শিশুমৃত্যুর যত কারণ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মারাত্মক। অর্থাৎ পাতলা পায়খানা হলে শিশুর প্রাণনাশের আশংকা দেখা যায় বেশি। অন্য বয়সীদের মধ্যে ডায়রিয়া প্রাণ সংশয়ের সৃষ্টি না করলেও ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এটা এক ভয়ানক রোগ। তাই সতর্ক থাকতে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ, পাতলা পায়খানার সময় করণীয় সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত।
এই বিষয়গুলো জানা থাকলে বাচ্চার জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়। সাধারণত জীবাণু পেটে যাবার কারণে শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার মত অসুখ হয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে পাতলা পায়খানা চিন্তার কারণ হয়ে দাড়ায়। কেননা, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা থেকে সৃষ্ট পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম, বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করনীয় ও শিশুদের যত্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আপনারা উপকৃত হবেন।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ
বাচ্চাদের যখন পাতলা পায়খানা দেখা দেয় তখন বাবা-মা অনেক চিন্তিত হয়ে যায়। আপনার বাচ্চার পাতলা পায়খানা দেখা দিলে আপনি যে সিরাপটি ব্যবহার করবেন সে নিয়ে আজকের আলোচনা। শিশুর পাতলা পায়খানা দেখা দিলে এই সিরাপটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
যদি বেশি পাতলা পায়খানা হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে অবশ্যই। পাতলা পায়খানা দূর করতে চান এবং শিশুকে মুক্তি প্রদান করতে চান তাহলে পাতলা পায়খানা এই সিরাপ গুলো ব্যবহার করতে পারেন যেকোনো একটি। পাতলা পায়খানার সিরাপ এর নাম নিচে দেওয়া হল।
- জিংক সিরাপ [zinc Syrup]
- সিপ্রোসিন সিরাপ [Ciprocin Syrup]
- এমোডিস সিরাপ [Amodis Syrup]
- যক্স সিরাপ [Zox Syrup]
- ফিলমেট সিরাপ [Filmet Syrup]
- নাইটানিড সিরাপ [Nitanid Syrup]
বিঃদ্রঃ এই সিরাপ সমূহ নিবন্ধিত ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত গ্রহণ করা যাবে না।
উপরে দেওয়া ৬ টি সিরাপ খাওয়াতে কোন প্রকার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে না। এবং কোন রকম বিশেষজ্ঞদের নিকট যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। আপনি যদি আপনার বাচ্চার পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া দূর করতে চান তাহলে অবশ্যই এই ৬ টি সিরাপ এর মধ্যে যে কোন ১ টি সিরাপ আপনার শিশুকে সেবন করাতে পারেন।
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া দূর করার জন্য এই ৬ টি সিরাপ অনেক বেশি কার্যকারী এবং পরীক্ষিত। তাই এই ৬টি সিরাপ এর মধ্যে যেকোনো ১ টি সিরাপ বাচ্চাকে গ্রিহন করালে পাতলা পায়খানা সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এভাবে আপনি আপনার শিশুকে মোট ৩ দিন সিরাপ গুলো খাওয়াবেন এবং আপনি যদি একটানা ৩ দিন এইগুলো খাওয়ান তাহলে আপনার শিশু বাচ্চাটি ডায়রিয়া থেকে সুস্থ হয়ে যাবে।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ঔষধ
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা ওষুধের নাম এর অভাব নেই।তবে অবশ্যই কোন ওষুধ কোন কাজে লাগে তা জেনেই আপনাকে বাচ্চাকে ওষুধ সেবন করানো উচিত।তাই আপনাদের জন্য নিম্নে কিছু বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম দেয়া হলো
- স্যালাইন ORS [Oral Rehydration Solution]
- জিংক ট্যাবলেট [Zinc tablets]
- এজিথ্রোমাইসিন [Azithromycin]
- লোপেরামাইড [Loperamide]
- সিপ্রোফ্লক্সাসিন [Ciprofloxacin]
- অ্যামোক্সিসিলিন [Amoxicillin]
- এমোডিস [Amodis]
- ফ্লাজিল [Flagyl]
- এসপিরিন [Aspirin]
বিঃদ্রঃ এই সিরাপ সমূহ নিবন্ধিত ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত গ্রহণ করা যাবে না।
উল্লিখিত ওষুধের আপনার বাচ্চার পাতলা পায়খানা দূর করে দেবে এবং আমার সাথে কেউ মুক্তি প্রদান করবে। যদি কোন শিশুর পাতলা পায়খানা দেখা দেয় তাহলে এই ওষুধের মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করাতে পারেন।
পায়খানা ও আমাশা হওয়ার পর আপনার শিশু শারীরিক ঘাটতি পূরণ করার জন্য শিশুকে স্যালাইন প্রদান করতে হবে যার মাধ্যমে শারীরিক ঘাটতি পূরণ হবে বাচ্চার। উপরের ওষুধ গুলো ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে ২-৩ এক চামচ করে প্রদান করতে হবে। এভাবে ২/৩ দিনে প্র শিশু সুস্থ হয়ে যাবে।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার এন্টিবায়োটিক
এখানে পাতলা পায়খানার জন্য কিছু এন্টিবায়োটিক ওষুধের নাম দেওয়া হলো-
- সিপ্রোফ্লক্সাসিন [Ciprofloxacin]
- মেট্রোনিডাজল [Metronidazole]
- অ্যাজিথ্রোমাইসিন [Azithromycin]
বিঃদ্রঃ এই এন্টিবায়োটিক ওষুধ সমূহ নিবন্ধিত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা যাবে না।
আমরা যদি প্রথম থেকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে তাহলেই, নিজের বাচ্চাকে পাতলা পায়খানার মতো রোগ থেকে নিরাপদে রাখতে পারব। বাঁচার কিছু হলেই আমরা প্রথমেই ওষুধের পিছে দৌড়াই। আপনি বাজারে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম পেয়ে যাবেন।
তবে আমাদের আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করলে এই রোগ থেকে নিরাময় হওয়া সম্ভব। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো যদি আমরা মেনে চলি তাহলেই, আমাদের বাচ্চাকে পাতলা পায়খানার মতো রোগ থেকে বাঁচাতে সক্ষম হব।
পাতলা পায়খানা এবং ডায়রিয়ার লক্ষণ
সাধারণত বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার চেয়ে ডায়রিয়া অধিক ক্ষতিকর হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থার পরে যখন পাতলা পায়খানা চলমান থাকে তখন তা পরবর্তীতে ডায়রিয়ায় রুপ নেয়। এখানে পাতলা পায়খানা এবং ডায়রিয়ার লক্ষ্মণগুলো দেওয়া হলো।
- তরল পানির মত মলত্যাগ হওয়া
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে মলের সাথে ব্লাড আসা
- নিয়মিত বা অনিয়মিত বমি হওয়া
- শরীর ঝাঁকুনি দেওয়া
- তলপেটে প্রচুর ব্যাথা অনুভব করা
- ডিহাইড্রেশান
- শরীর নেতিয়ে যাওয়া
- শরীরে শক্তি না পাওয়া
- কখনো কখনো অচেতন হয়ে যাওয়া
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণ
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা বিষক্রিয়া হওয়ার কারণে অনেক সময় বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হতে পারে। কখনো কখনো পেটের সংক্রমণের কারণে এই সমস্যা কমবেশি হয়ে থাকে। কিছু কিছু বাচ্চার খাবারে অ্যালার্জি জনিত সমস্যার কারণেও পাতলা পায়খানা হতে পারে। এখানে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো।
শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া তীব্র হলে চাল ধোয়া পানির মতো পায়খানা নির্গত হয়। বাজারে আপনি বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম ও বিভিন্ন ওষুধ পাবেন। তবে সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যান।
শীতকালে ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুদের পাতলা পায়খানা রোগ বেশি হয়। ‘কিন্তু যদি পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত, জ্বর, প্রচণ্ড পেটব্যথা বা কামড়ানো, পিচ্ছিল মল, মলত্যাগে ব্যথা ইত্যাদি জটিল অবস্থা সৃৃষ্টি হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
আপনাকে অনেকেই বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম বলবে, তবে সাধারণ পাতলা পায়খানা হলে আপনি নিজেই বাসায় বসে নিজের অথবা নিজের শিশুর চিকিৎসা করতে পারেন।
