ড্রপশিপিং বিজনেস কি – কিভাবে একটি ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন

বর্তমানে ঘরে বসে আয় করার অন্যতম একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ড্রপশিপিং ব্যবসা। যদি আপনি কোনো ইনভেস্ট ছাড়া একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চান তাহলে ড্রপশিপিং ব্যবসা করতে পারেন। ড্রপশিপিং বিজনেস করে আপনি অনেক লাভবান হতে পারবেন। 

কিভাবে একটি ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন

আপনি যদি ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে সঠিক সরবরাহকারী বেছে নেওয়া এবং একটি কার্যকর মার্কেটিং কৌশল তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি ড্রপশপিং ব্যবসা থেকে আয় করতে চান বা ড্রপশিপিং ব্যবসা করে লং টাইম ধরে রাখতে চান তাহলে এই ব্যবসা শুরু করার আগে ড্রপশিপিং বিজনেস কি এবং কিভাবে একটি ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন সেই বিষয়ে ক্লিয়ার ধারনা থাকতে হবে। 

ড্রপশিপিং বিজনেস কি

ড্রপশিপিং মূলত একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মডেল। যেখানে আপনি পন্য বিক্রি করতে পারেন কোনো ধরণের পন্য স্টোর করা ছাড়াই। ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে বিভিন্ন পন্যের ছবি দাম সহ উল্লখ্য করে দিবেন। ক্রেতা আকৃষ্ট হয়ে আপনার পন্য টি অর্ডার করার পর আপনি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পন্য নিয়ে আপনার ক্রেতার কাছে পন্য টি ডেলিভার করে দিবেন।

এখানে আপনি মধ্যম ব্যাক্তি হিসেবে কাজ করবেন ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে। এখান থেকে দুইভাবে লাভ করতে পারবেন। প্রথমত আপনি পন্যের মধ্যে দেয়া দাম থেকে লাভ্যাংশ পাবেন। অন্যদিকে তৃতীয় পক্ষের এফিলিয়েট করে দিয়ে আয় করতে পারবেন। সোজা ভাষায়, ড্রপ শিপিং হল খুচরা ব্যবসার এমন একটি ধরন যেখানে পণ্যের বিক্রেতা নিজের কাছ পন্য স্টক না রেখে গ্রাহকদের অর্ডার নিয়ে থাকে। 

প্রথমেই আপনাকে নিজের ডিজিটাল স্টোরে যে ধরণের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে চান তার সকল বিস্তারিত তথ্য রাখতে হবে। সম্ভাব্য কাস্টমার সেই ডিজিটাল স্টোরে ঢুকে প্রোডাক্টটি নিয়ে জানতে ও অর্ডার করতে পারবে।

ড্রপশিপার কত প্রকার? 

মূলত চার প্রকারের ড্রপশিপার আছে:

  • বিগিনার এ ড্রপশিপার
  • বিগিনার বি ড্রপশিপার
  • ইন্টারমেডিয়েট ড্রপশিপার
  • এডভান্সড ড্রপশিপার

বিগিনার এ ড্রপশিপার: এই পর্যায়ের ড্রপশিপার ড্রপশিপিং ব্যবসায় একেবারে নতুন। যেহেতু ব্যবসায় তারা নতুন তাই তাদের অভিজ্ঞতার অভাব থাকে । এই পর্যায়ের ড্রপশিপাররা শিক্ষার পর্যায়ে থাকে। নতুন অবস্থায় তারা খুব বেশি যায় করতে পারে না। এই পর্যায়ের ড্রপশিপার মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকেন।

বিগিনার বি ড্রপশিপার: ড্রপশিপাররা এই ক্যাটাগরির কিছু দক্ষতা গড়ে তোলে বিধায় আয়ের পরিমাণও বেড়ে যায়। এই ক্যাটাগরিতে ড্রপশিপাররা কম করে হলেও ১০০০ ডলার পর্যন্ত ইনকাম করে থাকেন।

ইন্টারমিডিয়েট ড্রপশিপার: কোন ধরনের পণ্য কাদের সামনে প্রমোট করতে হবে এবং কিভাবে গ্রাহককে কনভিন্সড করে বিক্রি বাড়াতে হবে সেটি শিখে যায়। এই পর্যায়ে ড্রপশিপাররা মাসে  ৫০০০  ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন।

এডভান্সড ড্রপশিপার: এডভান্সড ড্রপশিপার ড্রপশিপিং ব্যবসায় সবচেয়ে অভিজ্ঞ। তারা ড্রপশিপিং ব্যবসার সকল কলাকৌশল ব্যবহার করে থাকেন এবং বড় মার্কেট প্লেয়ার হয়ে যান। এদেরকে ড্রপশিপিং মার্কেটের লিডার বলা হয়।

ড্রপশিপিং ব্যবসা কিভাবে কাজ করে

আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ড্রপশিপিং কিভাবে কাজ করে। আসলে ড্রপশিপিং কয়েকটি ধাপে কাজ করে। সাধারণত ড্রপশিপিং ব্যবসা যেভাবে কাজ করে:

১ম ধাপ – অনলাইন স্টোর তৈরি করা 

ড্রপশিপিং বিজনেস মডেলে প্রথমে থাকবে অনলাইন স্টোর। প্রথমে আপনাকে একটি অনলাইন স্টোর তৈরি করতে হবে যেখানে আপনি বিভিন্ন পণ্য গ্রাহকদের সামনে প্রদর্শন করবেন ।

এই ড্রপশিপিং ব্যবসার একটি বিশেষ দিক হলো এখানে আপনার নিজের পণ্য থাকতে হবে না সাপ্লায়ারের পণ্য স্টোরে প্রদর্শন করবেন ।

২য় ধাপ – কাস্টমার অর্ডার গ্রহণ

প্রথমেই আপনার একজন ক্রেতা আপনার ওয়েবসাইট অথবা সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যম থেকে আপনার দেয়া পন্যের তালিকার মধ্য দিয়ে যে কোনো একটি পন্য অর্ডার করবে।

আরো পড়ুনঃ-  ওয়ার্ডপ্রেস কিভাবে শুরু করব - ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে কি কি লাগে

৩য় ধাপ – অর্ডার সরবরাহকারী কে দেয়া

আপনি যখন অর্ডার নিবেন তখন ডেলিভারি চার্জ নিতে পারেন আবার নাও নিতে পারেন সেটা আপনার পন্য ও সরবরাহকারীর উপরে নির্ভর করবে। আপনার সাপ্লাইয়ার যদি ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পন্য দিতে রাজি হয়ে থাকেন তবে কাস্টমার থেকে পেমেন্ট না নিলেও চলবে। যাইহোক, আপনার গ্রাহক অর্ডার দিলে সেই পন্যটি সাপলেয়ারের নিকট অর্ডার দিন।

৪র্থ ধাপ – সরবরাহকারী ডেলিভারি করবে

সাপ্লায়ার এর কাছে যখন অর্ডার তথ্য পাঠিয়ে দিবেন অর্ডার অনুযায়ী তিনি ডিলিভারি করে দিবেন।

সরবরাহকারী পণ্যটি প্যাকেজিং করে সরাসরি ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দেয়। এতে আপনার কাজ হলো শুধুমাত্র অর্ডার গ্রহণ করা এবং সরবরাহকারীকে জানানো।

৫ম ধাপ – আয়

প্রথমত আপনি কাস্টমার কে দেয়া দামের লাভ্যাংস নিয়ে আয় করতে পারবেন এবং ২য়ত সাপলায়ার এর এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে পারবেন।

কিভাবে একটি ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন

ড্রপশিপিং একটি লাভজনক ব্যবসা। যদি আপনি ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিতে হবে। তবে আপনি যদি না জেনে থাকেন কিভাবে ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন তাহলে নিচে দেখে নিন –

১. নিস সিলেক্ট করুন

ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করার পূর্বে প্রধান একটি দিক হলো প্রথমে আপনাকে বিষয় সিলেক্ট করতে হবে। মূলত আপনি কোন বিষয় নিয়ে ব্যবসা করতে চান এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন বিষয় সিলেক্ট করবেন তখন একটা বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে সেটা হল সেই বিষয়ের উপর যাতে আপনার আগ্রহ থাকে। অন্যদিকে কাস্টমার চাহিদা যেন থাকে।

এমন পণ্য নির্বাচন করুন যেগুলোর চাহিদা বেশি এবং প্রতিযোগিতা কম। এজন্য আপনি কীওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারেন । 

২. সাপ্লায়ার খুজুন

আপনি যেহেতু কোনো পন্য নিজে স্টক করবেন না তৃতীয় মাধ্যমে পন্য ডেলিভারি করবেন তাই আপনাকে সাপ্লায়ার খুজে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনেক অনলাইন ই – কমার্স ওয়েবসাইট সাপ্লায়ের কাজ করে। তবে যদি অনলাইনে না করতে চান কোনো দোকানের সাথে চুক্তি করে নিতে পারেন।

৩. মার্কেটিং করুন

আপনার অনলাইন স্টোর খোলা হয়ে গেলে এবার ভালোভাবে মার্কেটিং করতে হবে। অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোতে পেজ বা গ্রুপ তৈরি করে নিতে হবে। মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনি কয়েক ভাবে মার্কেটিং করতে পারেন –

  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: সোশ্যাল মিডিয়া যেমন – ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার স্টোরের মার্কেটিং করুন।
  • গুগল এডস: আপনি যদি গুগল এডস এর মাধ্যমে আপনার পন্যের মার্কেটিং করতে পারেন তাহলে গ্রাহকরা সবার আগে দেখতে পারবে যদিও এটি অনেক ব্যায়বহুল একটি মাধ্যোম। 
  • সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেসন: এসইও এর মাধ্যমে কোনো প্রকার টাকা খরচ ছাড়াই মার্কেটিং করতে পারবেন। তবে আপনাকে ভালো ভাবে দক্ষ হতে হবে।

৪. কাস্টমার সাপোর্ট

ড্রপশিপিং এ লজিস্টিকস এবং গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা একটা বড় ফ্যাক্টর। যেহেতু এই প্রক্রিয়াটা অনলাইন ভিত্তিক তাই গ্রাহকদের ডেলিভারি স্ট্যাটাস জানানোর ব্যবস্থা করুন। রিটার্ন এবং রিফান্ড পলিসি ঠিক করুন। বেশিরভাগ গ্রাহক রিফান্ড পলিসিকে খুব গুরুত্ব দেন।

যে কোনো অনলাইন স্টোরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো কাস্টমার সার্ভিস ও সাপোর্ট। আপনার লক্ষ্য রাখতে হবে পণ্যের কোয়ালিটির উপরে। আপনার সাপ্লায়ার সঠিক পন্য টি কাস্টমার কে দিচ্ছে কি না খেয়াল রাখা জরুরী।

বিভিন্ন বিষয়ে কাস্টমার এর সমস্যা ও অভিযোগ থাকতে পারে। বিভিন্ন টুলস এর মাধ্যমে কাস্টমার সাপোর্ট নিশ্চিত করতে পারবেন। সবসময় কাস্টমারের সমস্যা সমাধান এর চেষ্টা করতে হবে।

৫. ফলাফল বিশ্লেষণ করুন এবং উন্নতি করুন

ড্রপশিপিং ওয়েবসাইট, ফেসবুক পিক্সেল বা গুগল Analytics এর সাহায্যে ব্যবসার অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে হবে করুন। আপনার ইনসাইট অনুযায়ী মার্কেটিং ও পণ্যের তালিকায় কি কি পরিবর্তন করা দরকার সেই মোতাবেক কাজ করতে হবে। 

ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করার জন্য কি কি প্রয়োজন?

ড্রপশিপিং শুরু করার জন্য কি কি প্রয়োজন? নিম্নে একটি তালিকা দেয়া হল যা আশা করি আপনাকে এই ব্যবসা সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ আইডিয়া দিতে সক্ষম হবে।

আরো পড়ুনঃ-  গেম খেলে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়

১। নিশ নির্বাচন করা 

প্রত্যেক ব্যবসার আগেই প্রথমে নিশ সিলেক্ট করতে হয়। নিশ বলতে বোঝানো হচ্ছে আপনি যে ওয়েব সাইট নিয়ে কাজ করবেন সেখানে কোন প্রোডাক্ট গুলো নিয়ে ব্যবসা করবেন সেটি।

ডোমেইন নির্বাচন করাঃ আপনি যেহেতু পুরোপরি ড্রপশিপিং এর জন্য প্রস্তুত তাই এই ব্যবসাটি ভালো ভাবে এগিয়ে নিতে একটি ওয়েব সাইট খুলতে হবে । আপনার বিজনেসের একটি নাম সিলেক্ট করে সেই নামে একটি ডট কম ডোমেইন কিনে নিতে হবে। এটি একটা ব্যবসার জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যেহেতু ড্রপশিপিং বিজনেসটি পুরোই অনলাইন কেন্দ্রীক তাই আপনাকে অবশ্যই ডোমেইন কিনে নিতে হবে।

২। ই- কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করা

একটি ডোমেন ক্রয় করে ই- কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে হবে। আর সেটা অবশ্যই একটি প্রোফেশনাল লুকে হতে হবে। 

৩। সাপ্লায়ার নির্বাচন করা 

যার কাছে ভাল মানের পণ্য রয়েছে আপনাকে এমন সাপ্লাইয়ার খুঁজে বের করতে হবে যাতে করে আপনার গ্রাহকদের কাছে সময়মতো পণ্য ডেলিভারি করতে পারে। 

৪। সোশ্যাল প্রোফাইল তৈরি করা

আপনার বিজনেসের নামে সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এটি আপনার প্রতি মানুষের আস্থা আরো বাড়াবে। আপনি আপনার স্টোর প্রচারের জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। 

সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম), গুগল অ্যাডস, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, এবং SEO (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) খুবই কার্যকর। বিভিন্ন পেমেন্ট অপশন যেমন পেপাল, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য সমর্থন যোগ করুন। সোশ্যাল প্রোফাইল তৈরির সময় নিজের বিজনেসের লগো এবং ব্যানার যুক্ত করতে হবে। সব মিলিয়ে আপনার প্রোফাইলটি প্রোফেশনাল হতে হবে।

৫। পেমেন্ট গেটওয়ে সেটআপ

জনপ্রিয় দুটি পেমেন্ট গেটওয়ে হলো পেপাল এবং স্ট্রাইপ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো এ দুটি পেমেন্ট গেটওয়ে বাংলাদেশ সাপোর্ট করে না। আমি মনে করি বাংলাদেশর ড্রপশিপারদের জন্য এটি বেশ বিশাল একটি সমস্যা। 

সেক্ষেত্রে অনেকে অন্য দেশের ভেরিফাইড পেপাল একাউন্ট কিনে নেই। তার সত্তেও সেসব একাউন্ট অনেক দাম এবং ব্যান হওয়ার একটি ঝুঁকি তো থাকেই। 

আপনি যদি সরাসরি যাদের পন্য নিয়ে কাজ করেন তাদের কাছে সরাসরি আর্ডার করলে তা তাদের পেমেন্ট লিংক ব্যবহার করে পেমেন্ট দিলে এ সমস্য আর হবে না । তারা আপনার লাভের অংশ আপনার ব্যংক একউন্ট এ দিয়ে দিবে । আর কাস্টমার যদি বাংলাদেশের হয় তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না ।

৬। মার্কেটিং স্কিল ডেভেলপ করা

যদি আপনার মার্কেটিং স্কিল না থাকে তাহলে আপনি এই সেক্টরে হতাশ হবেন প্রচুর। আমি বলব ড্রপশিপিংয়ে আসার আগে আপনি নিজের মার্কেটিং স্কিল ডেভেলপ করুন।

ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করার প্লাটফর্ম

ড্রপশিপিং বিজনেস করার কিছু জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে আপনি সহজেই পণ্য নির্বাচন, সরবরাহকারীর সাথে যোগাযোগ এবং ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারেন। সাধারণত অনলাইন কিংবা অফলাইনে যেকোন মাধ্যমেই ড্রপশিপিং ব্যবসা করা যায়। তবে অনলাইনে ড্রপশিপিং ব্যবসা করার জন্য বিশেষভাবে ই কমার্স ওয়েবসাইটের পণ্য কেনা-বেচা করা হয়। নিচে কিছু জনপ্রিয় ড্রপশিপিং প্ল্যাটফর্মের তালিকা দেওয়া হলোঃ

ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করার জন্য অনেকগুলো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যা আপনাকে সহজে একটি অনলাইন স্টোর তৈরি করতে এবং আপনার ড্রপশিপিং পরিচালনা করতে সহায়তা করবে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় ড্রপশিপিং ওয়েবসাইট এর তালিকা দেওয়া হলো:

  • Shopify
  • WooCommerce (WordPress)   
  • BigCommerce
  • Wix eCommerce 
  • AliDropship
  • Magento
  • Amazon
  • Aliexpress
  • Alibaba
  • SaleHoo 

ড্রপশিপিং ব্যবসার সুবিধা

ড্রপশিপিং বিজনেস এর সুবিধা রয়েছে অনেক, তবে প্রতিযোগিতা, সরবরাহকারীর উপর নির্ভরশীলতা এবং পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রয়োজন পড়ে। আপনি যদি ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে সঠিক সরবরাহকারী বেছে নেওয়া এবং একটি কার্যকর মার্কেটিং কৌশল তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। ড্রপশিপিং বিজনেস এর অনেক সুবিধা রয়েছে যেমনঃ

ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করার জন্য খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই, আপনি ৪-৫ হাজার টাকার পরিমিত বিনিয়োগে ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন। পণ্য কেনা বা স্টক মজুদ করতে হয় না, শুধুমাত্র একটি অনলাইন স্টোর বা প্ল্যাটফর্ম সেটআপ করলেই হয়।

আরো পড়ুনঃ-  মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করার উপায়

ড্রপশিপিং মডেলে একাধিক সরবরাহকারীর সাথে কাজ করে বিভিন্ন ধরণের পণ্য অফার করা সম্ভব। এটি গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন পছন্দের সুযোগ তৈরি করে।

  • আপনার নিজের কোনো পণ্য থাকার দরকার নেই।
  • কম ইনভেস্টে ব্যবসা শুরু করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে মার্কেটিং এ দক্ষ হলে কোনো ধরণের ইনভেস্ট এর প্রয়োজন পরে না।
  • কোনো পন্য স্টোক করার দরকার পরে না তাই যে কোনো পন্য নিয়ে কাজ করা যায়। এক সাথে অনেক ধরণের পন্য বিক্রি করা যায়।
  • আপনি বাংলাদেশে বসে থেকে আমেরিকা তে ড্রপশিপিং ব্যবসা করতে পারবেন। মোটকথা আপনি যেকোন স্থান থেকে যেকোন দেশে ড্রপশিপিং ব্যবসা করতে পারবেন। 
  • লস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই

পণ্যের প্যাকেজিং এবং ডেলিভারি নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। পণ্য প্যাকেজিং, শিপিং, এবং ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনা সরবরাহকারী পরিচালনা করে। ফলে, ব্যবসায়ীর কাজের চাপ কমে যায়।

ড্রপশিপিং ব্যবসার অসুবিধা

ড্রপশিপিং বিজনেসের কিছু সাধারণ অসুবিধা রয়েছে, যা আপনাকে এই ব্যবসা শুরু করার আগে বিবেচনা করা উচিত। ড্রপশিপিং ব্যবসা হলো এমন একটি মডেল যেখানে আপনি নিজে পণ্য মজুদ বা পরিচালনা না করেও ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। এটি ই-কমার্স ব্যবসার একটি সহজলভ্য এবং জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। নিচে ড্রপশিপিং বিজনেসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধাগুলো উল্লেখ করা হলোঃ

১. লাভের পরিমাণ কমঃ ড্রপশিপিং মডেলে পণ্যের সরাসরি উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীর সাথে কাজ করা হয়। ফলে, প্রতিটি পণ্যে লাভের মার্জিন কম থাকে কারণ সরবরাহকারী এবং প্ল্যাটফর্ম উভয়েরই খরচ যুক্ত থাকে।

২. প্রতিযোগিতা বেশিঃ ড্রপশিপিং সহজলভ্য হওয়ায় এই ব্যবসায় প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। একই পণ্য অনেক বিক্রেতা বিক্রি করে, যার ফলে দাম কমানো ছাড়া আপনার জন্য আলাদা কিছু করার সুযোগ কম থাকে।

৩. রিটার্ন ও রিফান্ড প্রসেস জটিলতাঃ কাস্টমার যদি পণ্য রিটার্ন বা রিফান্ড করতে চায়, তবে সেই প্রক্রিয়া বেশ জটিল হতে পারে। কারণ পণ্য সরাসরি সরবরাহকারীর কাছে ফিরে যেতে হবে।

৪. ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবঃ ড্রপশিপিংয়ে আপনি সরাসরি পণ্যে নিজের ব্র্যান্ড লেবেল বা প্যাকেজিং যোগ করতে পারেন না। ফলে ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করা কঠিন হয়ে যায়।

৫. মার্কেটিং খরচ বেশিঃ ড্রপশিপিংয়ে মূলত মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিক্রয় বাড়াতে হয়। তবে প্রতিযোগিতার কারণে এই খরচ অনেক সময় লাভের তুলনায় বেশি হতে পারে।

ড্রপশিপিং ব্যবসার আরও বেশ যেমন সু কয়েকটি অসুবিধার দিক রয়েছে –

ড্রপশিপিং ব্যবসা এর ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা রয়েছে যা অস্বীকার করা যায় না। যদিও কাস্টমারের চাহিদা বুঝে ও ধৈর্য্য ধরে কাজ করলে সেগুলো দূর করা সম্ভব। অতিরিক্ত প্রতিযোগিতা একজন ড্রপশিপিং ব্যবসায়ীকে কাবু করে ফেলতে পারে। কেননা বর্তমানে প্রায় সকল ই-কমার্স ব্যবসাতে রয়েছে ব্যাপক প্রতিযোগী ভাব। ড্রপশিপিংও কিন্তু এক ধরণের ই-কমার্স বিজনেস।

  • সবসময় সময়মতো অর্ডার অনুযায়ী পণ্য সাপ্লাইয়ারের কাছে পাওয়া যায় না।
  • লাভের পরিমান কম থাকে। সীমিত লাভের মধ্যে পন্য বিক্রি করতে হয়।
  • সাপ্ল্যায়ার যদি নকল পন্য দিয়ে দেয় তাহলে সেক্ষেত্রে নিজের স্টোরের মান নষ্ট হয়ে যায়। 
  • অনেক বেশি অর্ডার হলে সবাইকে সঠিক ভাবে ডেলিভারি দেয়া কঠিন হয়।
  • অনেক সময় ২৪ ঘন্টা কাস্টমার সার্ভিস দেয়াটা কঠিন হয়ে যায়। 

ড্রপশিপিং করে কি আয় করা যায়?

ড্রপশিপিং করে বেশ ভালো পরিমানে আয় করছেন, এমন অনেকেই আছেন। আপনার পন্যের সরবরাহকারী যে দাম আপনার থেকে পন্য বাবদ নিবেন, তার সাথে নির্দিষ্ট মার্জিন যোগ করে আপনাকে বিক্রি করতে হবে।

কারণ ই-কমার্স সেক্টরটি অনেকে বেশী প্রতিযোগিতা পূর্ণ এবং এখানে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বেশী দামে বিক্রি করে আপনি টিকতে পারবেন না এবং আপনার ড্রপশিপিং ব্যবসা ও সফল হবেনা। তবে এখানে একবার আপনার ব্যবসা আস্থা অর্জন করলে এ ব্যবসায়ে আপনি অবিশ্বাস্য পরিমান লাভ করতে পারবেন।

লেখকের শেষ মতামত

আপনি ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই বিস্তারিত ভাবে দক্ষ হয়ে শুরু করবেন। সবচেয়ে বড় একটি ব্যাপার হলো ধৈর্য। অনলাইনে যে কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে। যদি আপনার ধৈর্য কম থাকে তবে এ ধরনের ব্যবসা না করা ভালো। 

আমি সহ আমার টিম প্রতিনিয়ত কাজ করি অনলাইন জগতে বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সবার জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে। আমাদের সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত প্রদান করতে আমাদের যোগাযোগ পেইজ ব্যবহার করুন অথবা নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment