বিশেষায়িত লোন দেয় (যেমন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পূবালী ব্যাংকের প্রবাসী নিবাস লোন), প্রবাসীদের বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের মাধ্যমে সরাসরি কিস্তি পরিশোধের সুবিধা দেয়। 

গ্রেস পিরিয়ড: কিছু প্রবাসী লোন, বিশেষ করে অভিবাসন বা কর্মসংস্থান লোনের ক্ষেত্রে, একটি নির্দিষ্ট গ্রেস পিরিয়ড বা মোরটোরিয়াম পিরিয়ড থাকে। এই সময়ে কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে হয় না। গ্রেস পিরিয়ড সাধারণত লোন নেওয়ার পর থেকে শুরু হয় এবং বিদেশ যাওয়ার পর কর্মসংস্থান শুরু হওয়া পর্যন্ত চলতে পারে। যেমন, সোনালী ব্যাংক তাদের প্রবাসী কর্মসংস্থান লোনে ৩ মাসের গ্রেস পিরিয়ড দেয়। এই সময়কালে সুদ জমা হতে পারে, যা পরে কিস্তির সাথে পরিশোধ করতে হয়।

আরো পড়ুনঃ-  পূবালী ব্যাংক কি সরকারি - পূবালী ব্যাংক এর সুবিধা

প্রবাসী লোন পরিশোধের মেয়াদ:

প্রবাসী লোনের মেয়াদ লোনের ধরন এবং উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিন্ন হয়।

অভিবাসন বা কর্মসংস্থান লোন: এই ধরনের লোনের মেয়াদ সাধারণত কম হয়। যেমন, সোনালী ব্যাংকের প্রবাসী কর্মসংস্থান লোনের মেয়াদ সাধারণত ২৪ থেকে ৩৬ মাস হয়, যার মধ্যে গ্রেস পিরিয়ড অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

পুনর্বাসন লোন: বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য পুনর্বাসন লোনের মেয়াদ সাধারণত কিছুটা বেশি হতে পারে, যা তাদের ব্যবসা বা প্রকল্পের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের আত্মকর্মসংস্থানমূলক লোনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

গৃহলোন: গৃহলোনের মেয়াদ সাধারণত দীর্ঘ হয়, কারণ লোনের পরিমাণ বেশি থাকে। এটি সাধারণত ১০ বছর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। পূবালী ব্যাংকের প্রবাসী নিবাস লোনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে, যার মধ্যে ১৮ মাস পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ড অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ব্র্যাক ব্যাংকও তাদের হোম লোনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদ প্রদান করে।

ব্যক্তিগত লোন: ব্যক্তিগত লোনের মেয়াদ সাধারণত গৃহলোনের চেয়ে কম হয়। এটি সাধারণত ১ বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

প্রবাসী লোন পরিশোধের নিয়ম এবং মেয়াদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে, আপনার পছন্দের ব্যাংকগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা উচিত। প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা এবং শর্তাবলী রয়েছে, যা লোনের ধরন এবং আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।

প্রবাসী লোনের সুবিধা ও অসুবিধা

প্রবাসী লোন প্রবাসীদের জন্য যেমন আর্থিক সহায়তার একটি বড় সুযোগ, তেমনি এর কিছু অসুবিধাও থাকতে পারে। লোন নেওয়ার আগে সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি।

প্রবাসী লোনের সুবিধা ও অসুবিধা সংক্ষেপে নিচে আলোচনা করা হলো:

প্রবাসী লোনের সুবিধা

  • আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়
  • বিদেশ গমনের সুযোগ পাওয়া যায়
  • পুনর্বাসন ও আত্মকর্মসংস্থান সুযোগ পাওয়া যায়
  • সম্পত্তি ক্রয় করা যায়
  • রেমিটেন্সের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়

প্রবাসী লোনের অসুবিধা

  • উচ্চ সুদের হার হয়ে থাকে
  • জামানতের বাধ্যবাধকতা থাকে ত
  • জটিল প্রক্রিয়া হয়ে থাকে 
  • খেলাপির ঝুঁকি থাকে 

প্রবাসী লোন নেওয়ার আগে নিজের আর্থিক সক্ষমতা, লোনের উদ্দেশ্য এবং পরিশোধের পরিকল্পনা ভালোভাবে যাচাই করা উচিত।

লেখকের শেষ মতামত

প্রবাসী লোন প্রবাসীদের এবং তাদের পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুযোগ। তবে, লোন নেওয়ার আগে অবশ্যই এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা উচিত। নিজের আর্থিক সক্ষমতা, লোনের উদ্দেশ্য এবং পরিশোধের পরিকল্পনা ভালোভাবে যাচাই করে তবেই লোন নেওয়া উচিত।

মনে রাখবেন প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা থাকে এবং তারা তাদের ঝুঁকি মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে যোগ্যতা ও শর্তাবলী নির্ধারণ করে। তাই, লোন আবেদন করার আগে আপনি যে ব্যাংক থেকে লোন নিতে ইচ্ছুক, সেই ব্যাংকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment