যে কোনো ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্যই ডোমেইন এবং হোস্টিংয়ের প্রয়োজন হয়। আমাদের এই ওয়েবসাইটটিও ডোমেইন ও হোস্টিং দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের মাঝে অনেকেই আছে সস্তা দামের ডোমেইন হোস্টিং খুঁজি। আবার অনেকেই ফেসবুকে বা কোথাও এড দেখে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে সস্তায় ডোমেইন হোস্টিং কিনে ওয়েবসাইট তৈরি করছি বা ইতোমধ্যেই করে ফেলেছি।
কিন্তু ভাবার বিষয় হলো, সস্তা দামের ডোমেইন হোস্টিং কিনে ওয়েবসাইট তৈরি করে কি আমরা আদৌ লাভবান হচ্ছি নাকি ঠকে যাচ্ছি? আসলে সস্তা দামের পেছনে ছুটা কতটুকু যুক্তিযোগ্য?
আমি প্রায় মানুষকেই দেখেছি, তারা সস্তা দামের ডোমেইন হোস্টিং খুঁজে। আমিও না জানার কারণে একসময় তাই করলাম। কিন্তু বেশীরভাগ মানুষই জানেনা, সস্তা দামের ডোমেইন হোস্টিং দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে যে আমরা নিজেরাই ঠকে যাচ্ছি।
হোস্টিং কি
আপনার ওয়েবসাইট গুলো ইন্টারনেটে আপনি কীভাবে দেখতে পান সেটি কি কখনো ভেবে দেখেছেন? এক বিশাল প্রযুক্তিগত জগৎ এর পিছনে আছে, আর সেই জগতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হল হোস্টিং। আপনার বোঝার সুবিধার জন্য আমি যদি আরও সহজ ভাবে বলতে চাই তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিং হল একটি ভার্চুয়াল বাড়ি।
এই বাড়িতে আপনার ওয়েবসাইটের সব তথ্য, ছবি, ভিডিও -সবকিছুই সংরক্ষিত থাকে। যখন কেউ ইন্টারনেটে আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানা টাইপ করে, তখন সেই অনুরোধ এই হোস্টিং সার্ভারে যায় এবং সার্ভার আপনার ওয়েবসাইটের তথ্য গুলোকে ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে পাঠিয়ে দেয়।
Web Hosting কাকে বলে?
মনে করুন, আপনি যেকোন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। আর আপনার ব্যবসার জন্যএকটি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন, যেখানে আপনার ব্যবসার পন্যের সমস্ত ডিটেইলস দেবেন। এই সাইটকে ইন্টারনেটে দেখানোর জন্য আপনাকে একটি হোস্টিং সার্ভারে জায়গা ভাড়া নিতে হবে।
এই সার্ভারে আপনার ওয়েবসাইটের সব ফাইল আপলোড করা হবে। যখন কেউ ইন্টারনেটে আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানা টাইপ করবে, তখন সেই অনুরোধ এই সার্ভারে যাবে এবং সার্ভার আপনার ওয়েবসাইটের পেজ গুলোকে ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে পাঠিয়ে দিবে।
প্রথমত, এটি অবশ্যই মনে রাখতে হবে কেন এবং কী উদ্দেশ্যে আপনি একটি ব্লগ অথবা ওয়েবসাইট তৈরি করছেন। যদি আপনার উদ্দেশ্য ব্লগিংকে একটি ব্যবসা হিসেবে গড়ে তোলা বা একটি ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়, তবে হোস্টিং সার্ভিস কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করাটা আবশ্যক। কারণ এটি আপনার অনলাইন ব্যবসা এবং সফলতা সম্পর্কিত।
