গর্ভের সন্তান ছেলে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায়

প্রত্যেকটি গর্ভবতী মায়ের মনে প্রশ্ন জাগে গর্ভের সন্তানটি ছেলে না মেয়ে। প্রত্যেকটি বাবা-মা গর্ভে কি সন্তান রয়েছে জানার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। গর্ভের শিশু ছেলে না মেয়ে সেটি নির্ধারণ করা যায় আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের মাধ্যমে। আজকের আর্টিকেলে গর্ভের সন্তান ছেলে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায় এবং গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে কিভাবে বুঝতে পারবেন প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে। 

গর্ভের সন্তান ছেলে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায়

এছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট কিভাবে নিজে থেকেই পড়ে সহজে ধারণা নিতে পারবেন প্রত্যেকটি বিষয় জানতে মনোযোগ সহকারে পড়ুন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়ের জন্যে অতিপরিচিত একটি পরিক্ষা হচ্ছে আল্ট্রাসনোগ্রাম। মানবদেহের প্রায় সকল অঙ্গেরই আল্ট্রাসনোগ্রাম করা যায়। তবে গর্ভের সন্তানের বয়স, ওজন, পজিশন ইত্যাদি জানতে গর্ভবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। 

কিন্তু আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট লাইন বাই লাইন ধরে কেউ বুঝিয়ে বলবে না। আজকের আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদেরকে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় লাইন বাই লাইন ধরে বুঝিয়ে দিবাে। এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে আপনি নিজেই আপনার আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট পড়তে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ 

ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে নিশ্চিত নয়, তবে অনেক সময় লোকজ বিশ্বাস ও প্রচলিত ধারণার উপর ভিত্তি করে কিছু লক্ষণের কথা বলা হয়। এই লক্ষণগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, এবং এগুলো শুধু অনুমান ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। কিছু প্রচলিত ধারণা নিম্নরূপ:

১। পেটের আকার

গর্ভবস্থায় মায়ের পেটের আকার যদি সামনের দিকে বেশি থাকে এবং পেট নীচের দিকে ঝুলে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এটা ছেলে সন্তানের লক্ষণ। 

২। ত্বকের অবস্থা

ছেলে সন্তান হলে মায়ের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে পারে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।

৩। মর্নিং সিকনেসের অভাব

গর্ভাকালীন সময়ের প্রথম দিকে মর্নিং সিকনেস কম হলে ছেলে সন্তান হতে পারে। 

৪। খাবারের প্রতি আকর্ষণ

মিষ্টি বা টক খাবারের বদলে লবণাক্ত বা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের প্রতি বেশি আকর্ষণ থাকলে ছেলে সন্তান হতে পারে বলে মনে করা হয়।

৫। শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন

গর্ভাবস্থায় যদি মা বেশি শক্তিশালী ও সক্রিয় বোধ করেন, তবে ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে মনে করা হয়।

তবে, এই সমস্ত লক্ষণ এবং ধারণা কেবল প্রচলিত বিশ্বাসের অংশ এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ছেলে বা মেয়ে সন্তান নির্ধারণের একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপায় হলো আলট্রাসাউন্ড বা অন্যান্য চিকিৎসা পরীক্ষা।

গর্ভের সন্তান ছেলে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায়

কোনো নারীর গর্ভে সন্তান আসার পর গর্ভের সন্তান সম্পর্কে জানার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়ে থাকে। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে গর্ভে থাকা সন্তানের অবস্থা, শারীরিক গঠন, লিঙ্গ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠতে থাকা সন্তানের স্বাস্থের খেয়াল রাখার ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

আমরা অনেকেই আছি যারা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বুঝতে পারি না। যদিওবা ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে গর্ভের সন্তানের সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আমাদেরকে জানিয়ে থাকেন। কিন্তু তারপরেও আমাদের মনের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট টা নিজে নিজেই বুঝার কৌতুহল জাগে। 

কোনো নারীর গর্ভে সন্তান আসার পর গর্ভের সন্তান সম্পর্কে জানার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়ে থাকে। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে গর্ভে থাকা সন্তানের অবস্থা, শারীরিক গঠন, লিঙ্গ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠতে থাকা সন্তানের স্বাস্থের খেয়াল রাখার ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

আপনারা যারা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বোঝার উপায় সম্পর্কে জানতে চান তারা নিচে দেওয়া নিয়মগুলো ভালোভাবে অনুসরণ করুন। তাহলে আপনি নিজেই আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে বুঝতে পারবেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট বুঝতে হলে আপনাকে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট এর কিছু তথ্য দ্বারা কি বুঝানো হয়ে তা জানতে হবে। 

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে গর্ভের সন্তান ছেলে হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করা থাকে-

Fetal Number: গর্ভে থাকা ভ্রুনের সংখ্যা এই নাম্বার দ্বারা নির্দেশ করা হয়। 

Fetal Position: এটি দ্বারা গর্ভে ভ্রণ এর সঠিন অবস্থান বোঝা যায়।

Fetal Heart Rate: এর সাহায্যে গর্ভের বাচ্চাটির প্রতি মিনিটে হার্টবিট কত তা বুঝতে পারা যায়।

Amniotic Fluid Index: এর দ্বারা গর্ভের তরল যেখানে ভ্রুন ভাসমান অবস্থায় থাকবে সেটার অবস্থা বোঝা যায়। গর্ভের তরল 5cm থেকে 25cm এর মধ্যে হলে স্বাভাবিক মাত্রা হিসেবে ধরা হয়।

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় বিস্তারিত জানুন

Placenta: গর্ভে থাকা শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। শিশুর শরীরের রক্ত থেকে বর্জ পদার্থ বের করতেও এই অংশটি সাহায্য করে থাকে। গর্ভের এই অঙ্গটি জরায়ুতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

Fetal Anatomic Survey: এই অংশের মাধ্যমে দ্বারা গর্ভে বেড়ে উঠা সন্তানের দেহে হার্ট, কিডনি, পাকস্থলি স্পাইন ইত্যাদি জানতে পারা যায়।

Gestational Age (GA): কতদিন যাবত গর্ভধারণ করা হয়েছে তা GA এর দ্বারা জানা যায়।

Biparietal Diameter (BPD): BPD দ্বারা গর্ভের সন্তানের ব্যাস নির্দেশ করা হয়।

Head Circumference (HC): গর্ভের সন্তানের মাথার পরিধি HC দ্বারা নির্দেশ করা হয়।

Abdominal Circumference (AC): গর্ভের সন্তানের পেটের পরিধি AC দ্বারা নির্দেশ করা হয়।

Femur Length (FL): গর্ভের সন্তানের বর্তমানের মোট দৈর্ঘ্য FL দ্বারা জানতে পারা যায়।

উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো যেকোনো আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে উল্লেখিত থাকে। তবে হাসপাতাল ও চিকিৎসার ধরণ অনুযায়ী এই রিপোর্টে অতিরিক্ত কিছু তথ্য যুক্ত হতে পারে। যেকোনো রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারকে দিয়ে দেখিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে একটি শিশুর লিঙ্গ বোঝার জন্য সাধারণত এটির ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে শিশুর বিভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, যার মধ্যে শিশুর যৌনাঙ্গও অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে আল্ট্রাসনের মাধ্যমে ছেলে না মেয়ে হবে তা জানার জন্য ২০ থেকে ২২ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়।

পুরো গর্ভাবস্থায় জুড়ে আপনাকে তিন থেকে চারটি আল্ট্রাসাউন্ড করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে তবে ২০ সপ্তাহের আগে আপনি যেসব আল্টাসাউন্ড করবেন সেগুলোর মাধ্যমে গর্ভে সন্তান ছেলে না মেয়ে তা জানতে পারবেন না। কারণ সে সময় সন্তানের লিঙ্গ ভালোভাবে বিকাশিত হয় না। ২০ সপ্তাহ পর আলটাসাউন্ড করলে খুব সহজেই সনাক্ত করা যাবে আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে।

গর্ভধারণের নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর গর্ভের সন্তানটি ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে বিঝতে পারা যায়। আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের নির্দিষ্ট কিছু বিষয়বস্তু বিবেচনা করার মাধ্যমে গর্ভে থাকা সন্তানের লিঙ্গ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় সম্পর্কে জানতে নিচের বিষয়বস্তু গুলা অনুসরণ করুন-

রক্তচাপঃ গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে গর্ভের সন্তানটি ছেলে না মেয়ে তা সম্পর্কে জানতে পাওয়া যায়। চীনের লুইয়াং শহরে ৭ বছর যাবত গর্ভবতী নারীদের উপর গবেষণা করে জানা যায় যে গর্ভকালীন সময়ে রক্তচাপ 140 BPM এর বেশি হলে ছেলে সন্তান এবং এর কম হলে মেয়ে সন্তান হয়।

ভ্রুণের হার্টবিটঃ আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট অনুযায়ী গর্ভের ভ্রুণের হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ১৪০ বারের বেশী হলে মেয়ে সন্তান হয় পক্ষান্তরে কম হলে ছেলে সন্তান হয়।

আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের চিহ্নঃ গর্ভের বাচ্চার লিঙ্গ নির্দেশ করার জন্য আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে সাংকেতিক চিহ্নের ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। যা দ্বারা গর্ভের বাচ্চাটি ছেলে নাকি মেয়ে তা প্রকাশ পায়। ছেলে নাকি মেয়ে তা প্রকাশ করার জন্য আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে যে চিহ্ন ব্যাবহার করা হয় তা জানতে নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করুন।

XX-XY: অনেক সময় গর্ভের বাচ্চাটি যদি মেয়ে হয় সেক্ষেত্রে “XX” ব্যাবহার করা হয়। আর যদি গর্ভের বাচ্চা ছেলে হয় তাহলে “XY” দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে কখনোই উল্লেখ থাকে না শিশুটি ছেলে কি মেয়ে। শুধুমাত্র চিকিৎসকেরা তাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গর্ভের শিশুর অবস্থান, যৌ*নাঙ্গ, পুরুষা*ঙ্গ, অন্ড*কোষ, দেখে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন শিশুটি ছেলে কি মেয়ে। আল্ট্রাসনোগ্রাম এর রিপোর্টে শিশুটি ছেলে কি মেয়ে এটি আমাদের দেশে উল্লেখ করা নিষিদ্ধ। তাই চিকিৎসকের শুধু তাদের মুখেই বলেন শিশুটি ছেলে হবে না মেয়ে হবে। তারা রিপোর্টে উল্লেখ করেন না। 

কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের মাধ্যমে লিঙ্গ নির্ধারণে দেখা হয়:

১। ছেলেশিশুর বৈশিষ্ট্য

ছেলেশিশুর ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে সাধারণত একটি “টার্টল সাইন” (কচ্ছপের চিহ্ন) দেখা যায়, যা শিশুর লিঙ্গের মাথার অংশের আকার নির্দেশ করে। এছাড়াও, শিশুর পায়ের মাঝখানে একটি ছোট গোলাকার অংশ দেখা যায়, যা শিশুর অণ্ডকোষ হতে পারে।

২। মেয়েশিশুর বৈশিষ্ট্য

মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে একটি “হ্যামবার্গার সাইন দেখা যায়, যেখানে ২টি ঠোঁট এবং তার মাঝখানে একটি ভাজযুক্ত অংশ দেখা যায় যার মাধ্যমে মেয়ে সন্তানের যোনির অংশ নির্দেশ করে।

তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে, লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে শতভাগ নির্ভুলতা থাকে না। শিশুর অবস্থান, মা এবং শিশুর শারীরিক অবস্থা, এবং পরীক্ষা করার সময়ের উপর নির্ভর করে রিপোর্টের সঠিকতা প্রভাবিত হতে পারে।

হার্ট রেট আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়

অনেকে মনে করেন হার্ট রেট আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় রয়েছে। আসলে এই পদ্ধতিটি ভুল। অনেক চিকিৎসক মনে করেন ১৪০ বিট পার মিনিট এর নিচে হলে সন্তানটির ছেলে হবে। আর যদি ১৪০ বিট পার মিনিট এর উপরে হয় তাহলে মেয়ে সন্তান হবে। কিন্তু আসলে এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। 

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় - গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে গর্ভাবস্থায় প্রথম ও দ্বিতীয় এৈ মাসিকে ছেলে মেয়ে উভয়ের হার্ট রেট প্রায় একই রকম থাকে। হার্ট রেট মূলত নির্ভর করে গর্ভকাল কত সপ্তাহ চলছে, শিশুর মুভমেন্ট, মায়ের অবস্থান, আল্ট্রাসনোগ্রামের সময় শিশু ঘুম অথবা জাগরণ এ বিষয় গুলোর ওপর। তাহলে গর্ভের সন্তান ছেলে কি মেয়ে তা কিভাবে বুঝবেন।

এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকেরাই নির্ধারণ করতে পারেন। ১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে শিশুর যৌ*নাঙ্গ দেখা যায়। ১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে চিকিৎসকরা শিশুর লিঙ্গ দেখে সহজেই নির্ধারণ করতে পারেন শিশুটি ছেলে হবে কি মেয়ে হবে। তাই গর্ভের সন্তানটি ছেলে কি মেয়ে তা জানার একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপায় ২০ সপ্তাহের পরে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা।

তবে, অনেক দেশে আইনীভাবে গর্ভাবস্থায় শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করা নিষিদ্ধ। তাই, এই ধরনের পরীক্ষাগুলি করার আগে স্থানীয় আইন সম্পর্কে জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে বোঝার ঘরোয়া উপায়

গর্ভাকালীন সময়ে প্রতিটা মায়েরই ক্লান্তি বেড়ে যায়। এই সময় যদি অলসতা ভাব বেশি লাগে তবে মেয়ে সন্তান আর যদি কম ক্লান্তি অনুভব হয় তাহলে ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় খুব বেশি মুড সুইং হয়ে থাকে। যদি এমনটা ঘটে তবে ধরে নেয়া যেতে পারে গর্ভের সন্তানটি মেয়ে। আর যদি এর বিপরীতটা লক্ষ্য করা যায় তবে গর্ভের সন্তানটি ছেলে।

ঘুমানোর প্রবৃত্তি করেও গর্ভের সন্তান ছেলে মাকে মেয়ে তা বোঝা যায়। যদি অজান্তেই ডানদিক হয়ে ঘুমান তবে মেয়ে সন্তান এবং যদি বাম দিকে ঘুমান তবে ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

অনেকেই পেটের আকার দেখে গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে তা ধারণা করতে পারতেন। তাদের ধারণা মায়ের পেট যদি নিচের দিকে বেশি ঝুলে যায় তাহলে ছেলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর অন্যদিকে পেট উপরের দিকে উঁচু হলে তবে মেয়ে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

গর্ভাবস্থায় অনেকেই কিছুই খেতে পারেন না আবার অনেকেই অনেক বেশি খেতে পছন্দ করেন। যদি আপনার খাবারের তালিকায় মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রাধান্য থাকে তবে বুঝতে হবে গর্ভের সন্তানটি মেয়ে। তবে যদি টক জাতীয় খাবার বেশি খাইতে ইচ্ছা হয় তবে একটি ছেলে সন্তান আসতে চলেছে বলে ধরে নেয়া হয়। 

অনেক গর্ভবতী মহিলারা গর্ভে ছেলে নাকি মেয়ে সন্তান রয়েছে সেটি বোঝার জন্য ঘরোয়া উপায় গুলো অনুসরন করেন। বেশ কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে মিল না হলেও গর্ভবতী মহিলার আচরণ, পছন্দনীয় খাবার, চলাফেরার ধরন দেখে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। গ্রাম্য বয়স্ক অভিজ্ঞ মহিলাদের মতে গর্ভে ছেলে সন্তান থাকলে পেটের ডান পাশে বেশি নড়াচড়া করে।

অন্যদিকে গর্ভে মেয়ে শিশু থাকলে গর্ভবতী মহিলা বাম পাশে ঘুমাতে বেশি পছন্দ করে। তবে এই বিষয়গুলো সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারে না। আবার কারোর ক্ষেত্রে এটি সঠিক ও হয়।

ছেলে সন্তান পেটের কোন দিকে নড়ে 

ধারণা করা হয় যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ছেলে সন্তান পেটের ডান পাশে নড়ে। তবে এটা  সবসময়ই সঠিক হবে না। কেননা প্রতিটি গর্ভবতী নারীর অভিজ্ঞতা আলাদা হতে পারে। তবে, কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে:

১। নড়াচড়ার স্থান

গর্ভাবস্থায় ছেলে সন্তান এর নড়াচড়া পেটের বাম দিকে, ডানদিকে বা মাঝখানে হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, মায়ের পেটের নিচের অংশে কিক মারার মত বেশি অনুভূত হতে পারে।

২। নড়াচড়ার ধরন

শিশুর নড়াচড়া সাধারণত একটি শিহরণ, কিক, বা দোলা আকারে অনুভূত হয়। এটা খেতে গিয়ে, চলাফেরা করতে গিয়ে, বা অন্যান্য কারণে পরিবর্তিত হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় শিশুর নড়াচড়ার স্থান এবং ধরন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত কিছু তথ্য:

১। শিশুর অবস্থান

গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে শিশুর অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে। প্রথম তিন মাসে শিশুর নড়াচড়া কম দেখা যায় কারণ তার পরিসর খুব ছোট। কিন্তু চতুর্থ মাসের পরে শিশুর আন্দোলন আরো স্পষ্ট ও অনুভূত হতে শুরু করে। কিছু মায়ের জন্য, ছেলে সন্তান সাধারণত পেটের ডান দিকে অথবা মাঝখানে বেশি অনুভূত হতে পারে, তবে এটি নির্ভর করে শিশুর অবস্থান এবং গর্ভের কাঠামোর উপর।

২। নড়াচড়ার সময়কাল

শিশু যখন ঘুম থেকে ওঠে অথবা সক্রিয় হয়, তখন নড়াচড়া বেশি অনুভূত হয়। অনেক সময় শিশুর নড়াচড়া রাতের বেলায় বেশি অনুভূত হয় কারণ মা তখন বেশি শিথিল থাকে এবং কম ব্যস্ত থাকে

আরো পড়ুনঃ-  ২৫ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া কম হলে করণীয়

৩। গর্ভাবস্থার উন্নয়ন

যদিও ছেলে সন্তান সাধারণত নির্দিষ্ট দিকে নড়বে, তবে প্রতিটি গর্ভাবস্থা ও শিশুর আচরণ আলাদা হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন যদি আপনার কোনো উদ্বেগ থাকে।

গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে 

আলট্রাসাউন্ড বা অন্যান্য মেডিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ জানা সম্ভব হয়। তবে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমেই গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে তা নির্ধারণ করা যায়।

গর্ভে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে:

১। আলট্রাসাউন্ড

একটি আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত ১৮-২০ সপ্তাহের মধ্যে সন্তানের লিঙ্গ জানা যায়। যদিও লিঙ্গ নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করা কখনো কখনো কঠিন হতে পারে।

২। আমনিওসেন্টেসিস

এই পরীক্ষায় গর্ভাশয়ের মধ্যে থেকে কিছু জল (আমনিয়োটিক ফ্লুইড) সংগ্রহ করে এতে থাকা সেল থেকে লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়। এটি সাধারণত ১৫-২০ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়।

৩। ফ্রি-ফ্লোটিং ডিএনএ টেস্টিং

এতে মায়ের রক্ত থেকে সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করে লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়। এই পরীক্ষা সাধারণত ৯ সপ্তাহের পর করা হয়।

ছেলে সন্তান কত মাসে হয়

ছেলে বা মেয়ে সন্তান গর্ভধারণের প্রক্রিয়ায় সাধারণত ৯ মাস বা প্রায় ৪০ সপ্তাহ লাগে। এই সময়ের মধ্যে সন্তান গর্ভে পরিপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়ে জন্মগ্রহণের উপযুক্ত হয়।

সাধারণত গর্ভাবস্থার পূর্ণ সময়কাল ৯ মাস ধরে হলেও এটি ৩৮ থেকে ৪২ সপ্তাহ পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে। একটি পূর্ণ-মেয়াদি গর্ভাবস্থায় (ফুল টার্ম প্রেগন্যান্সি) সাধারণত গর্ভধারণের ৩৭ সপ্তাহের পরে যেকোনো সময় সন্তান জন্ম নিতে পারে।

কিছু সময় সন্তান আগে বা পরে জন্মগ্রহণ করতে পারে, যা নির্ভর করে বিভিন্ন শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর। তবে সন্তানের লিঙ্গ (ছেলে বা মেয়ে) নির্ধারণের সঙ্গে গর্ভধারণের সময়ের কোনো সম্পর্ক নেই; এটা গর্ভধারণের শুরুতেই নির্ধারিত হয়ে যায়।

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট কি ভুল হয়

অনেকেই জানতে চান আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ভুল হয় কিনা। হ্যাঁ আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ভুল হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাফির কিছু রেজুলেশনের যন্ত্র রয়েছে। যন্ত্রের ধরন মোতাবেক সঠিক তথ্য নির্ধারণ করতে ভুল হওয়ার সম্ভাবন রয়েছে। 

যেসব যন্ত্রের কম রেজুলেশন সেগুলো ক্ষেত্রে ভুল হয়। আবার কখনও কখনও ছেলে সন্তানের তলিঙ্গ মেয়ে সন্তানের লিঙ্গের মত দেখায়। আবার মেয়ে শিশুর লিঙ্গ পুরুষাঙ্গের মত দেখায়। আবার অনেক গর্ভবতী মায়েরা ২০ সপ্তাহের আগে আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন সে ক্ষেত্রে ভুল রিপোর্ট আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কেননা কম সপ্তাহে আল্টাসনোগ্রাম রিপোর্ট করলে চিকিৎসকেরা শিশুটি ছেলে কি মেয়ে তা নির্ধারণ করতে ভুল করেন। 

উদাহরণস্বরুপ, গর্ভাবস্থার ১০ থেকে ১৪ তম সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর মাধ্যমে ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ বের করার ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট কি ভুল হয় তা আপনি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। কারণ এই সময় আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ভুল তথ্য প্রদান করতে পারে। তাই আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টের উপর শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না।

আল্ট্রাসনোগ্রামে গর্ভের সন্তান ছেলে হলে কি স্পষ্ট দেখা যায়

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায় সম্পর্কে অনেকে জানেন না। গর্ভের সন্তান ছেলে হলে কি আল্ট্রাসনোগ্রামে স্পষ্ট দেখা যায় সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। গর্ভের সন্তান ছেলে হলে আল্ট্রাসনোগ্রামে স্পষ্ট দেখা যায় তবে সেটি সপ্তাহের পরে। 

কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুর পজিশন ঠিক না থাকলে স্পষ্ট দেখা যায় না। আবার কখনো শিশুর পজিশন ঠিক থাকলে স্ক্যানার আধুনিক হলে শিশুর লিঙ্গ স্পষ্ট দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি কখন করা উচিত

যখন কোনো বিবাহিত দম্পতি সন্তানের জন্ম দেন তখন তাদের মধ্যে ও তাদের পরিবারের মধ্যে সন্তানটিকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগে। স্বাভাবিকভাবে একটি শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে কোনোভাবেই গর্ভের সন্তানের সম্পর্কে কোনোরুপ তথ্য জানা অসম্ভব। তবে আলট্রাসনোগ্রাম প্রযুক্তির ব্যাবহারে গর্ভের সন্তান সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরণের তথ্য পাওয়া সম্ভব।

গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট গর্ভে বেড়ে উঠতে থাকা সন্তান সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরণের তথ্য প্রদান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আলট্রাসনোগ্রাম হলো শব্দ তরঙ্গ ভিত্তিক ইমেজিং প্রযুক্তি। 

গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাম করার মাধ্যমে গর্ভের বাচ্চার বিভিন্ন তথ্য জানতে পারা যায়। উদাহরণস্বরুপ গর্ভধারণের ২২ সপ্তাহ অতিক্রম করার পর আল্ট্রাসনোগ্রাম করার মাধ্যমে গর্ভের বাচ্চার লিঙ্গ জানতে পারা যায়।

গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখার মাধ্যমে গর্ভের বাচ্চার খেয়াল রাখার জন্য গর্ভকালীন সময়ে তিনবার আলট্রাসনোগ্রাফি করার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নিচে গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি কখন করা উচিত তা উল্লেখ করা হলোঃ

  • ১ম আলট্রাসনোগ্রাফিঃ সাধারণত ১০ থেকে ১৪ তম সপ্তাহে এই আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • ২য় আলট্রাসনোগ্রাফিঃ গর্ভাবস্থার ১৮ থেকে ২২ সপ্তাহে এই আলট্রাসনোগ্রাফি করতে বলা হয়।
  • ৩য় আলট্রাসনোগ্রাফিঃ ৩৬ থেকে ৩৮ তম সপ্তাহে এসে ডাক্তাররা তৃতীয় আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

লেখকের শেষ মতামত

এই ছিল আজকের গর্ভের সন্তান ছেলে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায় সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করি গর্ভের সন্তান ছেলে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায় জানতে পেরেছেন।

এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও গর্ভের সন্তান ছেলে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবে।

Leave a Comment