প্রশিকা এনজিও লোন পদ্ধতি – লোনের ধরণ, যোগ্যতা ও অবেদন পদ্ধতি

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংক গুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের এনজিও সংস্থা গুলো লোন প্রদানে সহায়তা দিয়ে আসছে। তাদের মধ্যে উন্নত একটি লোন সেবা প্রদানকারী সংস্থা হলো প্রশিকা এনজিও এনজিও। মূলত সংস্থা গুলো দেশের সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা। 

প্রশিকা এনজিও লোন পদ্ধতি

যাহারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যেমন -কৃষক, ব্যবসায়ী, মহিলা অন্যান্য শ্রেণী পেশার লোকদেরকে ক্ষুদ্র লোন প্রদান করে থাকেন। এমনকি তারা বিদেশগামী লোকদেরকেও লোন প্রদান করে থাকেন। তাই বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই প্রশিকা এনজিও লোন পদ্ধতি। প্রশিকা এনজিও সম্পর্কে প্রায় অনেকেই জানেন। কিন্তু প্রশিকা লোন কিভাবে পাবেন, সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ ধারণা রাখেন না। 

বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক বা এনজিও দিয়ে থাকে, তেমনি প্রশিকা এনজিও দেয়। প্রশিকা এনজিও বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পাশা পাশি লোনদানে সহায়তা করছে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে প্রশিকা এনজিও থেকে লোন নেওয়ার যোগ্যতা, কত টাকা লোন দেয় এবং সুদের হার কেমন যাবতীয় তথ্যগুলো জেনে নিতে পারবেন।

প্রশিকা এনজিও সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র মূলত ১৯৭৬ সালে ড. কাজী ফারুক আহমেদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। 

“মানুষের জন্য উন্নয়ন” এই মূলমন্ত্র নিয়ে প্রশিকা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে, বিশেষ করে দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের স্বাবলম্বী করার উপর জোর দেয়। তাদের কার্যক্রম শুধুমাত্র ক্ষুদ্রলোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং কৃষি উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক বনায়ন সহ বিভিন্ন বহুমুখী কর্মসূচিতেও তাদের অবদান রয়েছে।

প্রশিকা এনজিও লোন কী

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকে এর পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ পর্যায়ে মানুষের উন্নয়ন ও আর্থিক সচ্ছলতার জন্য লোন প্রদান করে থাকে । 

তাদের লোন কার্যক্রমের মধ্যে যারা লোন গ্রহণ করতে পারবেন তার মধ্যে রয়েছে কৃষক, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, নারী ইত্যাদি। রসিকা এনজিওর তথ্য অনুসারে এমনকি তারা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক এমন মানুষদের আর্থিক সহায়তা করার জন্য লোন দিয়ে থাকে। 

আরো পড়ুনঃ-  ব্র্যাক এনজিও লোন পদ্ধতি (সর্বশেষ আপডেট) - সুদের হার জানুন

প্রশিকা এনজিও থেকে লোন নেওয়ার যোগ্যতা

প্রশিকা এনজিও থেকে লোন নিতে হলে অবশ্যই আপনার কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। নিচের এই সকল যোগ্যতা থাকলেই আপনি প্রশিকা এনজিও থেকে লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

  • প্রশিকা এনজিও থেকে লোন নিতে প্রথমত আপনাকে বিবাহিত হতে হবে।
  • আপনার একটা সঞ্চয় হিসাব থাকতে হবে।
  • আবেদনকারীর বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর ও সর্বোচ্চ ৬৫ বছর হতে হবে।
  • আবেদনকারীর হয়ে একজন স্থানীয় গ্যারান্টর থাকতে হবে।
  • লোন পরিশোধের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে।
  • লোন পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে যদি আপনার অতীতে লোন পরিশোধের ক্ষেত্রে কোন অতীতে যদি খারাপ রেকর্ড থাকে।
  • আপনাকে অবশ্যই স্থানীয় হতে হবে।

এই যোগ্যতাগুলো পূরণ করলে আপনি প্রশিকা এনজিও থেকে লোন পাওয়ার জন্য বিবেচিত হতে পারেন। 

প্রশিকা এনজিও থেকে লোন পাওয়ার শর্তাবলী

প্রশিকা থেকে লোন পাওয়ার জন্য কিছু সাধারণ শর্তাবলী মেনে চলতে হয়:

  • নির্ধারিত সাপ্তাহিক/মাসিক কিস্তিতে লোন পরিশোধ করতে হবে। কিস্তি প্রদানে ব্যর্থ হলে জরিমানা প্রযোজ্য হতে পারে।
  • লোনের পাশাপাশি নিয়মিত সঞ্চয় জমা দিতে হবে। এই সঞ্চয়ের উপর সাধারণত একটি নির্দিষ্ট হারে মুনাফা বা লভ্যাংশ প্রদান করা হয়।
  • যদি গোষ্ঠীভিত্তিক লোন হয়, তবে নিয়মিত গোষ্ঠীর সভায় উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।
  • একটি আনুষ্ঠানিক লোন চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে।
  • লোনের উপর প্রযোজ্য সার্ভিস চার্জ নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে।

লোন নিরাপত্তা তহবিল/সদস্য কল্যাণ তহবিল: কিছু ক্ষেত্রে লোনের একটি ক্ষুদ্র অংশ (যেমন ১%) লোন নিরাপত্তা তহবিল বা সদস্য কল্যাণ তহবিল হিসেবে নেওয়া হয়, যা লোনগ্রহীতার অপ্রত্যাশিত মৃত্যু বা দুর্যোগের সময় ব্যবহৃত হয়।

তবে, প্রতিটি শাখা এবং লোনের ধরণ অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট শর্তাবলী ভিন্ন হতে পারে, তাই আপনার নিকটস্থ প্রশিকা অফিসে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।

প্রশিকা এনজিও লোন নেওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

প্রশিকা থেকে লোন নেবার জন্য কিছু সাধারণ কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কাগজপত্রও লাগতে পারে। সাধারণভাবে, নিম্নলিখিত কাগজপত্রগুলি প্রয়োজন হতে পারে:

  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি প্রয়োজন হবে। তবে বিবাহিতদের ক্ষেত্রে জোড়া ছবি প্রয়োজন হবে।
  • লোনের আবেদন পত্র।
  • অবশ্যই নির্দিষ্ট এলাকার নাগরিক হতে হবে।
  • আর্থিকভাবে সক্ষমতা প্রমাণের সাপেক্ষে একটি নথি পত্র।
  • গ্যারান্টার হিসেবে যিনি থাকবেন তার এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র পত্রের ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ-  বাংলাদেশের টপ ১০ এনজিও (আপডেট) - বাংলাদেশের প্রথম এনজিও কোনটি

প্রশিকা এনজিও লোন আবেদন প্রক্রিয়া

প্রশিকা এনজিও লোনের আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে:

  • আপনার এলাকার নিকটস্থ প্রশিকা এনজিওর শাখা অফিসে (ব্রাঞ্চ অফিস) যান।
  • শাখা অফিসের কর্মকর্তাদের সহায়তায় প্রশিকার সদস্য হন। এর জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রাথমিক ফি জমা দিন।
  • যদি গোষ্ঠীভিত্তিক লোন হয়, তবে একটি লোন গ্রহণকারী গোষ্ঠীর সদস্য হন এবং তাদের সাপ্তাহিক/মাসিক সভায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করুন।
  • প্রশিকার নির্ধারিত লোন আবেদন ফরম সংগ্রহ করে নির্ভুলভাবে পূরণ করুন।
  • পূরণকৃত আবেদন ফরমের সাথে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র (NID, ছবি ইত্যাদি) জমা দিন।
  • প্রশিকার কর্মীরা আপনার আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করবে। আপনার বাড়ি এবং ব্যবসার স্থান পরিদর্শন করে আপনার আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও লোন পরিশোধের সক্ষমতা মূল্যায়ন করা হবে।
  • সকল তথ্য যাচাই এবং মূল্যায়ন সফল হলে আপনার লোন আবেদন অনুমোদিত হবে।
  • অনুমোদনের পর, একটি লোন চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার পর নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে লোনের অর্থ বিতরণ করা হবে।

প্রশিকা এনজিও কত টাকা লোন দেয়

বর্তমানে ২০২৫ সালের তাদের নিয়ম অনুসারে, সর্বনিম্ন ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করে। সর্বচ্চো ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত তারা অর্থাৎ প্রশিকা এনজিও ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকেন। 

প্রশিকা এনজিও সুদের হার কত

এখন আরো জানবো প্রশিকা এনজিওর সুদের হার কত। প্রশিকা এনজিও কর্তৃক সুদের হার সর্বোচ্চ ২৪.০০% হয়ে থাকে। তবে স্থানভেদে আপনার লোন যদি ১ লক্ষ হতে ৫ লক্ষের কম হয় তাহলে সুদ হবে ২৪%।

প্রশিকা এনজিও থেকে কেন লোন নিবেন?

বাংলাদেশের অন্যান্য এনজিও থেকে প্রশিক্ষা এনজিও তুলনামূলকভাবে গ্রাহকদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন যা গ্রাহকদের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য বেশ কার্যকর। এছাড়া প্রশিকা এনজিও এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী প্রশিক্ষা এনজিও এর মোট কিস্তির পরিমাণ ৪৫।

আপনি প্রশিকা এনজিও থেকে লোন নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন যদি:

  • প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে জামানতের প্রয়োজন হয়, কিন্তু প্রশিকার লোন সাধারণত জামানতবিহীন।
  • আপনার যদি একটি ছোট ব্যবসার ধারণা থাকে বা বর্তমান ব্যবসাটি বাড়াতে চান কিন্তু মূলধনের অভাব থাকে।
  • প্রশিকার কার্যক্রম মূলত এই জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে।
  • ব্যাংকের তুলনায় এনজিওর লোন প্রক্রিয়া সাধারণত সহজ এবং দ্রুত সম্পন্ন হয়।
  • আপনার আয়ের উৎস স্থিতিশীল এবং আপনি সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন।
  • অনেক সময় প্রশিকা তাদের লোনগ্রহীতাদের জন্য ব্যবসার উন্নতি ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণও প্রদান করে।
  • প্রশিকা দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত এবং সুপরিচিত একটি এনজিও।
আরো পড়ুনঃ-  বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি - বুরো বাংলাদেশ লোন নেওয়ার যোগ্যতা

তবে, লোন নেওয়ার আগে অবশ্যই সমস্ত শর্তাবলী, সার্ভিস চার্জ এবং কিস্তি পরিশোধের নিয়মাবলী ভালোভাবে বুঝে নেবেন।

প্রশিকা এনজিও লোনের সুবিধা ও অসুবিধা

সুবিধা:

  • দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রচলিত ব্যাংকের তুলনায় লোন প্রাপ্তি সহজ।
  • জামানতের প্রয়োজন না হওয়ায় লোন পেতে সুবিধা হয়।
  • ক্ষুদ্র উদ্যোগে বিনিয়োগের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • অনেক ক্ষেত্রে নারীদের লোন পেতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যা তাদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী করে তোলে।
  • সদস্যদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলে, যা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়ায়।
  • গোষ্ঠীভিত্তিক লোনের মাধ্যমে সদস্যরা একে অপরের প্রতি সামাজিক সমর্থন পায়।

অসুবিধা:

  • বাণিজ্যিক ব্যাংকের তুলনায় সার্ভিস চার্জের হার কিছুটা বেশি হতে পারে।
  • সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক কিস্তি পরিশোধের চাপ অনেক সময় ছোট ব্যবসার জন্য কঠিন হতে পারে।
  • বড় আকারের বিনিয়োগ বা ব্যবসার জন্য লোনের পরিমাণ পর্যাপ্ত নাও হতে পারে।
  • গোষ্ঠীভিত্তিক লোনের ক্ষেত্রে, একজন সদস্য কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে তা অন্য সদস্যদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  • অধিকাংশ প্রক্রিয়া শাখা ভিত্তিক হওয়ায় অনলাইনের সুবিধা সীমিত।

লেখকের শেষ মতামত

প্রশিকা এমন একটি এনজিও, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের লোন ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও দরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কাজ করে। তাদের লোন কার্যক্রমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লোন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক উন্নয়ন করা।

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment