গর্ভাবস্থা মসময় মহিলাদের শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন হয় । সাধারণত মহিলারা প্রথম মাসে বেশি ক্লান্ত হন। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মাসে ক্লান্তির সমস্যা নিরাময় হয়। তবে পরের মাসে গুলো তে ক্লান্তি ফিরে আসতে পারে। গর্ভাবস্থায়, মহিলারা নিদ্রাহীনতা, পায়ে ব্যাথা, প্রস্রাব এবং বুক জ্বালা অনুভব করতে পারে। মহিলাদের এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা উচিত যাতে ক্লান্তি থেকে মুক্তিলাভ করা যায়।
কিছু পরিস্থিতিতে রক্তের হ্রাস, স্ট্রেস, হতাশা ইত্যাদির মতো সমস্যার কারণে নারীদের স্বাস্থ্যের অবস্থার খারাপ হতে দেখা দিতে পারে। এই ধরনের সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য, ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত। আসুন আমরা আপনাকে গর্ভাবস্থায় ক্লান্তির কারণ এবং গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিই।
গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল লাগার কারণ
গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল লাগার প্রধান কারণ হলো শরীরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন। গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন হয়, এবং শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
এই পরিবর্তনগুলির কারণে শরীর অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করে, যা দুর্বলতা এবং ক্লান্তির অনুভূতি সৃষ্টি করে। এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া, রক্তচাপের পরিবর্তন, এবং আয়রনের ঘাটতি (অ্যানিমিয়া) দুর্বলতার কারণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তির কারণ
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তির প্রধান কারণগুলি নিম্নরূপ:
- হরমোনের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ক্লান্তি এবং ঘুমের প্রবণতা বাড়ায়।
- রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি: গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের পরিমাণ ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যা হৃদপিণ্ড এবং অন্যান্য অঙ্গগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
- অ্যানিমিয়া: গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ক্লান্তি সৃষ্টি করে।
- মানসিক চাপ: গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ ক্লান্তির কারণ হতে পারে।
- পুষ্টির ঘাটতি: গর্ভাবস্থায় পুষ্টির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়া যায়, তাহলে ক্লান্তি দেখা দেয়।
- ঘুমের ব্যাঘাত: গর্ভাবস্থায় ঘুমের ব্যাঘাত, যেমন বারবার প্রস্রাবের জন্য উঠা বা অস্বস্তি, ক্লান্তির কারণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি কখন হয়
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি সাধারণত প্রথম এবং তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে বেশি দেখা যায়।
- প্রথম ট্রাইমেস্টার (১-১২ সপ্তাহ): এই সময়ে শরীরে হরমোনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীর গর্ভাবস্থার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে। এই সময়ে ক্লান্তি খুবই সাধারণ।
- দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার (১৩-২৬ সপ্তাহ): এই সময়ে অনেক মহিলা কিছুটা শক্তি ফিরে পায় এবং ক্লান্তি কমে যায়।
- তৃতীয় ট্রাইমেস্টার (২৭-৪০ সপ্তাহ): এই সময়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধি, ঘুমের ব্যাঘাত, এবং অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তনের কারণে ক্লান্তি আবার বৃদ্ধি পায়।
গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এই সময়ে শরীর দুর্বল হয়ে পড়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেক গর্ভবতী মহিলাই অনুভব করেন। গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন হরমোনের পরিবর্তন, রক্তশূন্যতা, পুষ্টির অভাব, ক্লান্তি, মানসিক চাপ ইত্যাদি। এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। নিচে গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হলে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা
গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো পুষ্টির অভাব। এই সময়ে মা ও শিশু উভয়েরই পুষ্টির চাহিদা বেড়ে যায়। তাই সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচের খাবারগুলো ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:
- প্রোটিন: প্রোটিন শরীরের কোষ গঠন ও মেরামতের জন্য অপরিহার্য। ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, বাদাম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার প্রোটিনের ভালো উৎস।
- আয়রন: গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা এড়াতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, লাল মাংস, ডাল, বীজ ও শুকনো ফল খাওয়া উচিত। আয়রন শোষণ বাড়াতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবু, কমলা, টমেটো ইত্যাদি খাওয়া ভালো।
- ফলিক অ্যাসিড: ফলিক অ্যাসিড গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবুজ শাকসবজি, বাদাম, ডাল ও সাইট্রাস ফল ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস।
- ক্যালসিয়াম: ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে। দুধ, দই, পনির, টফু ও সবুজ শাকসবজি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।
- ফাইবার: কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ফল, শস্য ও ডাল খাওয়া উচিত।
- পানি: শরীর হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি। দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম
গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে শরীরের শক্তি বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। দিনের বেলায় ছোট ছোট বিরতি নেওয়া এবং কিছুক্ষণ শুয়ে থাকা শরীরকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে।
৩. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হালকা ব্যায়াম শরীরের শক্তি বাড়াতে এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। হাঁটা, সাঁতার কাটা, প্রেগন্যান্সি যোগব্যায়াম ইত্যাদি হালকা ব্যায়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী। তবে ব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪. মানসিক চাপ কমানো
গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ শরীর দুর্বল হওয়ার একটি বড় কারণ। মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে:
- ধ্যান ও যোগব্যায়াম করা: ধ্যান ও যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া: কাজের চাপ কমিয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
- সামাজিক সহায়তা করা: পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো এবং তাদের কাছ থেকে মানসিক সহায়তা নেওয়া উচিত।
৫. নিয়মিত চেকআপ ও ডাক্তারের পরামর্শ করা
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো এবং প্রেসক্রিপশন মেনে চলা উচিত। যদি শরীর দুর্বলতার পাশাপাশি অন্য কোনো লক্ষণ যেমন মাথা ঘোরা, বমি, জ্বর ইত্যাদি দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
৬. ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট
গর্ভাবস্থায় শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। সাধারণত প্রেগন্যান্সি মাল্টিভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়।
৭. পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ করা
গর্ভাবস্থায় শরীর হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পানি পান করা শরীরের শক্তি বাড়াতে এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ফলের রস, ডাবের পানি ও স্যুপ তরল গ্রহণের ভালো উৎস।
৮. ক্যাফেইন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়ানো
গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়ানো উচিত। ক্যাফেইন শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে এবং ক্লান্তি বাড়াতে পারে। এছাড়াও, জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার এড়ানো উচিত।
৯. পরিবেশগত বিষয়গুলোর প্রতি যত্নশীল হওয়া
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা পরিবেশে থাকা শরীর দুর্বল করে দিতে পারে। তাই আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা উচিত। এছাড়াও, ধূমপান ও মদ্যপান সম্পূর্ণভাবে এড়ানো উচিত।
১০. পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তা নেওয়া
গর্ভাবস্থায় পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে মানসিক ও শারীরিক সহায়তা নেওয়া উচিত। তাদের সাহায্য নিয়ে কাজের চাপ কমালে শরীর দুর্বলতা কমে যেতে পারে।
১১. শরীরের সংকেত বুঝতে শেখা
গর্ভাবস্থায় শরীরের সংকেত বুঝতে শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি শরীর দুর্বল লাগে বা ক্লান্তি অনুভব হয়, তবে কাজ বন্ধ করে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। শরীরের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী কাজের পরিকল্পনা করা উচিত।
১২. ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা
গর্ভাবস্থায় ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানোর জন্য ইতিবাচক চিন্তা করা এবং আনন্দদায়ক কাজে সময় কাটানো উচিত।
গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, তবে সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ কমানো এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বলতা কমানো যায়। এই সময়ে নিজের যত্ন নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ ও নিরাপদ থাকেন।
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি থেকে বেঁচে থাকার উপায়
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি থেকে বেঁচে থাকার জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
- নিয়মিত ঘুমের রুটিন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে উঠুন। এটি শরীরের ঘুমের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- সকালের নাস্তা: সকালের নাস্তা সঠিকভাবে গ্রহণ করুন। এটি সারাদিনের শক্তি সরবরাহ করে।
- ছোট ছোট খাবার: দিনে তিন বড় বড় খাবারের পরিবর্তে ছোট ছোট কয়েকবার খান। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে।
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: পালং শাক, মাংস, ডাল, এবং আয়রন সমৃদ্ধ শস্য খান। আয়রনের ঘাটতি ক্লান্তি বাড়াতে পারে।
- ভিটামিন সি: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন কমলা, লেবু, এবং টমেটো, আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
- ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা: অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ এড়িয়ে চলুন। এটি ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
- পর্যাপ্ত পানি পান: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। ডিহাইড্রেশন ক্লান্তি বাড়াতে পারে।
- হালকা ব্যায়াম: প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা সাঁতার কাটা, শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- মানসিক স্বাস্থ্য: মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। ধ্যান, যোগব্যায়াম, বা অন্যান্য রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করে মানসিক চাপ কমাতে পারেন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ: নিয়মিত চেকআপ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করুন। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করবেন।
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি একটি সাধারণ সমস্যা, তবে সঠিক জীবনযাপন এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি থেকে বেঁচে থাকা যায়। যদি ক্লান্তি অতিরিক্ত হয় বা অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তির সমস্যার চিকিৎসা
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তির সমস্যা মোকাবিলার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:
১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিশ্চিত করুন। দিনের বেলায় ছোট ছোট ঘুম বা বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে।
২. সুষম খাদ্য: পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন, এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে।
৩. হাইড্রেটেড থাকা: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। ডিহাইড্রেশন ক্লান্তি বাড়াতে পারে।
৪. নিয়মিত ব্যায়াম: হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা প্রেগন্যান্সি যোগা, শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৫. মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা: ধ্যান, যোগব্যায়াম, বা অন্যান্য রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করে মানসিক চাপ কমাতে পারেন।
৬. চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি ক্লান্তি অতিরিক্ত হয় বা অ্যানিমিয়া সন্দেহ হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করবেন।
মাস অনুযায়ী গর্ভকালীন অবসাদ
গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে অবসাদের লক্ষণ ও তীব্রতা ভিন্ন হতে পারে:
- প্রথম ত্রৈমাসিক (১-৩ মাস): হরমোনের পরিবর্তন, বমি বমি ভাব ও ক্লান্তি অবসাদের কারণ হতে পারে।
- দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (৪-৬ মাস): শারীরিক পরিবর্তন ও ভবিষ্যতের চিন্তা অবসাদ বাড়াতে পারে।
- তৃতীয় ত্রৈমাসিক (৭-৯ মাস): শারীরিক অস্বস্তি, ঘুমের সমস্যা ও প্রসবের ভয় অবসাদের কারণ হতে পারে।
গর্ভকালীন অবসাদ থেকে প্রতিকার
গর্ভকালীন অবসাদ থেকে প্রতিকারের উপায়গুলি হলো:
- অবসাদের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিং অবসাদ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ নিরাপদ হতে পারে।
- পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম ও হালকা ব্যায়াম মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে।
- পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে মানসিক সহায়তা নিন।
- যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম চাপ কমাতে সাহায্য করে।
লেখকের শেষ মতামত
পরিশেষে বলতে চাই গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হলে সামান্য বলে অবহেলা করবেন না। আমরা উপরে যেগুলো পদ্ধতি উল্লেখ করে দিয়েছি সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন তাহলে দেখবেন আপনার গর্ভাকালীন সময়ের ক্লান্তি বা অবসাদ কেটে যাবে। এই ছিল আজকের গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হলে করণীয় সম্পর্কিত সকল তথ্য এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন।
তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হলে করণীয় কি তা জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও গর্ভাবস্থায় শরীর দুর্বল হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
গর্ভাবস্থার শুরুর দিকেই প্রচণ্ড ক্লান্তি বোধ হওয়াটা কি স্বাভাবিক?
হ্যাঁ, গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে প্রচণ্ড ক্লান্তি বোধ হওয়া স্বাভাবিক। এর কারণগুলি হলো:
- হরমোনের পরিবর্তন: প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি ক্লান্তি সৃষ্টি করে।
- শরীরের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি ও বিপাক হার পরিবর্তন ক্লান্তি বাড়ায়।
- মানসিক চাপ: নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার চাপ ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
গর্ভকালীন অবসাদে কেমন লাগতে পারে?
গর্ভকালীন অবসাদের লক্ষণগুলি হলো:
- প্রায়ই দুঃখবোধ বা কান্না পাওয়া।
- আগে যে কাজে আনন্দ পেতেন, তা করতে অনীহা।
- সারাক্ষণ ক্লান্তি ও শক্তির অভাব বোধ করা।
- অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুমানো।
- ক্ষুধা কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত খাওয়া।
- কোনো কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা।
- নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা।
- গুরুতর ক্ষেত্রে আত্মহত্যার চিন্তা আসতে পারে।
গর্ভকালীন কোন সময়টায় ক্লান্তিবোধ করা শুরু হতে পারে?
গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকেই (১-৩ মাস) ক্লান্তিবোধ শুরু হতে পারে। হরমোনের পরিবর্তন, রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি ও শরীরের পরিবর্তনের কারণে এই সময়ে ক্লান্তি বেশি অনুভূত হয়। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ক্লান্তি কিছুটা কমলেও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আবার বাড়তে পারে, কারণ এই সময়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধি ও ঘুমের সমস্যা ক্লান্তি সৃষ্টি করে।
অবসাদে কি গর্ভের শিশুর ক্ষতি হয়?
হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় অবসাদ গর্ভের শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে:
- অবসাদ প্রিম্যাচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- অবসাদে ভুগলে গর্ভের শিশুর ওজন কম হতে পারে।
- মায়ের অবসাদ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও আচরণগত সমস্যার সাথে যুক্ত হতে পারে।
- অবসাদে মায়ের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও চিকিৎসা সেবা নেওয়ার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।