চোখের পাপড়ি ও ভ্রু ঘন করার উপায়

মুখের সৌন্দর্যের এক বিশেষ অঙ্গ হলো চোখ। চোখকে কবিরা উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছেন তাদের নানান কবিতায়। চোখের পাপড়ি এবং তার সাথে ভ্রু ঘন হলো চোখের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। তাই অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন চোখের পাপড়ি ও ভ্রু ঘন করার উপায় সম্পর্কে।

চোখের পাপড়ি ও ভ্রু ঘন করার উপায়

আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে চোখের পাপড়ি ও ভ্রু ঘন করার উপায় সম্পর্কে। আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন চোখের ভ্রু ঘন করার উপায়, চোখের পাপড়ি ঘন করার উপায়, চোখের পাপড়ি পড়ে যাওয়ার কারণ, চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপায়, মোটা ভ্রু চিকন করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

চোখের ভ্রু ঘন করার উপায়

ঘন ভ্রু সবার পচ্ছন্দের। তবে স্রষ্টা পৃথিবীতে একেক মানুষকে একেক ভাবে সৃষ্টি করেছেন। কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় জ¤œগতই ভ্রু পাতলা। আবার অনেকের ভ্রু এর চুল ঝড়ে পড়ে যাওয়ার সমস্যা থাকে। শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বিঘিœত হলে এমন সমস্যা হয়ে থাকে। আর এ সমস্যা প্রাকৃতিক উপায়ে দূর করতে পারবেন। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক চোখের ভ্রু ঘন করার উপায় সম্পর্কে।

নারিকেল তেল: ভ্রু ঘন করতে বেছে নিতে পারেন নারিকেল তেল। এ তেলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফ্যাটি এসিড। এ উপাদান গুলো চুল পড়া কমাবে , ফলে ভ্রু এর রোম ঘন করতে সহায়তা করবে।

অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল তেলের সাথে মিশিয়ে নিন ভিটামিন ই অয়েল। এরপর তুলোর সাহায্য নিয়ে ভ্রুতে লাগান। নিয়মিত এ পদ্ধতি ফলো করলে ভ্রু ঘন হবে।

পেঁয়াজের রস: পেঁয়াজের রস ভ্রুতে লাগিয়ে রেখে দিন ১৫ মিনিট মতো। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা জেল চুলের জন্য দারুন উপকারী। তাই ভ্রু এর চুল ঘন করতে রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করুন এবং সকালে ধুয়ে নিন।

মেথি: রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন মেথি। এরপর পরদিন সকালে ভিজিয়ে রাখা মেথি পানি থেকে ছেঁতে ব্লেন্ড করে ভ্রুতে লাগিয়ে নিন। এরপর ১ ঘন্টা হয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

পুষ্টিকর খাবার: আপনার শরীরে পুষ্টি জনিত সমস্যার কারনে ভ্রু এর চুল ঝড়ে পড়তে পারে। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে প্রোটিন, ভিটামিন ই, এ, কে, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত সবুজ শাকসবজি ও ফল রাখবেন এবং অস্বাস্থকর খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন।

আরো পড়ুনঃ-  আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

উল্লেখিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলো ধৈর্য ধরে ফলো করবেন, পাতলা ভ্রু এর সমস্যার সমাধান পাবেন।

চোখের পাপড়ি ঘন করার উপায়

চোখের সৌন্দর্য্য কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয় ঘন চোখের পাপড়ি। চোখের পাপড়ি বড় ও ঘন হলে অনেক বেশি সুন্দর ও মায়াবী লাগে। তাই আমরা ঘন চোখের পাপড়ি বেশ পচ্ছন্দ করি। এজন্য অনেকেই ঘন চোখের পাপড়ি করতে ব্যবহার করেন অ্যাইল্যাশ। তবে অ্যাইলাশ ব্যবহারে অনেকের অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন সমস্যা হয়। তাই প্রাকৃতিক উপায়গুলো চোখের পাপড়ি ঘন করতে ব্যবহার করতে পারেন। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক চোখের পাপড়ি ঘন করার উপায় সম্পর্কে।

ক্যাস্টর অয়েল: ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে রয়েছে রিসিনোলিক অ্যাসিড যা পাপড়ি ঝড়া প্রতিরোধ এবং পাপড়ি ঘন করতে দারুন উপকারী। এজন্য প্রথমে আপনার চোখের পাপড়ি ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। এরপর এক চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল পরিষ্কার তুলোর সাহায্যে চোখের পাপড়িতে রাতের বেলা লাগান এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন।

