সাধারণত হরমোন নারী এবং পুরুষের দুইজনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সে ক্ষেত্রে যদি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের শরীরে হরমোন কমে যায় তাহলে দিনে দিনে বিভিন্ন সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে। আপনারা অনেকেই জানতে চান মেয়েদের হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়।
কিন্তু এই বিষয়ে সঠিক তথ্য আপনারা খুঁজে পান না। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আমি মেয়েদের হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায় এবং হরমোনের সমস্যা দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। তার কারণ শরীরে হরমোন কম থাকলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।
সে ক্ষেত্রে এ হরমোনের সমস্যা আপনাকে মানসিক চাপ দিতে বৃদ্ধি করবে তার কারণে আপনি কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না।
মেয়েদের হরমোন জনিত সমস্যা
মেয়েদের হরমোনের সমস্যাগুলো বেশি হয়ে থাকে। এবং এই হরমোন জনিত সমস্যার কারণে বিভিন্ন বড় বড় সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মেয়েদের হরমোন জনিত সমস্যা গুলো কি কি?
- ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া
- মাথার চুল পড়ে যাওয়া
- মুখে অতিরিক্ত ব্রণ বের হওয়া
- ওজন বেড়ে যাওয়া
- ছেলেদের মত দেহের বিভিন্ন জায়গায় লোম গজানো
- থাইরয়েডের সমস্যা
- আপনাদের ওজন কমে যাওয়া
- মেজাজ অতিরিক্ত খিটখিটে হয়ে যাওয়া
- মানসিক অবসাদ
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হওয়া
- খাবারের রুচি কমে যাওয়া
- পিরিয়ড ঠিকমত না হওয়া ইত্যাদি
উল্লিখিত সমস্যা ঘন ঘন লক্ষ্য করলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা।
মেয়েদের হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়
মেয়েদের হরমোনাল সমস্যা্গুলো বোঝার সহজ উপায় বলতে অনিয়মিত মাসিক, হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি, ত্বকে ফুসকুড়ি, বন্ধ্যাত্ব, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, অনিদ্রা, পিঠের নিচের দিকে তীব্র ব্যথা সহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
এছাড়াও, মানসিক পরিবর্তন, যেমন – অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা এবং মেজাজের পরিবর্তনও হতে পারে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা এবং প্রস্রাব বা লালা পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোনের মাত্রা পরিমাপ করা যেতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা মেয়েদের শরীরে বিভিন্ন অস্বস্তিকর উপসর্গ সৃষ্টি করে। যা দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদি আপনি জানেন কোন লক্ষণগুলো হরমোনের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়, তাহলে সময়মতো ব্যবস্থা নিতে পারবেন। আসুন আমরা এখন নিচে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখে নেই যা দেখে আপনি হরমোন সমস্যায় ভুগছেন কিনা তা বুঝতে পারবেন
১। অনিয়মিত মাসিক চক্র
মেয়েদের হরমোনের সমস্যা থাকলে মাসিক চক্রে অনিয়ম দেখা দেয়। পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত, দীর্ঘ সময়ের বিরতি বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতার প্রধান লক্ষণ। এসব পরিবর্তন সাধারণত এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘটে থাকে।
২। ঋতুস্রাব সংক্রান্ত লক্ষণ
- অনিয়মিত পিরিয়ড: মাসিক চক্র ২১ দিনের কম বা ৩৫ দিনের বেশি হলে (PCOS, থাইরয়েড ইস্যু)।
- অতিরিক্ত রক্তপাত বা কম রক্তপাত: ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরন imbalance নির্দেশ করে।
- পিরিয়ড বন্ধ হওয়া: ৩ মাস বা তার বেশি সময় মাসিক না হলে।
- পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা: এন্ডোমেট্রিওসিস বা প্রোজেস্টেরন ঘাটতির লক্ষণ।
৩। অতিরিক্ত ব্রণ ও ত্বকের সমস্যা