সর্বদা মনে রাখবেন, ইন্টারনেটে অনেক ব্লগ এবং ওয়েবসাইট ইতোমধ্যে মজুদ আছে, যা গুণগতভাবে সম্পূর্ণ। তাই, যদি আপনি আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটকে এই বিশাল প্রতিযোগিতার মধ্যে উপস্থাপন করতে চান এবং এর একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চান, তাহলে আপনাকে সব দিক বিবেচনায় রেখে ব্লগিংয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর একটি ভালো ওয়েব হোস্টিং না কিনলে, এটি আপনার জন্য একটি বড় ভুল হতে পারে।
ওয়েবসাইটের জন্য ওয়েব হোস্টিং কেনার আগে যা জানতে হবে
নিজের ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিং নির্বাচন করা যতটা কঠিন মনে হয়, আসলে তা ততটা নয়। তবে যারা ব্লগিংয়ে নতুন, তাদের জন্য ভালো হোস্টিং বেছে নেওয়া কঠিন হতে পারে। তাই, তাদের জন্য নিচে পাঁচটি প্রধান পয়েন্ট ব্যাখ্যা করছি, যাতে আপনারা বুঝতে পারেন কী ধরনের হোস্টিং আপনার ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজন।
বর্তমানে প্রচুর হোস্টিং কোম্পানি গড়ে উঠেছে। কিন্তু এর মধ্যে সবথেকে সেরা সার্ভিস কোন কোম্পানি দেয় সেটা সহজে বের করা যায় না। এই অংশে আমরা দেখবো কোন কোম্পানি থেকে হোস্টিং কিনলে কোন কোন বিষয় গুলো বিবেচনায় আনা উচিত।
আমরা জানি যে একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইট তৈরি করার জন্য ডোমেইন কেনার সাথে সাথে একটি ওয়েব হোস্টিং অবশ্যই প্রয়োজন। তাই আমাদের এই দুটি প্রাথমিক জিনিস অবশ্যই ক্রয় করতে হয় একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইট তৈরি করার জন্য। কিন্তু হোস্টিং কেনার পূর্বে এরকম বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে যা আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে বা বিবেচনা করতে হবে।
নিচের বিষয়গুলো ভালো করে পড়ুন এবং আপনি কিভাবে নিজের নতুন ব্লগের জন্য একটি সেরা হোস্টিং কিনবেন, তা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাবেন।
১। প্রয়োজনীয়তা জানুন
সবার প্রথমে আপনাকে নিজের প্রয়োজনীয়তা বা উদেশ্য জানতে হবে, যে ঠিক কেন এবং কোন ধরণের ব্লগ সাইট আপনি তৈরী করতে চান। আপনার ও আপনার ব্লগ সাইটের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার জন্য ঠিক কোন কোন ফিচারস বা টুল প্রয়োজন পরবে তার প্রয়োজনীয়তা আপনাকে বুছতে হবে। কারণ আপনি যত ভালো ভাবে এই বিষয়গুলি বুছতে পারবেন আপনার সঠিক ওয়েব হোস্টিং নির্বাচন করতে তত সুবিধা হবে।
২। প্রথমবারের চার্জ এবং নবায়নের খরচ
আজকাল, বেশিরভাগ নামকরা হোস্টিং কোম্পানি আপনাকে প্রথমবার ক্রয়ের সময় উল্লেখযোগ্য ডিসকাউন্ট দেয়। অর্থাৎ, যখন আপনি প্রথমবারের জন্য হোস্টিং প্যাকেজ কিনবেন, তখন প্রায় ৩০% থেকে ৫০% ডিসকাউন্ট পাওয়ার সুযোগ থাকে। এই ক্ষেত্রে, চেষ্টা করবেন যাতে আপনি একবারে ৬ মাস কিংবা ১ বছরের জন্য হোস্টিং কনফার্ম করেন।
এতে আপনি উন্নত সংখ্যায় ছাড় লাভ করবেন। শেষ পর্যন্ত, ব্লগ বা ওয়েবসাইটের জন্য ওয়েব হোস্টিং ক্রয়ের পূর্বে সর্বদা হোস্টিংয়ের অফার ও ছাড় সম্পর্কে গুগলে অনুসন্ধান করে নিশ্চিত করুন। কিন্তু, শুধুমাত্র প্রথমবারের কেনাকাটার ছাড় দেখলেই আপনার কাজ হবে না। আপনাকে রিনিউয়ালের (Renew) খরচও খতিয়ে দেখতে হবে।