১। অ্যালার্জি জনিত খাবার খাওয়ানো
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চারা যখন মায়ের দুধ ছেড়ে প্রথবারের মত অন্য খাবার খাওয়া আরম্ভ করে তখন অনেক খাবারেই তাদের অ্যালার্জি সমস্যা হয় থাকে। এটাকে মূলত বলা হয় ফুড অ্যালার্জি যার লক্ষ্মণ প্রকাশ পায় বাচ্চার মুখ এবং চোখ সহ ঠোঁটের কোন কোন অংশে।
ফুড অ্যালার্জি দেখা দিলে বাচ্চাদের মুখ ঠোঁট এবং চোখ অস্বাভাবিক ফুলে উঠতে পারে অথবা কখনো কখনো বমি হতে পারে। আবার কখনো কখনো এর লক্ষ্মণ প্রকাশ পায় ত্বকের বিভিন্ন অংশে লাল রঙের ছোপ চাকা চাকা দাগ দেখা যায় এবং পাতলা পায়খানা শুরু হয়।
২। সুক্রোজ যুক্ত খাবার ও পানীয় হজমে ব্যর্থ হলে
সুক্রোজ হলো টেবিল সুগার অথবা সাদা চিনি যা খাওয়ার পরে বাচ্চাদের অনেক সময় পাতলা পায়খানা হতে পারে। আবার ফ্রুক্টোজহলো শর্করা জাতীয় পদার্থ যা ফলমূল, মধু ও বিভিন্ন প্রকার জুসে মিশ্রিত থাকে। এই ফ্রুক্টোজ আপনার বাচ্চার পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে।
৩। অত্যাধিক গরম আবহাওয়া
আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে অত্যাধিক গরমের বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হতে পারে। তাই এই সময়ে বাচ্চাদের প্রতি খেয়াল রাখা এবং যত্নশীল হওয়া প্রত্যেক বাবা মায়ের দায়িত্ব। এই গরমে বাচ্চারা যেন ডিহাইড্রেটেড না হয়ে যায় সেদিকে মনোযোগী হওয়া এবং সবসময় বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখাটা খুবই জরুরি।
৪। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার মতো রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। সাধারণত দুই বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা বেশ লক্ষণীয়। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পলে সৃষ্টি হওয়া পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ীত্ব হতে পারে।
- শিশুকে কখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে
- ডিহাইড্রেশানের লক্ষ্মণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে
- পাতলা পায়খানার স্থায়ীত্ব ২ দিনের বেশি হলে
- বাচ্চার শরীরর জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে।
- মল ত্যাগ করার সময় মলের সাথে ব্লাড আসলে
- মলের রং অস্বাভাবিক বা কালো হলে
- বাচ্চা খাবার না খেলে
- দিনে ৩ থেকে ৪ বার পাতলা পায়খানা হলে
পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাওয়া যাবে
- কলা খাওয়া যেতে পারে
- চিড়া বা মুড়ি
- ডাবের পানি
- ভাতের ফ্যান
- নুন ও চিনির পানি
- নরম খাবার যেমন খিচুড়ি
- পানি পানি ডাল
- দধি বা দই
- মুরগির মাংস
- লেবুর শরবত
- ভাতের মাড়
- লাচ্ছি
- কম লিকারের চা
- চর্বি জাতীয় খাবার
- মসুর ডাল
- আম
- আমারস
- পেঁপে
- নারিকেলের দুধ
- টক জাতীয় ফল
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে কি খাওয়া যাবে না
শিশুদের সাধারণত পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে জীবাণু যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে। পাতলা পায়খানা হলে শিশুদের শরীর থেকে প্রায়ই পানি বের হয়ে যায়। পাতলা পায়খানা হলে শিশুদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশের তৈরি করা পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুদেরকে সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।
আশেপাশের পরিবেশ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে পাতলা পায়খানা ভালো হয়। পরিবেশ নোংরা হওয়ার কারণে নোংরা খাবার খাওয়ার কারণে অনেক সময় পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। পাতলা পায়খানা হলে শিশুদেরকে কেক, জুস, কোমল পানীয়, কফি ও চিনি দেওয়া চা ইত্যাদি খাওয়া যাবেনা।
কারণ এসব খেলে ডায়রিয়া আরো খারাপ হতে পারে শরীরে আরো অবনতি দেখা দিতে পারে। ডায়রিয়া হলে বেশি বেশি পানি জাতীয় তরল খাবার খাওয়াতে হবে। পুষ্টিকর সবুজ শাকসবজি খাবার খাওয়াতে হবে। ডাইরিয়া সাথে যদি রক্ত বের হয় তাহলে অতি দ্রুত ওই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।দূর ডায়রিয়া থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দুধ জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা।
এই সময় পেটে গ্যাস তৈরি করে দুধ জাতীয় খাবার যেমন পনির, মাখন ও বুদ্ধ জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। ডায়রিয়া হলে ডুবো তেলে ভাজা ঝাল মসলাদার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্যাফেন জাতীয় পানীয় ডায়রিয়া হলে খাওয়া উচিত না।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা দেখা দিলে পরিবারের সদস্যদের কি করনীয় সে সম্বন্ধে আজকে আলোচনা করব। বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা দেখা দিলে নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়ে যান পরিবারের মানুষ। এ সময় কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সেই বিষয় নিয়ে জানাবো আপনাদের।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনার বাচ্চাকে সুস্থ সবল করে তুলতে পারবেন। পাতলা পায়খানা বন্ধ করার উপায় সমূহ নিচে দেওয়া হলো।
১। স্যালাইন খাওয়ানো
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা ঘরোয়া উপায়ে সারানোর প্রথম ও প্রধান উপায় হচ্ছে স্যালাইন খাওয়ানো। যেহেতু এসময় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয় তাই পানিশূন্যতা পূরণে স্যালাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রথম পর্যায়ে আপনার বাচ্চার পাতলা পায়খানার জন্য স্যালাইন খাওয়ানোর বিকল্প নেই।
২। নুন এবং চিনির পানি খাওয়ানো
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে বাচ্চাদের পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই শরীরে পানির স্বল্পতা পূরণে নুন এবং চিনির পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে ১ লিটার পানির মধ্যে ১ চা চামচ নুন এবং ৮ চা চামচ চিনি মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে নিন। এবার এই দ্রবণ অল্প অল্প করে সারাদিন বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন।
তবে অবশ্যই ১২ ঘন্টার মধ্যে খাওয়াবেন। ১২ ঘন্টা অতিক্রম হওয়ার পরে এই দ্রবণ খাওয়ানো যাবে না। মনে রাখবেন কখনোই গরম পানি দিয়ে দ্রবণ তৈরি করবেন না এবং দ্রবণ গরম করবেন না।
৩। ভাতের ফ্যান খাওয়ানো
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া প্রতিরোধে ভাতের ফ্যান পান করালে খুবই দ্রুত বাচ্চারা সুস্থ হতে পারে। ভাতের ফ্যান সাধারণত ইলেকট্রলাইট সলিউশানের বিকল্প হিসেবে কাজ করে থাকে ফলে বাচ্চার পাতলা পায়খানা সহজেই ভালো হয়ে যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ভাতের ফ্যান ওরাল ইলেক্ট্রলাইট সলিউশানের থেকে অত্যাধিক বেশি কার্যকরী।
৪। প্রোবায়োটিকস যুক্ত খাবার খাওয়ানো
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে আপনার বাচ্চাকে প্রোবায়োটিকস যুক্ত খাবার দিতে পারেন। এটি সাধারণত পাতলা পায়খানার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু প্রতিরোধ করতে সক্ষম বলে বেশ কার্যকরী।
আরও কিছু করনীয়ঃ
- বাচ্চার যদি পাতলা পায়খানা দেখা দেয় তাহলে শারীরিক ঘাটতি পূরণ করার জন্য প্রথমে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
- শিশুর যেন পানি শূন্য না হয় সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে,ঘন ঘন তরল খাবার প্রদান করতে হবে।
- খাবার প্রদান করার ক্ষেত্রে বাহিরের কোন খাবার খাওয়ানো যাবে না যেমন বিস্কুট।
- অবশ্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ নির্বাচন করতে হবে যেখানে শিশুর ঠান্ডা বা গরম কোনটাই যেন না লাগে।
- শিশুকে ডায়রিয়া দেখা দিলে একবার গোসল করাতে হবে যাতে তার শরীর হালকা হয় এবং মলমত্র ধুয়ে যায়।
- বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা বমি হলে অবশ্যই বাড়ির মানুষকে সচেতন হতে হবে। সমস্যা যদি বেশি দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসা করতে হবে।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ঘরোয়া চিকিৎসা
প্রথমত, মনে রাখতে হবে যে,পাতলা পায়খানা শিশুদের জন্য খুবই বিপজ্জনক কারণ এটি ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) এর দিকে ধাবিত করতে পারে। তাই বাজারে প্রচুর বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম পেয়ে যাবেন, তবে কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ দেবেন না।
তরল খাবার
- আপনার বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার যেমন ডাবের পানি, স্যালাইন, ঝোল, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।
- মায়ের দুধ নিয়মিত খাওয়ান।
- সহজেই হজম হয়ে যায় এমন খাবার যেমন ভাতের মাড়, খিচুড়ি, মসুর ডাল, পেঁপে, কাঁচা কলা ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।
আরো কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরিঃ
- আপনার বাচ্চার হাত ভালোভাবে বারবার সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে দিন।
- আপনার বাচ্চার মল পরিষ্কার করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
- শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
- যদি ডায়রিয়া ২৪ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হয়।
- যদি শিশু অনেক বার বমি করে।
- যদি শিশুতে জ্বর থাকে।
- যদি শিশু অলস থাকে বা খাওয়া बंद করে দেয়।
- যদি শিশুর মল তে রক্ত থাকে।
মনে রাখবেন, এই প্রতিকারগুলি শুধুমাত্র সাধারণ পরামর্শ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে, আপনি অনেক ধরনের বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম পেয়ে যাবেন তবে, সর্বদা একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা প্রতিরোধে সতর্কতা
- সবসময় বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
- বাচ্চার ঘুমানোর স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
- বাচ্চার কাপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
- খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
- অনেকক্ষণ ধরে সংরক্ষণ করা খাবার পরিহার করা।
- খাবার খাওয়ানোর পূর্বে হাত ভালোমতো পরিষ্কার করা।
- বাচ্চার শরীরে পানিশূন্যতা যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করানো।
লেখকের শেষ মতামত
তাই পরিশেষে বলা যায় যে, নিজের বাচ্চাকে সুস্থ রাখার জন্য অবশ্যই নিজেকে সুস্থ থাকতে হবে। নিজের সুস্থ থাকলেই নিজের বাচ্চাকে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা সম্ভব। নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ঘরোয়া ভাবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিজেরা সতর্ক হয়ে চললেই, নিজের বাচ্চাকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ হিসেবে উপরেরগুলো খুবই কার্যকারী। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে এ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে বাচ্চাদের জন্য বা বয়স্কদের জন্য চিকিৎসক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
যেসব খাবার থেকে বিরত থাকতে বলেছে, সেগুলো বাচ্চা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কোনভাবেই খাওয়ানো যাবে না। এই ছিল আজকের বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন।
আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপের নাম জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপের নাম সম্পর্কে জানতে পারবে।