লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – লিচু খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন। কারণ আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে সুন্দরভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। শুধু তাই নয় লিচু খাওয়ার নিয়ম থেকে শুরু করে, নিজের আরো অন্যান্য বিষয়গুলো আপনার সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।

লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা প্রত্যেকে লিচু খেতে খুবই পছন্দ করি, সেজন্য লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে সকলেরই জানা উচিত। তাছাড়া লিচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আর লিচু পছন্দ করে না এমন মানুষ বাংলাদেশের খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট আমরা জেনে আসার চেষ্টা করি লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে।

উপস্থাপনা

আমাদের সকলেরই পছন্দের ফল হল লিচু। লিচুর অনেক গুনাগুন রয়েছে যা আমাদের শরীরে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে। গ্রীষ্মকালীন সিজনে অনেক বাগানের আমরা লিচু দেখতে পাই। অনেকে আছেন যারা বাড়ির আশেপাশে লিচুর গাছ লাগিয়ে লিচু খান। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলগুলোতে লিচুর গাছ দেখা যায় বেশি। কেননা গ্রাম অঞ্চলগুলোতে লিচুর চাষ অনেকেই করে থাকেন।

বাংলাদেশে লিচু চিনে না অথবা লিচু খেতে ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর । লিচুর গাছ ডাল পাতা থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিস অনেক বেশি উপকারী ও ভিটামিন বিদ্যমান। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লিচু চাষ করা হয়।

লিচু গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে চিনা হয় কারণ লিচু শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালে দেখা যায়। মানুষ যখন গরমের তীব্রতায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে তখন মানুষের জানকে প্রশান্তি দিতে লিচু যথেষ্ট। ঠান্ডা মিষ্টি এ লিচু খেতে খুবই সুস্বাদু বাংলাদেশে এমন মানুষ এর সংখ্যা খুবই কম কারণ আমরা প্রত্যেকে লিচু খেতে খুবই ভালোবাসি ছোট থেকে শুরু করে বড়রা পর্যন্ত প্রত্যেকে লিচু খেতে ভালবাসি। 

যাইহোক আমরা অন্যদিকে না যাই যেহেতু আমরা এই পোস্টটিতে এসেছি লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য। আমরা আজকে লিচু বিষয়ে বিভিন্ন অজানা তথ্য আপনাদের সামনে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

লিচুর পুষ্টিগুণ 

লিচু যত গ্রীষ্মকালীন ফল সেক্ষেত্রে এটি আমরা প্রত্যেকে খেতে ভালবাসি তবে গর্ভকালীন সময় ছাড়া সাধারণ দিনে লিচু খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি এবং লিচুর পুষ্টিগুণ কি সেই বিষয়ে জেনে নিন। লিচুর পুষ্টিগুণ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

  • পটাশিয়াম 
  • ক্যালসিয়াম 
  • আয়রন 
  • প্রোটিন 
  • ফাইবার 
  • সোডিয়াম 
  • ম্যাগনেসিয়াম 
  • ভিটামিন সি 
  • ভিটামিন বি ৬ 
  • ভিটামিন বি ১২

এর পাশাপাশি লিচু থেকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করতে সহায়ক। লিচু সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি হাজারো পুষ্টিগুলো খনিজ উপাদানে ভরপুর।

লিচু খাওয়ার উপকারিতা

যেহেতু আমরা প্রত্যেকে লিচু খেতে খুব ভালোবাসি এবং আমরা গ্রীষ্মকালে লিচু খেয়ে থাকি সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে লিচু খাওয়ার আগে জানতে হবে লিচু খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি। হতে পারি লিচু আমাদের মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর তাহলে আমরা না জেনেই লিচু খেয়ে নিজের ক্ষতি করছি নাকি? সঠিক তথ্য জানতে পোস্টে সম্পন্ন দেখতে থাকুন। লিচু খাওয়ার উপকারিতা নিম্নে তুলে ধরা হলঃ

দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় 

আপনি কি দীর্ঘদিন থেকে এই কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে ভুগছেন কিন্তু কোনভাবেই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না? তাহলে এখন লিচু খাওয়ার মাধ্যমে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে পারবেন। শুনে খুব অবাক হচ্ছেন তো? 

লিচু থেকে উচ্চমানের ফাইবার পাওয়া যায় কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা এটি বর্তমান সময়ে গুরুতর আকার ধারণা করলেও আপনি যদি এটি কে দীর্ঘদিন থেকে অবহেলা করতে থাকেন তাহলে পরবর্তী সময়ে এটি পাইলস এর রূপ ধারণ করতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য পাইলসের প্রথম রূপ বললেই চলে।

আলসার দূর হয় 

দীর্ঘদিন থেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগলে পরবর্তী সময়ের মতো সমস্যা দেখা দেয় । আর আলসার অনেক গুরুত্বর রোগ। আলসার হলে পেটে তীব্র জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। তাই আলসার থেকে রেহাই পেতে নিয়মিত লিচু খাওয়া শুরু করুন লিচু থেকে ভরপুর খনিজ উপাদান ও ভিটামিন সংগ্রহ করা যায় যা আলসারের সমস্যা কে দূর করতে সহায়তা করে। তাই আলসার থেকে রেহাই পেতে অথবা মুক্তি পেতে লিচু খাওয়া শুরু করুন।  

আরো পড়ুনঃ-  গরমে ত্বকের যত্নে কিছু কার্যকরী টিপস

ত্বক সুন্দর হয় 

আপনি কি আপনার ত্বক কে সুন্দর করতে চান? সাধারণ কথায় আমরা প্রত্যেকে সুন্দর ত্বকের অধিকারী হতে চাই কারণ সমাজে অসুন্দর  মানুষকে কেউই মূল্য দেয় না প্রত্যেকের সুন্দর খোঁজে। যার কারণে অনেকে সুন্দর্যতা লাভ করার জন্য বিভিন্ন প্রকার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকেন। 

কিন্তু বাজারের এই কেমিক্যাল মিস্ত্রিতে প্রোডাক্টগুলো আপনার ত্বককে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুন্দর করবে কিন্তু পরবর্তী সময়ে আপনি আবার আগের মত কালো রং ধারণ করবেন।  আপনি যদি আপনার ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে দীর্ঘস্থায়ী সুন্দর করতে চান তাহলে এখন থেকে লিচু খাওয়া শুরু করুন। 

ফলমূলের চেয়ে বেশি উপকারী আর কিছুই নেই। লিচু থেকে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান ভিটামিন পাওয়া যায় শরীরের জন্য উপকারী হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের জন্য উপকারী। গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি আপনাকে সুন্দর করার পাশাপাশি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করবে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং ত্বককে সুন্দর করতে লিচু খেতে হবে। 

ত্বক মসৃণ ও কোমল হয় 

ইতিমধ্যেই আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে লিচু ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। লিচু থেকে ভিটামিন বি ৬ সংগ্রহ করা যায় যা ত্বকে সুন্দর করতে সহায়তা করে এবং তাকে মসৃণ ও কোমল করে তাই ত্বকের সৌন্দর্য তাকে ফুটিয়ে তুলতে এবং নিজেকে সুন্দর বানাতে নিয়মিত লিচু খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। লিচু হওয়ার পাশাপাশি হাজারো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। তাই ত্বককে মসৃণ ও কোমল করতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হজম শক্তি উন্নত করতে লিচু খেতে হবে। 

হজম শক্তি উন্নত হয় 

লিচু থেকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায় যা হজম শক্তিকে উন্নত করতে সহায়তা করে হজম শক্তি দুর্বল থাকলে খাবার দ্রুত হজম হয় না যার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় পাশাপাশি পেট ফুলে থাকে এবং ক্ষুধা হ্রাস পায়। তাই হজম শক্তিকে উন্নত করা খুবই জরুরী আর হজম শক্তিকে উন্নত করতে নিয়মিত লিচু খেতে হবে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়টা লিচু খাবেন। এতে হজম শক্তি উন্নত হওয়ার পাশাপাশি শরীর সুস্থ থাকবে। 

হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় 

হার্ট মানব শরীরের সবচেয়ে ভারী অঙ্গ গুলোর মধ্যে একটি হার্টের কাজ হল শরীরের সমস্ত বিষাক্ত কিংবা দূষিত পদার্থ গুলোকে বর্জ্য পদার্থের রূপান্তরিত করে শরীর থেকে ত্যাগ করা। তাই হার্ট শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোর মধ্যে একটি কোনোভাবে যদি এই হার্ট অচল হয়ে পড়ে তাহলে মৃত্যু অনিবার্য। 

এক্ষেত্রে হার্টকে সুস্থ রাখার জরুরি এজন্য হার্টের সুস্থ রাখতে হার্টের যত্ন নিতে হবে এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে হার্টের যত্ন কিভাবে নেওয়া সম্ভব? হার্টের যত্ন নিতে নিয়মিত লিচু খেতে হবে লিচু থেকে ভরপুর পটাশিয়াম পাওয়া যায় যা হার্টের কার্যক্ষমতা কে  বৃদ্ধি করে এবং হাড়কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। হার্টের কার্যক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে আপনার শরীর তত সুস্থ থাকবে। 

লিচু খেলে হার্ট সুস্থ থাকার পাশাপাশি হজম শক্তি উন্নত হয় এবং ওজন কমে সাথে ত্বক সুন্দর হয়। আমরা অনেকেই লিচু খেতে ভালবাসি কিন্তু নিচের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা আজকের এই পোস্টটা আপনাদের সাথে কিছু খাওয়ার উপকারিতা গুলো আলোচনা করলাম। কিছু খাওয়ার উপকারিতা এখানেই শেষ নয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

লিচুর থেকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আপনি যদি নিয়মিত লিচু খান, তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে এতে আপনার শরীর দ্রুত কোন রোগ বালাই দ্বারা আক্রান্ত হবে না। 

বড়দের তুলনায় ছোটদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম হয়। এই জন্য বাসায় ছোটদের বেশি বেশি লিচু খাওয়াবেন। বাচ্চাদের বেশি বেশি লিচু খাওয়ালে এতে তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের রোগবালাই তারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।

আরো পড়ুনঃ-  প্যারাসুট নারিকেল তেলের উপকারিতা

প্রিয় পাঠকগণ আশা করছি ওপরের আলোচনার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পেরেছেন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে। পার্বতী মায়ের তাড়াতাড়ি আয় প্রতিটি পোস্টটি উপাদান বিদ্যমান থাকতে হবে। আপনি যদি উপরের খাবার তালিকা অনুসারে খাদ্য গ্রহণ করেন তাহলে আশা করছি আপনার বাচ্চা পুষ্টিতে পরিপূর্ণ হবে এবং আপনি সুস্থ সবল বাচ্চা জন্ম দিতে সক্ষম হবেন। 

আর গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। লিচু শরীরে তাপ উৎপন্ন করতে সক্ষম আর গর্ভবস্থায় বেশি বেশি লিচু খেলে এতে বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি সাধন হতে পারে।

লিচু খাওয়ার অপকারিতা

লিচুতে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাট রয়েছে, (যেমনঃ ক্যালসিয়াম, ফ্যাট এসিড, প্রোটিন নেই) সেজন্য অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু খেলে তা আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ব্যালেন্স নষ্ট করে ফেলে। তাই আমাদের সকলের উচিত পরিমিতভাবেই লিচু ফল খাওয়া।

১০০ গ্রাম লিচুতে রয়েছে ৬৬ ক্যালোরি, তাই অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু খেলে যে পরিমাণ ক্যালরি জমা হয়ে থাকে তা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হয় তাহলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। লিচু রক্তের গ্লুকোজ কমাতে বেশ সাহায্য করে থাকে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে এবং যারা ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা লিচু খাওয়ার সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

এমনিতেই ওষুধ আমাদের রক্তে গ্লুকোজ কমায়, এর সঙ্গে লিচু যদি আমাদের রক্তেগুলো খোঁজ কমায় তাহলে যে কোন সময় যে কোন বিপদ ঘটতে পারে। এবং ছোট বাচ্চাটা যদি লিচু গ্রহণ করে তাহলে অবশ্যই যেন ভরা পেটে গ্রহণ করে। খালি পেটে লিচু খেলে শিশুদের অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু খান তবে অস্বাভাবিকভাবে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। যেমন বুক ধরফর করা, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া ইত্যাদি।

যারা সার্জারি রোগী আছেন, তারা অল্প পরিমাণে লিচু খাওয়ার চেষ্টা করবেন, কারণ সার্জারির রোগীদের অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু খাওয়ার অনেক ঝুঁকি রয়েছে। সেজন্য যারা সার্জারি করবেন ভাবছেন তারা অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন।

লিচু ফল একটি গরম ফল। তাই লিচু ফল গরম হওয়ায় অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু খেলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে। ফলে মুখের ভেতরের ক্ষত হওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া এমনকি গলা ব্যথা হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে আবহাওয়ার কারণে এ সকল সমস্যা হওয়ার ভয় বেশি থাকে।

আপনি যদি একটানা অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু খান তাহলে আপনার ইমিউনিটি বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে সঙ্গে আপনার বিভিন্ন ধরনের রোগের আশঙ্কা বেড়ে যাবে। যেমন হতে পারে, লপাস, রিউমাটয়েড আরর্থ্রাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরসিস ইত্যাদি রোগগুলো থাকলে আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

লিচু খাওয়ার নিয়ম

লিচু ফলটি এমন একটি ফল যা সবাই পছন্দ করে খেতে। কিন্তু আপনি কি জানেন বিভিন্ন গবেষণায় এই লিচু খাওয়ার নিয়ম বলা হয়েছে। সকলেই জানি লিচু হল সিজনাল ফল। সেজন্যই মূলত প্রচুর পরিমাণে লিচু হাওয়ায় মস্তিষ্কে উত্তেজনা হওয়ার ঘটনা জানা গেছে। আবার এই লিচু একিউট এনকেফালাইটিস সিনড্রোম নামের এক জটিলতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লিচু টক্সিসিটি কিংবা একিউট হাইপোগ্লায়সেমিক টক্সিক এনকেফালাইটিস হওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু তাই বলে এই নয় যে লিচু ফল খেলেই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে বা মারা যাবেন।লিচু ফলে অল্প পরিমাণ টক্সিন থাকে, যেমন এমসিপিজি এবং হাইপোগ্লাইসন-এ ইত্যাদি।

এগুলো মূলত আমাদের শরীরের গ্লুকোজ উৎপাদন ও চর্বি ভাঙতে বিশেষভাবে বাধার সৃষ্টি করে থাকেন। সেজন্য যারা রাতে খালি পেটে ঘুমিয়ে পড়ে এবং সকালে খালি পেটে উঠে লিচু খাই তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে যে সমস্ত ব্যক্তিরা রোগা পাতলা কিংবা অপুষ্টির শিকার ও যাদের বয়স দুই থেকে ১০ বছরের মধ্যে এ সকল শিশুদেরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

সেজন্য শিশুদের হঠাৎ করেই গ্লুকোজের অভাব দেখা দিতে পারে অভাবে শিশুদের শরীর হঠাৎ করে। তবে বৈজ্ঞানিকেরা কখনোই লিচু খেতে নিষেধ করেনি কিন্তু লিচু খাওয়ার কিছু নিয়ম-কানুন আছে সেগুলো অবলম্বন করে লিচু খেতে বলেছে। আমরা সকলে ই জানি লিচুতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই বলে আপনি কখনোই সকালে খালি পেটে লিচু খাবেন না এটা আপনার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আরো পড়ুনঃ-  অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা - অশ্বগন্ধা খেলে কি হয়

আর লিচু ফল খালি পেটে খাওয়া বিপদজনক বেশি শিশুদের ক্ষেত্রে। কেননা শিশুদের বিপাক ক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে পরিপক্ক নয় সেজন্যই মূলত তাদের বেশি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও আধা পাকা কিংবা আধা কাঁচা একেবারে গাছ থেকে পেড়ে খাওয়া ঠিক নয়। সে ক্ষেত্রে আপনি যদি ভরা পেটে কিংবা খাবারের পর ৬ থেকে ৭টি লিচু খান তাহলে আপনার শরীরে অনেক উপকার হবে, এটা জানা গেছে অনেক চিকিৎসকের কাছ থেকে।

এছাড়াও আপনি সবসময় খেয়াল রাখবেন আপনার শিশু যেন লিচুর খোসা গিলে না ফেলে। কারণ এতে করেও কিটনাশক সহ বিভিন্ন বাঁদরের লালা গুলো লিচুর গায়ে থাকে। সেজন্য অবশ্যই বাচ্চাকে লিচু খাওয়ানোর আগে খুব সুন্দর ভাবে ছিলে নিবেন।

লিচু কি খেলে ওজন বাড়ে

বাংলাদেশে বসবাস করে লিচু পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ লিচু যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি টসটসে এবং পুষ্টিগুনে ভরপুর। যখনই গ্রীষ্মকালের সিজন আসে তখনই লিচু বাগানে লাল লাল হয়ে ধরে থাকে প্রচুর লিচু দেখতে কতই না ভালো লাগে। 

মনে হয় টুক করে পেরে খেয়ে নিই। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছে যারা মোটা হওয়ার ভয়ে বা ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার ভয়ে লিচু খান না। তবে আপনি হয়তোবা জানেন না লিচু খেলে তো ওজন বাড়বে না বরং আপনারা যদি ওজন কমানোর ডায়েটে থাকেন তাহলে আপনার খাবারের তালিকায় লিচু রাখতে পারেন, তাতে করে আরো ভালো ফল পাবেন। 

অনেক পুষ্টিবিদদের কাছ থেকে জানা গেছে, এই লিচুফলে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। এবং অন্যদিকে ক্যালরি এবং ফ্যাটের মাত্রা শুধুই নাম মাত্র। সেজন্যই মূলত, আপনারা যারা ওজন কমানোর ডায়েটে রয়েছেন বা আছেন লিচু একটি আদর্শ ফল হবে আপনাদের জন্য। 

তাই আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে আপনার দৈনন্দিন খাবারের সঙ্গে লিচু রাখতে পারেন এছাড়াও লিচুকে বলা হয় খাদ্যগুণের আধার। লিচু ফল শুধু সুশান নয় ফলের সঙ্গে আমাদের শারীরিক গুনাগুনও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। তাছাড়া ভিটামিন সি এবং অ্যাসকরবিক এসিডে ভরপুর থাকায়,

লিচুতে কি অ্যাসিড থাকে?

লিচুতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-সি। তাছাড়াও লিচুতে থাকা অন্য খনিজ উপাদানগুলি যেমনঃ (আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড)। এই সমস্ত উপাদানগুলি লিচুতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। সেজন্য আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা মেটাতে লিচু বেশ সাহায্য করে থাকে। 

সেজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত মৌসুমী ফলগুলো সেবন করা। কিন্তু আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু খান তাহলে, আপনার পেট খারাপ, সুগারের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক ব্যক্তিরই এলার্জির সমস্যা থাকে, তাই যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা লিচু এড়িয়ে চলতে পারেন। সেজন্য নিয়ম মেনে পরিমান মত মৌসুমী ফল গুলো খেতে হবে আমাদের। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী মৌসুমী ফলগুলো খেতে পারেন। এতে করে আপনার ডায়েটের তালিকায় কতটা মৌসুমী ফল প্রয়োজন, তার সঠিক পরিমাণটি সুন্দরভাবে জানতে পারবেন।

লেখকের শেষ মতামত

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যে সকল পোস্টটি চাহিদা রয়েছে সেগুলো লিচু খুব সহজেই মেটাতে পারে। তাছাড়া গ্রীষ্মকালীন রসালো লিচু ফল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এছাড়াও অনেক রকমের গুনে ভরা লিচু ফল আমাদের শরীরে বিভিন্ন ভূমিকা রাখে। সেজন্য মৌসুমীর ফলগুলি যতটা সম্ভব, আমাদের সকলেরই খাওয়া উচিত।

আমরা প্রত্যেকেই লিচু খেতে খুব ভালোবাসি। টক মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং উপকারী। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। 

গর্ভাবস্থায় লিচু খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়, আলসারের সমস্যা দূর হয়, ত্বক সুন্দর হয়, হজম শক্তি উন্নত হয়, সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তবে গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে। গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার অপকারিতা গুলো অনেক বেশি মারাত্মক এই জন্য আমি সাজেস্ট করব গর্ভাবস্থায় কখনোই অতিরিক্ত লিচু খাবেন না যদি লিচু খেতে খুব ইচ্ছা করে সেক্ষেত্রে দিনে ২/৩ লিচু খেতে পারেন। 

তবে এর চেয়ে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে গর্ভের বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে কারণ লিচু শরীরের তাপ উৎপন্ন করতে সক্ষম। শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে শরীরের নানান প্রকার ব্যাধি দেখা দিবে। 

Leave a Comment