৩। ব্যান্ডউইথ লিমিট
ব্যান্ডউইথ হল হোস্টিং সার্ভার দ্বারা প্রদান করা নির্দিষ্ট মাসিক ডেটা যা একটি ওয়েবসাইট তার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দর্শকদের কাছে সরবরাহ করতে পারে। একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের জন্য কত পরিমান ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন তা সেই সাইটের পেজের সাইজ ও সাইট ট্রাফিকের ওপর নির্ভর করে।
তাই হোস্টিং কেনার সময় এই বিষয়টির দিকেও একটু নজর রাখবেন এবং ১০ জিবি বা তার বেশি ব্যান্ডউইথ প্রদান করে। এরকম কোনো হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকেই ওয়েব হোস্টিং ক্রয় করুন।
৪। আপটাইম এবং ডাউনটাইম
আপটাইম এবং ডাউনটাইম সম্পর্কে সচেতন থাকুন। আপটাইম বলতে বোঝায় সেই সময়কাল যখন আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ সংযুক্ত ওয়েব সার্ভার ইন্টারনেটে সচল থাকে। অপরদিকে, ডাউনটাইম হচ্ছে সেই সময় যখন ওয়েব সার্ভার অনলাইনে নেই, ফলে আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটও খোলে না।
সার্ভার বা ওয়েবসাইট ডাউন থাকার কারণে আপনার ব্লগে আশা করা দর্শকরা সাইটটি সম্পন্ন ভিজিট করতে পারবেন না, যা আপনার ওয়েবসাইটের সুনামের জন্য ক্ষতিকর। যদি খুব বেশি ডাউনটাইম হয়, তাহলে গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটকে সঠিকভাবে র্যাঙ্কিং দিতে পারেনা।
এছাড়াও, যদি আপনি গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় করছেন, সেক্ষেত্রে সেটিও ব্যাহত হতে পারে।
এজন্য, যেখানে হোস্টিং কিনতে যাচ্ছেন, আগে সেই হোস্টিং প্রোভাইডারের আপটাইম ও ডাউনটাইম ইতিহাস সম্পর্কে জানুন। আপনি গুগলে অনুসন্ধান করে এর পর্যালোচনা জানানোর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
৫। কাস্টমার সাপোর্ট কোয়ালিটি
ক্রেতা সমর্থনের মান সম্পর্কে সচেতন থাকুন। যদি আপনি একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট গড়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনার হোস্টিং কোম্পানির সাহায্য লাগবে, এটা নিশ্চিত। কারণ, সবকিছু নিজে করা সম্ভব নাও হতে পারে।
তাই, নিশ্চিত করুন যে আপনার ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি ২৪/৭ যেকোনো সময় সাহায্য করতে প্রস্তুত। যখনই আপনি হোস্টিং সংক্রান্ত কোন সমস্যার সম্মুখীন হন, তখন তাদের থেকে দ্রুত সমাধান পাওয়ার আশা রাখবেন। এটি মানসম্পন্ন ও সেরা ওয়েব হোস্টিংয়ের একটি প্রধান চিহ্ন।
৬। ওয়েব স্পেস বা হোস্টিং স্টোরেজ
এটি হল ওয়েব সার্ভারের হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ বা স্টোরেজ যেখানে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের সমস্ত ফাইল স্টোর করে রাখেন। হোস্টিং স্টোরেজের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন কম করে ১০ জিবি স্টোরেজ প্রদান করছে কিনা এবং HDD নাকি SSD স্টোরেজ অফার করছে।
অবশ্যই SSD স্টোরেজের সাথে যাওয়ার চেষ্টা করুন কারণ SSD অনেক ক্ষমতাশীল এবং দ্রুত ফাইল ট্রান্সফারে সক্ষম। তাই এতে আপনার ওয়েবসাইটের পারফরমেন্স এবং স্পিড দুটিই ভালো হবে।