মেয়েদের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত ব্রণ বা ত্বকের অন্যান্য সমস্যা হয়ে থাকে। হরমোনের অস্বাভাবিকতা ত্বকের তৈলগ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণে উদ্দীপিত করে, যা ব্রণ এবং ব্ল্যাকহেডের সমস্যা বাড়ায়। এছাড়া ত্বকে র্যাশ, চুলকানি বা শুষ্কতা দেখা দেয়। বিশেষ করে পিরিয়ডের সময়, গর্ভাবস্থা বা মেনোপজ চলাকালীন এই ধরনের সমস্যাগুলো বেশি হতে পারে।
৪। ত্বক ও চুলের পরিবর্তন
- অতিরিক্ত ব্রণ: বিশেষত চোয়াল, গাল বা পিঠে।
- চুল পড়া বা পুরুষালি প্যাটার্নে চুল গজানো ।
- ত্বক শুষ্ক বা ফ্যাকাশে: থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি ।
৫। মেজাজের পরিবর্তন
মেয়েদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তনে মানসিক অবস্থার উপরও বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। হঠাৎ করে মেজাজের ওঠানামা বা মুড সুইং হয়। যেমন-অতিরিক্ত রাগ, হতাশা, বিষণ্ণতা বা চিন্তা করা।
৬। চুল পড়া বা চুলের ঘনত্ব কমে যাওয়া
মেয়েদের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা চুলের স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়া বা চুলের ঘনত্ব কমে যাওয়া হরমোনজনিত সমস্যার একটি সাধারণ লক্ষণ। বিশেষ করে থাইরয়েড, এস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরনের ভারসাম্যহীনতা চুলের বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
৭। ওজন ও বিপাকীয় সমস্যা
- হঠাৎ ওজন বাড়া বা কমা: থাইরয়েড ডিসঅর্ডার, PCOS বা কর্টিসল imbalance।
- পেটের মেদ জমা: ইস্ট্রোজেন ডোমিনেন্স বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।
- ক্ষুধা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া: লেপটিন বা থাইরয়েড হরমোনের প্রভাব।
হরমোনের সমস্যা হলে ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায় বা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষত যদি মেটাবলিজম ধীরগতি হয় তবে ওজন কমানো কঠিন।
৮। যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে যৌন ইচ্ছা তে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। যদি যৌন ইচ্ছায় হঠাৎ পরিবর্তন দেখা যায় এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এটি হরমোনের অস্বাভাবিকতার লক্ষণ ।
৯। মানসিক ও আবেগিক লক্ষণ
- অবসাদ বা ক্লান্তি: থাইরয়েড (TSH) বা কর্টিসল হরমোনের সমস্যা।
- অনিদ্রা বা ঘুমের ব্যাঘাত: মেলাটোনিন বা প্রোজেস্টেরন ঘাটতি।
১০। প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা
- গর্ভধারণে অসুবিধা: ডিম্বস্ফোটন না হওয়া (PCOS, হাইপারপ্রোল্যাক্টিনেমিয়া)।
- যোনিপথে শুষ্কতা: মেনোপজ বা ইস্ট্রোজেন ঘাটতির লক্ষণ।
অন্যান্য শারীরিক লক্ষণ
- স্তনে ব্যথা বা ফুলে যাওয়া: ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরন imbalance।
- মাইগ্রেন বা মাথাব্যথা: মাসিকের আগে ইস্ট্রোজেন ড্রপ হলে।
- হট ফ্ল্যাশ বা রাতের ঘাম: মেনোপজ বা পারিমেনোপজাল ইস্ট্রোজেন কমে গেলে।
মেয়েদের হরমোনজনিত সমস্যার পেছনে বিভিন্ন কারণ আছে। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ হলো:
- জেনেটিক কারণ।
- পুষ্টির অভাব।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
- অতিরিক্ত ওজন বা ওজনের অভাব।
- জীবনযাত্রা ও পরিবেশগত কারণ।
মেয়েদের হরমোনজনিত সমস্যা নানা কারণে হতে পারে, যার মধ্যে উপরে উল্লেখিত কারণগুলো অন্যতম। এই সমস্ত কারণে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। যা আপনার জীবনে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করলে হরমোনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
হরমোনজনিত সমস্যা প্রতিরোধে করণীয় :
- সুষম খাদ্য গ্রহণ
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- পর্যাপ্ত ঘুমানো
- মানসিক চাপ কমানো
- বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।
এই সহজ পদক্ষেপগুলি আপনাকে সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপনে সাহায্য করবে। তাই আপনার দৈনন্দিন জীবনে এই অভ্যাসগুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যাতে আপনার শরীর ও মন সুস্থ থাকে এবং আপনি হরমোনজনিত সমস্যা এড়িয়ে চলতে পারেন।
হরমোন পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যা নির্ণয়:
রক্ত পরীক্ষা: রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থাইরয়েড হরমোন, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, এবং কর্টিসলের মতো হরমোনের মাত্রা পরিমাপ করা যায়।
প্রস্রাব বা লালা পরীক্ষা: প্রস্রাব বা লালা পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোনের মাত্রা নির্ণয় করা যেতে পারে, বিশেষ করে অ্যাড্রিনাল হরমোনের জন্য।
হরমোনের সমস্যা হলে:
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: হরমোনের সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- জীবনযাত্রার পরিবর্তন: সঠিক খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত ঘুম হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন: মানসিক চাপ হরমোনের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা উচিত।
এই লক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে নারীদের হরমোনের সমস্যা শনাক্ত করা যেতে পারে।
হরমোনের সমস্যা দূর করার উপায়
অনেকেই হরমোনের সমস্যায় ভোগেন। তাই হরমোনের সমস্যা দূর করার উপায় সম্পর্কে খোঁজ করেন। হরমোনের সমস্যায় বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। সে রোগগুলো দূর করার জন্য অবশ্যই হরমোনের সমস্যা দূর করার উপায় জানা প্রয়োজন। আপনি এই উপায়গুলো অনুসরণ করে খুব সহজেই হরমোনের সমস্যা দূর করতে পারবেন।
মেয়েদের হরমোনের সমস্যা দূর করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেলে হরমোনের সমস্যা দূর হয়। যদি হরমোনের মাত্রা অতিরিক্ত কম অথবা বেশি হয় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করা গ্রহণ করুন।
হরমোনের সমস্যা শরীরের বিভিন্ন স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর প্রভাব অনেক জটিল হয়। কারণ হরমোন শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন- বিপাকক্রিয়া , ঘুম, মানসিক অবস্থা, প্রজনন, বৃদ্ধি ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণ করে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা দূর করার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে যা নিম্নরূপ:
সুষম খাদ্য গ্রহণ: হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা বা হরমোনের সমস্যা দূর করার অন্যতম উপায় হল সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটের সঠিক পরিমাণ বজায় রাখাটা জরুরি।
নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করা উচিৎ। এটি স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল কমাতে সহায়ক।
পর্যাপ্ত ঘুম: আপনার দেহে হরমোনের সুষ্ঠু কার্যক্রমের জন্য আপনাকে প্রতিদিন কম করে হলেও ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম ঘুমাতে হবে। আর নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে উঠা দেহের হরমোন ব্যালান্সে সহায়ক। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমের একটি রুটিন করে রেখে দিন।
মানসিক চাপ (স্ট্রেস) কমানো: মানসিক চাপের কারণে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে। মানসিক চাপ কমানোর জন্য ধ্যান, যোগব্যায়াম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ: হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অ্যাভোকাডো, নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, বাদাম এবং চিয়া বীজে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট হরমোনের কার্যকারিতাকে বৃদ্ধি করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমিয়ে হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। স্যামন, ম্যাকেরেল এবং সার্ডিনের মতো ফ্যাটি মাছ ওমেগা-৩ এর ভালো উৎস।
নিয়মিত চেকআপ করুন: হরমোনজনিত সমস্যার সমাধান ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হরমোনের মাত্রা চেক করার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
অবশ্যই আপনি টিকা গ্রহণ করবেন নয়তো ভিটামিন খাবেন। বিশেষ করে যারা প্রেগনেন্ট অবস্থায় থাকে তাদের বেশি বেশি হরমোনের প্রয়োজন হয়। সেজন্য অবশ্যই যদি এই আপনি প্রেগনেন্ট হয়ে থাকেন আপনার বাচ্চাকে সুস্থ সবল রাখার জন্য অবশ্যই আপনাকে হরমোন বা পুষ্টি সবসময় শরীরে ভরপুর থাকা দরকার আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন যে কি করে হরমোন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার যায়।
হরমোনের সমস্যা দূর করার আরও বেশ কয়েকটি উপায় গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
- সুষম খাদ্যাভাস গড়ে তুলুন
- চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
- সঠিক সময় নিয়মিত ঘুমান
- মানসিক চাপ কমান
- নিয়মিত ধ্যান ও যোগ ব্যায়াম করুন
- অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার করুন
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন
- প্রাকৃতিক হারবাল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন ইত্যাদি।
উল্লিখিত উপায় গুলো আপনি যদি ভালোভাবে অনুসরণ করতে পারেন তাহলে হরমোনের সমস্যা খুব সহজেই দূর করতে পারবেন। যে অভ্যাস গুলো আপনার অপ্রয়োজনীয় ওই অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন তাহলে দ্রুত হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
মেয়েদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়
আমরা আগে মেয়েদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়ার কারণ কি সেটা জেনে নিব। টেস্টোস্টেরন হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
- অ্যাড্রিনাল টিউমার.
- কুশিং সিন্ড্রোম.
- মোলার গর্ভাবস্থা ইত্যাদি.
মেয়েদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে কি হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ।
প্রথমতঃ সাধারণত টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি হলে মেয়েটি অন্যান্য মেয়েদের সাথে মিশতে বেশি পছন্দ করবেন। অর্থাৎ স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে বেশি পরিমাণে মেয়েদের সাথে মিশতে শুরু করবে।
দ্বিতীয়তঃ ঘাড়ে ছোট ছোট কালচে ভাব দেখা দিবে।
তৃতীয়তঃ টেস্টস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মেয়েটির পেটের মাঝে ফাটাফাটা দাগ দেখা দিতে পারে। তবে এটি সবার ক্ষেত্রে দেখা দেয় না কিছু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে দেখা দেয়।
চার নাম্বারে মেয়েটির অনিয়মিতভাবে মাসিক শুরু হবে। এগুলো সাধারণ সিমটমস হিসেবে দেখা দেয়। তবে মেয়েদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা খুব বেশি বেড়ে গেলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছেলেদের মতো লোম গজাতে শুরু করে।
মেয়েদের হরমোনের সমস্যা হলে কি হয়
আমরা অনেকেই আছে জানেন না যে হরমোনের সমস্যা দেখা দিলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়। আমরা এই আর্টিকেলটির এই অংশটিতে জানবো হরমোনের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়। আমাদের শরীরে যখন হরমোনের ঘাটতি ঘটে বা হাঁস ঘটে তখন শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
তার মধ্যে কিছু সমস্যা হল যেমন: আমাদের মাথার চুল উঠে যেতে পারে, তাছাড়াও দাঁত নর ভর করে। হাত পায়ে চামড়া ফেটে যায়। বেশিরভাগ সমস্যা হওয়ার মনে ছোট বাচ্চাদের দেখা দিয়ে থাকে। বা আমাদের প্রত্যেকেরই হয়তো শরীরে শহর মনে সমস্যা দেখা দেয় সেটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ছোটবেলায়।
যে হরমোন আমাদের শরীরে কম থাকার ফলে আমরা অনেকে দেখা যায় যে বড় হয় না। খাটো হয়ে থেকে যায়, আবার অনেকে হরমোনের সমস্যার কারণে মোটা হতে পারে না চিকন রোগা হয়ে থাকে, আবার কারো কারো শরীরে যায় সে হয়তো লম্বা হবে।
হরমোনের সমস্যা হলে শরীরে বেশ কিছু সমস্যা দেখতে পাবেন। হরমোনের সমস্যার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিভিন্ন প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে শারীরিক দিক থেকে বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হলে একাধিক সমস্যা হয়। নিচে হরমোনের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায় তা নিচে পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলোঃ
- স্মৃতিশক্তি কমে যায়
- স্বাভাবিক বুদ্ধি কমে যেতে থাকে
- শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ে
- অনেকের ওজন বৃদ্ধি পায়
- অনেকের ওজন কমে যায়
- ত্বক নষ্ট হয়ে যায়
- কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
- মাথার চুল ঝরে যায়
- মেয়েদের পিরিয়ডের সমস্যা হয়
- ঠিকমতো ঘুম হয় না
- পা ফুলে যেতে থাকে
মেয়েদের হরমোন কয়টি
সাধারণত মেয়েদের শরীরে দুইটি হরমোন রয়েছে যেমন,
- প্রজনন হরমোন.
- ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন.
মেয়েদের হরমোন কম হলে কি হয়
মেয়েদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা হরমোন কমে গেলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কিছু সাধারণ লক্ষণ যা হরমোন কমে গেলে দেখা যায়:
ঋতুস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা: অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত বা অল্প মাসিক, মাসিকের সময় ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
ত্বকের সমস্যা: শুষ্ক ত্বক, ব্রণ, বা ত্বকে র্যাশ দেখা যেতে পারে।
মেজাজ পরিবর্তন: বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, বা খিটখিটে মেজাজ হতে পারে।
শারীরিক দুর্বলতা: অতিরিক্ত ক্লান্তি, দুর্বলতা, বা মনোযোগের অভাব হতে পারে।
ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস: হরমোনের কারণে ওজন অপ্রত্যাশিতভাবে কম বা বেশি হতে পারে।
ঘুমের সমস্যা: ঘুমাতে অসুবিধা বা ঘুমের মধ্যে সমস্যা হতে পারে।
যৌন সমস্যা: যৌন চাহিদা কমে যাওয়া বা যৌন মিলনে অনীহা দেখা যেতে পারে।
হাড়ের সমস্যা: হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া বা অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে।
অন্যান্য সমস্যা: কোষ্ঠকাঠিন্য, হট ফ্ল্যাশ, চুল পড়া, স্তন ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
যদি কেউ এই ধরনের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হরমোন সমস্যার কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা ও পথ্য দেওয়া প্রয়োজন
মেয়েদের হরমোন বেশি হলে কি হয়
মেয়েদের হরমোন বেশি হলে কি হয় আমরা আছি অনেকে জানি আবার অনেকে সঠিক উত্তর জানিনা। তো যারা যারা জানেন না তাদের জন্যই আর্টিকেলটিতে জানাতে হবে মেয়েদের হরমোন বেশি হলে কি হয়। মেয়েদের হরমোন বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
মেয়েদের বেশি ভাব আমরা হয়তো অনেকে জানি না যে হরমোন মানুষের শরীর কমে গেলে বাড়ানোর জন্য অনেক ধরনের টিকা রয়েছে। যেগুলো দেওয়ার ফলে মানুষের শরীরে হরমোন খুব ভালোভাবে বৃদ্ধির হয়ে যায়। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় হরমোনের সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
মেয়েদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। হরমোন বেশি হলে ব্রণ, অতিরিক্ত চুল ওঠা, ওজন বৃদ্ধি, অনিয়মিত পিরিয়ড, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মেয়েদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে যে সমস্যাগুলো হতে পারে:
ব্রণ ও ত্বকের সমস্যা: অ্যান্ড্রোজেন (পুরুষালি হরমোন) এর মাত্রা বেড়ে গেলে ব্রণ, অতিরিক্ত লোম ওঠা, তৈলাক্ত ত্বক ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
পিরিয়ডের সমস্যা: হরমোনের তারতম্যের কারণে মাসিকের চক্রে পরিবর্তন, যেমন – অতিরিক্ত রক্তপাত, অনিয়মিত মাসিক, বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।
পিসিওএস: পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়ে থাকে। এর কারণে ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হতে পারে, মাসিক অনিয়মিত হতে পারে এবং সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে।
