রেক্টাল ব্লিডিং বা মলদ্বারে রক্তক্ষরণ পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার রোগ হিসেবে পরিচিত। আর এই রেক্টাল ব্লিডিং সাধারনত বেশ কয়েকটি রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। এটি কোন নির্দিষ্ট রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। যদিও এটি সাধারণত সাময়িক ও সহজে নিরাময় যোগ্য রোগ।
কিন্তু, শরীরের দৃশ্যমান অংশের রক্তপাতের চেয়ে ভেতরে অংশের রক্তপাত বেশি আতঙ্কজনক, কারণ আপনি ক্ষতের উৎপত্তি, কারণ ও পরিমাণ বেশিরভাগ সময় জানতেই পারবেন না। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষতার যুগে ভয় পাওয়াটা অমূলকই বলা চলে।
যাইহোক, পায়খানার পর কোনভাবে রক্ত আবিষ্কার করলে আতঙ্কিত না হয়ে বেশ কিছু জিনিস লক্ষ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পায়ুপথে রক্তপাতের উপসর্গ তেমন জটিল নয় আবার কিছু উপসর্গে খুব দ্রুত ডাক্তার দেখানো বাঞ্ছনীয় হয়ে দাঁড়ায়। তবে চলুন প্রথম থেকে শুরু করা যাক। ধারাবাহিক ভাবে পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
পায়খানার সাথে রক্তক্ষরণ কী
পায়ু পথ দিয়ে যে কোন রকম রক্ত পড়াকে রেক্টাল ব্লিডিং বলা হয়। যদিও রেক্টাল ব্লিডিং হলে প্রাথমিক ভাবে ধরে নেওয়া হয় যে রক্ত পায়ুপথের উপরের অংশ ও ক্ষুদ্রান্তের শেষ অংশ থেকে রক্তপাত হচ্ছে।
রক্তের রং ও অবস্থা দেখে রেক্টাল ব্লিডিং এর অবস্থান সম্পর্কে ধারণা করা যায়। রক্ত আলাদা ভাবে পড়তে পারে, পায়খানার সাথে মিশ্রিত ভাবে পড়তে পারে যা টয়লেটের প্যানে, পানিতে মিশে, টয়লেট টিস্যু ব্যবহারের সময় বা অন্তর্বাসে দেখা যেতে পারে।
পায়খানার সাথে রক্ত পড়ে কেন
পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় সম্পর্কে অবগত হওয়ার পূর্বে আমাদের পায়খানার সাথে রক্ত পড়ে কেন এ বিষয়টি জেনে রাখতে হবে। পরবর্তীতে আমরা পায়খানার সাথে রক্ত গেলে করণীয় কি সে বিষয়ক বিভিন্ন কার্যকরী ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
- খাবারে অস্বাভাবিকতার ফলে আমাদের পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে।
- হঠাৎ মলের সাথে রক্ত যাওয়ার ঘটনাটি পাইলসের কারণে ঘটে থাকে। এসময় কোনো জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হয়না।
- আবার কেউ যদি দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করে থাকে তাহলে তার মলদ্বারে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়ে পায়খানার সাথে গাঢ় রক্ত পড়তে পারে।
- রেক্টাল ব্লিডিং এর কারণে পায়খানার সাথে রক্ত পড়তে পারে। আর কারণ মূলত পায়ু পথে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হওয়ার মাধ্যমে যদি লাল অথবা মেরুন বর্ণের রক্ত পড়ে।
উপরের অংশটি পড়ে আপনারা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার কারণ সমূহ উপলব্ধি করতে পেরেছেন। পোষ্টের পরবর্তী অংশগুলো পড়লেই পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।
পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায়
আপনার পায়খানার সঙ্গে যদি রক্ত পড়া দেখা দেয় তাহলে বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় জানা থাকলে সহজে রক্ত পড়া থেকে পরিত্রাণ পাবেন। পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় গুলো নিচের অংশগুলো পড়ে জেনে নিন।
রেক্টাল ব্লিডিং যেহেতু কোন একক রোগ নয়, এটির কোন নির্দিষ্ট প্রতিকার ও প্রতিরোধ দেওয়া দুঃসাধ্য। কিন্তু যদি আপনি জানেন ঠিক কোন কারণে রেক্টাল ব্লিডিং হচ্ছে তবে আপনি নির্দিষ্ট ভাবে ঐ রোগটির দমনে ব্যাবস্থা নিতে পারবেন। তবু যেহেতু এটি পরিপাক তন্ত্রের রোগ, কিছু সাধারণ জীবন পদ্ধতি মেনে চললে রেক্টাল ব্লিডিং এর রোগগুলো সহ সর্বপরি পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