৭। ডোমেইন এবং ইমেইল ব্যবহারের সীমা
হোস্টিং কেনার সময় অবশ্যই এই বিষয়টিতে নজর দিন যে আপনি তার মধ্যে কতগুলি ডোমেইন এবং ইমেইল একাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেন। এরকম অনেক হোস্টিং প্রোভাইডার আছে যারা তাদের হোস্টিং প্ল্যান অনুযায়ী একটি বা সীমিত ডোমেইন এবং ইমেইল একাউন্ট ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
তাই হতে পারে ভবিষ্যতে আপনি আরো একটি ব্লগ সাইট তৈরী করতে চান তাই সেই বিষয়টির ওপর পরিকল্পনা করে হোস্টিং ক্রয় করুন।
৮। কাস্টমার সাপোর্ট
হোস্টিং অথবা ওয়েবসাইটে যদি কখনও প্রবলেম হয় তাহলে আপনার অবশ্যই কাস্টমার সাপোর্টের দরকারপরবে। আর এই সময় প্রোভাইডারের সাপোর্ট পেতে বেশি সময় লাগে তাহলে আপনার সাইট বেশ কিছু সময়ের জন্য ডাউন হয়ে যাবে এবং অনেক ভিসিটর্স হারাবেন।
তাই যেখান থেকে হোস্টিং নেবেন তাদের কাস্টমার সাপোর্ট যাতে ২৪ ঘন্টা পাওয়া যায় সেই বিষয়টিতে অধিক গুরুত্ব দেবেন।
৯। মানি ব্যাক গ্যারেন্টি বা রিফান্ড পলিসি
প্রায় সমস্ত জনপ্রিয় হোস্টিং প্রোভাইডার এই সার্ভিস প্রদান করে থাকে আর যা আপনার জন্য একটি ভালো সুযোগ হতে পারে সঠিক হোস্টিং ও প্রোভাইডার নির্বাচনের জন্য। কারণ তাদের সার্ভিস পছন্দ না হলে আপনি আপনার টাকা ফেরতের আবেদন করতে পারেন।
১০। সাইন আপ এবং রিনিউয়াল খরচ
যখন আমরা নতুন কোনো হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকে হোস্টিং নিয়ে থাকে সেই সময় প্রথমবার হোস্টিং ক্রয় করার জন্য অনেক কম দাম নিয়ে থাকে।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষের পর যখন হোস্টিং রিনিউয়াল করার সময় আসে তখন যেই দামে হোস্টিং ক্রয় করা হয়েছিলো ঠিক তার দু-তিন গুন্ বেশি দাম ধার্য করা হয়। তাই কম দামে হোস্টিং প্রদান করছে এরকম ফাঁদে পরার আগে তার সাইন উপ এবং রিনিউয়াল কস্ট অবশ্যই জেনে নেবেন।
১১। হোস্টিং প্ল্যান আপগ্রেড
যখন আপনার ব্লগ সাইট বা ওয়েবসাইটটি জনপ্রিয়তা পাবে তখন আপনি হয়তো চেষ্টা করবেন যে আরো একটু উচ্চ মানের হোস্টিং প্ল্যান নিতে। তাই ভবিষ্যতে হোস্টিং প্ল্যান আপগ্রেডের কথা ভেবে অবশ্যই জেনে নেবেন যে তা করা সম্ভব হবে কিনা। যদিও এখন প্রায় সমস্ত হোস্টিং প্রোভাইডার এই সুযোগ দিয়ে থাকে তাও একবার বিষয়টি জানার চেষ্টা অবশ্যই করবেন।
১২। অনলাইন রিসার্চ করুন
হোস্টিং কেনার পূর্বে যতটা সম্ভব ভালো ভাবে হোস্টিং প্ল্যান ও প্রোভাইডার সম্পর্কে প্রতিটি জিনিস ভালো ভাবে অনলাইন রিসার্চ করেনিন। আপনি অনলাইন রিভিউ থেকে খুব সহজেই জানতে পারবেন কোন হোস্টিং প্ল্যান ও প্রোভাইডার আপনার জন্য ভালো ও বিশ্বাসযোগ্য হবে।
১৩। পর্যালোচনা ও রেটিং যাচাই করুন
যে কোন হোস্টিং কোম্পানির থেকে ওয়েব হোস্টিং প্যাকেজ গ্রহণ করার আগে, আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কোম্পানিটির হোস্টিং গুণমান, জনপ্রিয়তা এবং বাজারে তার অবস্থান কিরকম।
