মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়

মানুষের দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা বিবাদ  হয়ে থাকে !  অনেক সময় দেখা যায় ফোনে কথা বলার সময় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি হয় । তখন হয়তো রাগের মাথায়  স্বামী  তার স্ত্রীকে তালাকের কথা  বলে ফেলে  এখন প্রশ্ন হচ্ছে মোবাইল ফোনের রাগের  মাথায় তালাক দিলে কি তা তালাক হয়ে যাবে।  অথবা রাগের মাথায় ফোন কেটে দিয়ে এসএমএসে যদি তালাকের কথা কেউ একজন বলে ফেলে তাহলে কি তালাক হয়ে যাবে।

মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়

মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচাইতে অপছন্দের কাজ হচ্ছে তালাক। ইসলামে যদিও স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের জন্য তালাকের নিয়ম রয়েছে। এখানে  আমাদের ধারণা রাগের মাথায় মোবাইল ফোনে তালাক দিলে তালাক হয় না।  এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব যে ,মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে তালাক পতিত হয় কি হয় না।

মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়

সরাসরি কিংবা মোবাইলে এসএমএস দিয়ে  স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে তালাক পতিত হবে। অতএব রাগের মাথায় স্বামী যদি মোবাইল ফোনে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ফেলে তাহলে তালাক পতিত হবে কিন্তু তা তিন তালাক না হয়ে  এক তালাক হিসেবে গণ্য হবে। কেননা শরীয়ত মোতাবেক স্বামী যদি স্ত্রীকে একই সাথে তিন তালাক দিয়ে বসে তাহলে তা এক তালাক  হিসেবে বিবেচিত হবে।

এমন তিনটি বিষয় রয়েছে যা গোস্বাই হোক বা হাসি  ঠাট্টায় হোক সর্বস্তর কার্যকারী হয়ে থাকে তা হলো বিবাহ, তালাক ও রজয়াত।[ আবু দাউদ ২১৯৪ তিরমিজি ১১৮৪] 

আরো পড়ুনঃ-  আরবিতে ১২ মাসের নাম - আরবি মাসের নাম সমূহ

অতএব এ বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট যে মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিলে  তার তিন তালাক না হলেও একতালাক  হিসেবে  বিবেচিত হবে।

একসাথে তিন তালাক দিলে কি তালাক হয়

ইসলামে তালাক অপছন্দনীয় কাজ। তবে যদি কেউ নিরুপায় হয়ে যায়, আর কোন উপায় থাকে না তালাক ছাড়া তবে, ইসলাম তাকে তালাকের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু তার আগে যে বিষয়ের জন্য তালাক দেওয়া হচ্ছে তা স্ত্রীকে বোঝাতে  হবে। সকল চেষ্টায় ব্যর্থ  হলে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে। এখন আমাদের মধ্যে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে একসাথে তিন তালাক দিলে কি তালাক পতিত হবে?

 এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে অবশ্যই না স্বামী যদি তার স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দিয়ে বসে তাহলে তা একতালাক হিসেবে গণ্য হবে । ফলে তা পুরোপুরিভাবে তালাক হবে না।

ঝগড়ার সময় তালাক দিলে কি তালাক হবে

স্বামী এবং স্ত্রীর ঝগড়ার মধ্যে অনেক সময় স্বামীর আগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বসে, এখানে  আমাদের অনেকের মধ্যে প্রশ্ন থেকে যায় এই তালাক কি তালাক হিসেবে গণ্য হবে? এর উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ তা তালাক হিসেবে গণ্য হবে।

ইসলামিক বিধানে বর্ণিত আছে যে তিনটি বিষয়  হাসির ঠাট্টা কিংবা  রাগের মাথায় বলে ফেললে তা কার্যকর হয়ে যায় সেগুলো হলো বিয়ে ,তালাক ও রজয়াত। অতএব এখানে স্পষ্ট যে ঝগড়ার মধ্যে স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বসে তবে তা এক তালাক  হিসেবে গণ্য হবে।

কি কি শব্দ বললে তালাক হয়

 ইসলামের শরীয়ত অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট শব্দ বা বাক্য বলে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। ইসলাম ধর্ম অনুসারে সুস্পষ্টভাবে “তালাক’’ শব্দটি বলা হলে তালাক হয়ে যাবে। এছাড়াও কিছু বাক্য আছে যেমন

* আমি তোমাকে তালাক দিলাম।

* আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম।

আরো পড়ুনঃ-  নামাজ কবুল না হওয়ার কারন - নামাজ ভঙ্গের কারন

* তুমি আমার জন্য হারাম।

* আমি তোমার সাথে ওই  বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ করলাম।

 এছাড়াও সরাসরি না বলে ইশারামূলক কিছু কথা বলেও তালাক দেওয়া যায় সেগুলো হলো-

* তুমি এখন থেকে স্বাধীন।

* তোমার ইচ্ছামতো চলে যাও।

* তুমি আমার জন্য অবাধ্য।

ইচ্ছাকৃতভাবে এই শব্দগুলি বললে কিংবা এই শব্দগুলি যদি তালাকের নিয়তে বলা হয় তাহলে তালাক কার্যকর হবে তাতে   ইচ্ছা থাক কিংবা নাই থাক।

 তবে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কিছু শর্ত আছে যেমন- নিয়ত এর সাথে কথা বলতে হবে, মহিলাদের পিরিয়ড চলাকালীন না বলা, তিন মাস ইদ্দত পালন করতে হবে ইত্যাদি ।

নিয়ত ছাড়া তালাক উচ্চারণ করলে স্ত্রী তালাক হবে

 অনেক সময় দেখা যায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হওয়ার সময় স্বামী তার স্ত্রীকে বলে ফেলে তোমাকে আমি ছেড়ে দিলাম! তুমি তোমার রাস্তা বেছে নাও! তারপরে স্ত্রী যদি  প্রশ্ন করে, কি বললেন? তার উত্তরে যদি স্বামী আবার বলে ওঠে- তোমাকে আমি আল্লাহর রাস্তায় ছেড়ে দিলাম, আমিতোমাকে আর কিচ্ছু বলবো না! এ অবস্থায় তালাক পতিত হয়ে গেছে কারণ এখানে উদ্দেশ্য তালাকে্র না থাকলেও বাক্যগুলো তালাককে নির্দেশ করেছে। এবং হাসি ঠাট্টা বা ফাইজলামির  মধ্যেও  কখনো  তালাকের কথা বলা যাবে না তাহলে তালা পতিত হয়ে যাবে।

 কিন্তু হাসিঠাট্টার মাধ্যমে বা আবেগ প্রকাশের মাধ্যমে  স্বামী যদি তার স্ত্রীকে বলে  ফেলে তুমি যা খুশি কর ,তোমার যা ইচ্ছা কর আমাকে কিছু বলতে  এসো না তবে এখানে তালাক পতিত হয়নি কারণ এখানে তালাককে কোন ভাবেই ইঙ্গিত করেনি। যদি কোন বাক্য উচ্চারণের মাধ্যমে তালাককে ইঙ্গিত করে তাহলে সেখানে তালাক পতিত হবে। সেখানে যদি স্বামীর  নিয়ত নাও থাকে তবুও তারা কার্যকর হবে।

লেখকের শেষ মতামত

 প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি আমরা পোস্টটির মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে একটা সঠিক ধারণা পেয়েছে যে মোবাইল ফোনে রাগের মাথায় তালাক দিলে তা তালাক হয় কিনা। এছাড়াও তালাক সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্ভুল  অনেক তথ্য পেয়েছি।  এখানকার সকল তথ্য গুলোই ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক বর্ণনা করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ-  মহিলাদের হজ করার শর্ত - মহিলাদের ওমরা পালনের নিয়ম

 আমাদের জীবনে “তালাক’’ হচ্ছে একটি সংবেদনশীল বিষয় যা সম্পর্কে আমাদের একটি নির্ভুল ধারণা থাকা উচিত  এবং ইসলামী শরীয়তে  তালাক সম্পর্কে  কি বলা আছে তা সম্পর্কেও একটা নির্ভুল ধারণা থাকা উচিত নয়তো বা আমরা পৃথিবীতেই নিজেদের অজান্তেই জাহান্নাম কিনে ফেলবো।

Leave a Comment