গ্রাম পুলিশ কি সরকারি হয়েছে – গ্রাম পুলিশের নতুন বেতন স্কেল

গ্রাম পুলিশের নতুন বেতন কাঠামো তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটালেও, এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমাদের প্রিয় গ্রামকে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল রাখতে যে বাহিনী সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে, তা হলো গ্রাম পুলিশ। 

গ্রাম পুলিশ কি সরকারি হয়েছে

মেট্রোপলিটন পুলিশের মতো শহুরে এলাকায় সবসময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও গ্রামাঞ্চলে এমনটা সবসময় হয় না।  গ্রাম পুলিশের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দায়িত্বের ফলে আমাদের গ্রাম রক্ষা পায় নানা ধরনের দুর্নীতি ও অপরাধ থেকে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা তাদের এই কাজের জন্য যথাযথ সম্মান ও স্বীকৃতি দিই না।  গ্রামের বিভিন্ন সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রাম্য পুলিশকে জানানো হয়।

এখানে গ্রাম্য পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে এ সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে দুই পক্ষের মানুষজনকে সহায়তা করে গ্রামের প্রতিনিধিদের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং তার মাধ্যমে সমাধান করানো। এ সকল গ্রাম্য পুলিশ অবশ্যই সরকার কর্তৃক বেতন ও ভাতা পেয়ে থাকেন আজকে আমরা সেই গ্রাম্য পুলিশের বেতন ভাতা নিয়ে কথা বলতে এসেছে। তা যাইহোক, এই আর্টিকেলে জানাবো গ্রাম পুলিশ কি সরকারি হয়েছে ও গ্রাম পুলিশের নতুন বেতন স্কেল সম্পর্কে বিস্তারিত।

গ্রাম পুলিশের কাজ কি

গ্রাম পুলিশ (ভিলেজ পুলিশ) বাংলাদেশের স্থানীয় প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা গ্রামীণ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং জনসেবামূলক কাজে নিয়োজিত। তাদের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা: গ্রামীণ এলাকায় শান্তি বজায় রাখা, অপরাধ প্রতিরোধে সহায়তা করা এবং পুলিশ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা।
  • অপরাধী শনাক্তকরণ: চোরাচালান, মাদক পাচার বা স্থানীয় অপরাধ সম্পর্কে থানা পুলিশকে তথ্য প্রদান।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা: বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি সময়ে জনগণকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং ত্রাণ বিতরণে সহযোগিতা করা।
  • সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন: ভোটার তালিকা হালনাগাদ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কর সংগ্রহ ইত্যাদি কাজে ইউনিয়ন পরিষদকে সহায়তা করা।
  • সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ: সরকারি সম্পত্তি (স্কুল, মন্দির/মসজিদ, রাস্তা) পাহারা দেওয়া।
  • মামলা-মোকদ্দমায় সহায়তা: আদালতের নোটিশ পৌঁছে দেওয়া বা স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতা করা।

গ্রাম পুলিশের প্রধান কে

যেহেতু সমস্ত সামরিক বাহিনীতে প্রধান কেউ না কেউ আছেন সেক্ষেত্রে গ্রাম পুলিশেরও প্রধান অবশ্যই রয়েছেন। গ্রাম পুলিশ সাধারণত বাংলাদেশের বিশেষত্ব বাহিনী যারা গ্রাম অঞ্চলের সুরক্ষা বা নিরাপত্তা প্রদান করে এবং বাংলাদেশ পুলিশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করে থাকে। 

প্রত্যেক পরিষদে মোট ১০ টি করে গ্রাম পুলিশ রয়েছে তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে দফাদার এবং বাকি 9 জন হচ্ছে মহল্লাদার। সুতরাং এইখান থেকে একটা বিষয় বোঝা যাচ্ছে যে যিনি দফাদার রয়েছেন তিনিই হচ্ছে গ্রাম পুলিশের প্রধান। কেননা একজন দফাদার প্রতি মহাল্লাদারদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বুঝিয়ে দেন। তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে গ্রাম পুলিশের প্রধান হচ্ছে দফাদার। 

আরো পড়ুনঃ-  দুবাই বাংলাদেশ এম্বাসি মোবাইল নাম্বার

গ্রাম পুলিশ কি সরকারি হয়েছে

গ্রাম পুলিশ সাধারনত অনেক পুরাতন দিনের কর্মচারী হওয়া সত্তেও গ্রাম পুলিশকে জাতীয়করণ না করায় তারাবাংলাদেশ সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। 

যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সকল গ্রাম পুলিশ জাতীয়করণ করার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।

তাদের আন্দোলনের ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সকল গ্রাম পুলিশকে জাতীয়করণ করার আশ্বাস প্রদান করেছে।

গ্রাম পুলিশের অবসর বয়স

গ্রাম পুলিশের অবসর বয়স ৬০ বছর (সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী)। তবে, শারীরিক অবস্থা বা বিশেষ পরিস্থিতিতে আগেও অবসর নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

গ্রাম পুলিশের নতুন বেতন স্কেল

অনেকেই জানতে চান গ্রাম পুলিশের বেতন কত টাকা? সত্যি কথা বলতে তাদের বেতনের সঠিক মাপটা বলা কিছুটা কষ্টসাধ্য কেননা, তারা এই দিক থেকে আজও অবহেলিত। যদিও কিছু স্থানে স্পষ্ট তাদের বেতর, ভাতার কথা উল্লেখ্য রয়েছে, তবে অধিকাংশ স্থানে দেয়া যায় তাদের হাজার কোটি টাকা বেতন বকেয়া রাখা হয়েছে। 

গ্রাম্য পুলিশ আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম এবং আমরা ফোরামেই যারা গ্রামে বসবাস করি তারা বাড়ির আশেপাশে গ্রাম্য পুলিশকে দেখে থাকে। সাধারণ ভাষায় আমরা যাদেরকে আনসার বলে থাকি তারাই মূলত গ্রাম্য পুলিশ হিসেবে পরিচিত। তবে আনসার এবং গ্রাম্য পুলিশের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য যেটা আমরা আপনাদের অন্য একটি আর্টিকেলে বোঝানোর চেষ্টা করব।

বর্তমানে বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশের একজন দফাদার প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা এবং একজন মহল্লাদার প্রতি মাসে ৬ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পেয়ে থাকে। তবে উক্ত বেতনে গ্রাম পুলিশের সদস্যরা সন্তুষ্ট নন। বর্তমানে গ্রাম পুলিশের আন্দোলনের ফলে গ্রাম পুলিশের বেতন কত পরিবর্তিত হতে পারে তা দেখার বিষয়। পূর্বে গ্রাম পুলিশের একজন দফাদার কে প্রতি মাসে বেতন এবং ভাতা মিলিয়ে মোট ৮,৬০০ টাকা এবং একজন মহল্লাদারকে বেতন এবং ভাতা মিলিয়ে মোট ৮,৪০০ প্রদান করা হতো।

বর্তমানে ২০২৫ সালের আপডেট তথ্য অনুযায়ী একজন গ্রাম পুলিশ প্রতি মাসে ৬,৫০০ টাকা বেতন পাবে। যার মধ্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে  ৩২৫০ টাকা দেয়া হয় আর বাকি ৩২৫০ টাকা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া হয়। 

অন্যদিকে একজন দফাদারের বেতন ৭০০০ টাকা, যার মধ্যে ৩৫০০ টাকা দেয়া হয়  স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আর বাকি ৩৫০০ টাকা দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট ইউপি থেকে।  

দফাদারদের জন্য জাতীয় বেতন স্কেলের ১৯তম গ্রেড এবং মহল্লাদারদের জন্য ২০তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের দাবিতে তাঁরা প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছেন। তবে প্রায় পাঁচ বছর পর, প্রায় ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। 

বর্তমানে দেশের ৪৫৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদে ১০ জন করে গ্রাম পুলিশ কর্মরত আছেন। এর মধ্যে একজন দফাদার এবং নয়জন মহল্লাদার হিসেবে কাজ করেন। দফাদারদের বর্তমান বেতন ৭,০০০ টাকা, যা বাড়িয়ে ৮,৫০০ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এটি তাদের বেতনে ২১.৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি আনবে। একইসঙ্গে, তাদের অবসর ভাতা ৬০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,০০,০০০ টাকা করা হয়েছে, যা ২৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি।

আরো পড়ুনঃ-  পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ডেলিভারি সময়

অন্যদিকে, মহল্লাদারদের বর্তমান বেতন ৬,৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭,৫০০ টাকা করা হয়েছে, যা ১৫.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি। তাদের অবসর ভাতাও ৫০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,৫০,০০০ টাকা করা হয়েছে, যা ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি।

বর্তমান সময়ের কথা চিন্তা করে বিবেচনা করলে দেখা যায় একজন গ্রাম পুলিশের যে বেতন স্কেল তা দিয়ে একটা সংসার ঠিক ভাবে পরিচালন করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। 

তাছাড়া তাদের উপর যে কর্ম দায়িত্ব রয়েছে সেগুলো করার পর এক্সট্রা সময় থাকে না যে সময় এক্সট্রা কিছু উপার্জনের রাস্তা বের করতে পারে। এমতাবস্থায়, সরকারের দ্রুত দৃষ্টি দেয়া উচিৎ আলোচনার বাইরে থাকা গ্রাম পুলিশ ও তাদের বেতন স্কেলের দিকে।

গ্রাম পুলিশকে জাতীয়করণ করা হলে গ্রাম পুলিশের বেতন কত ২০২৫ সালে তা নতুন করে নির্ধারণ করা হবে। বর্তমানে গ্রাম পুলিশের সদস্যরা ৪ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। গ্রাম পুলিশকে জাতীয়করণ করা হলে তাদেরকে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে ২০ তম গ্রেড অনুযায়ী বেতন ভাতা প্রদান করা হবে।

গ্রাম পুলিশের জাতীয়করণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকার গ্রাম পুলিশকে সরকারি কর্মচারী হিসেবে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়। এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, যার মাধ্যমে গ্রামীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আনুষ্ঠানিক মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

১। জাতীয়করণের কারণ:

  • অস্থায়ী অবস্থার অবসান: আগে গ্রাম পুলিশরা ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে সম্মানীর ভিত্তিতে কাজ করতেন, যা চাকরির নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করত।
  • জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: তাদের বেতন ৩,০০০-৫,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ম গ্রেড (১৬,০০০ – ৩৮,৬৪০ টাকা) করা হয়েছে।
  • দায়িত্বের স্বীকৃতি: তারা স্থানীয় নিরাপত্তা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও পূর্বে কোনো আনুষ্ঠানিক সুবিধা পেতেন না।

২। জাতীয়করণের প্রক্রিয়া

  • আইনি কাঠামো: “গ্রাম পুলিশ অ্যাক্ট ২০২৩” পাস করে তাদের চাকরি কাঠামো সরকারি কর্মকমিশনের অধীনে আনা হয়।
  • তালিকাভুক্তি: বর্তমান গ্রাম পুলিশ সদস্যদের তথ্য যাচাই করে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
  • বাজেট বরাদ্দ: জাতীয় বাজেটে গ্রাম পুলিশের বেতন ও সুবিধার জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ।

৩। প্রভাব:

  • ইতিবাচক: চাকরির স্থিতিশীলতা, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি এবং কাজের অনুপ্রেরণা।
  • চ্যালেঞ্জ: কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগে স্বচ্ছতার অভাব ও দুর্নীতির শঙ্কা।

গ্রাম পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য

গ্রাম পুলিশের মূল কাজ স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও ইউনিয়ন পরিষদের সাথে সমন্বয় করে গ্রামীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। বিস্তারিত দায়িত্বসমূহ:

১। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা:

  • গ্রামে অপরাধ (চুরি, মারপিট, জমি বিরোধ) প্রতিরোধে থানা পুলিশকে সাহায্য করা।
  • রাতের সময় পাহারা দেওয়া এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের রিপোর্ট করা।

২। সরকারি কাজে সহায়তা:

  • ভোটার তালিকা হালনাগাদ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন।
  • কর (হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স) সংগ্রহে ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতা।

৩। জরুরি পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা:

  • বন্যা, আগুন বা দুর্যোগে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ।
  • সরকারি ত্রাণ বিতরণে নিয়োজিত থাকা।

৪। সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ:

  • সরকারি স্থাপনা (স্কুল, মন্দির, রাস্তা) পাহারা দেওয়া।
  • অবৈধ দখল বা ক্ষতি রোধ করা।
আরো পড়ুনঃ-  সহজেই অনলাইনে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার নিয়ম

৫।আদালত ও প্রশাসনিক কাজ:

  • কোর্টের সমন পৌঁছে দেওয়া।
  • স্থানীয় বিরোধে মধ্যস্থতা (মামলা এড়ানোর জন্য)।

এছাড়াও গ্রামীণ এলাকায় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলা। তারা গ্রামে নানান প্রকারের সামাজিক সমস্যার সমাধান করে থাকে এবং  এর পাশাপাশি স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করেন। 

প্রতিদিন সকাল ৯ ঘটিকার মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হয়। সেখানে গিয়ে জাতীয় পতাকা তুলতে হয়। এরপর ঝাড়ু দিতে হয় অফিস। সময়ের সাথে সাথে এলাকার জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করে সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। 

তাছাড়া প্রতি সপ্তাহে এক দিন থানায় প্রতিবেদন দিতে হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে। এবং মাসে এক দিন ইউএনও কার্যালয়ে কাজ করতে হয়। এগুলো ছাড়াও রয়েছে ইউপির বিভিন্ন ধরনের কাজ।

গ্রাম পুলিশ নিয়োগ বিধিমালা

গ্রাম পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত, প্রক্রিয়া ও প্রশিক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:

১। নিয়োগের শর্তাবলী:

  • জাতীয়তা: বাংলাদেশি নাগরিক।
  • বয়স: ১৮-৩০ বছর (আনুমোদিত শিথিলতা সাপেক্ষে)।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: ৫ম শ্রেণী পাস (কিছু এলাকায় ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রয়োজন)।
  • শারীরিক সুস্থতা: নির্দিষ্ট ওজন ও উচ্চতা (পুরুষ: সর্বনিম্ন ৫’৪”, নারী: ৫’২”)।
  • চারিত্রিক সনদ: স্থানীয় চেয়ারম্যান বা মেম্বারের সুপারিশ।

২।নিয়োগ প্রক্রিয়া:

  • আবেদন: ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা প্রশাসন থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
  • বাছাই: লিখিত পরীক্ষা (প্রাথমিক সচেতনতা) ও মৌখিক সাক্ষাৎকার।
  • চূড়ান্ত তালিকা: মেধা ও স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচন।

৩। প্রশিক্ষণ:

  • মৌলিক প্রশিক্ষণ: ৩ মাস (আইন, শৃঙ্খলা, ফার্স্ট এইড)।
  • স্থানীয় পুলিশের সাথে সমন্বয়: থানায় কর্মরত পুলিশের তত্ত্বাবধানে ফিল্ড ট্রেনিং।

৪। চাকরির মেয়াদ ও পদোন্নতি:

  • প্রোবেশন পিরিয়ড: ১ বছর।
  • পদোন্নতি: সিনিয়রিটি ও绩效 ভিত্তিতে হেড গ্রাম পুলিশ হিসেবে পদোন্নতি সম্ভব।

৫। বেতন ও সুবিধা:

  • বেসিক বেতন: ১০ম গ্রেড (১৬,০০০ – ৩৮,৬৪০ টাকা)।
  • অতিরিক্ত ভাতা: বাড়ি ভাড়া (৩০%), চিকিৎসা (১,২০০ টাকা), পরিবহন (১,০০০ টাকা)।
  • পেনশন: অবসর সরকারি পেনশন স্কিম।

৬। বরখাস্তের কারণ:

  • দুর্নীতি বা অসদাচরণ।
  • দীর্ঘদিন অনুপস্থিতি।
  • শারীরিক অক্ষমতা।

এই নিয়োগ ২০১৫ সালের স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম পুলিশ বাহিনী সংক্রান্ত বিধিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হবে। আপনারা এই লিংকে ক্লিক করে গ্রাম পুলিশ নিয়োগ বিধিমালা আরও বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন। 

লেখকের শেষ মতামত

গ্রাম পুলিশের জাতীয়করণ বাংলাদেশের গ্রামীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক। তবে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রশিক্ষণের মান নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। নতুন বেতন কাঠামো ও সুবিধা তাদের কাজের প্রতি আত্মনিয়োগ বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পরিশেষে একটা কথা না বললেই নয় যে আমাদের দেশের গ্রাম এরিয়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে গ্রাম পুলিশদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই ছিল আজকের গ্রাম পুলিশ কি সরকারি হয়েছে কিনা এবং গ্রাম পুলিশের নতুন বেতন স্কেল সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। 

এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করি গ্রাম পুলিশ কি সরকারি হয়েছে কিনা তা জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও গ্রাম পুলিশের নতুন বেতন স্কেল সম্পর্কে জানতে পারবে।

Leave a Comment