এই বিষয়ে তথ্য জানতে আপনি গুগলে কোম্পানির নাম সার্চ করে বিভিন্ন পর্যালোচনা পড়তে পারেন। যদি কোম্পানির জনপ্রিয়তা এবং বাজারে একটি পরিচিত নাম থাকে, তাহলে এটি সুনিশ্চিত যে, এটি আপনার জন্য একটি চমৎকার এবং উচ্চমানের হোস্টিং প্রদানকারী হিসেবে প্রমাণিত হবে।
কারণ, খ্যাতি, জনপ্রিয়তা এবং স্থিতিশীলতা একদিনে তৈরি হয় না। একটি কোম্পানি বহু নিষ্ঠা ও কাজের পরেই নাম অর্জন করে। আমি নিজে আমার ব্লগের জন্য উপযুক্ত হোস্টিং খুঁজতে অনেক চিন্তিত ছিলাম।
তবে, পরে বিভিন্ন কোম্পানির তথ্য গুগলে খোঁজার পর, আমি আমার ব্লগের জন্য সঠিক হোস্টিং নির্বাচন করতে সক্ষম হলাম। তাই, যে কোনো হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সবসময় পর্যালোচনা ও রেটিং যাচাই করা উচিত।
তার মানে এখন বুঝতেই পারছেন যে হোস্টিং কেনার আগে অবশ্যই কোম্পানির রিভিউ দেখে নিতে হবে। তাদের হোস্টিং এর পারফরম্যান্স কেমন, সাপোর্ট টিম কেমন, সার্ভিস কেমন ইত্যাদি সব কিছু রিভিউ দেখলে জানতে পারবেন। ফেসবুক গ্রপে পোস্ট করার মাধ্যমে রিভিউ নিতে পারেন।
১৪। নিরাপত্তা ও ব্যাকআপ
নিরাপত্তা এবং ব্যাকআপের বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। বাজেটের কারণে অনেকেই স্থানীয় এবং অপরিচিত হোস্টিং পরিকল্পনা কিনে ফেলেন। কিন্তু, এটি পরে আপনার ব্লগের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
কারণ, যেখান থেকে আপনি হোস্টিং নিচ্ছেন সেই সার্ভারটি অনলাইন ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারের শিকার হতে পারে। যদি আপনার হোস্টিং প্রদানকারী স্বয়ংক্রিয় ওয়েবসাইট ব্যাকআপ এবং পুনরুদ্ধারের সুযোগ না দেয়, তাহলে আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট নিরাপদ নয়।
যদি আপনার ব্লগে কিছু অনলাইন ভাইরাস আক্রমণ করে, তখন ব্যাকআপ এবং পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন। সুতরাং, হোস্টিং ক্রয়ের কথা ভাবার সময় এমন Provider থেকে ওয়েব হোস্টিং নির্বাচন করুন যারা বিনামূল্যে ওয়েবসাইট ব্যাকআপের সুবিধা প্রদান করে।
ওয়েবসাইটের জন্য সিকিউরিটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সহজেই ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে যায়। ওয়েবসাইটের মালিক সতর্ক থাকলেও কোম্পানির জন্য ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে যেতে পারে। তাই যে কোম্পানি থেকে কিনবেন তারা কেমন সিকিউরিটি দিবে সেই বিষয়টি যেনে নিবেন।
১৫। ডেটা সেন্টার সার্টিফিকেসন
একটি ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি জন্য সার্টিফাইড ডেটা সেন্টার ওয়েব হোস্টিং প্রয়োজন। এটি আপনার ওয়েবসাইটকে এবং আপনার ডাটার সিকিউরিটি সুরক্ষা দিবে। ওয়েব হোস্টিং এ ডেটা সেন্টার সার্টিফিকেসন আছে কিনা তা জানা জরুরী।
হোস্টিং কেনার সময় সাধারণত এই সমস্ত বিষয়গুলি যদি আপনি মাথায় রাখেন তাহলে কখনোই সঠিক হোস্টিং নির্বাচনে ভুল হবেন না। তবে আমরা আপনার সুবিধার জন্য ওয়েবসাইটের জন্য ওয়েব হোস্টিং কেনার আগে আরও অতিরিক্ত কিছু বিষয় উল্লেখ করে দিচ্ছি যেটা খেয়াল করলে আরও সুবিধা হবে।
ওয়েবসাইট ট্রাফিক মনিটরিং টুলস: ওয়েব সাইট এর ট্রাফিক মনিটর করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার ওয়েবসাইট গ্রো করার সিক্রেট খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। আপনার পছন্দ করা ওয়েব হোস্টিং ওয়েবসাইট ট্রাফিক মনিটরিং টুলস এর ব্যবস্থা আছে কিনা তা জানতে হবে।
অটো ব্যাকআপ সিস্টেম: যদি কোন দুর্ঘটনা বসত ওয়েবসাইটের ডাটা মুছে যায় তাহলে অটো ব্যাকআপ সিস্টেম থাকলে আপনি পরবর্তীতে মুছে যাওয়া ডাটা রিকভারি করতে পারবেন। সুতরাং অটো ব্যাকআপ সিস্টেম ওয়েব হোস্টিং সুবিধা দেয় কিনা তা জানতে হবে।
হোস্টিং এর এডিশনাল ফিউচার: একটি ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে এডিশনাল ফিচার যেমন ইমেইল হোস্টিং সুবিধা, ফ্রি ওয়েবসাইট বিল্ডার, ফ্রি উন্নতমানের ডোমেইন প্রোভাইড করে এমন হোস্টিং ব্যবহারে সহজ করে।
হোস্টিং স্কেলেবিলিটি: আপনার ওয়েবসাইট এর ট্রাফিক যদি ওয়েব হোস্টিং এর ধারণ ক্ষমতার বাইরের চলে যায় তাহলে হোস্টিং আপডেট করতে হবে। এমন অবস্থায় হোস্টিং এর স্টেবিলিটি সুবিধা আছে কিনা তা জানতে হবে জেনে হোস্টিং ক্রয় করা উচিত।
হোস্টিং এর সার্ভার লোকেশন: একটি ওয়েবসাইটের টার্গেট অডিয়েন্স এর জন্য লোকেশন ভিত্তিক হোস্টিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন আপনার যদি USA ট্রাফিক টার্গেট হয় তাহলে ইউএসএ সার্ভারের ওয়েব হোস্টিং ক্রয় করতে হবে।
কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক: ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের কাছে দ্রুত গতিতে এবং নিরাপদে কন্টেন্ট পৌঁছানোর জন্য সিডিএন ব্যবহার করা হয়। এটি ওয়েব সাইটের পারফরমেন্স উন্নত করতে এবং হাই সিকিউরিটি সমর্থন করে।
ওয়েব হোস্টিং এর ইমেইল: আপনার ব্যবসা বৃদ্ধি করতে প্রফেশনাল ইমেইল ব্যবহার করা প্রয়োজন।আপনার পছন্দের ওয়েব হোস্টিং টি প্রোফেশনাল ইমেইল সুবিধা সহ ইস্পেন সিকিউরিটি, এবং ইমেল স্পেস সম্পর্কে জানতে হবে।
ই কমার্স সাপোর্টিং: সকল ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলোতে ই-কমার্স সাপোর্ট সিস্টেম, ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি সিস্টেম, এস এস এল সার্টিফিকেট, পেমেন্ট সিস্টেম, গেটওয়ে সিস্টেম সকল বিষয় থাকা প্রয়োজন। আপনার যদি ই-কমার্স ওয়েবসাইট হয় তাহলে এসব বিষয় হোস্টিং এর আছে কিনা জানতে হবে।
ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক সাপোর্টিং: ওয়েবসাইট ডেভেলপ করার জন্য ফ্রেমওয়ার্ক ও প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন পিএইচপি, পাইথন, রুবি, জাভা স্ক্রিপ্ট ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। ওয়েব হোস্টিং কেনার আগে তা জানতে হবে।
ল্যাঙ্গুয়েজ সিস্টেম সাপোর্টিং: ওয়েব হোস্টিং একাধিক ভাষা সমর্থন করে এমন ওয়েব হোস্টিং নির্বাচন করুন। যা আপনার ওয়েবসাইটের উন্নত মানের ডেভেলপমেন্ট তে সহযোগী হবে।
ওয়েবসাইট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট টুলস: ওয়েবসাইটে ট্রাফিক মনিটরিং করা এবং পারফরম্যান্স টাইপ করা প্রয়োজন। ওয়েবসাইট ট্রাফিক মনিটরিং সিস্টেম, পারফরমেন্স ট্র্যাকিং, গুগল অ্যানালাইটিস ইত্যাদি টুলস প্রোভাইড করে এমন ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দেখে ওয়েব হোস্টিং ক্রয় করুন।
রিফান্ড প্রাইভেসি পলিসি: মানিব্যাক সমর্থন করে এমন ওয়েব হোস্টিং দেখে ক্রয় করার চেষ্টা করুন।
আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট বিল্ডার টুলস: এমন কিছু ওয়েবসাইট আছে যেগুলো নতুন ওয়েবসাইট বিল্ড করতে সহজ পদ্ধতির টুলস দেয় যেমন ড্রাগ এন্ড ড্রপ ইজি টুলস। গুলো ব্যবহার করে কোনরকম কোডিং ছাড়াই সহজেই আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। এমন ফিচার এর ওয়েব হোস্টিং দেখে নিন।
ওয়েব হোস্টিং ইকো ফ্রেন্ডলি: আপনার যদি ওয়েবসাইট পরিবেশবান্ধব হয় তাহলে আপনার প্রয়োজন ইকো ফ্রেন্ডলি হোস্টিং যা একটি গ্রীন ওয়েব হোস্টিং।
বাংলাদেশের সেরা ডোমেইন হোস্টিং কোম্পানি কোনটি
বাংলাদেশের সেরা ডোমেইন হোস্টিং কোম্পানি কোনটি সেই সম্পর্কে জেনে আমাদের ওয়েবসাইটের জন্য সবচেয়ে ভালো হোস্টিং প্রোভাইডার নির্বাচন করতে পারি। বর্তমান সময়টা হলো ইন্টারনেটের যুগ। আর এই ইন্টারনেটের যুগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ওয়েবসাইট থাকা অপরিহার্য।
কিন্তু যখন আপনি অনলাইনে উপস্থিতি তৈরি করার কথা ভাববেন, তখন শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইট তৈরি করলেই হবেনা। বরং আপনার ওয়েবসাইটের ডেটা সংরক্ষণ এবং বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীদের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য করার জন্য একটি হোস্টিং প্রোভাইডার প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের সেরা হোস্টিং কোম্পানি হচ্ছে Dianahost (ডায়ানাহোস্ট)। যেখান থেকে আপনি নিশ্চিন্তে হোস্টিং ক্রয় করতে পারবেন এবং আপনার ওয়েবসাইটকে পরিচালনা করতে পারবেন।
নতুনদের জন্য হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচন করা কতটা কঠিন, তা আমরা সবাই জানি। বাজারে অজস্র হোস্টিং প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ভিড়ে সঠিক কোম্পানি খুঁজে বের করা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। তবে এবার আমি আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেব বাংলাদেশের অন্যতম হোস্টিং প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ডায়ানা হোস্টের সাথে।
২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে, ডায়ানা হোস্ট আজ ১৬,০০০+ গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করেছে। ডোমেইন, হোস্টিং, রেডি-মেড ওয়েবসাইট, SSL সার্টিফিকেট এবং বাল্ক এসএমএস সার্ভিস সহ তারা প্রদান করে সম্পূর্ণ ওয়েব সমাধান। আর তাদের কাস্টমার সাপোর্ট সেই সকল মানুষের জন্য অনেক উপযোগী, যারা একবারে নতুন ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করছেন।
আপনি বিকাশ, রকেট, নগদ, PayPal, Visa Card, Mastercard, এবং সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়ানাহোস্টকে পেমেন্ট করতে পারবেন।
এতগুলো হোস্টিং পণ্য থেকে আপনি কি নির্বাচন করবেন?
যদি আপনি একটি নতুন ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন, তাহলে শেয়ার্ড হোস্টিং দিয়ে শুরু করতে পারেন। শেয়ার্ড হোস্টিং আপনি খুব কম মূল্যে পেয়ে যাবেন। তবে, শেয়ার্ড হোস্টিং নেওয়ার সময় নিশ্চিত করুন যে আপনি একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠিত এবং স্বস্তিদায়ক জায়গা থেকে এটির কেনার চেষ্টা করছেন।
এছাড়া, যদি আপনি একটি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরির কথা ভাবছেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো বিকল্প হবে ওয়ার্ডপ্রেস অপ্টিমাইজড হোস্টিং। ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিংটি শেয়ার্ড হোস্টিংয়ের তুলনায় একটু ব্যয়বহুল, কিন্তু এটি অনেক বেশি কার্যকরী এবং সব দিক থেকে সক্ষম।
আপনার ওয়েবসাইটটি দ্রুত এবং কার্যকরী হবে, ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিংয়ে আপনাকে স্বয়ংক্রিয় ওয়েবসাইট ব্যাকআপের সুবিধা দেওয়া হয়, ম্যালওয়ার এবং ভাইরাস স্ক্যানের সুবিধা থাকে এবং RAM আপনার ওয়েবসাইটের শক্তি বৃদ্ধি করে।
এই হোস্টিং শুধুমাত্র ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের জন্য এবং যদি আপনি একটি ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ শুরু করতে যাচ্ছেন, তাহলে আমি আপনাকে এই হোস্টিং নেওয়ার পরামর্শ দেব।
অন্যদিকে, আপনি ক্লাউড হোস্টিংকেও বিবেচনা করতে পারেন। ঠিক ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিংয়ের মতো, ক্লাউড হোস্টিংও অনেক দ্রুত, শক্তিশালী এবং বিভিন্ন ধরনের ব্লগ বা ওয়েবসাইটের জন্য ব্যবহার উপযোগী। বর্তমানে ক্লাউড হোস্টিং তার দ্রুত কর্মক্ষমতার জন্য বেশি জনপ্রিয়।
এই ধরনের হোস্টিং নিরাপদ এবং আপনার প্রয়োজন অনুসারে এর ক্ষমতা বাড়ানো ও কমানো সম্ভব। তাছাড়া, আপটাইমের দিক থেকে এখানে আপনার লাভ হবে, কারণ ক্লাউড ভিত্তিক হোস্টিংয়ে ডাউনটাইম অনেক কম থাকে। এর মূল্য শেয়ার্ড হোস্টিংয়ের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে, যদি আপনি আপনার ব্লগ ও অনলাইন ব্যবসার ব্যাপারে সিরিয়াস হন, তাহলে এই ধরনের হোস্টিং আপনার জন্য লাভজনক হবে।
শেষে, যদি আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন কোন ওয়েব হোস্টিং ভাল হবে, আমি বলব ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং বা ক্লাউড হোস্টিং—দুটি উভয়ই ভালো এবং সকল দিক থেকে সক্ষম। এগুলো দ্রুত, কার্যকরী, কম ডাউনটাইম, প্রায় সবসময় স্বয়ংক্রিয় ব্যাকআপের সুবিধা থাকে, শক্তিশালী এবং উচ্চ ট্রাফিক সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে।
লেখকের শেষ মতামত
একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই হোস্টিং প্রয়োজন। এছাড়া ওয়েবসাইটের ৫০% পারফরম্যান্স হোস্টিং এর উপর নির্ভর করে। তাই ভালো মানের হোস্টং কেনা অনেক জরুরী। উপরে আমরা হোস্টিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
হোস্টিং কেনার সময় সাধারণত এই সমস্ত বিষয়গুলি যদি আপনি মাথায় রাখেন তাহলে কখনোই সঠিক হোস্টিং নির্বাচনে ভুল হবেন না। বর্তমান সময়ে ওয়েবসাইট আমাদের জন্য অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর একটি ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে হোস্টিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে আজকের আর্টিকেলে আমি হোস্টিং কি ও হোস্টিং কেনার আগে বিবেচ্য বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত বলেছি।