ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় টিনিয়া ভার্সিকলার বা পিটিরিয়াসিস ভার্সিকলার। এটি আমাদের দেহে ম্যালাসেজিয়া ফুরফুর নামক এক ধরণের খামির দ্বারা উৎপন্ন হয়। চিয়াল/চুলি/চালাম/ছাইদ/চাউদ/কদম অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নাম এই রোগের। এটি মূলত ত্বকের সমস্যা এবং ছত্রাক সংক্রমণ একটি সমস্যা।
পিঠ, ঘাড়, বাহু, বুক, মুখ এবং শরীরের অন্যান্য খোলা অংশকে সংক্রমণ করে। ত্বকের এই অংশগুলিতে ছোট সাদা বা বাদামী, গাঢ় বা হালকা দাগ দেখা দিতে পারে। যাইহোক, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি মুখের হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। সবকিছু সমাধান নিয়েই আজকে এই সম্পূর্ণ পোস্টের মধ্যে আমি ছুলি দূর করার ক্রিমের নাম এবং ছুলি সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। তাই সমস্ত তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
ছুলি কি
ছুলি হচ্ছে মূলত একটি ছত্রাকজনিত ত্বকের সংক্রমণ, যা ত্বকে সাদা, গোলাপি বা বাদামি রঙের দাগ সৃষ্টি করে। এটি সাধারনত মালাসেজিয়া নামক ইস্ট/ছত্রাকের অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে হয়, যা স্বাভাবিকভাবে ত্বকে বসবাস করে কিন্তু কিছু অবস্থায় (যেমন: অতিরিক্ত তেল, ঘাম বা আর্দ্রতা) এটি সমস্যা সৃষ্টি করে।
ছুলি ও সাদা ছুলি এর পার্থক্য কী
ছুলি: ছুলি হচ্ছে মূলত একটি ছত্রাকজনিত ত্বকের সংক্রমণ, যা ত্বকে সাদা, গোলাপি বা বাদামি রঙের দাগ সৃষ্টি করে। এটি সাধারনত মালাসেজিয়া নামক ইস্ট/ছত্রাকের অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে হয়, যা স্বাভাবিকভাবে ত্বকে বসবাস করে কিন্তু কিছু অবস্থায় এটি সমস্যা সৃষ্টি করে।
সাদা ছুলি: সাদা ছুলি (ইংরেজিতে Vitiligo বা Leucoderma) একটি ত্বকের রং হারানোর রোগ, যাতে ত্বকের নির্দিষ্ট অংশে সাদা দাগ দেখা দেয়। এটি মেলানিন (ত্বকের রং তৈরির জন্য দায়ী পিগমেন্ট) উৎপাদনকারী কোষ (মেলানোসাইট) ধ্বংস বা অকার্যকর হওয়ার কারণে হয়।
বৈশিষ্ট্য | ছুলি (Tinea versicolor) | সাদা ছুলি (ভিটিলিগো) |
কারণ | ছত্রাক সংক্রমণ | মেলানিন কোষের ক্ষতি (অটোইমিউন) |
দাগের রং | সাদা, গোলাপি, বাদামি | শুধু সাদা |
খসখসে | হ্যাঁ | না |
চুলকানি | মাঝে মাঝে | সাধারণত নেই |
চিকিৎসা | অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম/শ্যাম্পু | মেলানিন থেরাপি, স্টেরয়েড |
ছুলি কেন হয়
আমাদের ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ছুলি সমস্যাটি হয়। ইহা ছত্রাকজনিত একটি চর্মরোগ। এই রোগের চিকিৎসা নিলে খুব সহজে মুক্তি মেলে। নিম্নে উল্লেখিত কিছু কারণে এই চর্মরোগটা আপনার হতে পারেঃ
- বহু দিন থেকে অ্যান্টি-বায়োটিক খেলে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে
- তরুণ বয়সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি
- গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে
- স্টেরয়েড জাতীয় ট্যাবলেট খেলে
- অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন থাকলে
- আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে
- প্রচুর পরিমাণে শরীর ঘামলে
- তৈলাক্ত ত্বক হলে
- মালাসেজিয়া ইস্টের অতিরিক্ত বৃদ্ধি (স্বাভাবিক ত্বকের ছত্রাক, যা কিছু মানুষের ত্বকে বেশি সক্রিয় হয়)।
- অতিরিক্ত ঘাম বা স্যাঁতসেঁতে পোশাক পড়লে।
- ইমিউনিটি দুর্বলতা বা হরমোনাল পরিবর্তন (যেমন: কিশোর বয়স, গর্ভাবস্থা) হলে।
ছুলি কোথায় হয়
ছুলি বেশ কয়েক জাইগায় দেখা দিতে পারে।মূলত ছুলি শরীরের যেসব জাইগায় বেশি দেখা যায়, আমি নিচে উল্লেখ করছি। যেমন,
- বুক
- পিঠ
- গলা
- হাত
- শিশুদের ক্ষেত্রে মুখেও
- সর্বশেষ শরীরের অন্যান্য উন্মুক্ত জাইগায়
ছুলি রোগের লক্ষণ
ছুলি রোগের লক্ষণ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
- ত্বকে সাদা, গোলাপি বা বাদামি চাকতির মতো দাগ।
- দাগগুলো খসখসে বা শুষ্ক মনে হতে পারে।
- চুলকানি থাকতে পারে (মাঝারি মাত্রায়)।
- সাধারণত পিঠ, বুক, ঘাড়, বাহু ও কাঁধে বেশি দেখা যায়।
- রোদে পড়লে দাগগুলো আরও স্পষ্ট হয় (কারণ ছুলি-আক্রান্ত অংশ রোদে পোড়ে না)।
ছুলি সাধারণত ঘাড়ে বা পিঠে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে দেখা যায়। ইহা বৃত্তের মতো আকার ধারণ করে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় বাদামি এক ধরনের আস্তরণ পড়ে।
যার কারণে গোসল করলে প্রচুর ময়লা পাওয়া যায়। ছোট্ট ছোট্ট ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। চুলকানি এবং জ্বালা পোড়া ভাব লক্ষ করা যায়। মুখে, ঘাড়ে, বুকে ও পিঠে সবচেয়ে বেশি ছুলি দেখা যায়।
ছুলি দূর করার উপায়
ছুলি থেকে মুক্তির কিছু ঔষুধ এবং ক্রিম রয়েছে। তবে আপনি চাইলে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। ত্বকের এই সমস্যা মোটেই বিরল হন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। অনেক ওষুধ খেয়ে বা ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পানও নিশ্চয়ই। কিন্তু তার আগেই তারা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান, এই সমস্যার জন্য।
ভয় একেবারেই পাওয়ার নেই। কারণ খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে এই সমস্যা থেকে। এবং তার জন্য বাড়িতে ব্যবহার করার মতো সহজ-সরল কয়েকটি উপাদানই যথেষ্ট। তেমনই কয়েকটি রইল এখানে- নিচে এর কিছু প্রাকৃতিক উপায় উল্লেখ করা হলঃ
১। লেবুর রস
লেবুর রসে রয়েছে এমন একটি ব্লিচ জাতীয় উপাদান। যা ত্বকের রং হালকা করে। ছুলি আক্রান্ত স্থানে লেবুর রস লাগিয়ে পনেরো থেকে কুঁড়ি মিনিট রেখে দিন। নিয়মিত কিছু দিন ইহা ব্যবহার করলে আপনার স্কিনের ছুলি সেরে যাবে।
২। লেবু ও চিনি
ছুলি চিকিৎসায় লেবু এবং চিনির কার্যকারিতা অনেক। ইহা ব্যবহার করতে হলে প্রথমে আপনাকে ১টি লেবু কেটে ২ ভাগ করে নিতে হবে।
৩। খাঁটি নারকেল তেল
নিয়মিত ছুলি আক্রান্ত স্থানে খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি সুফল পাওয়া যায়। রাতে ঘুমানোর পূর্বে খাঁটি নারকেল তেল লাগিয়ে ঘুমাতে পারেন। এই তেল যত বেশি সময় লাগিয়ে রাখা যাবে, তত বেশি ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
৪। টমেটোর রস
পাকা টমেটো কেটে ছুলি আক্রান্ত স্থানে সেই টমেটো লাগিয়ে মালিশ করতে পারেন। টমেটো চর্মরোগের জন্য অনেক বেশি কার্যকর।
এভাবে টমেটোর রস নিয়মিত পনেরো থেকে বিশ মিনিট মালিশ করলে ভাল ফলাফল পাবেন। টমেটোর রস মালিশ করার পর সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
৫। টক দই
টক দই ছুলি দূর করতে খুবই কার্যকর কেননা এতে ল্যাকটিক এসিড নামক একটি উপাদান রয়েছে। এই উপাদান কাজে লাগাতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি চামচের মধ্যে সামান্য পরিমাণ টক দই নিয়ে কটন বাট দিয়ে ছুলি আক্রান্ত স্থানে মালিশ করতে হবে।
প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার আপনাকে এ কাজটি করতে হবে প্রতিদিন। মালিশ করে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। কটন বাট দিয়ে লাগিয়ে রাখলে হবে। বারবার মালিশ করার প্রয়োজন নেই।
৬। পেঁয়াজ
পেঁয়াজে মধ্যে রয়েছে এক্সফলিয়েটিভ নামক একটি কার্যকরী উপাদান। যা ছুলি দূর করতে সাহায্য করে থাকে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার পেঁয়াজের কাটা অংশ লাগিয়ে মালিশ করতে পারেন।
৭। বেকিং সোডা
বেকিং সোডা পানির সঙ্গে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। তারপর সেই পেস্ট আক্রান্ত স্থানে লাগান। এতে আমবাত বা ছুলির সংক্রমণ বাড়বে না। এবং অস্বস্তিও অনেকটাই কমবে।
৮। অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা থেঁতো করে বা পিশে তার থেকে জেলটা বের করে নিন। এই জেল এমনিতেই ত্বকের জন্য খুব ভালো। যাদের কোনও সমস্যা নেই, তারাও এই জেল ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক ভালো থাকে। আর যাদের এইআমবাত বা ছুলির সমস্যা আছে, তারা তো ব্যবহার করতে পারেনই। জেলটা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে, ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৯। আখের গুড়
আখের গুড় ত্বকের এই সমস্যার জন্য খুবই ভালো। তবে এই গুড় খেতে হবে। আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে বিশেষ লাভ নেই। এক চামচ আখের গুড়ের সঙ্গে এক চামচ জোয়ান মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খান। এক চামচ আখের গুড়ের সঙ্গে ১০ মিলি আদার রস মিশিয়েও খেতে পারেন।
কিংবা দু’গ্রাম হলুদের সঙ্গে একচামচ আখের গুড় মিশিয়ে খান। এর প্রতিটাই ত্বকের জন্য খুব ভালো। হলুদ আর আখের গুড়ের মিশ্রণ দিনে দু’বার করে ১৫ দিন খেতে পারেন। এটি আমবাত বা ছুলির জন্য খুবই উপকারী।
১০। গ্রিন টি
অতিরিক্ত কোনও পরিশ্রম নেই। শুধু এক কাপ গ্রিন টি-র সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খান। দিনে তিন বার। তাহলেই ছুলি বা আমবাতের আক্রমন কমে যাবে।
ছুলি দূর করার ক্রিমের নাম
এই চর্মরোগটি হলে আপনার শরীরের জ্বালা কিংবা চুলকানি হতে পারে। যার কারণে আপনার মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। ছুলি সাধারণত আমাদের শরীরের মুখে, হাতে, কাঁধে এবং পিঠে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বাজারে অনেক ধরনের অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ ছুলি দূর করার ক্রিম রয়েছে।
তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না। আসুন জেনে নেওয়া যাক ছুলি দূর করার নিরোধক ক্রিমের নাম। ছুলি দূর করার কিছু ক্রিম রয়েছে যা চমৎকার ভাবে কাজ করে।
- টাফ প্লাস ক্রিম
- ক্ল্যারিক্স প্লাস ক্রিম
- অরনোড্রাম ক্রিম
- নিও ক্যাস্টর এন এফ ক্রিম
- পান্ডার্ম প্লাস ক্রিম
- ও ২ ড্রাম ক্রিম
- টেকো ড্রাম প্লাস ক্রিম
- Remus Ointment
- Ketoral Cream
- Selenium Sulfide Lotion
- Ketoconazole 1%/2% Cream
- Silderm Cream
- Conasyd Cream
- Ramy Chuly Cure Cream 50 gm
কিন্তু আজকাল, আসল ওষুধের পাশাপাশি, আবার অনেক নকল ওষুধও রয়েছে। তাই সাধারণ গ্রাম্য ওষুধ খাওয়ার আগে আসল ও নকল পরীক্ষা করে নিতে হবে।
আজকাল আপনি অনেক ওয়েবসাইটে একটি অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ ক্রিমের নাম খুঁজে পেতে পারেন যেগুলা নকল ক্রিম বিক্রি করে থাকে। সেখানে ছুলি ক্রিমের অনেক নাম রয়েছে যা আপনারা বুঝতে পারবেন না কোনটা আসল আর নকল। আমি অবশ্যই ভাল ব্র্যান্ড সুপারিশ করেছি।
ছুলি দূর করার ট্যাবলেট
প্রধান অ্যান্টিফাঙ্গাল ট্যাবলেট:
১. কিটোকোনাজল (Ketoconazole)
- ডোজ: সাধারণত ২০০–৪০০ মিগ্রা/দিন, ৫–১০ দিন।
- ব্র্যান্ড নাম: Nizoral, Ketocon, KZ, Fungoral.
২. ফ্লুকোনাজল (Fluconazole)
- ডোজ: সপ্তাহে ১ বার ৩০০ মিগ্রা, ২–৪ সপ্তাহ।
- ব্র্যান্ড নাম: Flucozee, Fluzol, Zocon.
৩. ইট্রাকোনাজল (Itraconazole)
- ডোজ: ২০০ মিগ্রা/দিন, ৭ দিন বা সপ্তাহে ১ বার ৪০০ মিগ্রা, ২ সপ্তাহ।
- ব্র্যান্ড নাম: Itrasys, Canditral, Itra.
৪. টারবিনাফিন (Terbinafine)
- ডোজ: ২৫০ মিগ্রা/দিন, ২–৪ সপ্তাহ।
- ব্র্যান্ড নাম: Lamisil, Tefdin, Terbest.
সতর্কতা:
- এই ট্যাবলেট লিভার এনজাইম বাড়াতে পারে, তাই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে নিন।
- গর্ভবতী বা লিভার রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন।
- ক্রিম/শ্যাম্পু (কিটোকোনাজল ২%) দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা ভালো।
ছুলি দূর করার সাবান
আমি এখন আপনাকে সাবান এবং কিছু ব্যবহারিক পণ্যের নাম বলব। সমস্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও যদি ছুলি দেখা দেয় তবে চিন্তা করার দরকার নেই। সঠিক চিকিৎসার সাথে, ছুলি অদৃশ্য হয়ে যাবে।
- 2% কেটোকোনাজল বা সেলেনিয়াম সালফাইড
- মৌখিক অ্যান্টিফাঙ্গাল।
- ফ্লারি সাবান
- অন্যান্য নির্দেশিত ওষুধ লক্ষণ অনুযায়ী।
সাদা ছুলি দূর করার ঘরোয়া উপায়
সাদা ছুলি (লিউকোডার্মা বা ভিটিলিগো) ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা, যাতে ত্বকের কিছু অংশের রং হালকা বা সাদা হয়ে যায়। এটি মেলানিন উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে হয়। যদিও সম্পূর্ণ নিরাময় কঠিন, কিছু ঘরোয়া উপায় ও যত্নে এর প্রভাব কমাতে পারেন।
সাদা ছুলি কেন হয়?
- অটোইমিউন সমস্যা (শরীর নিজেই মেলানিন কোষ ধ্বংস করে)।
- জিনগত কারণ (পারিবারিক ইতিহাস থাকলে)।
- স্ট্রেস বা হরমোনাল পরিবর্তন।
- সানবার্ন বা রাসায়নিকের প্রভাব।
- সাদা ছুলি দূর করার প্রাকৃতিক/ঘরোয়া উপায়
১. বাবচি (Psoralea Seeds)
কীভাবে কাজ করে: বাবচি মেলানিন উৎপাদন বাড়ায়।
ব্যবহার:
- বাবচির গুঁড়া (১ চা চামচ) আদার রস বা নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে প্রভাবিত স্থানে লাগান।
- ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে ৩-৪ বার ব্যবহার করুন।
২. নিমের তেল + সরিষার তেল
কীভাবে কাজ করে: নিম অ্যান্টিফাঙ্গাল, সরিষার তেল রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।
ব্যবহার:
- সমপরিমাণ নিম তেল ও সরিষার তেল মিশিয়ে সাদা দাগে মালিশ করুন।
- দিনে ২ বার (সকাল-সন্ধ্যা) ব্যবহার করুন।
৩. তাজা আদার রস
কীভাবে কাজ করে: আদা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে মেলানিন উৎপাদনে সাহায্য করে।
ব্যবহার:
- আদা কুচি করে রস বের করে সাদা দাগে লাগান।
- শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। দিনে ১ বার ব্যবহার করুন।
৪. কপার (তামা) জল পান
কীভাবে কাজ করে: তামার পাত্রের জল মেলানিন উৎপাদনে সাহায্য করে।
ব্যবহার:
- রাতে তামার গ্লাসে জল রাখুন, সকালে খালি পেটে পান করুন।
৫. অ্যালোভেরা জেল
কীভাবে কাজ করে: অ্যালোভেরা ত্বকের পিগমেন্টেশন উন্নত করে।
ব্যবহার:
- তাজা অ্যালোভেরা জেল দাগে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
- দিনে ২ বার ব্যবহার করুন।
৬. হলুদ ও সরিষার তেল
কীভাবে কাজ করে: হলুদ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, সরিষার তেল পিগমেন্টেশন ফিরিয়ে আনে।
ব্যবহার:
- ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া + ২ চা চামচ সরিষার তেল মিশিয়ে দাগে লাগান।
- ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩ বার ব্যবহার করুন।
৭. পেপেরিকা (Paprika) মধু প্যাক
কীভাবে কাজ করে: পেপেরিকা ক্যাপসাইসিন ধারণ করে, যা মেলানিন উৎপাদনে সাহায্য করে।
ব্যবহার:
- ১ চা চামচ পেপেরিকা গুঁড়া + ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে দাগে লাগান।
- ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার করুন।
সাদা ছুলি কমানোর অতিরিক্ত টিপস
- ✅ ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন B12, জিংক, কপার (তামা), ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার (ডিম, সবুজ শাক, বাদাম) খান।
- ✅ স্ট্রেস কমাতে: যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করুন।
- ❌ অতিরিক্ত সাবান/কেমিক্যাল এড়িয়ে চলুন।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
- দাগ দ্রুত বাড়লে।
- চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হলে।
- চিকিৎসকের পরামর্শে ফটোথেরাপি, টপিকাল স্টেরয়েড বা হোমিওপ্যাথি নেওয়া যেতে পারে।
মনে রাখবেন:
সাদা ছুলি পুরোপুরি দূর করা কঠিন, কিন্তু ধৈর্য্য সহকারে ঘরোয়া উপায় ও সঠিক যত্নে এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
ছুলি রোগের চিকিৎসা
আপনি সমস্ত বিষয় সম্পর্কে জেনে অধিক সতর্কতা মেনে চলার পরেও যদি আপনি ছুলি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তাহলে ঘাবড়ে যাওয়ার একদমই কারন নাই।আপনি যদি সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করেন তাহলে খুবি তাড়াতাড়ি ছুলি রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া সম্ভব।এক্ষেত্রে যদি আপনি ছুলি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করবেন।
তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আপনি ছুলি রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। ডাক্তারেরা সাধারণত নিচে তুলে ধরা ওষুধ গুলা খাবার জন্য বলে থাকেন। যেমন,
- ২% কিটোকোনাজল সাবান বা শ্যাম্পু ব্যাবহার করতে বলেন।
- ছুলি রোগ নিরাময়ে মুখে খাওয়ার ছত্রাকনাশক ওষুধ সেবন।
- ছুলি রোগের লক্ষণ অনুযায়ী অন্যান্য ওষুধ সেবন।
- মূলত ছুলি রোগ নিরাময় করার জন্য ওপরের তুলে ধরা ওষুধ খাওয়ার জন্য বলে থাকেন অভিজ্ঞ চিকিৎসক।তবে আমার পোস্ট দেখেই আপনি এই ওষুধ গুলা সেবন করবেন না।অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাবেন।
প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধ:
- সেলসুন ব্লু ও কিটোকোনাজল শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করুন।
- প্রোবায়োটিক খান (দই, ঘোল) ইমিউনিটি বাড়াতে।
- সুতি কাপড় পরুন ও ঘাম শুকিয়ে ফেলুন।
- সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন (SPF 30+)।
যদি ঘরোয়া উপায়ে না সারে, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ দেখান। তারা অ্যান্টিফাঙ্গাল ট্যাবলেট বা ক্রিম দিতে পারেন। সাধারণত ত্বকের দাগগুলো ভালো করে দেখেই রোগ নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেলে এই রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
রোগের আক্রমণ এড়াতে কী করবেন?
- স্যাঁতসেঁতে আর্দ্র আবহাওয়ায় যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন থাকুন।
- শরীরের যেসব স্থানে ঘাম বেশি হয় সেসব স্থান বারবার ধুয়ে পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন। গরমের দিন রোজ একবার বা দুবার গোসল করুন। ঘামে ভেজা পোশাক পাল্টে ফেলুন ও না ধুয়ে আর ব্যবহার করবেন না।
- অন্যের ব্যবহূত তোয়ালে, রুমাল ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না।
- একাধিক ব্যক্তি কখনো একই ক্ষুরে মাথা বা দাঁড়ি কামাবেন না। চর্ম বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
লেখকের শেষ মতামত
ছুলি পুরোপুরি দূর করা কঠিন, কিন্তু ধৈর্য্য সহকারে ঘরোয়া উপায় ও সঠিক যত্নে এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। এই ছিল আজকের ছুলি দূর করার ক্রিমের নাম ও ছুলি দূর করার ট্যাবলেট সম্পর্কিত সকল তথ্য এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন।
তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে ছুলি দূর করার ক্রিমের নাম জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও ছুলি দূর করার ক্রিমের নাম সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।