পেট্রোলেয়াম জেলি: ভ্যাসলিন অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি চোখের পাতাকে মসৃন করতে সাহায্য করে। যার ফলে পাপড়ি ঝরা রোধ হয়। আর এজন্য পাপড়ি ঘন করতে রাতে ঘুমানোর সময় চোখের পাতায় ও নিচের পাপড়িতে আলতোভাবে ভ্যাসলিন লাগাবেন।

মধু: ত্বকের জন্য দারুন উপকারী হলো মধু। শুধু ত্বকের জন্যই নয় চোখের পাপড়ি ঘন করতে এর ব্যবহার অনেকটাই কার্যকারী। তাই প্রতিদিন ঘুমানোর আগে মধুর সাথে ভিটামিন ই’ ক্যাপসুল মিশিয়ে নিয়ে লাগাবেন। চোখের পাপড়ি ঘন করতে সাহায্য করবে।

গ্রিন টি: গ্রিন টি থেকে পাওয়া যায় প্রচুর পলিফেনল, যা চুল বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। চোখের পাপড়ি ঘন করতেও সহায়তা করে থাকে গ্রিন টি। সেজন্য একটি গ্রিন টি ব্যাগ নিয়ে, এক কাপ গ্রিন টি বানিয়ে নিন। এরপর পর অল্প গ্রিন টি রেখে, বাকিটুকু খেয়ে নিন। অল্প রাখা গ্রিন টি টুকু ঠান্ডা হলে তা কটন বাডের সাহায্যে চোখের পাতায় ব্যবহার করুন।

তেলের ম্যাসাজ: অলিভ অয়েল তেল কিংবা নারিকেল তেল কয়েক ফোটা আঙুলের ডোগায় নিয়ে চোখের চারপাশসহ চোখের পাপড়িতে ম্যাসাজ করুন।

এভাবে নিয়মিত চোখের পাপড়ির যত্ন নিলে আপনিও পেয়ে যাবেন ঘন ও লম্বা পাপড়ি। এ পদ্ধতিগুলো ব্যবহারের পাশাপাশি আরও কয়েকটি টিপস জেনে নিন যা চোখের পাপড়ি সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে।

  • চোখের মেকাপ দীর্ঘসময়ের জন্য লাগিয়ে রাখলে চোখের পাপড়ির গুনগতো দিক হারিয়ে যায়। তাই আপনি অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকলেও মুখের মেকাপ তুলে পরিষ্কার করে তারপর ঘুমাতে যাবেন।
  • চোখে ব্যবহৃত মেকাপের পন্যগুলো ভালো ব্র্যান্ডের কোম্পানি থেকে ক্রয় করবেন।
  • নিয়মিত চোখের পাপড়ি পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন।
  • অতিরিক্ত চোখ চুলকানো থেকে বিরত থাকবেন। এতে চোখের পাপড়িগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ-  গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন - গরমে ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন

চোখের পাপড়ি পড়ে যাওয়ার কারণ

চোখের পাপড়ি দু’য়েকটা পড়া স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত চোখের পাপড়ি পড়া চিন্তার বিষয়। কারণ অনেক সময় অতিরিক্ত চোখের পাপড়ি পড়া হতে পারে শারিরিক কোনো অসুস্থতার লক্ষণ। তাই জেনে নেওয়া প্রয়োজন চোখের পাপড়ি পড়ে যাওয়ার কারণ কি। চোখের পাপড়ি পড়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

