বাংলাদেশে পাইলট হতে কত টাকা খরচ হয় (আপডেট তথ্য)

আমরা যারা পাইলট হওয়ার দারুণ স্বপ্ন দেখছি, তাদের মনে একটি কমন প্রশ্ন হচ্ছে: ২০২৫ সালে বর্তমানে বাংলাদেশে পাইলট হওয়ার খরচ কত? বাংলাদেশে পাইলট হওয়ার খরচ বিভিন্ন বিষয় ও সময়ের ওপর নির্ভর করে, তাই এর নির্দিষ্ট কোনো একটি অঙ্ক বলা কঠিন।

বাংলাদেশে পাইলট হতে কত টাকা খরচ হয়

২০২৫ সালে বাংলাদেশে পাইলট হওয়ার খরচ গড়ে প্রায় ৭০ লাখ থেকে ১.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই খরচের পরিমাণ নির্ভর করে আপনি কোন ফ্লাইং স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, কত ঘণ্টা ফ্লাইট ট্রেনিং করছেন, এবং বিদেশে যাচ্ছেন নাকি দেশে থাকছেন তার ওপর। এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে হলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি শেষ অবধি পড়ুন।

বাংলাদেশে পাইলট হতে কত টাকা খরচ হয়

আমরা শুরুতেই বলেছি, বাংলাদেশে পাইলট হওয়ার খরচ বিভিন্ন বিষয় ও সময়ের ওপর নির্ভর করে, তাই এর নির্দিষ্ট কোনো একটি অঙ্ক বলা কঠিন। তবে, বর্তমানে বাণিজ্যিক পাইলট লাইসেন্স (CPL) অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণের গড় খরচ সম্পর্কে একটি ধারণা উল্লেখ করেছি। 

আরো পড়ুনঃ ফুল ফ্রি স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায় দেখুন

বাংলাদেশে পাইলট হওয়ার খরচকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায় যথাঃ

১. ফ্লাইং স্কুল ট্রেনিং খরচ

বাংলাদেশের ফ্লাইং স্কুলগুলোতে প্রতি ঘণ্টা ফ্লাইং চার্জ সাধারণত ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। একজন পাইলটের কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (CPL) পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ২০০ ঘণ্টা ফ্লাইং প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে, শুধু ফ্লাইং ট্রেনিংয়ের খরচই দাঁড়ায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা।

২. গ্রাউন্ড স্কুল ও অন্যান্য খরচ

  • গ্রাউন্ড স্কুল ফি: ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা।
  • মেডিকেল টেস্ট ও ডকুমেন্টেশন: প্রায় ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা।
  • লাইসেন্স ফি ও পরীক্ষার ফি: প্রায় ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা।

৩. বিদেশে প্রশিক্ষণের খরচ

অনেক শিক্ষার্থী খরচ কমাতে বা দ্রুত প্রশিক্ষণ শেষ করতে ভারত, ফিলিপাইন, কানাডা বা আমেরিকার মতো দেশে যান।

  • ভারতে CPL কোর্স: প্রায় ৫০ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকা।
  • ফিলিপাইনে CPL কোর্স: ৪৫ লাখ থেকে ৫৫ লাখ টাকা।
  • আমেরিকা/কানাডায় CPL কোর্স: ৮০ লাখ থেকে ১.২ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

সব মিলিয়ে, বাংলাদেশে ২০২৫ সালে একজন শিক্ষার্থীর পাইলট হওয়ার খরচ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৭০ লাখ থেকে ১.৫ কোটি টাকা। তবে, খরচের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যেগুলো বিবেচনা করা উচিত:

খরচের তারতম্য: পাইলট প্রশিক্ষণের মূল খরচ নির্ভর করে আপনার কত ঘণ্টা বিমান ওড়াতে হবে তার উপর। প্রশিক্ষণ প্রদানকারী ফ্লাইং একাডেমিরওপর এই খরচ নির্ভর করে এবং সময়ের সাথে সাথে জ্বালানি খরচ এবং ডলারের বিনিময় হার বাড়লে মোট খরচও বাড়ে।

প্রশিক্ষণের ধাপ: এই মোট খরচের মধ্যে সাধারণত প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স (PPL), কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (CPL) এবং ইনস্ট্রুমেন্ট রেটিং (IR) এর মতো প্রধান ধাপগুলোর খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

বিমান ভেদে খরচ: আপনি কোন ধরনের বিমান (যেমন: সেসনা ১৫২ বা সেসনা ১৭২) ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তার ওপরও খরচ নির্ভর করে।

অতিরিক্ত খরচ: 

  • মূল প্রশিক্ষণ ফি ছাড়াও কিছু অতিরিক্ত খরচ যোগ হতে পারে, যেমন:
  • মেডিকেল পরীক্ষা (Class 1 Medical Assessment)
  • সিভিল এভিয়েশন অথরিটির (CAAB) লাইসেন্স ও পরীক্ষার ফি।
  • ইউনিফর্ম, বইপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম।

বাংলাদেশে এখন কমার্শিয়াল পাইলট হতে চাইলে সাধারণত প্রায় ৭০ লাখ থেকে ১.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। কিছু সূত্র অনুযায়ী খরচ ৫০-৮০ লাখের আশেপাশেও হতে পারে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সঠিক ও হালনাগাদ তথ্যের জন্য অবশ্যই আপনার পছন্দের ফ্লাইং একাডেমিগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা উচিত।

বাংলাদেশে কোন কোন ফ্লাইং স্কুলে পাইলট ট্রেনিং করানো হয়?

বাংলাদেশে বর্তমানে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ও সরকারি অনুমোদিত ফ্লাইং স্কুল রয়েছে। যেমন:

  • Bangladesh Aviation Academy
  • Bangladesh Flying Club
  • Bangladesh Flying Academy (BFA)
  • Galaxy Flying Academy
  • South Asian Aviation
  • Aero Bengal Aviation

প্রতিটি একাডেমির ফি, প্রশিক্ষণের মান ও সুযোগ-সুবিধা আলাদা। তাই, ভর্তি হওয়ার আগে অবশ্যই ভিজিট করে দেখে আসা উচিত।

বাংলাদেশে সরকারিভাবে পাইলট হওয়ার খরচ

এখন আমরা আলোচনা করব আপনি যদি পাইলট হতে চান তাহলে এক্ষেত্রে সরকারিভাবে পাইলট হওয়ার খরচ কেমন  এই বিষয় সম্পর্কে। সরকারিভাবে পাইলট হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে যত বাংলাদেশী এয়ার ফোর্স পাইলটে আবেদন করতে হবে এজন্য ।

আরো পড়ুনঃ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার নিয়ম দেখে নিন

আবেদন ফি: আবেদন ফি সাধারণত ১০০ থেকে ২০০ টাকার ভিতরে হয়ে যায়। 

পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি খরচ: পরীক্ষা ভালো ভাবে দেওয়ার জন্য যদি কোশ্চেন নাও করা হয় তবুও ISSB এবং লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল তৈরি করার জন্য হিসেবে বিভিন্ন ধরনের বই এবং গাইড কিনতে হয় এতে ৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মত খরচ আসতে পারে। 

মেডিকেল রিপোর্ট বা চেকআপ: আপনি যদি আগে থেকেই আপনার যোগ্য বিবাহের বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিতে চান তাহলে এক্ষেত্রে কিন্তু বিভিন্ন ধরনের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে যেগুলোতে আপনি ১০০০-২০০০ টাকার ভেতরে এই ট্রেস্টগুলো করে নিতে পারবেন। 

যাতায়াত এবং থাকা: যেহেতু বাংলাদেশের সব জায়গা থেকেই আবেদন হয়ে থাকে এজন্য বাছাই কেন্দ্র বিভিন্ন জায়গায় হয় যে কারণে বাছাই কেন্দ্রে যাতায়াত খরচ এবং যাতায়াত করার জন্য বিভিন্ন সময় দেখা যায় হোটেল ভাড়া করে থাকতে হয় সবকিছু মিলে খরচ লাগতে পারে ১০০০-৩০০০ টাকা।

তবে সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি যদি একবার নির্বাচিত হয়ে যান তাহলে প্রশিক্ষণকালীন  সব ধরনের খরচ যেমন থাকা খাওয়া, বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা, মাসিক ভাতা ইত্যাদি খরচ গুলো সরকার বহন করবে। তবে বর্তমানে যে দেশে প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোতে পাইলট কোর্স করতে দেখা যাচ্ছে যে সবকিছু মিলে ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকার মত খরচ হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন সময় এই প্রতিষ্ঠানিক খরচ গুলো কম বেশি হতে পারে যেটা নির্ভর করে তাকে প্রতিষ্ঠান এবং কোর্সের উপরে।

বাংলাদেশে পাইলট হতে হলে কি কি ধাপ অনুসরণ করতে হয়?

পাইলট হওয়া মানে শুধু আকাশে ওড়া নয়, বরং এটি একটি কঠিন এবং ব্যয়বহুল যাত্রা। আমি যখন প্রথমবার একজন ট্রেনিং পাইলটের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তিনি বলেছিলেন: “এটি শুধু স্বপ্ন নয়, এটি বিনিয়োগ।” বাংলাদেশে পাইলট হওয়ার জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়:

  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: ন্যূনতম এইচএসসি বা এ-লেভেল পাশ (বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান, গণিত ও ইংরেজিতে গুরুত্ব দিতে হবে)।
  • মেডিকেল টেস্ট: Class-1 Medical Certificate অর্জন করা বাধ্যতামূলক; এটি ছাড়া আপনি কখনোই ফ্লাইং শুরু করতে পারবেন না।
  • ফ্লাইং স্কুলে ভর্তি: বাংলাদেশে বর্তমানে একাধিক অনুমোদিত ফ্লাইং স্কুল রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যেকোনো একটিতে ভর্তি হতে হবে।
  • লাইসেন্স প্রাপ্তি: প্রথমে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স (PPL), এরপর কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (CPL) এবং অভিজ্ঞতা লাভের পর এয়ারলাইন ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স (ATPL) অর্জন করতে হয়।

বাংলাদেশে পাইলটদের বেতন কত

বাংলাদেশে পাইলটদের বেতন তাদের অভিজ্ঞতা এবং কোম্পানির ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে কোম্পানি অনুযায়ী পাইলটদের বেতন, বোনাস এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের পাইলটদের বেতন নিচে উল্লেখ করা হলো:

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ জুলাই বিপ্লব ২০২৪ সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

  • ক্যাডেট পাইলট: ৯০ ,০০০ – ১,২০,০০০ টাকা।
  • ফার্স্ট অফিসার: ১,৬০ ,০০০ – ৩,০০,০০০ টাকা।
  • ক্যাপ্টেন: ৫,০০,০০০ – ১০,০০,০০০+ টাকা।

এক্ষেত্রে, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি পাইলটরা বিভিন্ন স্পেশাল কোর্স করিয়েও মাসিক ভালো পরিমাণ বেতন পান। এছাড়াও, তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করারও সুযোগ থাকে।

সাধারন প্রশ্ন উত্তর (FAQs)

১. প্রশ্ন: প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স (PPL) করতে কত খরচ হয়?

উত্তর: PPL কোর্সের জন্য সাধারণত ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়, যা পাইলট হওয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে গণ্য করা হয়।

২. প্রশ্ন: CPL লাইসেন্স পেতে কত ঘণ্টা ফ্লাইট করতে হয়?

উত্তর: CPL পেতে সাধারণত ২০০ ঘণ্টা ফ্লাইং লগ সম্পন্ন করতে হয়, যা প্রশিক্ষণের বড় একটি অংশ।

৩ প্রশ্ন: CPL পাওয়ার পর কি সরাসরি এয়ারলাইনে চাকরি পাওয়া যায়?

উত্তর: না, সাধারণত CPL পাওয়ার পর Type Rating করতে হয়, এক্ষেত্রে প্রায় ২০–৩০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে এবং পরে এয়ারলাইন ইন্টারভিউ ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।

৪. প্রশ্ন: বাংলাদেশে পাইলট কোর্সে ভর্তি হতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?

উত্তর: ন্যূনতম এইচএসসি পাস হতে হয় এবং পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে ভালো ফলাফল থাকা জরুরি।

৫. প্রশ্ন: পাইলট হতে কি মেডিকেল টেস্ট দিতে হয়?

উত্তর: হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক মানের Class 1 Medical Test উত্তীর্ণ হতে হয়, যেখানে চোখ, হার্ট, শ্রবণ ও সামগ্রিক শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।

৬. প্রশ্ন: বাংলাদেশে পাইলট কোর্সের সময়কাল কতদিন?

উত্তর: সাধারণত ১৮ মাস থেকে ২৪ মাস সময় লাগে, তবে আবহাওয়া ও ফ্লাইট স্লটের কারণে সময় কিছুটা বাড়তেও পারে।

লেখকের শেষ মতামত

বাংলাদেশে পাইলট হওয়ার খরচ ২০২৫ সালে আগের তুলনায় অনেক বেশি হলেও সুযোগও বেড়েছে। এটি সত্যিই একটি বড় বিনিয়োগ, তবে যারা স্বপ্ন দেখে আকাশ ছোঁয়ার, তাদের জন্য এটি অমূল্য অভিজ্ঞতা। আপনার পরিকল্পনা যদি দৃঢ় হয় এবং আপনি সঠিক একাডেমি নির্বাচন করতে পারেন, তবে পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার হবে সম্মানজনক, আয়সমৃদ্ধ এবং রোমাঞ্চকর।

একজন দক্ষ পাইলট হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে অনেক ধৈর্য, কঠিন পরিশ্রম এবং সেই সাথে অবশ্যই আর্থিক সচ্ছলতা প্রয়োজন। সঠিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পড়াশোনা ও লাইসেন্স অর্জনের মধ্য দিয়েই একজন সফল পাইলট হওয়া সম্ভব। আপনি যদি পাইলট হওয়ার জন্য পড়াশোনা শুরু করতে চান, তাহলে অবশ্যই এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করুন।

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment