গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় – গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়

গর্ভাবস্থা একজন মহিলার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে শারীরিক পরিবর্তন স্বাভাবিক। তবে, অনেক মহিলাই এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করেন এবং তাই বিশ্রাম নিতে চান। কিন্তু, গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়? এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই জাগে।

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়

মাতৃত্ব একটি মেয়ের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তাই সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশু জন্ম দেওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় অনেক বেশি সচেতন থাকা প্রয়োজন। এ সময় অনেক মায়েরা গর্ভের সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। তারা চিন্তা করেন কি করলে সন্তানের উপকার হবে এবং কি করলে সন্তানের ক্ষতি হবে। 

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় তা আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সঠিকভাবে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। পাঠক আপনারা অনেকেই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানার জন্য এই আর্টিকেলে এসেছেন। তাই আপনাদের সঠিক তথ্য দেওয়াটাই আমার মূল লক্ষ্য। তাই আসুন জেনে নিন।

গর্ভাবস্থায় বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, তবে বেশি শুয়ে থাকা বা নিষ্ক্রিয় থাকা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরের নিয়মিত কার্যক্রম বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মায়ের স্বাস্থ্য ও শিশুর সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। 

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কিছু সাধারণ পরিবর্তন ঘটতে পারে। কারণ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের শরীর বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে আর এই সময় বেশি বেশি শুয়ে থাকলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন-

  • রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
  • পেটে থাকা বাচ্চার অসুস্থতা দেখা দেওয়া
  • গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া
  • শ্বাসকষ্টের সমস্যা হওয়া
  • মাংসপেশির দুর্বলতা
  • শরীরে পানি স্তর কমে যাওয়া
  • ওজন বৃদ্ধি হওয়া
  • মেজাজের উপর প্রভাব

তাই এই সমস্যাগুলো এড়াতে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হাটাহাটি করা উচিত। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় শুয়ে থাকার ও বড় অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই যখন গর্ভাবস্থায় শুয়ে থাকবেন তখন বুকের উপরে শুয়ে না থাকাই ভালো। ডান বাম হয়ে শুয়ে থাকবেন। দেহের উপরের অংশ সামান্য উঁচুতে রাখার চেষ্টা করবেন। 

যখন গর্ভাবস্থায় শুয়ে থাকবেন তখন শরীরে অতিরিক্ত প্রেসার দিয়ে কোন ভাবেই শুয়ে থাকবেন না। এতে করে আপনার পেটে থাকা সন্তানের সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি শুয়ে থাকলে বাচ্চার ততোটাও সমস্যা হয় না যতটা মায়ের সমস্যা হয়। বিশেষ করে অনেক বেশি শরীর ব্যথা হতে পারে।

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ব্যায়াম করলে মা ও শিশু উভয় সুস্থ থাকে। শুধু তাই নয় গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে এতে করে বাচ্চা ও মা উভয় সুস্থ থাকবে। আর পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মাসে ১ বার করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

গর্ভকালীন সময়ে ভালো ঘুম না হলে প্রেগন্য়ান্সিতে নানা জটিলতাও দেখা দিতে পারে। তবে ভালো ঘুমানোর পাশাপাশি আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত ঘুমের দিকেও। কারণ আপনি যদি অতিরিক্ত ঘুমান তাহলে আপনার বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

অন্য স্বাভাবিক মহিলাদের মতই গর্ভবতী মহিলাদেরও পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকা ঠিক না। গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে এটি বাচ্চার জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। গর্ভের শিশুর অক্সিজেন সরবরাহে প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত শুয়ে থাকলে শরীরের কার্যকারিতা কমে যায় যা অপ্রয়োজনীয় ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। 

এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন কারণে ঘুমানোর মোট ঘন্টা বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাদের হরমোন জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের গর্ভকালীন সময়ে ইনসমনিয়া দেখা দিতে পারে। ফলে প্রোজেস্টেরোন লেভেলবৃদ্ধ হয়ে যা ফলে ক্লান্তি বাড়ে। এগুলো করার পাশাপাশি উদ্বেগ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই অতিরিক্ত ঘুম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। 

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় করমচা খাওয়ার উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় করমচা বেশি খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়

গর্ভাবস্থায় ডানপাশে ঘুমালে কি হয় এই বিষয়টি জানা একজন গর্ভবতী মায়ের অত্যন্ত জরুরী। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আজকে আমি এই আর্টিকেলে এ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। গর্ভকালীন সময় একজন নারীর জন্য খুবই স্পর্শকাতর। 

