এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর বাচ্চা নেওয়ার নিয়ম – এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

একটি অ্যাক্টোপিক গর্ভাবস্থা শরীরের অন্যান্য অংশেও ঘটতে পারে, যেমন ডিম্বাশয়, পেটের গহ্বর বা জরায়ুর নীচের অংশে। এই ধরনের গর্ভাবস্থা স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যেতে অক্ষম এবং ক্রমবর্ধমান টিস্যু যদি চিকিত্সা না করা হয় তবে জীবন-হুমকির রক্তপাত হতে পারে।

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর বাচ্চা নেওয়ার নিয়ম

ডাক্তাররা সাধারণত তাদের চিকিত্সার সাথে এগিয়ে যাওয়ার আগে গর্ভাবস্থা কতটা অগ্রসর হয়েছে এবং লক্ষণগুলি কতটা গুরুতর তা বিবেচনা করে। আমরা আজকে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির লক্ষণ, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর বাচ্চা নেওয়ার নিয়ম সহ এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি নিয়ে আরও অন্যান্য বিষয়ে তুলে ধরব।

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি কি

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর (গর্ভাশয়) বাইরে অন্য কোথাও প্রতিস্থাপিত হয় এবং বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর ভেতরে স্থাপিত হয়। বেশিরভাগ এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি ফ্যালোপিয়ান টিউবে (ডিম্বনালী) ঘটে, তবে এটি ডিম্বাশয়, জরায়ুর মুখ বা পেটের ভেতরেও হতে পারে।

আরও সহজ ভাবে বললে, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি এমন একটি গর্ভাবস্থা, যেখানে নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুর পরিবর্তে অন্য কোথাও, সাধারণত ফলোপিয়ান টিউবে গিয়ে স্থাপন হয়। এটি একটি বিপজ্জনক অবস্থা এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে মায়ের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি কেন হয়

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হলো একটি অস্বাভাবিক গর্ভাবস্থা, যেখানে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর বাইরে অন্য কোথাও প্রতিস্থাপিত হয় এবং সেখানেই বড় হতে শুরু করে। সাধারণত, এটি ফ্যালোপিয়ান টিউবে (ডিম্বনালী) ঘটে, কারণ টিউবগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা ব্লক থাকলে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুতে পৌঁছাতে পারে না।

প্রধান কারণ ও ঝুঁকির কারণগুলো:

ফ্যালোপিয়ান টিউবের ক্ষতি: এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ। পূর্ববর্তী সংক্রমণ (যেমন পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ বা PID), যৌনবাহিত রোগ (STD), বা আগের কোনো অস্ত্রোপচার (যেমন টিউবাল লাইগেশন) টিউবকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এর ফলে ডিম্বাণু জরায়ুতে যেতে না পেরে টিউবেই আটকে যায়।

  • আগের এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি: একবার এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হলে ভবিষ্যতে এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • উর্বরতা চিকিৎসা: ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF)-এর মতো কিছু চিকিৎসাও এই ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • ধূমপান: ধূমপান ফ্যালোপিয়ান টিউবের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে।
  • বয়স: যেসব মহিলাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি তাদের ঝুঁকি কিছুটা বেশি।

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি একটি গুরুতর অবস্থা, যা চিকিৎসা না করা হলে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

একটোপিক প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলো প্রায়শই সাধারণ গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণের মতোই হতে পারে, যেমন পিরিয়ড মিস হওয়া, স্তনে ব্যথা, বমি বমি ভাব। তবে, কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে যা এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ইঙ্গিত দেয় এবং এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

সাধারণ লক্ষণ

সাধারণত গর্ভাবস্থার ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে। এই লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে শুরু হতে পারে বা হঠাৎ করেই তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

যোনিপথে অস্বাভাবিক রক্তপাত: এটি স্বাভাবিক পিরিয়ডের চেয়ে হালকা বা গাঢ় হতে পারে এবং এর রঙ বাদামী থেকে কালোও হতে পারে। এটি একটানা বা অনিয়মিতভাবে হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে স্পটিং (Spotting) বা হালকা রক্তপাত দেখা যায়।