ওজন বৃদ্ধি: হরমোনের কারণে বিপাকক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে এবং এর ফলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
মানসিক পরিবর্তন: হরমোনের ওঠানামার কারণে মেজাজ পরিবর্তন, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘুমের সমস্যা: হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে, যেমন – অনিদ্রা বা ঘুমের অভাব।
চুল পড়া: কিছু হরমোনের কারণে চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে বা অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে।
হাড়ের সমস্যা: কিছু হরমোনের অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
যদি হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে হরমোনের মাত্রা নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেন
হরমোন বেশি হলে কি সন্তান হয় না
হ্যাঁ, মেয়েদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থাকলে সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে। তবে, হরমোনের সমস্যা মানেই বাচ্চা হবে না, তা নয়। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব।
আরও বিস্তারিতভাবে বলা যায় যে, মেয়েদের শরীরে কিছু নির্দিষ্ট হরমোন রয়েছে, যেমন
- ইস্ট্রোজেন,
- প্রজেস্টেরন,
- ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH),
- লিউটিনাইজিং হরমোন (LH), এবং
- প্রোল্যাকটিন,
যা ডিম্বাশয় এবং মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করে। এই হরমোনগুলোর তারতম্য হলে ডিম্বস্ফোটন বা ডিম্বাণু নিঃসরণে সমস্যা হতে পারে, ফলে গর্ভধারণে অসুবিধা হতে পারে। এছাড়াও, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) বা থাইরয়েড হরমোনের সমস্যাও হরমোনজনিত বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
কিছু সাধারণ হরমোনজনিত সমস্যা এবং তাদের প্রভাব:
ডিম্বস্ফোটন সমস্যা: ডিম্বস্ফোটন না হলে ডিম্বাণু নিঃসরণ হবে না, ফলে গর্ভধারণ করা কঠিন হবে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): এই রোগে ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হয় এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়, যা ডিম্বস্ফোটনে বাধা দেয়।
থাইরয়েড সমস্যা: থাইরয়েড হরমোন শরীরে বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, এবং এর ভারসাম্যহীনতা ডিম্বস্ফোটন এবং মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
হাইপারপ্রোল্যাক্টিনেমিয়া: এই ক্ষেত্রে, শরীরে অতিরিক্ত প্রোল্যাকটিন হরমোন তৈরি হয়, যা ডিম্বস্ফোটন এবং মাসিক চক্রকে ব্যাহত করতে পারে।
যদি কোন দম্পতি সন্তান ধারণে সমস্যা অনুভব করেন, তবে হরমোন পরীক্ষার মাধ্যমে এই সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত
লেখকের শেষ মতামত
মেয়েদের হরমোনের সমস্যা নির্ণয় এবং এটি মোকাবেলা করার জন্য সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিলে হরমোনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যদি আপনি এমন কোন লক্ষণ দেখেন যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করছে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং সচেতনতা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। যা আপনার সার্বিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই ব্লগের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যগুলো নিজে অনুসরণ করুন এবং অন্যদের ও সচেতন করতে সাহায্য করুন।
যদি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে হরমোনের সমস্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হন তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে কোন ধরনের ওষুধ অথবা কোন ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে খাবেন না। যদি খান তাহলে এটি তো আপনার শরীরের কোন উপকার করবেই না বরং শরীরে দেখে আনবে ভয়াবহ রোগ। তাই অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।