এইসময় গর্ভবতী মায়েদের খাবারের অরুচি, ঘুমের সমস্যা, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা, ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, পেটে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন। তবে চিকিৎসা করে বলেন গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম মা ও শিশুর জন্য খুবই জরুরী। অনেক মহিলা রয়েছেন যারা গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমিয়ে থাকে। 

কিন্তু গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় তা জানার আগ্রহ অনেক গর্ভবতী মায়ের রয়েছে। তাই আপনাদের সঠিক তথ্য দেওয়াই আমার মূল লক্ষ্য। আসুন আর দেরি না করে সঠিক তথ্য জেনে নিন।

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস গর্ভবতী মা যে কোন পজিশনে ঘুমাতে পারবেন। এতে কোন সমস্যা নেই। গর্ভকালীন সময়ে ঘুমানোর সময় পিঠের ব্যথা কমাতে এবং পিঠের চাপ কমাতে পায়ের মাঝে বালিশ দিয়ে রাখতে পারেন। এতে করে পিঠের, ওপর চাপ কিছুটা কমবে। 

এছাড়াও বুক জ্বালাপোড়া হলে কিংবা শ্বাসকষ্ট হলে বালিশ দিয়ে ও শরীরের উপরের অংশ উঁচু করে ঘুমাতে পারেন। এতে করে এই সমস্যা আল্লাহর রহমতে দূর হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞ মতে, গর্ভাবস্থায় নিজের সুবিধা অনুযায়ী ডান বা বাম দিকে হয়ে শুয়ে থাকতে পারবেন। তবে বাম দিকে শুয়ে থাকা সবচেয়ে ভালো। 

কারণ বাম দিকে শুয়ে থাকলে গর্ভবতী মায়েদের শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ফলে সুস্থ থাকে গর্ভস্থ শিশুও। বেশ কিছু গর্ভবতী নারীর উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে বাম দিকে ফিরে শুয়ে থাকলে শিশু অনেক সুস্থ থাকে এবং অনেক বেশি একটিভ হয়। আবার অন্য চিকিৎসকের মতে, শিশু কতটা একটিভ থাকছে তার নির্ভর করে তারা হার্টের ওপর। 

যদি হার্ট ভালো থাকে তাহলে শিশুও অনেক সুস্থ থাকে। শুধু যে বাম দিক হয়ে সব সময় শুয়ে থাকতে হবে তা নয়। যখন আপনার শরীর ভেঙ্গে যাবে কখনো কাজ হয়েও শুয়ে থাকতে পারবে না। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেলে যদি দেখেন আপনি চিৎ হয়ে বা উপরে শুয়ে রয়েছেন। 

তখন ঘুম থেকে উঠে সামান্য পানি পান করুন এবং বিশ্রাম নিন। নিজেকে নরমাল করে আবার বাম কাজ হয়ে শুয়ে পড়ুন। শুধু তাই নয় নিজেকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম পাড়ুন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম অত্যন্ত ভালো। 

পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াও অত্যন্ত ভালো এতে করে মা ও শিশু উভয় সুস্থ থাকে। আশা করি যাদের ডান বা বামপাশে ঘুমানো নিয়ে সন্দেহ কাজ করতো আশা করি এই আর্টিকেলের সম্পূর্ণ পড়ে গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় তা সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন।

গর্ভাবস্থায় প্রথম 3 মাস ঘুমানোর অবস্থান

যদি আপনার এই দুটি অবস্থানগুলো পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে এখন সেটা পরিবর্তনের সময় এসেছে। 

আপনার পিঠে ভর দিয়ে ঘুমানোঃ গর্ভাবস্থায় ঘুমের জন্য সেরা অবস্থান গুলোর মধ্যে পিঠে ভর দিয়ে ঘুমানো বা শুয়ে থাকা এটি নাও হতে পারে। কিন্তু প্রথম দিকে এভাবে শুয়ে থাকলে অনেক ভালো কাজ করে। প্রথম ৩ মাসের জন্য এভাবে শুয়ে থাকা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারে। এছাড়া যখন আপনার পেট ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে তখন শরীরে চাপ সৃষ্টি হবে।

পাশ ফিরে ঘুমানোঃ পাশ ফিরে ঘুমানো অর্থাৎ ডান বা বাম দিকে গর্ভকালীন সময় প্রথম ৩ মাস ঘুমানো এটি আরামদায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে অতিরিক্তভাবে ডানদিকে ঘুমানো উচিত নয়। দীর্ঘক্ষণ ডান দিকে ঘুমালে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। সুতরাং বাম দিকে বেশি বেশি ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।

পাশাপাশি কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। এটির সাহায্যে ফোলাভাব দূর হয়। তাহলে বুঝতে পারছেন গর্ভাবস্থায় হাত, পা, গোড়ালি অনেক বেশি ফোলাভাব হয়ে থাকে সেটি দূর করতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ-  মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব হলে কি ক্ষতি হয়

আপনি চাইলে একই সময়ে আরেকটি বালিশ নিজের পেটের নিচে নিতে পারেন এবং দেখতে পারেন এটি আপনার জন্য কতটা কার্যকর বা স্বাচ্ছন্দ বোধ হয় কিনা। এরপর আপনি পাশে ঘুমানোর সাথে সাথে পেছনে একটা বালিশ দিয়ে বা কুশন দিয়ে রাখুন। 

যাতে করে আপনার পিঠে ভর দেওয়া থেকে আটকাতে পারে। যদি আপনি ঘুমানোর চেষ্টা করার সময় শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় তাহলে বুকের ওপরে বালিশ রাখতে পারে এবং শ্বাসকে প্রশস্ত করতে আপনার পাশে ফিরে শুয়ে নিচে বালিশ ব্যবহার করতে পারেন। 

এছাড়াও আপনি চাইলে কৌশলগতভাবে বিভিন্ন জায়গায় বালিশ ব্যবহার করতে পারেন, যতক্ষণ না আপনি স্বাচ্ছন্দ ভাবে ঘুমাতে পারছেন। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য একটি বালিশ পাওয়া যায় যা কি পাশে ফিরে অবস্থানে ঘুমানোর জন্য অনেক মহিলাদের কাজ করে। আপনি চাইলে সেটিও ব্যবহার করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে শুলে কি হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন যে গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস চিত হয়ে ঘুমালে অনেকটাই নিরাপদ থাকা যায়। তবে একটি বিষয়ে জানতে হবে যে মাঝামাঝি সময়ে জরায়ু ভারী হয়ে যায় এজন্য শোয়ার সঠিকভাবে বেছে নেওয়ায় উত্তম। এছাড়াও গর্ভাবস্থার প্রথম ১৫ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে যদি আপনি চিৎ হয়ে ঘুমান তাহলে রক্ত প্রবাহ চলার পথে যথেষ্ট বড় হয়ে যায়। ফলে ইনফিরিয়র ভেনা কাভা সংকুচিত হয়ে পড়ে। 

এখানে যে বড় শিরাটি রয়েছে তা মেরুদন্ডের ডান দিকে থাকে এবং এর নিম্ন ও মাঝখানের অংশ থেকে অক্সিজেনহীন রক্ত হার্টে নিয়ে যায়। শোয়ার কারণে মহা ধমনী সংকুচিত হতে পারে। যার ফলে আপনার শরীর থেকে প্লাসেন্টায় প্রধান রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে একজন গর্ভবতী মহিলা যদি চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে, তাহলে তার হার্টবিট বেড়ে যায়। 

ফলে হার্টের রক্ত প্রবাহ কমে যেতে পারে। শুধু তাই নয় গর্ভাবস্থায় তীর হয়ে শুয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট অন্য সমস্যাও রয়েছে যেমন- হজমের সমস্যা, পিঠে ব্যথা, দুর্বল, রক্ত সঞ্চালন, হেমোরয়েড বা আরো অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় চিৎ হয়ে না শুয়ে ডান বা বাম হয়ে শুয়ে থাকাটা উত্তম।

গর্ভাবস্থায় বাম পাশে ঘুমালে কি হয়

ঘুমানোর সময় আমরা অনেকেই সাধারণত নিজের ইচ্ছামত পজিশনে ঘুমিয়ে থাকি। কেউ বাম দিকে কেউ আবার ডান দিকে কেউ ওপড় হয়ে কেউ আবার চিৎ হয়ে। অর্থাৎ যে যার মত পছন্দমতো শুয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কিভাবে শুয়ে থাকলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায় তা কেও কি জানি? হইত অনেকেই জানি না। 

তাই এই আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় বাম কাত হয়ে শোয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনারা যারা এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলে এসেছেন। তারা আশা করি শেষ পর্যন্ত পড়লে সঠিকভাবে জেনে যাবেন। তাই আসুন আর দেরি না করে জেনে নিন।

গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি সঠিক পজিশনে ঘুমানো জরুরী। গর্ভকালীন সময়ে অনেক মহিলারা রয়েছে যারা চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে পছন্দ করেন। কিন্তু এটি একদমই উচিত নয়। বিশেষজ্ঞের মতে গর্ভবতী মহিলাদের বাম দিকে ফিরে ঘুমানো কিংবা শুয়ে থাকা অত্যন্ত ভালো। আর এর ফলে শ্বাস নিতে ভালো সুবিধা হয়।

আর গর্ভাবস্থায় বামদিকে শুয়ে থাকলে কিংবা ঘুমালে হার্ট বেশি রক্ত পাম্প করতে পারে, ফলে রক্ত ও পুষ্টি শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ভালো ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তাই আপনারা সব সময় চেষ্টা করবেন গর্ভাবস্থায় বাম কাত হয়ে শুয়ে থাকার। তাহলে আপনি এবং আপনার গর্ভে থাকা শিশু উভয় সুস্থ থাকবে। বিশেষ করে বাম কাত হয়ে সব সময় শুয়ে থাকার জন্য ডাক্তার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

গর্ভাবস্থায় কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত

গর্ভকালীন সময়ে মূলত দিনে অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। তবে এর চাহিদা ভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। প্রথম তিন মাস শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ফলে ঘুম বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় তা আমরা সকলেই জানি।

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে - বাচ্চা পেটের ভিতর কিভাবে থাকে

এ সময় ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন হয়। গর্ভকালীন দ্বিতীয় তিন মাস অর্থাৎ চার থেকে ছয় মাস এ সময়ে ঘুমের ধরন কিছুটা পরিবর্তন হয় এবং মায়েরা তুলনামূলক ভালো ঘুমাতে পারেন। তবে রাতে অন্তত সাত থেকে আট ঘন্টা এবং দিনের বেলা প্রয়োজন মত বিশ্রাম নেওয়া উচিত।

এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের ঘুমের স্থান কোলাহলমুক্ত, আরামদায়ক, কম আলো স্থান এরকম হতে হবে। শুধু তাই নয় গর্ভবতী মায়েদের সব সময় ঢিলেঢালা নরম আরামদায়ক পোশাক পরিধান করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ঘুমের আগে চা কিংবা কপি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বরং ঘুমের এক ঘন্টা আগে পারলে ১ গ্লাস হালকা কুসুম গরম দুধ পান করলে উপকার পাওয়া যাবে। তাই প্রত্যেক গর্ভবতী মায়েদের এই নিয়মগুলো ফলো করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় ঘুম গুরুত্বপূর্ণ কেন

গর্ভাবস্থায় ঘুম গুরুত্বপূর্ণ কেন এ বিষয়টা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। ঘুমের সময় শরীরের বিশ্রাম হয় এবং পরবর্তী সময়ের জন্য শরীর অনেকটাই শক্তি পাই। ঘুমানোও শিশুর শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক ঘুমের অভাব গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরের উপর বাড়তি চাপ পড়ে যা পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে দূর হয়। 

ঘুমের ঘাটতি প্রি- এক্ল্যামসিয়া বাড়িয়ে দিতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবই ইমম্যাচিউর বাচ্চা জন্মের  ঝুঁকি বাড়াতে পারে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সঠিকভাবে পাশ ফিরে ঘুমাতে হবে কারণ এটি রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন এড়িয়ে চলতে হবে।গর্ভাবস্থায় সঠিক ঘুম শুধু মায়েরই নয়, শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখকের শেষ মতামত

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে অতিরিক্ত শুয়ে থাকা মা ও শিশুর জন্য কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। অনেক সময় বেশি শুয়ে থাকার ফলে রক্ত সঞ্চালন কমে যেতে পারে, যা মায়ের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া, দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকলে পিঠে ব্যথা, ওজন বৃদ্ধি এবং শরীরের নমনীয়তা কমে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। 

অতিরিক্ত শুয়ে থাকার চেয়ে হালকা শারীরিক কার্যকলাপ যেমন হাঁটা বা সহজ ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় উপকারী হতে পারে। এতে শরীর সুস্থ থাকে এবং প্রসবের সময় জটিলতা কমে যায়। তবে মায়ের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী সঠিক বিশ্রামের পরিমাণ নির্ধারণ করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় এ বিষয়ে যদি আপনি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। বেশি শুয়ে থাকা কারো শরীরের জন্যই ভালো নয়। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সকলের বিশ্রাম নেওয়া উচিত। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার বিশ্রাম এর প্রয়োজন আছে। সাধারণ মানুষের মতো গর্ভবতী মহিলারও দিনে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমালেই হবে। 

এর থেকে বেশি ঘুম গর্ভস্থ বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে অনেক ধরনের সমস্যা হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে একজন গর্ভবতী মা কে সবসময় পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ হলো মা ও শিশুর সুস্থতা বজায় রাখা। গর্ভাবস্থায় একজন মা সুস্থ থাকলে গর্ভস্থ শিশুর সুস্থ থাকে এটাই আমরা আশা করি। এজন্য এ সময় একজন মাকে সর্বোচ্চ সুস্থ রাখার চেষ্টা করতে হয়।

এই ছিল আজকের গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় সম্পর্কিত সকল তথ্য এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন।

তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় সেই সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।

Leave a Comment