  • সঠিক পন্য চোখে ব্যবহার না করার বদলে ভুল পন্য ব্যবহার করার কারনে চোখের পাপড়ি অনেকের পড়ে যায়।
  • থাইরয়েডের সমস্যার কারণে চোখের পাপড়ি ঝড়ে পড়তে পারে। থাইরয়েডের সমস্যা হলে হরমোন অতিমাত্রায় নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। যার ফলে চোখের পাপড়ি ঝড়তে দেখা যায়।
  • মেকাপ তোলার সময় অতিরিক্ত চোখ ঘোষার কারণে চোখের পাপড়ি ঝড়ে যায়। তাই সাবধানে মেকাপ পরিষ্কার করবেন, অতিরিক্ত চোখ ঘোষা থেকে বিরত থাকবেন।
  • অ্যালার্জির সমস্যার কারনে অনেকের চোখের পাপড়ি ঝরে যায়। চোখে ব্যবহৃত পন্যগুলো ব্যবহার করার ফলে অনেকের অ্যালার্জির সমস্যা হয়ে থাকে যার ফলে চোখের পাপড়ি ঝড়ার সমস্যা হতে দেখা যা। সেক্ষেত্রে কোনো পন্য ব্যবহারের সময় ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
  • মেয়াদ পার হয়ে যাওয়া সামগ্রী ব্যবহারে চোখের পাপড়ি ঝড়ে পড়ার সম্বাভনা থাকে। কারন মেয়াদোত্তীর্ণ সামগ্রী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামন ঘটায় এবং প্রদাহের সৃষ্টি করে ফলে পাপড়ি ঝড়ে যায়।
  • স্কিন ক্যান্সার যদি চোখের পাতায় হয়ে থাকে তাহলে চোখের পাপড়ি ঝড়ে পড়তে পারে। তবে চোখের পাপড়ি পড়লে এ নিয়ে আতঙ্ক হবেন না। যদি চোখের পাতা লাল বা কালো বিচরনশীল, চোখের পাতায় ক্ষত এবং তা শুকাচ্ছে না, ঘন ঘন চোখের পাতায় সংক্রামন এবং ফোলাভাব হলে তা চিন্তার বিষয়। সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপায়

চোখ আকর্ষনীয় একটি অঙ্গ। চোখের সৌন্দর্য মুখের সৌন্দর্যকে কয়েকগুন বাড়িয়ে তোলে। চোখ সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সুন্দর আকৃতিতেই দিয়ে থাকে। তবে আমাদের কিছু খারাপ অভ্যাসের কারণে চোখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। যেমন- দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া, অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার বদলে অস্বাস্থকর খাবার খাওয়া প্রভৃতি কারনে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে এবং সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তো কিভাবে চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায় জানতে চান? চলুন বিস্তারিত জেনে নিই চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে।

আরো পড়ুনঃ-  ডালিম খাওয়ার উপকারিতা - ডালিম খাওয়ার নিয়ম

পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা: পানির ঘাটতি শরীরের বাহ্যিক ও অভ্যান্তরিন দুটি দিগই ক্ষতিগ্রস্থ করে। কম পানি পান করার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, যা চোখের সৌন্দর্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই সর্বদা হাইড্রেট থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করতে হবে। এতে চোখের আশেপাশও আদ্র থাকবে।

ম্যাসাজ: মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে যেমন মুখের ত্বকের যত্ন নিতে হয় তেমনি চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে নিতে হবে চোখের যত্ন। অনেক সময় বিভিন্ন কারনে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে দেখা যায়। আর চোখের নিচের কালো দাগ চোখের সৌন্দর্য একেবারেই নষ্ট করে দেয়। তাই এ সমস্যা প্রতিরোধ করতে নিয়মিত তেল দিয়ে চোখ ম্যাসাজ করুন।

বিভিন্ন আই মাস্ক ব্যবহার: প্রাকৃতিক আই মাস্ক ব্যবহার করুন চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে শসা বা আলু এ দুটি প্রাকৃতিক উপাদান খুবই উপকারী। শসা কিংবা আলু গোল গোল করে কেটে চোখের উপর লাগিয়ে শুয়ে থাকবেন, চোখের কালচে ভাব দূর হবে এবং চোখের সৌন্দর্য বাড়বে।

অস্বাস্থকর অভ্যাস ত্যাগ করুন: যেকোনো ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন থেকে দূরে থাকুন। ধূমপানসহ পান সহ বিভিন্ন অস্বাস্থকর অভ্যাসগুলো চোখের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। তাই চোখের সৌন্দর্য যদি আপনি ফিরে পেতে চান তাহলে এ ধরনের অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে।

অতিরিক্ত স্ক্রিনের সামনে না বসা: বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত স্ক্রিনের সামনে বসে থাকছে অনেকেই। যার ফলে চোখ ঠিকমতো বিশ্রাম পাচ্ছে না। এ জন্য চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায় এবং চোখের সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। তাই চোখের সৌন্দর্য ঠিক রাখতে স্কিনের বাইরে ২০ মিনিট পর পর তাকান।

পর্যাপ্ত ঘুম: চোখের সৌন্দর্য ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত চোখকে বিশ্রাম দিন, নিয়মিত সময়মতো ঘুমান। অনিয়মিত ঘুম চোখের নিচে কালি পড়ার অন্যতম কারণ। তাই আপনি চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে সময়মতো পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে চোখকে নিয়মিত বিশ্রাম দিবেন, স্বাস্থকর খাবারগুলো খাবেন এবং চোখের ম্যাসাজ নিয়মিত করবেন।

Leave a Comment