বাচ্চার হার্টবিট কত হলে ছেলে সন্তান হয় – কত সপ্তাহে বাচ্চার হার্টবিট আসে

আপনি কি বাচ্চার হার্টবিট কত হলে ছেলে সন্তান হয় ও কত সপ্তাহে বাচ্চার হার্টবিট আসে সেই সম্পর্কে জানতে চান? যদি এই বিষয়ে জানতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি অনেক উপকার হতে চলেছে। তাই আসুন গর্ভাবস্থায় যত্নের জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো রয়েছে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

বাচ্চার হার্টবিট কত হলে ছেলে সন্তান হয়

প্রতিটি হবু মায়ের জন্য শিশুর হার্টবিট আসা একটি অত্যন্ত আবেগঘন মুহূর্ত। আর এই সময়ে শিশুর জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক চিহ্নিত করে। তবে, কখন হার্টবিট আসে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। চলুন, বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।

বাচ্চার হার্টবিট কত হলে ছেলে সন্তান হয়

“বাচ্চার হার্টবিট কত হলে ছেলে সন্তান হয়?” — এই প্রশ্নটি বহু মানুষ জানতে চান, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শুরুতে ছেলে না মেয়ে সন্তান হবে তা বোঝার আগ্রহ থেকে। তবে বিজ্ঞানের আলোকে এই বিষয়ে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য জানা খুব জরুরি।

প্রচলিত ধারণাটি হলো:

  • যদি গর্ভের শিশুর হার্টবিট প্রতি মিনিটে ১৪০ বিপিএম (বিটস পার মিনিট) এর বেশি হয়, তাহলে কন্যা সন্তান হবে।
  • যদি গর্ভের শিশুর হার্টবিট প্রতি মিনিটে ১৪০ বিপিএম এর কম হয়, তাহলে পুত্র সন্তান হবে।

বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা:

গবেষণা: অসংখ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ছেলে এবং মেয়ে ভ্রূণের হার্টবিট রেটে কোনো উল্লেখযোগ্য বা ধারাবাহিক পার্থক্য নেই যা লিঙ্গ নির্ধারণে ব্যবহার করা যায়। উভয় লিঙ্গের শিশুর হার্টবিট রেট প্রায় একই রকম হয়।

গর্ভের শিশুর হার্টবিট বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন:

  • বেবির হার্ট রেট নির্ভর করে বাচ্চার বয়স, মায়ের শরীরের অবস্থা, এবং আলট্রাসাউন্ড কখন করা হচ্ছে তার উপর।
  • গর্ভাবস্থার ৬-৭ সপ্তাহে প্রথম হার্টবিট (তখন প্রায় ৯০-১১০ BPM হয়) দেখা যায়।
  • গর্ভাবস্থার ৯-১০ সপ্তাহের সময় হার্টবিট তুলনামূলকভাবে দ্রুত হয় (১৭০-২০০ বিপিএম পর্যন্ত),
  • পরবর্তীতে তা কমে গড়ে ১২০-১৬০ বিপিএম এ স্থিতিশীল হয়। এটি ছেলে বা মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

সুরতাং বলা যায়, গর্ভাবস্থার শুরুতে সব বাচ্চারই হার্টবিট প্রায় একই রকম থাকে — প্রথম দিকে প্রায় ৯০-১১০ BPM দিয়ে শুরু হয়, তারপর ১২ সপ্তাহের দিকে পৌঁছালে ১২০-১৬০ BPM পর্যন্ত হয়ে থাকে। ছেলে বা মেয়ে, এতে তেমন পার্থক্য থাকে না।

সঠিকভাবে লিঙ্গ নির্ধারণের উপায়:

গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং বৈজ্ঞানিক উপায়গুলো হলো:

  • আলট্রাসাউন্ড (Ultrasound)
  • নন-ইনভেসিভ প্রিনেটাল টেস্টিং (NIPT)
  • অ্যামনিওসেন্টেসিস (Amniocentesis)

কত সপ্তাহে বাচ্চার হার্টবিট আসে

সাধারণত, গর্ভাবস্থার ৫ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে ভ্রূণের হৃদস্পন্দন শোনা যেতে পারে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি ৬ থেকে ৭ সপ্তাহেও শোনা যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট বা হৃদস্পন্দন কখন শুরু হয় এবং কখন তা শনাক্ত করা যায়, তা নিয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।

১। হৃদস্পন্দন কখন শুরু হয়?

৫ম সপ্তাহ (গর্ভধারণের ২২-২৪ দিন): গর্ভধারণের প্রায় ২২ থেকে ২৪ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ গর্ভাবস্থার পঞ্চম সপ্তাহের শুরুতে, ভ্রূণের হৃদপিণ্ডের গঠন শুরু হয়। এই সময়েই হার্টবিট তৈরি করে এমন কোষগুলো স্পন্দিত হতে শুরু করে। তবে, এই স্পন্দন তখনো এতটাই সূক্ষ্ম থাকে যে সাধারণত আলট্রাসাউন্ডে এটি শনাক্ত করা যায় না।

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে কি হয় - গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া যাবে কি

৬ষ্ঠ সপ্তাহ: এই সময়ে হৃদপিণ্ডের গঠন আরও সুনির্দিষ্ট ও জটিল হয় এবং একটি নিয়মিত ছন্দে স্পন্দিত হতে শুরু করে। এই পর্যায়ে হৃদপিণ্ডের চেম্বার এবং রক্তনালীগুলি বিকাশ লাভ করতে থাকে।

২। আলট্রাসাউন্ডে কখন হার্টবিট শনাক্ত করা যায়?

আলট্রাসাউন্ড মেশিনের সংবেদনশীলতা এবং ব্যবহৃত পদ্ধতির উপর নির্ভর করে হার্টবিট শনাক্তকরণের সময় কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

৬ থেকে ৮ সপ্তাহ: প্রথম হার্টবিট গর্ভাবস্থার ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসাউন্ড করে (যোনিপথের মধ্যে) শনাক্ত করা সম্ভব হয়। 

৮ সপ্তাহ: পেটের উপর দিয়ে করা আলট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে অষ্টম সপ্তাহে হার্টবিট আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

১০ থেকে ১২ সপ্তাহ: ডপলার মেশিনের সাহায্যে সাধারণত গর্ভাবস্থার ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে শিশুর হার্টবিট শোনা যেতে পারে। এটি মায়ের জরায়ুতে শিশুর অবস্থান, প্ল্যাসেন্টার অবস্থান এবং মায়ের ওজনের উপর নির্ভর করে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

গর্ভাবস্থার ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে এবং ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে ডপলার মেশিনের মাধ্যমে শিশুর হার্টবিট শনাক্ত করা যায়। এই সময়টি একটি সুস্থ গর্ভাবস্থার নিশ্চিতকরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো উদ্বেগ বা প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট কত থাকে

প্রায় পাঁচ থেকেছয় সপ্তাহের মধ্যে গর্ভাবস্থা থেকে আপনার শিশুর হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হতে শুরু করে। আর এ সময় একটি স্বাভাবিক ব্রণের হৃদস্পন্দন মায়ের যেমন হয় ঠিক তেমনি বাচ্চাদেরও প্রতি মিনিটে প্রায় ৮০ থেকে ১০৩ বিট/ মিনিট হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় এই যে পয়েন্ট রয়েছে এখান থেকে প্রথম মাসে প্রতিদিন মিনিটে প্রায় তিন বিট করে বৃদ্ধি হওয়া শুরু করে।

আর সর্বশেষ গর্ভাবস্থার নবম সপ্তাহের শুরুর দিকে। একটি স্বাভাবিক ভ্রূণের হৃদস্পন্দন ঘরে প্রায় ১৭৫ বিট/ মিনিট হয়ে থাকে। তারপর থেকে আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে এবং সর্বশেষে প্রেগনেন্সির মাঝামাঝিতে ১২০ থেকে ১৮০ বিট/ মিনিট হয়ে থাকে। 

যখন একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থার শেষ দশ সপ্তাহ চলে আসে এ সময় আরো কমে যায় আর তখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বিশ্রামরত সময়ে যে হার্টবিট হয়ে থাকে তার দ্বিগুণ হয়। যদি আপনি এটি অস্বাভাবিক মনে করেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

বাচ্চার হার্টবিট কত হলে স্বাভাবিক

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ১২০ থেকে ১৬০ বার হওয়া উচিত। এই সীমার মধ্যে থাকলে, তা স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। তবে, গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে হৃদস্পন্দন একটু বেশি থাকতে পারে, এবং সময়ের সাথে সাথে তা স্বাভাবিক হতে থাকে। 

যদি হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ১২০ বারের কম বা ১৬০ বারের বেশি হয়, তবে তা স্বাভাবিক নাও হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গর্ভস্থ শিশুর হার্ট রেট চার্ট:

গর্ভাবস্থার সময়কাল স্বাভাবিক হার্টবিট (BPM)
৫-৬ সপ্তাহ ৯০-১১০ BPM
৭-৮ সপ্তাহ ১১০-১৩০ BPM
৯-১০ সপ্তাহ ১৭০-১৮০ BPM (এ সময় সবচেয়ে বেশি)
১১-১২ সপ্তাহ ১৪০-১৭০ BPM
১৩-১৪ সপ্তাহ ১৩০-১৬০ BPM
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৫-২৮ সপ্তাহ) ১২০-১৬০ BPM
তৃতীয় ত্রৈমাসিক (২৯-৪০ সপ্তাহ) ১১০-১৬০ BPM

কখন চিন্তা করবেন?

হার্টবিট যদি…

  • ১১০ BPM এর কম হয় বা
  • ১৬০ BPM এর বেশি দীর্ঘসময় থাকে
  • .তাহলে ডাক্তার পরামর্শ নিতে হয়।
আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হয় কেন

কখনো কখনো সাময়িকভাবে হার্টবিট কম-বেশি হতে পারে, বিশেষ করে বাচ্চা ঘুমাচ্ছে বা মুভ করছে তখন। তাই একবার পরিমাপেই দুশ্চিন্তার কারণ নেই। ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণই আসল।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হৃদস্পন্দন (হার্টবিট) সাধারণত ৬-৭ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে ৫-৬ সপ্তাহেও শোনা যেতে পারে। ৬ষ্ঠ সপ্তাহে হৃদস্পন্দন দেখা না গেলে, সাধারণত আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। 

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হৃদস্পন্দন আসার লক্ষণগুলি হলো:

  • আল্ট্রাসাউন্ডে দেখা যাওয়া: গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে, যোনিপথের আল্ট্রাসাউন্ড করে বাচ্চার হৃদস্পন্দন সনাক্ত করেন। 
  • ডাক্তারের পরামর্শ: গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে, ডাক্তাররা একটি নির্দিষ্ট সময়ে হৃদস্পন্দন শোনার জন্য অপেক্ষা করতে বলতে পারেন। 

কিছু ক্ষেত্রে, ৬-৭ সপ্তাহের মধ্যে হৃদস্পন্দন শোনা যেতে পারে: তবে, এটি সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে।  যদি ৬ষ্ঠ সপ্তাহে হৃদস্পন্দন শোনা না যায়, তাহলে ডাক্তাররা সাধারণত আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন। যদি এর পরেও হৃদস্পন্দন না শোনা যায়, তাহলে গর্ভাবস্থা স্বাভাবিক নাও হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট না আসার কারণ

অনেকেই গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট না আসার কারণে বিভিন্ন চিন্তার মধ্যে থাকেন। তবে একজন গর্ভবতী মায়ের এ বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ ধরনের সমস্যাই শুধু আপনি নন আরও অনেকেই করতে পারে তাই সঠিক বিষয়টি জেনে রাখা জরুরী। তাই আজকের এই আর্টিকেলের অংশটুকুতে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট না আসার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট না আসার কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

  • ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে দেরি হওয়া
  • ইমপ্ল্যান্টেশন দেরিতে হওয়া
  • ভ্রূণের ক্রোমোজোম সংক্রান্ত ত্রুটি
  • হরমোনের সমস্যা
  • মিসড মিসক্যারেজ

প্রায় ২০ শতাংশ মেয়েদের এই খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আশা করি গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট আসার লক্ষণ সম্পর্কে উপরে সঠিকভাবে জানার পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট না আসার কারণ কি তা বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট কমে গেলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট কমে যাওয়াকে ফিটাল ব্র‍্যাডিকার্ডিয়া বলা হয়। এটি একটি উদ্বেগের বিষয় এবং এর জন্য দ্রুত চিকিৎসকের মনোযোগ প্রয়োজন। স্বাভাবিক অবস্থায় গর্ভের শিশুর হার্টবিট প্রতি মিনিটে ১১০ থেকে ১৬০ বিট (BPM) থাকে। যদি এটি ১১০ বিটের নিচে নেমে আসে, তবে তাকে ফিটাল ব্র‍্যাডিকার্ডিয়া হিসেবে ধরা হয়।

করণীয়

যদি গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট কমে যায় বলে সন্দেহ হয় বা আলট্রাসাউন্ডে এটি ধরা পড়ে, তবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া অত্যন্ত জরুরি:

১. তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ: দেরি না করে আপনার গাইনোকোলজিস্টের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করুন। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। চিকিৎসকই শিশুর অবস্থা মূল্যায়ন করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

২. কারণ নির্ণয়: চিকিৎসক হার্টবিট কমে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন। এর জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে, যেমন:

  • বিস্তারিত আলট্রাসাউন্ড: শিশুর হৃদপিণ্ডের গঠন, রক্ত ​​প্রবাহ এবং সামগ্রিক সুস্থতা পরীক্ষা করার জন্য।
  • ফিটাল মনিটরিং: শিশুর হৃদপিণ্ডের কার্যকলাপ এবং নড়াচড়ার ধরণ নিরীক্ষণের জন্য।
  • মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা: মায়ের কোনো অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে কিনা, যেমন থাইরয়েড সমস্যা, ডায়াবেটিস, বা সংক্রমণ, তা খতিয়ে দেখা।

৩.  সম্ভাব্য কারণসমূহ: 

বাচ্চার হার্টবিট কমে যাওয়ার কিছু সম্ভাব্য কারণ হলো:

  • শিশুর অক্সিজেনের অভাব: এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে একটি, যা প্ল্যাসেন্টার সমস্যা বা মায়ের অক্সিজেনের অভাবে হতে পারে।
  • মায়ের রক্তচাপ কমে যাওয়া: মায়ের রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে শিশুর কাছে রক্ত ​​ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যেতে পারে।
  • কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: মা যদি নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ সেবন করে থাকেন (যেমন বিটা-ব্লকার), যা শিশুর হার্টবিটকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • শিশুর হৃদপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটি: বিরল কিছু ক্ষেত্রে শিশুর হৃদপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটির কারণেও হার্টবিট কম হতে পারে।
  • প্ল্যাসেন্টার সমস্যা: প্ল্যাসেন্টা সঠিকভাবে কাজ না করলে শিশুর পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় কদবেল খাওয়া যাবে কিনা - গর্ভাবস্থায় কদবেল খেলে কি হয়

৪.  চিকিৎসকের নির্দেশ অনুসরণ: 

কারণ নির্ণয়ের পর চিকিৎসক শিশুর এবং মায়ের স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেবেন। এর মধ্যে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ঔষধ, অথবা প্রয়োজনে বিশেষ পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে দ্রুত ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে, বিশেষ করে যদি শিশু সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকে।

মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় শিশুর হার্টবিট কমে যাওয়া একটি গুরুতর লক্ষণ হতে পারে। তাই, কোনো অবস্থাতেই নিজে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অপরিহার্য।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট বেড়ে যাওয়াকে ফিটাল টাকাইকার্ডিয়া বলে। গর্ভাবস্থায়ী বাচ্চার হার্টবিট সাধারণত ১০০ থেকে ১৬০ এর মধ্যে থাকলে সেটাকে নরমাল ধরা যায়। কিন্তু যদি এর থেকে বেশি বেড়ে যায় তাহলে বাচ্চার হার্টবিটের সমস্যা তৈরি হয় তাই যদি এটি ১৮০ বিটের বেশি হয়, তবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া জরুরি:

১. ডাক্তারের পরামর্শ: 

দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং শিশুর হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চান। ডাক্তার কিছু শারীরিক পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান করার পরামর্শ দিতে পারেন। গর্ভাবস্থায় শিশুর হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করতে পারে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চেকআপ করানো উচিত।

২. জীবনযাত্রার পরিবর্তন: 

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।  ক্যাফিন ও অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য পরিহার করুন, যা হৃদস্পন্দন প্রভাবিত করতে পারে।  স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন, যা শিশুর হৃদপিণ্ড এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। 

৩. বিশেষ যত্ন:  

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন, যা মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরালে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

গর্ভাবস্থায় শিশুর হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলে, আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ভালো হবে।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট কখন আসে

সাধারণত, গর্ভাবস্থার ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসাউন্ডে শিশুর হৃদস্পন্দন (হার্টবিট) দেখা যায়। তবে, কারো কারো ক্ষেত্রে এটি ৬ষ্ঠ সপ্তাহের আগে বা ৮ম সপ্তাহের পরে হতে পারে। প্রথম আল্ট্রাসাউন্ডে হৃদস্পন্দন দেখা না গেলেও ঘাবড়ানোর কিছু নেই। 

  • গর্ভাবস্থার ৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে, আল্ট্রাসাউন্ডে গর্ভাশয়ে গর্ভথলি দেখা যায়। 
  • ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে হৃদস্পন্দন শনাক্ত করার জন্য আরেকটি স্ক্যান করা হয়। 
  • যদি ১৪০ বিপিএম-এর বেশি হৃদস্পন্দন হয়, তবে এটি কন্যা সন্তানের পূর্বাভাস হতে পারে, তবে এটি শুধুমাত্র একটি প্রচলিত ধারণা এবং এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। 
  • অনেক সময়, শিশুর হৃদস্পন্দন শনাক্ত করার জন্য আরও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতে পারে। 
  • যদি আপনার কোনো উদ্বেগ থাকে, তবে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

লেখকের শেষ মতামত

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শারীরিক ও মানসিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় অনেক গর্ভবতী মায়েদের শারীরিক সমস্যার সাথে মোকাবেলা করেন শুধু তাই নয় এ সময় অনেক গর্ভবতী মহিলারা মানসিক সমস্যাতেও ভোগেন। কিন্তু এ সময় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হালকা ব্যান্ড পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সঠিক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment