বর্তমান সময়ে জিম্যাক্স ট্যাবলেট প্রায় সকলের কাছে একটি বহুল ব্যবহৃত ওষুধ। আমরা অনেকেই হয়তো এই ওষুধ ব্যবহার করে থাকি। তবে আজকে এই ওষুধ সম্পর্কে আলোচনা শুরু করার আগে একটি বিষয়ে সচেতন করব তা হল জিম্যাক্স ট্যাবলেট খাওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।
জিম্যাক্স মূলত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি বাজারজাত করে থাকে। যার গ্রুপ বা জেনেরিক নাম হল এজিথ্রোমাইসিন ডাইহাইড্রেট। আপনারা অনেকেই zimax 500 কেন খায় সেই সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এজন্য তাদের সুবিধার জন্য এই ওষুধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
zimax 500 কেন খায়
জিম্যাক্স বা অ্যাজিথ্রোমাইসিন ডিহাইড্রেট মূলত আমাদের দেহের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা যে সকল রোগের সংক্রমণ হয়, সেগুলোর এন্টিবায়োটিক হিসেবেই কাজ করে। জিম্যাক্স ট্যাবলেট কেন খায় তা নিম্নে বর্ণিত করা হলো-
- মধ্যকর্ণের প্রদাহ দেখা দিলে
- টাইফয়েড জ্বরে নির্দেশিত হলে
- নন-গনোকোকাল ইউরেথ্রাইটিস দেখা দিলে
- ত্বক ও কোমল কোষকলার সংক্রমণ হলে
- নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিসসহ নিঃশ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ হলে
মূলত জিম্যাক্স ট্যাবলেট উপরের উল্লিখিত সমস্যার ক্ষেত্রে সেবন করা হয়। তবে আপনার সমস্যা বা রোগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারই ভালো বলতে পারবেন যে এই ওষুধ আপনার দেহের সমস্যার জন্য ব্যবহার করা যাবে কিনা।
zimax 500 কিসের ওষুধ
এটি একধরণের এজালাইড অ্যান্টিবায়োটিক, যা আমাদের দেহের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে এছাড়াও আরও অন্যান্য সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন-
- শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে
- ত্বকের সংক্রমণে
- ত্বক ও কোমল কোষ কলার সংক্রমণে
- ইনফেকশন জনিত জ্বর
- ইনফেকশন জনিত নিউমোনিয়া ইত্যাদি।
zimax 500 এর কাজ কি
জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি তা আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। তাই পোষ্টের এই অংশে এর কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সমুহ তুলে ধরেছি। চলুন তাহলে কথা না বড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক। মূলত এই ট্যাবলেট এর কাজ হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে রক্ষা করা।
যেমন এই ওষুধটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন ইনফেকশন জনিত জ্বর দূর করতে ব্যবহার হয়ে থাকে। আবার যাদের শরীরে ইনফেকশন জনিত নিউমোনিয়া রয়েছে তাদেরকে চিকিৎসকরা জিম্যাক্স ট্যাবলেটটি সেবন করার নির্দেশ দিয়ে থাকে। এছাড়াও এই ওষুধটি আরো বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ জাতীয় রোগগুলো থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বাসতন্ত্রের উপরের অংশে সংক্রমণ দেখা দেয় যেমন বিভিন্ন ধরণের সাইনোসাইটিস জনিত সমস্যা দূর করতে এই ঔষুধ টি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও আমাদের দেহের ত্বক ও কোমল কোষ সংক্রমন দূর করতে এই ঔষুধটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
জিম্যাক্স সিরাপ এর কাজ কি
জিম্যাক্স সিরাপ হচ্ছে মূলত এক ধরণের এন্টিবায়োটিক ওষুধ। যার মূল উপাদান হচ্ছে এজিথ্রোমাইসিন। এর সাথে পানি মিক্স করে সাসপ্রেশন প্রস্তুত করতে হয়। এই জিম্যাক্স সিরাপ সম্পর্কে যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে পড়বেন। জিম্যাক্স সিরাপ মতো ৫০ মিলিগ্রামের হয়ে থাকে।
আর এই সিরাপের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২০০ টাকা। এটি গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ২ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। এটি শুধুমাত্র শিশুদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
zimax 500 এর উপকারিতা
যেকোন ওষুধ সেবনের আগে উপকারিতা জেনে রাখাটা জরুরি। zimax 500 এর যেসব উপকারিতা রয়েছে নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
- ইনফেকশন জনিত জ্বর নিরাময় করে থাকে
- বিভিন্ন ধরণের সাইনোসাইটিস জনিত সমস্যা নিরাময় করে থাকে
- দেহের কোমল কোষ সংক্রমন নিরাময় করে থাকে
- শরীরে ইনফেকশন জনিত নিউমোনিয়া নিরাময় করে থাকে
- পুরুষ এবং মহিলা উভয় এর শারীরিক রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যায়
- নন গনোকোকাল ইউরেথ্রাইটিস জনিত ব্যাকটেরিয়া থেকে নিরাময় পাওয়া যায়
- সংক্রামন এবং ব্যাকটেরিয়া জনীত স্যামসা থেকে মুক্তি দেয় ইত্যাদি।
মূলত জিম্যাক্স ট্যাবলেট উপরের উল্লিখিত সমস্যার ক্ষেত্রে বেশ উপকারি ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে আপনার রোগের ক্ষেত্রে এই ওষুধ কতটুকু উপকারিতা বয়ে আনতে পারে তা শুধুমাত্র একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারই ভালো বলতে পারবেন।
zimax 500 খাওয়ার নিয়ম
যেকোন ধরণের ঔষধ খাওয়ার পূর্বে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা খুবই জরুরি। জিম্যাক্স ওষুধ সেবনের বেশ কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। চলুন তাহলে আমরা প্রথমে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জিম্যাক্স বা অ্যাজিথ্রোমাইসিন সেবনের নির্দেশনা গুলো জেনে নেই।
১। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে
- জিম্যাক্স ৫০০ মিগ্রা প্রতিদিন ১ বার করে ৩ দিন পর্যন্ত কিংবা প্রথম দিন ৫০০ মিলিগ্রাম এবং পরে ২-৫ দিন পর্যন্ত দৈনিক ২৫০ মিলিগ্রাম করে ৪ দিন খাওয়াতে হবে।
- ক্ল্যামাইডিয়া ট্রাকোমাটিস জনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রথম দিন জিম্যাক্স ৫০০ মিলিগ্রাম ও পরবর্তী ২দিন ২৫০ মিলিগ্রাম করে সেবন করতে হয়।
২। শিশুদের ক্ষেত্রে
- ৬ বছরের বেশি বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে (যদি শারীরিক ওজন নুন্যতম ১৫ থেকে ২৫ কেজি হয়) দৈনিক ১০ মিলিগ্রাম /কেজি হিসেবে তিন দিন (১ চা-চামচপূর্ণ) করে সেবন করাতে হবে।
- আবার ১২ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে জিম্যাক্স ৫০০ ট্যাবলেট প্রতিদিন ১টি করে ৩দিন, ৫দিন, অথবা ৭দিন রোগের অবস্থা অনুযায়ী সেবন করতে পারেন।
উপরোক্ত যে নিয়মগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো নিয়ম অনুযায়ী সেবন তখনই করবেন যখন আপনি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। কারন আপনার রোগের অবস্থা আলাদা হতে পারে তাই আপনার রোগের ডোজ-ও আলাদা হতে পারে।
কেননা এই ওষুধের ডোজ আপনার শরীরের কন্ডিশন, ওজন এবং বয়সভেদের ওপর নির্ভর করে নিয়ম পরিবর্তিত হয়ে থাকে। আর কখনোই নিজে থেকে জিম্যাক্স ট্যাবলেট খাবেন না।
zimax 500 এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আপনারা উপরের অংশ থেকে জিম্যাক্স ট্যাবলেট সেবনের নিয়ম সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন। তবে আপনি যদি এই ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কিংবা অতিমাত্রায় সেবন করেন তাহলে আপনার শরীরে বেশ কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিতে পারে।
- পেট ব্যাথা অনুভব করা
- বমি বমি ভাব
- বমি হওয়া
- ডায়রিয়া হতে পারে
- আন্ত্রিক ব্যথা
- উদরীয় অস্বস্তি
- বায়ু উদ্গিরণ
- মাথা ব্যথা
- ঘুম ঘুম ভাব ইত্যাদি।
যদি নার্ভানেস ফুসকুড়ি খুব বেশি ভয়ে থাকে তাহলে অব্যশই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে আপনার পেটে যদি অতিরিক্ত ব্যথা হয় কিংবা ডায়রিয়ার প্রকোপ যদি বেশি থাকে তাহলে বেশি দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এক্ষেত্রে কখনোই অবহেলা করা উচিত হবে না।
কারণ আপনি যদি এ সময় অবহেলা করেন তাহলে আপনার সমস্যা আরো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে তাই সবসময় চেষ্টা করবেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা। আশা করছি জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো জানতে সক্ষম হয়েছেন
zimax 500 দাম কত
জিম্যাক্স মূলত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি (Square Pharmaceuticals plc) কোম্পানি বাজারজাত করে থাকে। যার গ্রুপ বা জেনেরিক নাম হল এজিথ্রোমাইসিন ডাইহাইড্রেট (Azithromycin dihydrate)। zimax ওষুধটি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে, ত্বকের সংক্রমণে, ইনফেকশন জনিত জ্বর এর জন্য কার্যকরী ঔষধ হিসেবে পরিচিত। আমরা অনেকেই জিম্যাক্স ট্যাবলেট এর দাম কত তা জানি না।
জিম্যাক্স ৫০০ মিলিগ্রাম প্রতি পিচ ট্যাবলেট এর দাম হচ্ছে ৪০ টাকা মাত্র। ওষুধের দাম সঠিকভাবে বলা বেশ কঠিন কারণ এর দাম যে কোন সময় কম-বেশি হয়ে থাকে। তবে আমরা যেই দাম উল্লেখ করেছি এর খুব বেশি দাম হওয়ার কথা না। এই ওষুধ প্রতিটা ফার্মেসি থেকে দাম দেখে ক্রয় করবেন। আর তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই ওষুধটি সেবন করবেন
লেখকের শেষ মতামত
পরিশেষে যেটা না বললেই নয় নিজের রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত নিজে থেকে ওষুধ সেবন করবেন না। মনে রাখাটা জরুরি যে যেকোন ধরণের মেডিসিন সেবনের আগে আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, এরপরে তার দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। তাহলেই ইনশাল্লাহ আপনার রোগের ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাবেন।