আপনার হয়তো সবাই জানেন প্রত্যেকটা জিনিসেরই কিন্তু কিছু ভালো দিক রয়েছে আবার এমন কিছু মারাত্মক ধরনের ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা আপনার কল্পনারও বাইরে হতে পারে। অন্যান্য বস্তুর যেমন ভালো দিক রয়েছে আবার খারাপ দিক রয়েছে ঠিক তেমনভাবে পাথরকুচি পাতারও কিন্তু ভালো দিক রয়েছে এবং কিছু মারাত্মক ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
যা সম্পর্কে জানলে আপনি এই পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকার দিকগুলো এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করবেন। অনেক বড় বড় সমস্যার সমাধান করে থাকে এই সামান্য পাথরকুচি পাতা। আমরা এই পাতাকে আসলে জঙ্গল মনে করি কিন্তু বড় বড় ডাক্তাররা এ পাতা বিভিন্ন ধরনের রোগীদের ঔষধ হিসেবে বলে দেয়।
আপনি যদি পাথরকুচি পাতা ব্যবহার নতুন ভাবে করছেন। তাহলে আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনাদের জন্য। আজকে আমি আপনাদেরকে পাথরকুচি পাতা সম্পর্কে বেসিক ধারণা থেকে শুরু করে একেবারে মূল আলোচনা পর্যন্ত ভালোভাবে বুঝিয়ে দিব।
কারণ আপনার যেন পাথরকুচি পাতা নিয়ে। আর কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়। এবং পরবর্তীতে এটি আপনি যেন মানুষকেও বলে সাহায্য করতে পারেন। তো বন্ধুরা আসুন আমরা অযথা সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনার দিকে ফিরে যাই।
পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক
পাথরকুচি পাতার যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। যদি আপনারা পূর্বে পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয় এ বিষয়টি সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাদের পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও জানা জরুরী।
সবকিছুর যেমন সঠিক মাত্রা রয়েছে ঠিক তেমনি পাথরকুচি পাতারও সঠিক মাত্রা রয়েছে। যদি অতিরিক্ত মাত্রায় পাথরকুচি পাতা খাওয়া হয় তাহলে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই বিপদজনক। তাই আসুন আর দেরি না করে পাথরকুচি পাতার ক্ষতিক বা পাথরকুচি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
- যদি কেউ অতিরিক্ত মাত্রায় পাথরকুচি পাতা খায় তাহলে মুখের রুচি নষ্ট হয়ে যায় আর এর ফলে খাবারের প্রতি তেমন একটা গুরুত্ব থাকে না।
- যদি আপনারা অতিরিক্ত মাত্রায় পাথরকুচি পাতা খেয়ে থাকেন, তাহলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে শুধু তাই নয় পাশাপাশি পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- যে সকল গর্ভবতী নারীরা রয়েছে তাদের জন্যও পাথরকুচি পাতা হতে পারে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এটি গর্ভবতী নারীদের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই পাথরকুচি পাতা খাওয়া উচিত নয়।
- যে সকল ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন যাবত ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন তাদের পাথরকুচি পাতা সেবন করার ফলে ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আর এর ফলে আপনার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- যারা পরিমাণ এর চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে পাথরকুচি পাতা খেয়ে থাকেন, তাদের ডায়রিয়াজ জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এটি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- যদি আপনারা পাথরকুচি পাতা খেয়ে থাকেন তাহলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। আর এর ফলে আপনার শরীরে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- এছাড়াও যারা এলার্জিজনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা পাথরকুচি পাতা কখনোই মাত্রার বাইরে খাবেন না। এটা করে এলার্জির সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
আপনি যদি একজন গর্ভবতী মা হন তাহলে কিন্তু পাথরকুচি পাতা আপনাকে অবশ্যই বর্জন করে চলতে হবে। পাথরকুচি পাতা কিন্তু আমাদের রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে তাই গর্ভবতী মায়েরা কখনোই এটি খেতে যাবেন না। এবং যে সকল মায়ের ছোট বাচ্চা রয়েছে যারা দুধ পান করে তাদের কখনোই পাথরকুচি পাতা খাওয়া উচিত নয়।
কেননা পাথরকুচিতে রয়েছে অতিরিক্ত পরিমাণে এন্টাসিড যা আপনার শরীরকে শুকিয়ে ফেলে। তাই আপনার বাচ্চার দুধ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। পাথরকুচি পাতা খাওয়ার ফলে আপনার পিত্ত থলির সমস্যা বৃদ্ধি হতে পারে। তাই বুঝে শুনে খাবেন।
পাথরকুচি পাতা খাওয়ার আগে সতর্কতা
আপনি যদি একজন গর্ভবতী মা হন তাহলে কিন্তু কখনোই কোন ভাবে আপনি পাথরকুচি পাতা খাবেন না পাথরকুচি পাতাতে এমন কিছু পদার্থ রয়েছে যা আপনার গর্ভপাত করাতে সক্ষম। তাই মায়েদের আমি অনুরোধ করে বলি এটি সবসময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।
আপনি কখনোই যেন নিজের ইচ্ছামতো এটি ব্যবহার করতে যাবেন না কেননা এর ফলে আপনাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে তাই এটি সেবন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আপনি পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করেছেন এবং আপনার কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে তখন আপনি কি করবেন। তৎক্ষণাৎ কোন দেরি না করেই নিকটস্থ ভালো ডাক্তারের কাছে চলে যাবেন এবং চিকিৎসা নিবেন তা না হলে পরবর্তীতে বড় এক ধরনের ক্ষতি হতে পারে আপনার।
আপনি যেই ওষুধটি খান না কেন ভালোভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন তারপর সেবন করবেন। আমি আপনাদেরকে এতক্ষণ যে ধরনের কথা বললাম আশা করি আপনাদের প্রশ্নের উত্তরটি আপনার জানতে পেরেছেন এবং আমার এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ার পর আমার মনে হয় আপনারা পরবর্তীতে এটি ব্যবহার করার সময় অনেকটাই সতর্ক হয়ে ব্যবহার করবেন।
পাথরকুচি পাতার ব্যবহার
বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে আমরা পাথরকুচি পাতা বা এর রস ব্যবহার করে থাকি। পাথরকুচি পাতার ভর্তা করেও খাওয়া যায় এবং খেতে অনেক সুস্বাদু। তবে খালি মুখে কাঁচা পাতা খেতে ভালো লাগে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সুস্থ জীবন লাভ করতে আমাদের এটি নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।
পাথরকুচি পাতা বেটে মুখে লাগালে ব্রণ জাতীয় সমস্যা সমাধান হয় এবং ত্বক পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত থাকে। যাদের অ্যালার্জি-জনিত সমস্যা রয়েছে বা লো-প্রেশারে ভুগছেন তারা পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করবেন না, প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই পাতার ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের যত্নে পাথরকুচি ব্যবহার
প্রাচীনকাল থেকেই চুলের যত্নে পাথরকুচির পাতা অনেক কার্যকারী হিসেবে চলে আসছে। আপনি যদি প্রাচীনকাল নিয়মে এই পাথরকুচির পাতার ব্যবহার পরিচর্যা করতে চান তাহলে সাথেই থাকুন। এই পাথরকুচির পাতা অতুলনীয় কার্যকরী উপাদান রয়েছে। এই শক্তিশালী উদ্ভিদের মধ্যে এমন কিছু গুণ রয়েছে যার ফলে আপনার চুলের স্বাস্থ্য অনেক সুন্দর বৃদ্ধি করবে।
চুলে পাথরকুচি পাতা বা এর রস ব্যবহারের মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব। অনেকে আছেন চুল পড়া নিয়ে বেশ চিন্তিত তারা পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারবেন। চুল পড়া বন্ধের পাশাপাশি খুশকি দূর করতেও এটি বেশ কার্যকর। এটি পরীক্ষিত একটি আমল বা কাজ। শুধু খুশকি দূর করেনা, এটি আমাদের মাথার ত্বককে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
তাই এটি ব্যবহার করতে পারেন। চুল পড়া রোধ করার পাশাপাশি চুল ঘন করে এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত হয়। পাথরকুচি পাতা বেটে নিয়ে এর নির্যাস আলাদা করে রেখে আপনার নিয়মিত ব্যবহার করা হেয়ার অয়েল বা চুলের তেলের সাথে ওই নির্যাস মিশ্রিত করুন এবং তা চুলে ব্যবহার ব্যবহার করুন। এতে তেলের উপকারিতা কয়েক গুণে বেড়ে যাবে এবং চুল হবে আরও স্বাস্থ্যকর।
বেটে নেওয়া পাতা ফেলে না দিয়ে সেটি চুলে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ব্যবহার করার আগে অবশ্যই মাথা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন, এরপর ২০ থেকে ৩০ মিনিট পাথরকুচি পাতা বাটা চুলে লাগিয়ে রাখুন। তারপর উন্নত মানের শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধৌত করুন। এভাবে মাসে চার থেকে পাঁচ বার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেই চুলের উন্নতি বুঝতে পারবেন।
পাথরকুচি পাতায় ঔষধি গুণসম্পন্ন পানি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনি যেটা করতে পারেন, এক মগ পানি নিয়ে সেখানে পাথরকুচি পাতা গরম করুন। চার থেকে পাঁচ মিনিট ফোটার পর পানি ঠাণ্ডা করুন। এরকম করে প্রতিদিন সেই পানি মাথায় অর্থাৎ চুলে ব্যবহার করুন। এতে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে এবং চুলের গোঁড়া শক্ত এবং মজবুত হবে।
পাথরকুচি পাতার পাশাপাশি পেয়ারা পাতাও চুলের যত্নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চুল পড়ার সমস্যা থাকলে প্রথমে কি কারণে চুল পড়ছে তা জানতে হবে। কেননা বিভিন্ন কারণে চুল ঝরে যেতে পারে। এজন্য চুল পড়া রোধে বা চুলের যত্নে পাথরকুচি পাতার ব্যবহার এর পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম
পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম সমস্যা বা রোগের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং বিকেলে নিয়ম অনুসরণ করে পাথরকুচি পাতার রস অথবা সরাসরি চিবিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
শুধু তাই নয় শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করতেও অনেক বেশি সাহায্য করবে। যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা দিনে দুইবার তিনটি করে পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খেতে পারেন। এতে করে অনেক বেশি উপকার পারেন।
এছাড়াও যদি আপনাদের প্রস্রাব আটকে যায় কিংবা পেট ফুলে যায় তাহলে সামান্য পরিমাণে পাথরকুচি পাতার রস বের করে পানিতে মিশিয়ে খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। যারা পাথরকুচি পাতার রস অথবা পাতা চিবিয়ে খেতে পারে না তাদের ক্ষেত্রে অন্য প্রন্থা রয়েছে।
সবার প্রথমে ৮ থেকে ১০ টি পাথরকুচি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। এরপরে দুইটা শুকনো মরিচ পোড়া এবং একটি পেঁয়াজ এবং চারটি ধনাপাতা ও দুটি কাঁচামরিচ একসঙ্গে কুচি করে পাথরকুচি পাতার সঙ্গে মিশ্রণ করতে হবে এবং সেখানে সামান্য পরিমাণে সরিষার তেল এবং প্রয়োজনমতো লবণ মিশ্রণ করে ভর্তা তৈরি করতে হবে। আর এই ভর্তা অনেকেই খুব সহজেই খেতে পারবে আর দ্রুত শরীরের বিভিন্ন সমস্যা খুব সহজেই দূর হবে।
পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয়
পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয় তা জানার জন্য আজকের এই আলোচনায় চোখ রাখুন। কারণ পাথরকুচি পাতা আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকার হয় তা হয়তো অনেকেই জানেন না। এই পাথরকুচি পাতা সে প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন মহা ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তবে এই পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে কি কি সমস্যা দূর হয় তা আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
১। অনেক বাচ্চাদের পেট ব্যথা হয় তখন বিভিন্ন প্রন্থা অবলম্বন করে বাচ্চার পেট ব্যথা দূর করা হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন ৩০ থেকে ৬০ ফোটা পাথরকুচি পাতা রস পেটে মালিশ করলে বাচ্চাদের পেট ব্যথা দ্রুত উপশম হয়।
২। এছাড়াও পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার ফলে কিডনি এবং গলগণ্ডের পাথর অপসারণ করতে বেশ সাহায্য করে। যদি আপনারা দিনের মধ্যে দুইবার পাথরকুচি পাতার দুই থেকে তিন টুকরা অথবা রস খেতে পারেন তাহলে কিডনি এবং গলগণ্ডের পাথর খুব সহজেই অপসারণ হয়ে যাবে।
৩। শুধু তাই নয় যাদের সর্দি জনিত সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ সর্দি-জনিত কারণে শরীরের যে কোন স্থানে ফোড়া দেখা দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস এক চামচ করে প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে। তবে মনে রাখবেন এভাবে এক সপ্তাহ খেলে তার পরেই উপকার পাবেন।
৪। অনেক মানুষের প্রস্রাব আটকে যাওয়ার, পেট ফুলে যাওয়ার, পেটে বায়ুর চাপ এগুলো সমস্যা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে আপনারা চাইলে পাথরকুচি পাতার রস গরম করে এবং তার সাথে সামান্য পরিমাণে চিনি মিশ্রণ করে এক কাপ পানি খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে। তবে মনে রাখতে হবে হালকা কুসুম গরম করে খেতে হবে।
৫। যাদের অনেক আগে থেকে সর্দি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস খুবই উপকারী। কারণ পুরনো সর্দি ভালো করতে বিশেষভাবে উপকারে আসে পাথরকুচি পাতার রস। পাথরকুচি পাতার রস এবং সামান্য পরিমাণে সোহাগা খৈ, একসঙ্গে মিশ্রণ করে প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে দুই চা চামচ করে দুইবার খেলে পুরনো সর্দি খুব দ্রুত সেরে যাবে এবং সর্বদা সর্দি কাশি থেকে খুব সহজেই রেহাই পাওয়া যাবে।
৬। যদি কোন ব্যক্তির লিভারের সমস্যা থাকে তাহলে, এই ধরনের সমস্যা এড়াতে চাইলে তাজা পাথরকুচি পাতা চিবিয়ে অথবা জুস তৈরি করে খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
৭। এছাড়াও যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এবং সেটি নিয়ন্ত্রণের নিয়ে আসতে চাই তাহলে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি মূত্রথলির সমস্যা থাকলেও সমাধান হয়ে যাবে।
৮। যদি কোন বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়ে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস হালকা করে আগুনে ছেঁক দিয়ে লাগারে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়।
৯। যে সকল ব্যাক্তিদের পিত্তজনিত ব্যথায় রক্তকরণ হয় তাদের দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই দ্রুত এই রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে দুই বেলা এক চামচ করে পাথরকুচি পাতার রস দুইদিন খেলে আশা করি উপকার পাওয়া যাবে।
১০। আবার যে সকল ব্যক্তিদের মৃগী রোগান্ত সমস্যায় ভুগেন তারাও চাইলে পাথরকুচি পাতার রস এক থেকে দুই ফোঁটা মুখে দিলে আরাম পেয়ে যাবে। সামান্য পরিমাণে পেটে গেলেই এই রোগের দ্রুত সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।
খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়
পাথরকুচি পাতায় যে এত পরিমান গুণ রয়েছে যা না বললেই নয়। আপনি জানলে অবাক হবেন যে খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয় এগুলো সম্পর্কে। পাথরকুচি পাতায় যে এত গুন রয়েছে সেটা আগে হয়তো আপনারা নাও জানা থাকতে পারে। আপনি যদি জানেন যে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয় তাহলে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আপনিও প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খাবেন।
কিডনি ও গলগন্ডের পাথর অপসারণ পাথরকুচি পাতায় এমন গুনাগুন রয়েছে যার ফলে কিডনি ও গলগন্ডের মত কঠিন ও মারাত্মক পাথরকে খুব সহজেই গলায় দিতে পারে। পাথরকুচি পাতার মধ্যে রয়েছে অ্যালকালয়েড, গ্লাইকোসাইড, এবং ট্রাইটারপেনয়েড এর মত বিভিন্ন শক্তিশালী উপাদান রয়েছে। যার ফলে খুব সহজেই কিডনিতে পাথর হলে পাথর গলে যায় এবং খুব সহজেই এটি বের করা যায়।
ত্বকের যত্নে আমরা সাধারণত ত্বকের যত্ন নিয়ে খুব বেশি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই পাথরকুচির পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে ত্বকের যত্নে। পাথরকুচি পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যার কারণে পাথরকুচি পাতা যদি ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয়।
তাহলে ত্বক অনেক উন্নতি হয়ে যায়। পাথরকুচি পাতায় কিছু বিদ্যমান উপাদান রয়েছে সেগুলো হল অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, ভিটামিন সি, অ্যান্ডি অক্সিডেন্ট এই উপাদানগুলো ত্বকের যত্নের জন্য অনেক সাহায্য করে থাকে।
শিশুদের পেট ব্যথা করলে শিশুদের পেট ব্যাথা হলে পাথরকুচির পাতা সকালে খালি পেটে খাওয়ানো হলে পেট ব্যথা আরাম হয়ে যায়। পাথরকুচি পাতার মধ্যে কিছু উপাদান রয়েছে যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, ও এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল এইগুলোর ফলে পেট ব্যথা সমস্যা দূর হয়ে যায়। এই বিশেষ কার্যকর আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে।
পাইলস ও অর্শ রোগের উপশম আপনাদের মধ্যে কারো যদি পাইলস ও অর্শ রোগের সমস্যা থাকে। তাহলে অবশ্যই পাথরকুচি পাতা সকালে খালি পেটে খেয়ে নিতে হবে। তাহলে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ও মারাত্মক যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা থেকে খুব দ্রুত দূর হয়ে যাবে। এই সমস্যা থাকলে অবশ্যই সকালে খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করে নিবেন।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে অনেক মানুষের এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা বেড়েই চলেছে। এই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার কারণে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না অনেক মানুষ। সেজন্য উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে দূর করার জন্য পাথরকুচি পাতা অনেক কার্যকরী একটি উপাদান। সকালে খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খাবেন আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
লিভারের সমস্যা থেকে রক্ষা আমাদের শরীরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধরা যায় লিভার। লিভারে সমস্যা যদি হয় তাহলে আপনার ধীরে ধীরে মৃত্যুর পর্যায়ে চলে যেতে পারেন। তাই লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে প্রতিদিন খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেতে হবে।
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা কি
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা এর পাশাপাশি কিছু অপকারিতা অথবা পাথরকুচির পাতার ক্ষতিকর দিক রয়েছে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে। পাথর কুচি পাতার উপকারিতা গুলো:
পেটের সমস্যা দূর করে: যাদের পেটের সমস্যা বা পেট ফুলে উঠেছে তারা মধুর সাথে পাথরকুচি পাতার রস মিশিয়ে খেলে পেটের উপকার হয়।
পেশাবের সমস্যা: যাদের পেশাবের ইনফেকশন রয়েছে বা মূত্র-থলির সমস্যা অথবা পেশাব আটকে যাওয়ার সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা পাথরকুচি পাতার রস খেলে এসব সমস্যা দূর হয়।
জন্ডিস ভালো করতে: পাথরকুচি পাতার রস অথবা পাতা জুস বানিয়ে খেলে অনেক লিভার সুস্থ ও ভালো থাকে এবং জন্ডিস দূর হয়।
কিডনিতে পাথর দূর করতে: কিডনিতে পাথর হওয়া রোধ করতে এবং পাথর দূর করতে পাথরকুচি পাতা বেশ কার্যকর তা আমরা কমবেশি সকলেই জানি।
শিশুদের পেট ব্যথা কমাতে: শিশুদের পেটে ব্যথা হলে পাথরকুচি পাতা খাবার পাশাপাশি এই পাতার নির্যাস পেটে ভালোভাবে মালিশ করিয়ে দিন, এতে অনেকটাই আরাম পাওয়া যায়।
কাঁটা স্থানে ও পোকামাকড় কামড়ালে: পাথরকুচি পাতা বেটে নিয়ে ক্ষতস্থানে বা যেখানে বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দিয়েছে সে স্থানে লাগালে দ্রুত উপশম হয় এবং জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
মৃগী রোগ: পাথরকুচি গাছের পাতার রস রোগীকে খাওয়ালে অনেক উপকার হয়।
ঠাণ্ডা জনিত রোগের মোকাবেলায়: শীতের ঠাণ্ডা জাতীয় রোগ যেমন সর্দি কাশি নিউমোনিয়া ইত্যাদি মোকাবেলায় পাথরকুচি পাতার রস নিয়মিত এক চামচ সেবন করতে পারেন।
ডায়রিয়া ও আমাশয়: সামান্য পরিমাণ জিরা ও ঘি পাথরকুচি পাতার রসের সাথে মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া ও আমাশয় দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
পাইলসের সমস্যা দূর করতে: অর্শ বা পাইলস এর হাত থেকে রক্ষা পেতে পাথরকুচি পাতার রস এবং গোলমরিচ একসাথে খেতে পারেন এতে পাইলসের সমস্যা দূর হয়।
হাই প্রেশার নিয়ন্ত্রণে: প্রতিদিন সকালে এক চামচ এবং বিকালে এক চামচ পাথরকুচি পাতার রস খেলে হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ কমে।
ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া: ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া প্রতিরোধ করতে পাথরকুচি পাতার নির্যাস নিয়মিত দুইবার করে পাঁচ থেকে দশ ফোঁটা খেতে পারেন। এটি ব্লাড ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে খুবই ভালো কাজ করে।
মাথা ব্যথা কমায়: পাথরকুচি পাতা বেটে নিয়ে মাথায় অর্থাৎ কপালে ভালোভাবে বেশ কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন, এতে মাথাব্যথা দূর হয় এবং এর রস চোখের আশেপাশে লাগালে চোখের ব্যথাও দূর হয়। চুলের যত্নে পাথরকুচি পাতার ব্যবহার এর ফলে চুলের অনেক উপকার হয়।
মেহ দূর এবং পুরাতন সর্দি কাশি দূর করে: নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস খেলে অনেক দিন ধরে চলতে থাকা সর্দি কাশি এবং মেহ দূর।
পাথরকুচি পাতা কখন খেতে হয়
আমরা প্রায় সকলেই জানি যে কোন জিনিসের খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে ঠিক তেমনি পাথরকুচি পাতা কখন খেতে হয় তারও কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। আপনারা যে কোন সময় পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন।
তবে অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমাণ মত রস খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে। যেমন আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন তাহলে অনেক বেশি উপকার পাবেন।
তবে যদি আপনারা অনেক বেশি উপকার পেতে চান, তাহলে রাতে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন এসময় খেলে শরীরের অনেক বেশি উপকার হয়। তবে দুপুরে পাথরকুচি পাতার রস না খাওয়াই ভালো সকালে এবং সন্ধ্যার মুহূর্তে সেবন করায় প্রকৃতপক্ষে ভালো।
পাথরকুচি পাতা কোথায় পাওয়া যায়
পাথরকুচির পাতা বা পাথরকুচি গাছ সর্বত্রই দেখা মিলে, বিশেষ করে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে এরা বেশি জন্মায়। এই গাছ যেখানে সেখানে জন্মাতে পারে। বাড়ির আঙ্গিনায় বা ছাদে টবে পাথরকুচি গাছ লাগাতে পারেন। তাহলে সহজেই এর উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।
আরেকটি মজার বিষয় হল পাথরকুচি পাতা থেকে গাছ হয়। তাই একটি গাছ লাগালেই সেখান থেকে আরও অনেকগুলো গাছ লাগানো যায় পাতার মাধ্যমে।
পাথরকুচি পাতা থেকে গাছ কিভাবে হয়
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন কোন গাছ পাতা থেকে জন্ম নেয়। উত্তরটি হয়তো সকলেরই জানা তাহলে পাথরকুচি গাছ পাতা থেকে জন্ম নেয়। ২০১০ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক গবেষণার মাধ্যমে জানান যে, পাথরকুচি পাতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরি করা বা উৎপাদন করা যাবে। তা নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে। পাথরকুচি পাতা ছিঁড়ে টুকরা করে মাটিতে লাগালে সেখান থেকে গাছ হয়।
লেখকের শেষ মতামত
রোগ নিরাময়ের জন্য বা রোগ হওয়ার আশঙ্কা থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করবেন। অনেকের বিভিন্ন জটিল সমস্যার কারণে পাথরকুচি পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে অপকারের যে এ পাতার উপকারিতা বেশি। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী পাথরকুচি পাতা খাবেন।
মনে রাখবেন আপনি আসলে কোন ক্ষেত্রে বা কি ধরণের উপকার পাওয়ার জন্য এই পাতা খেতে চাচ্ছেন সেই মূল কারণটি নিশ্চিত করা ও সঠিক রোগ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য সর্বোত্তম সমাধান খুঁজতে আগে অবশ্যই একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন।
এই ছিল আজকের পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক সমূহ জানতে পেরেছেন।
এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।