হঠাৎ মলের সাথে রক্ত যাওয়া দেখলেই আমরা ভয় পেয়ে যাই। রেকটাল ব্লিডিং হলে সে ক্ষেত্রে রক্তপাত বন্ধ করা কঠিন। তবে পরিপাকতন্ত্রের এ রোগটি দমনের জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করলে অনেকটাই প্রতিরোধ গড়ে তোলা সক্ষম।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। দেহে পানির চাহিদা পূরণ হলে পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার পরিমাণ কমে যাবে।
- নিয়মমাফিক খাদ্য গ্রহণ করুন। অনিয়ম করে খাবার খাওয়া যাবেনা বরং খাবার খাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ফিক্সড করুন।
- সম্পূর্ণরূপে মদ্যপান ও ধূমপান পরিহার করুন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ইশপগুলের ভুষি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- পায়খানার সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবেন না। অল্প সময়ে পায়খানা ক্লেয়ার করুন।
- প্রতিটা দিন পরিমিত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে এবং মানসিক দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে।
- কোষ্ঠকাঠিন্যকে অবহেলা না করা। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পরিমাণ মত ইশপ গুলের ভুসি সেবন করা।
- পায়খানার সময় তাড়াহুড়া না করা।
এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে সুষম ফল ও সবুজ শাক সবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন। শাকসবজি খেলে মল অনেক নরম হয় এবং পায়খানা সহজে ক্লিয়ার হয়। এজন্য চেষ্টা করুন খাবারের তালিকায় নিয়মিত ফল ও শাকসবজি রাখার।
কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা প্রায় সব মানুষের হয়ে থাকে, যদি আপনার মল নরম হয় তাহলে এই পায়খানা দিয়ে রক্ত পড়া দূর হয়ে যাবে। এজন্য এই ধরনের সমস্যা থাকলে উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।
উপরের উল্লিখিত নিয়মগুলি অনুসরন করলে আশা করি আপনার পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে। কেননা এগুলো ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করলে উপকার পাওয়া সম্ভব।
পায়খানার সাথে রক্ত কিসের লক্ষণ
অনেকে হয়তো জানে না যে পায়খানার সাথে রক্ত কিসের লক্ষণ। প্রায় সব বাড়িতে কমবেশি এই সমস্যাটা দেখা যায় যারা কিনা এই সমস্যার জন্য চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ করতে চাই না।
পাইলস: পায়ুপথে রক্ত আশার বিভিন্ন কারণ রয়েছে যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা যেটা দেখা যায় সেটা হল পাইলস। পাইলস সমস্যার জন্য মানুষের পায়ুপথের সাথে রক্ত আসে এবং রক্তের পরিমাণ অনেক হতে পারে।
যার ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন মাথা ঘোরা, শরীর দুর্বলতা, খাবারের প্রতি অরুচি ভাব দেখা দিতে পারে। এজন্য মলের সাথে রক্ত যাওয়ার সমস্যা দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনার পাইলসের সমস্যা হয়েছে।
আবার কারও দেহে বড় ধরনের রোগ থাকলে তখনই এই সমস্যা বেশি শুরু হয়ে যায় এজন্য আমাদের সকলকেই সচেতন থাকতে হবে। যাদের প্রথমবার পাইলসের সমস্যা হয় তাদের খাদ্যর পরিবর্তনের জন্য প্রায় মাঝে মাঝেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আধুনিকতার সাথে এই পাইলসের সমস্যার অপারেশন করলে কোন ধরনের রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং রোগীরা খুব সহজে মুক্ত হতে পারে। যদি আপনার এই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনাকে নরম ধরনের খাবার খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। এছাড়াও শরীরে বেশি রেস্ট দিতে হবে তাহলে দেখবেন যে আপনার এই সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।
যদি পাইলসের সমস্যা হয় তাহলে মলদ্বার অনেক ব্যথা করে এজন্য আপনাকে চিকিৎসকের সাথে এই বিষয়ে পরামর্শ করতে হবে। আর সে অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে অথবা যদি আপনি চান তাহলে সাপোজিটরি ব্যবহার করতে পারেন এবং স্বাভাবিক মেডিসিন খেতে পারেন। তাহলে মেডিসিনের মাধ্যমে আপনার এই বাজে সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