পেটে ব্যথা: এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। ব্যথা সাধারণত তলপেটের একপাশে তীব্র, তীক্ষ্ণ বা ছুরিকাঘাতের মতো হতে পারে। এটি হালকা মোচড়ানো ব্যথা থেকে শুরু করে হঠাৎ তীব্র ব্যথায় পরিণত হতে পারে। হাঁটাচলা বা প্রস্রাবের সময় ব্যথা বাড়তে পারে।

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হয় কেন

কাঁধে ব্যথা: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ যা অনেকেই জানেন না। যদি ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেটে যায় এবং পেটের ভেতরে রক্তপাত হয়, তবে সেই রক্ত ডায়াফ্রামকে (বুক ও পেটের মাঝের পর্দা) উত্তেজিত করতে পারে, যার ফলে কাঁধে ব্যথা অনুভূত হয়। এটি সাধারণত ঘাড় বা কাঁধের ওপরের অংশে দেখা যায়।

মলত্যাগের সময় অস্বস্তি: মলত্যাগ বা প্রস্রাবের সময় কখনো কখনো পেটের ভেতরের রক্তপাতের কারণে অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে।

গুরুতর লক্ষণ

যদি ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেটে যায়, তাহলে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রক্তপাত শুরু হয়। সেক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে এবং এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি:

  • তীব্র, হঠাৎ তলপেটে ব্যথা
  • মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া 
  • ফ্যাকাশে ত্বক হয়ে যাওয়া
  • দ্রুত হৃদস্পন্দন
  • শীতল এবং ঘর্মাক্ত ত্বক, 
  • দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, 
  • নিম্ন রক্তচাপ ইত্যাদি।

যদি আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে এবং উপরোক্ত কোনো লক্ষণ দেখা যায়, বিশেষ করে তলপেটে ব্যথা, অস্বাভাবিক রক্তপাত, মাথা ঘোরা বা কাঁধে ব্যথা থাকে, তাহলে দেরি না করে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন অথবা জরুরী বিভাগে যান। এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি একটি গুরুতর অবস্থা এবং এর দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর বাচ্চা নেওয়ার নিয়ম

সাধারণভাবে চিকিৎসকরা ৬ মাস থেকে ১ বছর অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন। তবে নির্ভর করে – এক্টোপিক প্রেগন্যান্সিতে কেমন চিকিৎসা হয়েছে , মায়ের স্বাস্থ্যগত অবস্থা কেমন, টিউব কাটা হয়েছে কিনা, এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে মা কতটা সুস্থ।

তাই, নতুন করে সন্তান নিতে চাইলে অবশ্যই একজন গাইনোকোলজিস্ট বা ফার্টিলিটি স্পেশালিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার সময় কিছু বিষয় জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু এটি একটি সংবেদনশীল বিষয়, তাই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সঠিক দিকনির্দেশনা নেওয়া জরুরি।

➡️এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর গর্ভধারণের আগে বিবেচনা করার বিষয়গুলি>>

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর শরীর ও মনকে সুস্থ হতে সময় দেওয়া প্রয়োজন। সাধারণত, ডাক্তাররা এক্টোপিক গর্ভাবস্থার চিকিৎসার পর কমপক্ষে ৩ মাস পর্যন্ত গর্ভবতী না হওয়ার পরামর্শ দেন। যদি এই সময়ের আগে যৌন মিলন করতে চান, সেক্ষেত্রে জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।

➡️এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসারে এই সময়ের ব্যাপ্তি ভিন্ন হতে পারে:

১। পর্যবেক্ষণ: যদি গর্ভাবস্থা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায় এবং কোনো চিকিৎসা বা সার্জারি প্রয়োজন না হয়, তবে তুলনামূলকভাবে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।

২। মেডিকেল ব্যবস্থাপনা : যদি মেথোট্রেক্সেট নামক ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়, তবে রক্তে hCG হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট এবং অন্য কোনো ভিটামিন বা মিনারেল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ ফলিক অ্যাসিড মেথোট্রেক্সেটের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি

৩। সার্জিক্যাল ব্যবস্থাপনা : যদি অস্ত্রোপচার করা হয়, তবে শারীরিক পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। শরীরকে সুস্থ করতে কয়েক সপ্তাহ থেকে মাসখানেক সময় লাগতে পারে।

৪। শারীরিক পরীক্ষা ও টেস্ট: 

  • Pelvic Ultrasound: এই টেষ্টে জরায়ুতে কোনো ঝুকি বা সমস্যা রয়েছে কিনা তা চেক করা হয়। 
  • HSG: এই টেষ্ট করা হয় মূলত ফ্যালোপিয়ান টিউব খোলা আছে নাকি বন্ধ আছে সেটা যাচাই করার জন্য।
  • Hormonal test: হরমোন লেভেল ঠিক আছে কিনা তা জানার জন্য।

সুস্থ গর্ভাবস্থার জন্য টিপস

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর সুস্থ গর্ভাবস্থার জন্য কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি:

ডাক্তারের পরামর্শ: ভবিষ্যতে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার আগে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর (গাইনি ডাক্তারের) সাথে বিস্তারিত আলোচনা করুন। তারা আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন এবং একটি সুস্থ গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবেন।

শারীরিক সুস্থতা: সুস্থ সুষম খাবার গ্রহণ করুন এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন। ধূমপান এক্টোপিক গর্ভাবস্থার ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এটি ত্যাগ করলে ঝুঁকি কমে আসে।

মানসিক সুস্থতা: এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি একটি আবেগপূর্ণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। নিজেকে শারীরিক, মানসিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ হওয়ার সময় দিন। প্রয়োজনে মানসিক সহায়তার জন্য পেশাদারদের সাথে কথা বলতে পারেন।

উর্বরতা চিকিৎসা: কিছু ক্ষেত্রে, ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) এর মতো উর্বরতা চিকিৎসা সুপারিশ করা হতে পারে, বিশেষ করে যদি এক্টোপিক গর্ভাবস্থার কারণে ফ্যালোপিয়ান টিউবের ক্ষতি হয়ে থাকে।

সময় বাছাই করা: এক্টোপিকের চিকিৎসা শেষ হওয়ার ৬ মাস পরে পরিকল্পিতভাবে গর্ভধারণের চেষ্টা করতে পারেন।

নিয়মিত ওভুলেশন মনিটর: ওভুলেশন কবে হচ্ছে সেটা জানতে ওভুলেশন কিট ব্যবহার করুন।

সঠিক সময়ে সহবাস করুন (ওভুলেশনের ১২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে)।

➡️পরবর্তী গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি

একবার এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হলে ভবিষ্যতে আবার এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে (প্রায় ১৪ শতাংশ)। তবে এর মানে এই নয় যে আপনার স্বাভাবিক গর্ভাবস্থা হবে না। বেশিরভাগ মহিলারাই এক্টোপিক গর্ভাবস্থার পরেও সফলভাবে গর্ভধারণ করতে পারেন।

মনে রাখবেন, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি আপনার দোষে হয় না এবং এটি প্রতিরোধ করার জন্য আপনি কিছুই করতে পারতেন না। এটি মেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে এই ঘটনাটি আপনার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। যদি আপনার আরও কোনো প্রশ্ন থাকে বা আপনার মনে কোনো উদ্বেগ থাকে, তবে আপনার ডাক্তারের সাথে খোলাখুলি কথা বলুন।

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর সন্তান নেওয়া সম্ভব, তবে কিছুটা সতর্কতা ও ধৈর্যের সঙ্গে এগোতে হয়। একজন অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে প্রি-কনসেপশন কেয়ার ও পরামর্শ অনুযায়ী চললে মা ও শিশু—দুজনের জন্যই সুস্থ গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব।

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি ট্রিটমেন্ট

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি একটি গুরুতর অবস্থা, যা চিকিৎসা না করা হলে জীবন-হুমকিস্বরূপ হতে পারে। যেহেতু নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর বাইরে সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারে না, তাই এই টিস্যু অপসারণ করা জরুরি। এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে গর্ভাবস্থার আকার, অবস্থান, মহিলার শারীরিক অবস্থা, রক্তপাতের তীব্রতা এবং hCG হরমোনের মাত্রার ওপর।

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির চিকিৎসার জন্য সাধারণত তিন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:

১. পর্যবেক্ষণ বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থাপনা

আরো পড়ুনঃ-  এইচসিজি ইনজেকশনের পরে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ

যদি এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি খুব ছোট হয়, কোনো লক্ষণ না থাকে বা খুব হালকা লক্ষণ থাকে, এবং রক্তে hCG (হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন) হরমোনের মাত্রা কম থাকে (যা গর্ভাবস্থা হরমোন), তাহলে ডাক্তাররা শুধু পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে, শরীর নিজে থেকেই এক্টোপিক টিস্যু শোষণ করে নিতে পারে।

  • যেভাবে কাজ করে: ডাক্তাররা রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং রক্তে hCG হরমোনের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে হরমোনের মাত্রা কমছে এবং গর্ভাবস্থা নিজে থেকেই বিলীন হচ্ছে।
  • সুবিধা: কোনো ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না।
  • অসুবিধা: সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম হতে পারে, এবং প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে অন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। এই সময়েও টিউব ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

২. ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা

যদি এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা হয়, টিউবের ক্ষতি কম হয়, এবং রোগীর কোনো অভ্যন্তরীণ রক্তপাত বা গুরুতর লক্ষণ না থাকে, তবে মেথোট্রেক্সেট নামক একটি ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়।

  • যেভাবে কাজ করে: মেথোট্রেক্সেট এক ধরনের কেমোথেরাপির ঔষধ, যা দ্রুত বর্ধনশীল কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়। এটি এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির কোষগুলোকে বৃদ্ধি পেতে বাধা দেয় এবং শরীরকে সেগুলোকে শোষণ করতে সাহায্য করে।
  • প্রয়োগ: এটি সাধারণত নিতম্বে একটি ইনজেকশন হিসাবে দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে একাধিক ডোজের প্রয়োজন হতে পারে।
  • পর্যবেক্ষণ: ঔষধ প্রয়োগের পর রক্তে hCG হরমোনের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে চিকিৎসা সফল হচ্ছে এবং হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছে।
  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা এবং মুখের ঘা হতে পারে।
  • পুনরায় গর্ভধারণ: মেথোট্রেক্সেট নেওয়ার পর সাধারণত ৩ মাস পর্যন্ত গর্ভধারণের চেষ্টা না করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ ঔষধের কিছু প্রভাব এই সময়কালে থাকতে পারে।

৩. অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা

যখন এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করার জন্য উপযুক্ত নয়, অথবা মেথোট্রেক্সেট সফল না হয়, অথবা যদি রোগীর অবস্থা গুরুতর হয় (যেমন টিউব ফেটে যাওয়া এবং অভ্যন্তরীণ রক্তপাত), তখন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে জটিলতা প্রতিরোধ করা যায় এবং ভবিষ্যতের গর্ভধারণের সম্ভাবনাও রক্ষা করা যায়। তাই, কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।

লেখকের শেষ মতামত

পরিশেষে, যদি আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে এবং উপরোক্ত কোনো লক্ষণ দেখা যায়, বিশেষ করে তলপেটে ব্যথা, অস্বাভাবিক রক্তপাত, মাথা ঘোরা বা কাঁধে ব্যথা থাকে, তাহলে দেরি না করে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন অথবা জরুরী বিভাগে যান। এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি একটি গুরুতর অবস্থা এবং এর দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির পর সন্তান নেওয়া সম্ভব, তবে কিছুটা সতর্কতা ও ধৈর্যের সঙ্গে এগোতে হয়। একজন অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে প্রি-কনসেপশন কেয়ার ও পরামর্শ অনুযায়ী চললে মা ও শিশু—দুজনের জন্যই সুস্থ গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব।

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment