মানসিক অসুস্থতা সারা পৃথিবীজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। এই সমস্যাগুলো যখন আমাদের মধ্যে দিনের পর দিন বাড়তে থাকে তখন আমরা অনেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকি। এগুলো আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না। তখন আমরা সে মানুষগুলোকে বলে থাকি জিনে ধরছে কিংবা ভুতে ধরছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এমন ভাবা ঠিক নয়। সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
আমরা একটু তার সাথে সহানুভূতি আচরণ দেখালে কিংবা তাকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করলে। সে আগের মত অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। আমাদের সবার উচিত তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করা। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যেন এ সমস্যা মধ্যে কাউকে পড়তে না হয়।
আজকের এই আর্টিকেলের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ এবং মানসিক রোগী চেনার উপায়। সাথে সাথে মানসিক রোগের তালিকা, মানসিক রোগের নাম মানসিক রোগের লক্ষণসহ মানসিক রোগ সংশ্লিষ্ট আরো যাবতীয় বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ। কাজেই, প্রত্যেকের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
মানসিক রোগ কাকে বলে
মানসিক রোগ কাকে বলে? আমরা অনেকেই এই বিষয়টি সম্পর্কে জানি। সাধারণত আমরা শারীরিক রোগ সম্পর্কে শুনেছি কিন্তু অনেকের কাছেই মানসিক রোগ এ বিষয়টি নতুন কিছু। যদি আপনি স্বাভাবিকভাবে আচরণগত দিক থেকে পরিবর্তন হয়ে যান এবং উদ্ভট কার্যক্রম করতে থাকেন তাহলে আপনার মানসিক অর্থাৎ মাথায় সমস্যা হয়েছে অনেকেই এ ধারণা করবে।
যদি আপনার শারীরিক বিষয়গুলো ঠিক থাকে এবং মানসিক অর্থাৎ আপনার কথাবার্তা আপনার আচরণগত পরিবর্তন হয়ে যায় এবং আপনি একজন অস্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করতে থাকেন তাহলে আপনি একজন মানসিক রোগী অর্থাৎ আপনি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
মানসিক রোগের তালিকা
মানসিক রোগের তালিকা গুলো নিম্নরূপঃ
- অকারনে দুশ্চিন্তা (worry)
- বিষন্নতাবোধ করা (sadness)
- ওসিডি (OCD)
- স্ট্যান্ডডাল সিনড্রোম (Stendhal syndrome)
- অ্যাপোটেমনোফিলিয়া (Apotemnophilia)
- এংজাইটি বা উদ্বেগ (the anxiety)
- সাবসটেন্স অ্যাবিউজ (Substance abuse)
- কনভার্শন ডিসঅর্ডার (Conversion disorder)
- সাইকোসিস ডিসঅর্ডার (Psychosis Disorder)
- প্যানিক অ্যাটাক (Panic attack)
- ফোবিয়া (phobia)
- পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (Personality disorders)
- এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোম (Alien hand syndrome)
- বোয়ানথ্রপি (Boanthropy)
- ফ্যাকটিশাস ডিসঅর্ডার (Factitious disorder)
- প্যারিস সিনড্রোম (Paris syndrome)
- ক্লুভার-বুসি সিনড্রোম (Kluver-Busy syndrome)
মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ
মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণগুলো আসলে কি চলুন জেনে নেয়া যাক? মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ নিম্নরূপঃ
- সব সময় মেজাজ দেখানো ও খিটখিটে ভাব।
- নিজের মানুষগুলোকে নিজের শত্রু ভাবা।
- সিদ্ধান্ত নিতে না পারা।
- নিজের কাজগুলোকে আর ভালো না লাগা।
- নিজের সাথে নিজে কথা বলা।
- নিজেকে নিজে ঘরে বন্দী করে রাখা।
- কোন কারণ ছাড়াই তো যেতে হওয়া।
- গায়েবি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে এমনটা হলে।
- ঘুম কমে যেতে পারে বা অনেক সময় বেড়ে যেতে পারে।
- যে কাজ করছে ওই কাজ বারবার করা।
- অনীহা এবং দুর্বলতা প্রকাশ পায়।
- হঠাৎ করে বেশি রেগে উঠা।
- সব সময় নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা রাখা।
- দীর্ঘদিন যাবৎ মন খারাপ থাকা।
- সব সময় দুশ্চিন্তা করা।
- অন্যদের সবসময় সন্দেহের চোখে দেখা।
- প্রত্যহ সকলের সাথে ঝগড়া বিবাদে লেগেই থাকা।
- নিজের প্রতি যত্নশীল না হওয়া।
- সমাজের সকল মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় না থাকা।
- সময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা।
- ঘুম স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হওয়া।
- রেগে গিয়ে বাড়ি ঘরের সমস্ত জিনিসপাতি ভাঙচুর করা।
- সব সময় মেজাজ গরম করে চলা।
- নিজে নিজেই অকারনে হাসতে থাকা।
- সব সময় ক্ষুধা বা শরীরের ওজনের পরিবর্তন।
- সব সময় বুক ধড়ফড় বা হৃদস্পন্দন বেশি হওয়া।
মানসিক রোগ শুধু মনের উপর প্রভাব ফেলে না, এটি শরীরেও বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে। অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণে শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন বা অসুবিধা দেখা যায় যা সরাসরি শারীরিক অসুস্থতার মতো মনে হতে পারে। নিচে আমরা আরও মানসিক রোগের বিশেষ লক্ষণ গুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:
অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুম
মানসিক রোগের একটি বড় লক্ষণ হলো ঘুমের সমস্যা। উদ্বেগ, ডিপ্রেশন বা পিটিএসডির মতো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই অনিদ্রায় ভোগেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘুমও দেখা দিতে পারে।
ক্ষুধামন্দা বা অতিরিক্ত খাওয়া
মানসিক রোগের কারণে ক্ষুধার পরিমাণেও পরিবর্তন আসে। কিছু রোগে ক্ষুধামন্দা হয়, ফলে ওজন কমে যায়। অন্যদিকে, ডিপ্রেশন বা উদ্বেগের কারণে অনেক সময় অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, যা ওজন বৃদ্ধি ঘটায়।
স্থায়ী ক্লান্তি ও শক্তির অভাব
মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই অকারণে ক্লান্তি অনুভব করেন। কোনো কাজ না করেও শরীর দুর্বল মনে হয় এবং সামান্য পরিশ্রমেও অবসন্ন হয়ে পড়েন। এটি মস্তিষ্কের অতিরিক্ত চাপ বা উদ্বেগের ফল হতে পারে।
পেশি ব্যথা ও শরীরের অস্বস্তি
ডিপ্রেশন বা উদ্বেগের ফলে পেশি ব্যথা, গলা বা ঘাড়ে চাপ অনুভূত হওয়া, এবং শরীরজুড়ে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। এটি দীর্ঘস্থায়ী চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল হরমোনের বৃদ্ধি থেকে হতে পারে।
বুকে চাপ অনুভব করা বা হৃদস্পন্দনের বৃদ্ধি
উদ্বেগজনিত রোগের ক্ষেত্রে বুকে অস্বস্তি বা চাপ অনুভূত হয়। অনেক সময় মনে হয় হার্ট অ্যাটাকের মতো কিছু ঘটছে। এর পাশাপাশি হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
শ্বাসকষ্ট
প্যানিক অ্যাটাক বা উদ্বেগের সময় অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়। এই ধরনের সমস্যা বেশি হলে তা শারীরিক সমস্যার মতো মনে হতে পারে, তবে এটি মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে।
হজমের সমস্যা
মানসিক চাপের কারণে হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, পেট ব্যথা, বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
মাথাব্যথা
মানসিক রোগের আরেকটি সাধারণ শারীরিক লক্ষণ হলো স্থায়ী মাথাব্যথা। এটি বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে উদ্বেগ বা মানসিক চাপে ভুগলে দেখা দিতে পারে।
ত্বকের সমস্যা
মানসিক চাপের কারণে ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রণ, র্যাশ বা চুল পড়া বাড়তে পারে। উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ত্বকে প্রভাব ফেলে।
কম ইমিউনিটি
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক রোগ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে। এতে ঠাণ্ডা, জ্বর বা সংক্রমণের মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মাংসপেশির টান বা কাঁপুনি
অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে মাংসপেশিতে টান লাগা বা শরীরে হালকা কাঁপুনি দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণত তীব্র চাপের সময় ঘটে।
মানসিক রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
আপনি মানসিক রোগী তা কিভাবে বুঝবেন? সাধারণত এই বিষয়টি বুঝার বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। আপনি যদি মানুষের সমস্যার ভুলে থাকেন তাহলে আপনার নিজের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা দেবে। আপনি যদি এই লক্ষণগুলো খেয়াল করেন তাহলে দেখতে পাবেন আপনার আচরণগত বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দিয়েছে আগের তুলনায়। বিশেষ করে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে মানসিক রোগ হয়ে থাকে।
১। মানসিক রোগের লক্ষণ
- অতিরিক্ত পরিমাণে হীনমন্যতায় ভুগে থাকলে বুঝবেন আপনি একজন মানসিক রোগী।
- যদি আপনার মনে হয় আপনি নিজেকে অন্যের চাইতে আলাদা রাখছেন তাহলে আপনি একজন মানসিক রোগী।
- কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করেই উত্তেজিত হয়ে যাওয়া একজন মানসিক রোগের লক্ষণ।
- আপনি যদি লাগাতার কয়েক সপ্তাহ ধরে বিষন্নতায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনি একজন মানসিক রোগী।
- অনেক সময় নিজের ক্ষতি করা অর্থাৎ আত্মহত্যা করার প্রবণতা মানসিক রোগের লক্ষণ।
- নিজেকে বন্ধ করে আটকে রাখা মানসিক রোগীর লক্ষণ।
- খাবারের প্রতি অরুচি এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খাওয়া মানসিক রোগের লক্ষণ।
- কোনো কারণ ছাড়াই নিজে নিজেই নিজের সাথে কথা বলা মানসিক রোগের লক্ষণ।
- কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করেই নিজে হাসা এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই কান্না করা মানসিক রোগের লক্ষণ।
- নিজের পরিবারকে নিজের শত্রু মনে করা মানসিক রোগের লক্ষণ।
- প্রতিদিন আপনি যে সকল কাজ করেন এই কাজের প্রতি অনীহা দেখা দেওয়া মানসিক রোগের লক্ষণ।
- মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হঠাৎ করেই কোন কারণ ছাড়া মারধর করা মানসিক রোগের লক্ষণ।
- কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে মন খারাপ হয়ে যাওয়া মানুষের রোগের লক্ষণ।
- যেকোনো স্বাভাবিক কথাতেই হঠাৎ করে রেগে যাওয়া মানসিক রোগের লক্ষণ।
- যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে না পাড়া মানসিক রোগের লক্ষণ।
- মেজাজ অনেক বেশি শিক্ষিত হয়ে যাওয়া মানসিক রোগের লক্ষণ।
২। মানসিক রোগের সমাধান
মানসিক রোগের সমাধান প্রত্যেকের জেনে রাখা উচিত। বর্তমানে আমাদের জীবনের বিভিন্ন রকমের দুশ্চিন্তা রয়েছে। দুশ্চিন্তা ছাড়া এরকম একটা মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাধারণত এই অতিরিক্ত পরিমাণে দুশ্চিন্তা থেকেই আমাদের এই মানসিক রোগ তৈরি হয়।
যদি আপনি মানসিক রোগ এর সমাধান পেতে জানতে হলে একটি মাত্র উপায় হল আপনাকে অতিরিক্ত পরিমাণে দুশ্চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া উপরে ইতিমধ্যে আমরা মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে কোন ধরনের কাজগুলো করতে হবে এই বিষয়গুলো উল্লেখ করেছি।
আপনি যদি মনে করেন আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন তাহলে নিয়মিত উপরোক্ত উল্লেখ করা কাজগুলো করা শুরু করে দিন। যদি তাও না হয় তাহলে অবশ্যই একজন ভালো মানসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩। মানসিক রোগের চিকিৎসা
আপনি মানসিক রোগী তা কিভাবে বুঝবেন? যদি এই লক্ষণ গুলো জেনে থাকেন তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝতে পারবেন যে আপনি মানসিক রোগী কিনা? আপনার ক্ষেত্রে যদি এই লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে আপনাকে অবশ্যই মানসিক রোগের চিকিৎসা করাতে হবে।
মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আরো অনেক উপায় রয়েছে। এগুলো অবলম্বন করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত মানসিক চিকিৎসা বলতে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যে সকল কার্যক্রম রয়েছে সেগুলো করানো হয়।
৪। বাংলাদেশে মানসিক রোগের সেরা ডাক্তার
বাংলাদেশে মানসিক রোগের সেরা ডাক্তার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। আমরা অনেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকি। যদি আপনি এই সমস্যায় পড়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই মানসিক রোগের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত সেরা ডাক্তারকে খুঁজে থাকি।
ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন — এমবিবিএস,এফসিপিএস
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
যোগাযোগঃ ০১৯১১৩৫৫২৬৪
ডাঃ খালেদা বেগম — এমবিবিএস
সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
যোগাযোগঃ ০১৫৫৬৩৪৬৬৩৭
ডাঃ রেজওয়ানা কাদেরী — এমবিবিএস এফসিপিএস
সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
মানসিক রোগীর খাবার সমূহ
আপনাদের সুবিধার্থে মানসিক রোগের খাবার গুলো উল্লেখ করা হলো।
- দানা এবং শস্য জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে
- প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি গ্রহণ করতে হবে।
- যে খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আ্যন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে সেই খাবারগুলো খেতে হবে।
- প্রচুর পরিমাণে টক জাতীয় ফল খেতে হবে।
- নিয়মিত ভিটামিন বি অর্থাৎ সূর্যের আলো গ্রহণ করতে হবে।
- প্রতিনিয়ত বাদাম জাতীয় খাবার খেতে হবে।
- খাবার তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে।
- খাদ্য তালিকায় ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
- ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড জাতীয় খাবার রাখতে হবে।
মানসিক রোগী চেনার উপায়
মানসিক রোগ চিহ্নিত করার জন্য কিছু সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ রয়েছে যা একটি মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছে কিনা তা নির্দেশ করতে পারে। তবে, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে সঠিক নির্ণয়ের জন্য একটি মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। নিচে কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গ তুলে ধরা হলোঃ
- বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেওয়া
- সামাজিক কার্যকলাপ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা।
- অতিরিক্ত উদ্বেগ বা আতঙ্ক এবং দীর্ঘ সময় ধরে দুঃখিত থাকা।
- প্রিয় কাজগুলিতে আগ্রহ হারানো।
- সংবেদনশীলতা ও বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা এমন কিছু দেখা বা শোনা যা বাস্তবে নেই। বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা, হ্যালুসিনেশন বা ভুল ধারণা।
মানসিক রোগের কারণ
মানসিক রোগের কারণ আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানিনা। মানসিক রোগের কারণ জানা থাকলে আমরা খুব সহজেই এই রোগের চিকিৎসা খুঁজে বের করতে পারব। তাই প্রথমে আমাদেরকে মানসিক রোগের কারণ সম্পর্কে জানতে হবে। শুধু মানসিক রোগ নয় যেকোনো রোগের কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। মানসিক রোগের বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
- জেনেটিক কারণে পিতা-মাতা বা পূর্ব পূরুষদের মধ্যে কারো যদি মানসিক রোগ থাকে তাহলে সন্তানের ক্ষেত্রে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- শরীরে কোনো ধরনের কঠিন ব্যাধি থাকলে
- অতিরিক্ত নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করার ফলে
- যদি অনেক জোরে মস্তিষ্কে আঘাত লাগে তাহলে
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়ার কারণে
- হঠাৎ করে কোন কিছুতে ভয় পেয়ে গেলে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, অত্যধিক আনন্দ, দুঃখ, নিরাশ।
- পরিবেশগত কারণে এই সমস্যা হতে পারে।
মানসিক রোগের ঔষধের নাম
মানসিক রোগের ঔষধের নাম নিম্নরূপঃ
- কিউপেক্স ২০০ এমজি (Qupex 200 mg)
- রেসিডন ২ এমজি (Residon 2 mg)
- ডিপ্রেক্স ৫ এমজি (Deprex 2 mg)
- অক্সঅ্যাট ২০ এমজি (Oxat 20 mg)
- চিয়ার ৫০ এমজি (Cher 50 mg)
- অক্সাপ্রো ১০ এমজি (Oxapro 10 mg)
- রিসডন ৪ এমজি (Risdon 4 mg)
- নেক্সিটাল ১০ এমজি (Nexcital 10 mg)
এগুলোই হলো মূলত মানসিক রোগের ওষুধের নাম। মানসিক রোগের সমাধান পেতে চিকিৎসকরা এই ওষুধগুলো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। তবে আমার পরামর্শ থাকবে আপনি একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শক্রমে অবশ্যই ওষুধ সেবন করবেন। আশা করি মানসিক রোগের ওষুধ নিয়ে আর কোন প্রবলেম হবে না।
মানসিক রোগের ওষুধ কত দিন খেতে হয়
মানসিক রোগের ওষুধ কত দিন খেতে হয় এ সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী হয়েছে আছেন। দেখুন মানসিক রোগের জন্য কত দিন ঔষধ ক্ষেতে হবে এ বিষয়ে সঠিক ভাবে বলা মুশকিল। কেননা এ সমস্যা যদি আপনার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে ৬ মাস থেকে ১ বছরের মতো ঔষধ খেতে হতে পারে। এটা নির্ভর করে রোগীর অবস্থার উপরে।
মানসিক রোগ থেকে বেচে থাকার উপায়
আপনি মানসিক রোগী তা কিভাবে বুঝবেন? এই বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। এখন আপনি যদি মানসিক রোগ থেকে রেহাই পেতে চান তাহলে আপনাকে বেশ কিছু কার্যক্রম করতে হবে। মানসিক রোগ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক মারাত্মক একটি বিষয়।
সাধারণত এটি আমাদের স্বাস্থ্যকে একেবারেই শেষ করে দেয়। তাই মানসিক সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই এখান থেকে বেচে থাকার উপায় গুলো জানতে হবে।
- নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
- ধর্মীয় কাজগুলো সঠিকভাবে করতে হবে
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
- নিয়ম মাফিক জীবন-যাপন করতে হবে
- বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে মেলামেশা করতে হবে
- ধুমপান অথবা যেকোনো ধরনের মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে– আপনি যদি মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে নিজেকে বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। সাধারণত আমরা অনেক সময় বেকার বসে থাকি যার ফলে আমাদের দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। সাধারণত এখান থেকে বের হয়ে আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে– অনেক সময় দেখা যায় যে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে না যার ফলে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই পুষ্টিকর এবং সুষম জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে নিয়মিত।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো– ঘুম মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমান তাহলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যাবে এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মানসিক রোগ। তাই মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
ধর্মীয় কাজগুলো সঠিকভাবে করতে হবে– আমাদের এই পৃথিবীতে অনেকগুলো ধর্ম রয়েছে। আমরা যে ধর্মের মানুষ হই না কেন আমাদের নিজের ধর্মের কাজগুলো সঠিকভাবে করতে হবে। কারণ পৃথিবীর কোন ধর্মই মানুষকে খারাপ করেনা। আপনি যে ধর্ম পালন করেন না কেন নিজের ধর্মের কাজগুলো সঠিকভাবে করার চেষ্টা করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে– নিজের শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন তাহলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য এবং মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
নিয়ম মাফিক জীবন-যাপন করতে হবে– অনেক সময় দেখা যায় যে আমাদের জীবন সঠিকভাবে অর্থাৎ সঠিক নিয়মে চলে না যার ফলে আমাদের মানসিক সমস্যা এবং এর সাথে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। আপনি যদি মানসিক এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মমাফিক জীবন যাপন করতে হবে।
বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে মেলামেশা করতে হবে-– মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বন্ধুবান্ধব এবং নিজের আত্মীয় স্বজনদের সাথে চলাফেরা করতে হবে। যদি আপনি সবার সাথে কথা বলেন তাহলে দেখবেন মানসিক সমস্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে।
ধুমপান অথবা যেকোনো ধরনের মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে– যদি আপনার কোন ধরনের মাদক গ্রহণ করার অভ্যাস থেকে অথবা শুধুমাত্র ধূমপান করার অভ্যাস থাকে তাহলে অবশ্যই মানুষের রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে এই কাজগুলোকে বাদ দিতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে– যদি উপরের কাজগুলো অনুসরণ করে মানসিক রোগ থেকে মুক্তি না পেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসা করে পরামর্শ নিতে হবে। আমরা যদি সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারি তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো।
মানসিক রোগ নিয়ে কিছু তথ্য ও পরামর্শ
- মানসিক রোগী মানেই ভয়ংকর, আক্রমনাত্মক হয় না, শুধুমাত্র গুরুতর মানসিক রোগে আক্রান্ত অল্পসংখ্যক রোগী আক্রমনাত্মক হয়।
- মানসিক রোগী মানেই ‘পাগল’ না। এটা এক ধরনের অসুস্থতা যা অন্যান্য শারীরিক রোগের মতই চিকিৎসাযোগ্য।
- অনেকেই মনে করে মানসিক রোগ কখনোই ভালো হয় না কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে রোগী যদি ডাক্তারের পরামর্শ মত ঔষধ খায় ও প্রয়োজনীয় উপদেশ মেনে চলে এবং পরিবারের সহযোগিতা পায় তাহলে অনেক রোগী সুস্থ হয়ে যায়।
- মানসিক রোগের ঔষধ ‘ভীষণ কড়া আর ভয়ংকর, অনেক সাইড ইফেক্ট’ কিংবা মানসিক রোগের ঔষধ মাত্রই ‘ঘুমের ঔষধ’- এগুলো ভুল ধারণা। শুধু মানসিক রোগের না, সব ঔষধেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে।
- মানসিক রোগের ঔষধ খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে। বন্ধও করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো। চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও কথায় বা পরামর্শে ঔষধ বন্ধ করা বিপদের কারণ হতে পারে।
- অনেকে মনে করে ঔষধ খাওয়া মাত্রই বা ঔষধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুস্থ হয়ে যাবেন, কিন্তু মানসিক রোগের বেশির ভাগ ঔষধের কার্যকারিতা পেতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়।
- মানসিক অসুস্থতা কিছুই না, এটা এক ধরনের ঢং বা অভিনয়, মনোযোগ আকৃষ্ট করার কৌশল। কিন্তু এটা কোন ঢং নয়। এটা শারীরিক অন্যান্য রোগের মতোই অসুস্থতা। আর কেউই স্বেচ্ছায় অসুস্থ হয় না।
- বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়স্কের মধ্যে ১৬.৮% মানুষ কোন না কোন মানসিক রোগে আক্রান্ত। শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগের হার ১৩.৬%।
- প্রতিটি মানসিক রোগের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা আছে। অপচিকিৎসা ও কুসংস্কার মানসিক রোগের ভোগান্তি বাড়ায়।
- মানসিক রোগ এবং চিকিৎসা নিয়ে অহেতুক ভীতি ছড়াবেন না। এ ধরনের রোগ বেশির ভাগই নিয়ন্ত্রণযোগ্য, চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার।
লেখকের শেষ মতামত
পরিশেষে বলতে চাই, মানসিক সমস্যার সমাধান করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সঠিক ভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। মানসিক সমস্যা থেকে কিভাবে নিজেকে মুক্ত করবেন এই বিষয় গুলো আমরা ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি। সাধারণত এই বিষয় গুলো অনুসরণ করে নিজের মানসিক সমস্যা অথবা যেকোনো কারো মানসিক সমস্যার সমাধান বের করতে পারবেন। যদি বিষয়টি কাজে না দেয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ এবং মানসিক রোগী চেনার উপায় আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি কোন কারণে মনে করে থাকেন আপনি অনেকদিন মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন এবং আপনার আচরণের বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়া উচিত। কারণ এখানে মানসিক রোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।