পায়খানার সাথে রক্ত ক্ষরণ হলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাদের ক্যান্সার হয় তাদের পায়খানার রং অন্যরকম হয় এবং সাথে রক্ত বের হয়। যখন দেখবেন যে আপনার মনের রংটা অন্যরকম তখন বুঝতে হবে যে আপনার পাইলস সমস্যা নাই আপনার শরীরে অন্য কোন সমস্যা হয়েছে।
পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার বিষয়টি কোন নির্দিষ্ট রোগ নয় বরং অন্য কোন রোগের লক্ষণ হিসেবে কাজ করে। পায়ুপথে রক্ত গেলে অনেকেই বিচলিত এবং হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তাই পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার বিষয়টিকে অবহেলা না করে এর লক্ষণ গুলো দেখে সঠিক রোগ খুঁজে বের করতে হবে। অনেক সময় এ বিষয়টি অবহেলা করলে মলদ্বারের ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এনাল ফিসার: পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার পাশাপাশি মলদ্বারে তীব্র জ্বালাপোড়া ও ব্যথা অনুভূত হলে সেটি এনাল ফিসারের লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এ সময় মলদ্বার ফেটে গিয়ে পায়খানার সাথে তাজা রক্ত পড়তে পারে।
রেক্টাম ক্যান্সার: প্রথমদিকে পাইলসের মত মনে হলেও এটি আসলে রেক্টাম ক্যান্সারের লক্ষণ। শরীরের রেকটাম ক্যান্সার আক্রান্ত হলে পায়খানার সাথে রক্ত পড়তে দেখা যায়। এ অবস্থায় পায়ুপথ অত্যন্ত জ্বালাপোড়া করে এবং মলত্যাগ করার পর পুনরায় মলত্যাগের ইচ্ছা জাগে।
রেক্টাম পলিপ: এই সমস্যাটির কারণে প্রায়শই পায়খানার সাথে তাজা রক্ত যেতে পারে। সেই সাথে মলদ্বারে গোটার মতো অংশ বিশেষ সৃষ্টি হতে পারে।
বেসিলারি ডিসেন্ট্রি: এ রোগটি আমাদের দেশে রক্ত আমাশয় নামে পরিচিত। আমাশয় ও পেটের যন্ত্রণার কারণে পায়খানার সাথে কালো রক্ত পড়তে দেখা যায়।
এজন্য আপনাকে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে। আর যারা এ ধরনের মানুষ আছেন যে এগুলো বিষয়ে এত ভাবেন না বা গুরুত্ব দেন না তাদের কিন্তু বড় ধরনের কোন রোগ হয়ে যেতে পারে এবং সেটা মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। এজন্য সব মানুষের উচিত সকল অসুখ-বিসুখ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
হঠাৎ পায়খানার সাথে রক্ত
পায়ুপথে অথবা মলের সাথে রক্ত বের হওয়া বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে নিলে চলবে না। সাধারণভাবে পাইলস সমস্যা থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এই রক্তপাত মলের সাথে অনেক সময় কালো রংয়ের পিচ্ছিল রক্ত যায় তবে এটা তাদের কোন রক্ত নয়। সাধারণত পাকস্থলী থেকে রক্ত ক্ষরণ হলে তা পায়ুপথে সাথে কালো রং ধারণ করে।
পাইলসঃ আপনার যদি পাইলস এর সমস্যা থেকে থাকে তাহলে যে কোন বয়সের মানুষের মলের সাথে তাজা রক্ত বের হয়। বিশেষ করে যারা মধ্য বয়সের তাদের এই সমস্যাটি বেশি দেখা দেয় এবং গর্ভবতী অবস্থায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক সময় দেখা দেয়। গর্ভবতী অবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। এটা প্রথম অবস্থায় ফিনকি বা ফোঁটা ফোটা পায়ুপথ দিয়ে তাজা রক্ত যায়।
অ্যানাল ফিশারঃ পায়খানা করার সময় অনেক রক্তক্ষরণ সহ ব্যথা হয় তা ফিশারের জন্য হয়েছে বলে ধরা চলে। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য পায়ুপথের শিড়া ছিড়ে গেলে এই সমস্যা হয়।
রেকটার পলিপঃ এটিও প্রায় পাইলস এর মত যা বাচ্চাদের বেশি সমস্যাটি হয়। পায়ুপথের সাথে গোটা গোটা পিণ্ড বের হয়ে আসা এভবং তাজা রক্ত যাওয়া ।
রেকটাল ক্যান্সারঃ কারও যদি ৪০ বছরের পর ক্যান্সার হয় তাহলে এই রেকটাল ক্যান্সার বেশি হয়।
রেক্টাল ব্লিডিং বহুমুখী কারণে হতে পারে। সে কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোগীর পক্ষে তা বোঝা অসম্ভবই বলা যায়। তবে পায়খানার সাথে রক্ত আসার নিম্নোক্ত তিনটি কারণ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ক্ষেত্রে দায়ী হতে পারে।
১. কোষ্টকাঠিন্য
কেষ্টকাঠিন্যের জন্য মলদ্বারে/ অন্ত্রে কোন স্থান কেটে বা ছড়ে গেলে মলের সাথে রক্ত যেতে পারে।
২. অ্যানাল ফিসার
মলদ্বারের শেষ প্রান্তেরর কোন অংশ কোষ্টকাঠিন্য বা অন্য কারণে কেটে গেলে তাকে অ্যানাল ফিসার বলা হয়। অ্যানাল ফিসারের কারণে মলের সাথে রক্ত যেতে পারে, সেক্ষেত্রে তীব্র ব্যথা অনুভূত হবে।
৩. হেমোরয়েডস
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অ্যানাল ফিসার ওর জন্য দায়ি হলো হেমোরয়েডস। হেমরয়েডস হলো যখন ক্ষুদ্রান্তের রক্তনালী চাপের কারণে সরু হয়ে আসে।
এছাড়া আরো কিছু বিরল ক্ষেত্রে পায়ুপথ দিয়ে রক্ত আসতে পারে।
- অ্যানাল ক্যান্সার
- কোলন ক্যান্সার
- কোলন পলিপস
- পায়ুপথের দেওয়ালে ঘা
- পায়ুপথে অন্যান্য ইনফ্লামেটরি রোগ।
দেখা যাচ্ছে, পায়খানার সাথে রক্ত পড়া কিছু সাধারণ রোগের সাথে সাথে কিছু জটিল রোগেরও উপসর্গ। ঠিক এই কারণেই রেক্টাল ব্লিডিংকে খাটো ভাবে দেখা উচিৎ নয়। এখন আপনার করণীয় হলো, যদি রক্তপাত একদিনের বেশি স্থায়ী হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
রক্তের রং ও পরিমান দেখে সন্দিহান হলে লক্ষ করার পরই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। যদি সামান্য রক্ত দুএকবার লক্ষ করেন, তবে রক্তপাতের বিষয়টি মাথায় রেখে পরবর্তি ধাপগুলো উপেক্ষা করতে পারেন। আশা করা যায় পরদিন থেকে এই উপসর্গ আর দেখা যাবে না।
কিভাবে বুঝবেন রেক্টাল ব্লিডিং বা মলদ্বারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে?
- কমোড বা প্যানের গায়ে রক্ত লেগে থাকতে পারে।
- কমোডের পানি লাল, ক্ষয়েরি, বা কালচে হয়ে যেতে পারে।
- পায়খানার সাথে রক্তের ছাপ দেখা যেতে পারে ও পায়খানার রং কমলা, ক্ষয়েরী, বেগুনী বা কালো রং এর দেখাতে পারে।
এইসব উপসর্গ দেখলে রেক্টাল ব্লিডিং হচ্ছে বলে ধরে নিতে পারেন। উল্লেখ্য রেক্টাল ব্লিডিং সাধারণ ভাবে অনেক মানুষের হয়ে থাকে কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ পায়খানা লক্ষ করেন না বিধায় তা টের পান না।
পায়খানার সাথে রক্ত গেলে করণীয়
আমরা এই আর্টিকেলের এই অংশ থেকে পায়খানার সাথে রক্ত গেলে করণীয় কি তা জেনে নিব।
- পায়ুপথ পরিস্কার রাখুন।
- মদ্যপান ও ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
- আঁশযুক্ত খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহন করুন।
- আপনার খাদ্য তালিকায় ফাইবারযুক্ত খাবার রাখুন।
- প্রতিদিন হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করুন।
- প্রতিদিন খাবারের তালিকায় নরম খাবার ও শাক-সবজি সহ ফলমূল খাবার চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত মলের রং ও অবস্থার পর্যবেক্ষণ করুন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য অবহেলা করবেন না।
দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে, গর্ভবতী অবস্থায়, ভারী কোন জিনিস তোলা, পায়খানার জন্য চাপ, পায়ুপথের স্থলতা এবং সঙ্গমসহ নানা কারণে হেমোরয়েড হতে পারে এবং যে কারোরই এই সমস্যা হতে পারে।
রেক্টাল ব্লিডিং বা মলদ্বারে রক্তক্ষরণ এর চিকিৎসা
পূর্বে উল্লেখ করেছি রেক্টাল ব্লিডিং মূলত কোন রোগ নয় এটি অনেকগুলো রোগের একটি উপসর্গ। যে রোগ বা সমস্যার কারণে পায়ুপথে রক্ত নির্গত হচ্ছে সেই সমস্যাটির সমাধান করা গেলে রেক্টাল ব্লিডিং বন্ধ হয়ে যাবে। সে জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি নিন্মোক্ত প্রশ্নগুলো করতে পারেন, তাই আগে থেকে জেনে রাখা ভালো। মনে রাখবেন, রোগের বর্ণণা যতই গা ঘিনঘিনে হোক, তা ডাক্তার কে আপনার রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করবে।
- পায়খানার সাথে রক্ত পড়া কখন শুরু হয়েছিলো?
- শুরু হবার আগের দিন কি খেয়েছিলেন?
- কতবার পায়খানা করেন?
- কোষ্ঠকাঠিন্য আছে কিনা?
- কোন রকম ব্যাথা আছে কিনা?
- নির্গত রক্তের রং কি? ইত্যাদি
ডাক্তার সঠিক রোগটি নির্ণয় করতে আপনার উপসর্গের উপর নির্ভর করে নিন্মোক্ত পরীক্ষা করতে বলতে পারেন-
পায়ুপথে বাহ্যিক অবস্থার সাধারণ পরীক্ষা
- কোলনোস্কপি
- সিগমোইডিস্কপি
- রক্ত পরীক্ষা।
উক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট ডাক্তার ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করে দেখবেন এরপরে তিনি আপনার সঠিক রোগটির চিকিৎসা প্রদান করে এই রেক্টাল ব্লিডিং সারানোর উপায় বলে দিবেন।
শিশুর পায়খানার সাথে রক্ত গেলে করণীয়
আপনারা অলরেডি পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক নয়, শিশুদেরও পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। শিশুর পায়খানার সাথে রক্ত গেলে করণীয় কি তা জেনে নেওয়া যাক।
যেসব খাবার যেমন: টমেটো, স্ট্রবেরি শিশুদের দেহের মধ্য থেকে রক্ত সৃষ্টি করে আনতে পারে সে সমস্ত খাবার ভালোভাবে পরীক্ষা করে শিশুকে খেতে দিন।
বিভিন্ন কারভে শিশুর নাক, গলা, ও মুখগহ্বরে রক্ত জমে থাকতে পারে। সেই জমাট বাধার রক্ত খাবারের সাথে মিশে মল দাঁত দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। তাই শিশুর নাক, কান, গলা ভালোভাবে পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করুন।
শিশুদের শক্ত পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার সমস্যাটি অতি সাধারণ। অর্থাৎ পায়খানা কষা হলে রক্ত পড়ে। এজন্য শিশুদের সবসময় নরম ও সহজে চিবানো যায় এমন খাবার খেতে দিতে হবে।
অল্প বয়সী শিশুদের খাবার সহ্য না হলে রক্ত আমাশয় হতে পারে। তাই রক্ত আমাশয়ের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিন।
শিশুর মলদ্বারের প্রাচীরে পলিপ সৃষ্টি হয় যার সাথে রক্ত লেগে থাকে। ফলে পায়খানার সাথে রক্ত যেতে দেখা যায়। শিশুর দেহের অভ্যন্তরে এ ধরনের পলিপ সারানোর জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
গ্যাস্ট্রিক থেকে কি মলদ্বারে রক্তক্ষরণ কারণ?
হ্যাঁ, দীর্ঘদিন ধরে যদি গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসা না করা হয় তাহলে পাকস্থলিতে ক্ষত বা আলসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই ক্ষত থেকে রক্তপাত হলে রেক্ট্রাল ব্লিডিং হতে পারে। সেক্ষেত্রে পায়ুপথ দিয়ে কালো রক্ত নির্গত হবে। অতএব, গ্যাস্ট্রিক অবহেলা নয়। বলে রাখা ভালো, প্রেসক্রিপশন ছাড়া হরহামেশা গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ সেবন শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে।
লেখকের শেষ মতামত
পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় প্রত্যেকেরই জেনে রাখা জরুরী। শক্ত পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার বিষয়টি অনেকের সাথেই ঘটে থাকে। সেজন্য পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকা উচিত। বিভিন্ন কারণে পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে।
আর এ সমস্যাটি প্রায় সব বয়সী মানুষের ক্ষেত্রেই কম বেশি লক্ষণীয়। তাই পায়খানার সাথে রক্ত পড়া দেখলে অধিক বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার কারণ ও বন্ধ করার উপায় যদি আপনি ভালোমতো জেনে রাখেন তাহলে অনেক সহজেই এই সমস্যাটা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
এই ছিল আজকের পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায়য় সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করি পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় জানতে পেরেছেন।
এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় সম্পর্কে জানতে পারবে।