গর্ভাবস্থায় নারীদের খাদ্যাভাসে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয়। একজন গর্ভবতী মহিলা সঠিকভাবে জীবনধারণ এবং খাদ্যের বিষয়ে সচেতন থাকতে পারলে বিভিন্ন ঝুঁকি এড়িয়ে সুস্থ সন্তান জন্ম দিতেন পারেন। এজন্য গর্ভাবস্থায় প্রতিনিয়ত পুষ্টিসমৃদ্ধ বা সুষম খাবার খেতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি খাওয়ার পাশাপাশি উচ্চ পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্য গ্রহণে পরামর্শ দিয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যেগুলো ড্রাই ফ্রুটস রয়েছে সেগুলো খাওয়া এছাড়াও কিসমিস, কাজুবাদাম, বাদাম, আখরোট ইত্যাদি এসব খাবার গর্ভবতী মায়ের গর্ভের সন্তান বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রের বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে।
খেজুরের পুষ্টিগুন
একজন গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য এবং গর্ভের শিশুকে সুস্থ ও বিকশিত রাখার জন্য অবশ্যই নিয়ম করে খেজুর খাওয়া উচিত। খেজুরে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ইত্যাদি খাদ্য উপাদান গুলো একজন গর্ভবতী মায়ের শরীর ও সন্তানের জন্য খুবই উপকারী।
খেজুরের মধ্যে থাকা এসব গুষ্টি উপাদান গুলো গর্ভের সন্তানের বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের সাহায্য করে। একজন গর্ভবতী মা প্রতিনিয়ত নিয়ম করে খেজুর খেতে পারবেন। আসুন আমরা খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নিই। শুকনো খাবারের মধ্যে খেজুর হচ্ছে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ও ক্যালরি সমৃদ্ধ একটি ফল। কেননা এতে রয়েছে-
- প্রোটিন
- ফাইবার
- ভিটামিন কে
- পটাশিয়াম
- লোহা
- ফ্যাট
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফলিক
এছাড়াও খনিজ উপাদান রয়েছে যেমন ক্যালসিয়াম আয়রন পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য দিনে ১০০ গ্রাম বা ৪টা থেকে ৫টা খেজুর খাওয়া উত্তম। তাহলে গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের সন্তান উভয়েরই উপকারে আসবে।
গর্ভবতী মহিলা খেজুর খেলে কি হয়
প্রত্যেকটি নারীর গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া করা উচিত। কারণ সে এখন একা নয় দুইজন। তার গর্ভে যে সন্তানটি রয়েছে তারও বেড়ে ওঠার জন্য পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অতএব মা ও শিশুর দুইজনেরই এই সময় পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা আছে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়াটা নতুন নয় এটি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার ফলে ইউটেরাস এর সংবেদনশীলতা হ্রাস পায় এবং তাকে শক্তিশালী করে তোলে এক্ষেত্রে প্রসব ব্যথাটা অনেকটাই কমে যায়।
খেজুরে কিছু উপকারী ফ্যাটি এসিডের উপাদান রয়েছে যা সন্তান প্রসবের সময় সারভাইক্যাল মাসল ফেলিক্সিবল এবং নমনীয় করে যার ফলে প্রসব বেদনা অনেক কম অনুভূত হয়।
একজন গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসবের সময় শরীর থেকে অনেক পরিমাণে রক্ত বের হয়। এক্ষেত্রে মায়ের শরীর অনেক দুর্বলতার সম্মুখীন হয়। গর্ভকালীন সময় এবং প্রসবের পরে নিয়মিত খেজুর খেজুর খেলে তা শরীরে অনেক দ্রুত রক্ত উৎপাদন করে।
একজন গর্ভবতী মহিলার সন্তান প্রসবের পূর্বে এবং প্রসবের সময় অধিক পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয়। খেজুরের প্রচুর পরিমাণে নিউট্রিয়েন্টস থাকে। যার ফলে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খেতে পারলে গর্ভবতী মায়ের শক্তির মাত্রা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। সন্ধান প্রসবের সময় বাড়তি যে শক্তির যোগান সে অতি সহজে দিতে পারবে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সমাধান, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি যোগায় উপকারিতা পাওয়া যায় খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে। কারণ খেজুরের মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার, স্বাস্থ্যসম্মত ক্যালরি, শর্করা, কপার, জিংক, সোডিয়াম, আয়রন, ম্যাগানিজ, প্রোটিন, ভিটামিন বি, সি ও ভিটামিন ৬ সহ আরো অনেক উপকরণ। যা একজন গর্ভবতী নারীর প্রয়োজন আছে।
তাই গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে কি হয় এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এখন আরো উপকৃত হবেন যদি নিচে দেওয়া গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে নিতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ বলা হয় গর্ভবতী অবস্থায় হজম শক্তির সমস্যা থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। গর্ভবতী মায়েদের এই সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যার সম্মুখীন করতে হতে পারে। আর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে খেজুর দারুণ ভূমিকা পালন করে। খেজুরের মধ্যে রয়েছে ফাইবার যা পেট পরিষ্কার, হজমের সমস্যা ও মলত্যাগের সমস্যার সমাধানেও সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপঃ গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাঁচার জন্য খেজুর খেতে পারেন। কারণ খেজুরের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে। পাশাপাশি মানসিক চাপ ও কিডনির দিকেও খেয়াল রাখে। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খাওয়ার দরকার আছে।
গর্ভাবস্থায় শক্তির প্রয়োজনীয়তাঃ প্রত্যেকটি গর্ভবতী মায়েদের গর্ভবতী অবস্থায় পর্যাপ্ত শক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর বাচ্চা প্রসবের সময় যথেষ্ট পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন পড়ে। খেজুরের মধ্যে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট যা মায়েদের প্রাকৃতিক ভাবে শরীরে শক্তির যোগান দিয়ে থাকে।
নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে পেশিতে শক্তি যোগায়, পেশির ক্ষয় পূরণ করে, হাড়গুলোকে মজবুত করে ও মানসিক ভাবেও শক্তি যোগান দেয়। তাই প্রস্রাবের সময় শক্তি যোগানোর অন্যতম উৎস হচ্ছে খেজুর। পাশাপাশি বাদামও খেতে পারেন এটিও শক্তির উৎস।
বাচ্চার ওজন বৃদ্ধিঃ গর্ভাবস্থায় মায়েরা তাদের গর্ভের সন্তানের ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকেন। অতিরিক্ত চিন্তার কারণে সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় বেশি মানসিক চাপ নেওয়া করা যাবে না। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে বাচ্চার হাড় মজবুত ও বৃদ্ধি, শরীরের ও অঙ্গ পতঙ্গের উন্নতি ঘটাতে পারে। তাই বাচ্চার শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধি করার জন্য চিন্তা না করে নিয়মিত খেজুর খেতে থাকুন।
রক্তস্বল্পতার সমাধানঃ বাচ্চা প্রসবের সময় অনেক বেশি পরিমাণে রক্ত ক্ষরণ হয়ে থাকে। এই রক্তক্ষরণ পূরণ করার জন্য খেজুর সহযোগিতা করে থাকে।
আপনি চাইলে গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে রক্ত সংরক্ষণ করতে পারেন। আবার প্রস্রাবের পরেও খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে রক্ত বৃদ্ধি করতে পারেন। তাই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আগে থেকেই খেজুর খেতে থাকুন। তাহলে আশা করা যায় প্রস্রাবের পর রক্তের স্বল্পতা খুব বেশি পরিমাণে দেখা যাবে না।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসঃ গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়া খুবই স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। কিন্তু এই ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খেজুর খেতে পারেন। কিন্তু খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ ডাক্তার আপনার শারীরিক অবস্থা বুঝে খাওয়ার অনুমতি দিবে।
বাচ্চার জন্মগত ত্রুটির সমস্যাঃ বাচ্চার জন্মগত ত্রুটির সমস্যা হওয়ার পেছনে কারোই হাত থাকে না। তবুও ত্রুটির হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা যেতে পারে। আর এই চেষ্টা করার জন্য নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন। খেজুর খাওয়ার ফলে গর্ভের সন্তানের শারীরিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অঙ্গ পতঙ্গের গঠন ত্রুটিপূর্ণ হতে সহযোগিতা করে থাকে।
ত্বক সুস্থ রাখেঃ যদিও এটি প্রমাণিত নয় যে গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে ত্বক সুস্থ থাকে। তবুও নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে ত্বকের ফুসকুড়ি, বয়স্কের ছাপ ও ত্বকের যেকোনো সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ খেজুরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ যা ত্বকের মৃত কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সহযোগিতা করে।
আপনার যদি গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের সমস্যা হয়। তাহলে সময় অপচয় না করে তৎক্ষণা ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ গ্রহণ করুন। কারণ গর্ভাবস্থায় নারী অনেক ক্রিটিকাল সময়ের মধ্য দিয়ে যাই। এইজন্য তাকে প্রত্যেকটি ধাপ খুবই সাবধানতার সাথে ফেলতে হবে। পা পিছলে গেলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নিজে সাবধানতা বজায় রাখুন ও পৃথিবীতে আসা নতুন সদস্যের জীবনকে ঝুঁকিমুক্ত রাখুন।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় প্রতিটা খাদ্য নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত। তবে খেজুরের ক্ষেত্রে যেসব খেজুর উচ্চ রাসায়নিক সমৃদ্ধ সেগুলো খেজুর গর্ভাবস্থায় কখনোই খাওয়া উচিত নয়। খেজুর যদি আপনার খুব বেশি পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে দিনে ২ থেকে ৩টির বেশি খেজুর খাবেন না। দিনের যেকোনো সময়ে আপনি খেজুর খাইতে পারবেন।
- খেজুর ধুয়ে খাওয়াঃ খেজুর খাওয়ার আগে অবশ্যই ধুয়ে নিতে হবে। কেননা বাজার থেকে কিনে আনা খেজুর গুলোতে ধুলাবালি বা রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে যেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- খালি পেটে না খাওয়াঃ খেজুর খালি পেটে খাবেন না। কারন এতে গ্যাস বা বদহজমের সমস্যা হতে পারে। খেজুর খাওয়ার নিয়ম হলো সকালে নাস্তার সাথে বা বিকালের হালকা খাবারের সাথে।
- পর্যাপ্ত পানি খাওয়াঃ খেজুর খাওয়ার পর অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করুন। তাহলে হজমে সাহায্য করবে এবং আদ্রতা বজায় রাখবে।
- পুষ্টিকর খাবারঃ খেজুর খাওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুন। শাকসবজি, আমিষ, এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার খান। এখাবার গুলো আপনার পুষ্টির চাহিদা পুরন করবে।
- শারীরিক অবস্থাঃ গর্ভকালীন সময়ে খেজুর খাওয়ার পর যদি কোনো সমস্যা বুঝতে পারেন অতিশিঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তবে সবচেয়ে ভালো হবে আপনি যদি সকালের খাবার খাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর দুইটি অথবা তিনটি খেজুর খেতে পারেন। কিন্তু গর্ভবতী মহিলার যদি কোন ধরনের রোগ যেমন এলার্জি অথবা ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি দিনে কয়টি খেজুর খেতে পারবেন সেই বিষয়ে জেনে খেজুর খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার অপকারিতা
আমাদের মানব দেহের জন্য প্রত্যেকটি খাবারের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। কারণ মানবদেহে যেই পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ঠিক সেই পরিমাণ খাদ্যই গ্রহণ করবে। এর বেশি হয়ে গেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। খেজুর খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে আবার ঠিক তেমনি খেজুর খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে।
আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে অথবা শরীরের চাহিদা তুলনায় বেশি খেয়ে ফেলেন তাহলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক। এটি শুধুমাত্র গর্ভবতী নারীদের জন্যই প্রযোজ্য এমনটি নয় এটি সকলের জন্যই প্রযোজ্য। তাহলে আসুন খেজুর খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে সীমিত পরিমাণে খেজুর খাওয়া উচিত কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া। অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুর খেলে অনেকের পেটের মধ্যে সমস্যা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় আপনি কি পরিমান খেজুর খাচ্ছেন সেই বিষয়ে আপনাকে যত্নবান হতে হবে। কথায় আছে, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। এজন্য অতিমাত্রায় খেজুর খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।আপনাকে অবশ্যই তাজা খেজুর খেতে হবে।
চিকিৎসকরা সুপারিশ করেন যে গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিনের ডায়েটে খেজুর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এজন্য আপনাকে ডাক্তারের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করে নিতে হবে। একজন চিকিৎসক আপনাকে অফার করবে জৈব খেজুরগুলি খেতে। কেননা, এগুলোতে রাসায়নিক প্রিজারভেটিভমুক্ত হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় কখন খেজুর খাওয়ার শুরু করবেন
প্রতিটা গর্ভবতী মায়ের একটি সাধারণ প্রশ্ন থাকে সেটি হচ্ছে গর্ভাবস্থায় আমি কখন খেজুর খাওয়া শুরু করব। প্রথম ত্রৈমাসিকে খেজুর খাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর সময়ের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যতা একটি বড় ধরনের সমস্যা। স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের গতিবিধি ও অভ্যন্তরীণ যেকোনো অস্বস্তি দূর করতে খেজুর খেতে পারেন।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সময় খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এ সময়ে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অবশ্যই আপনি আপনার স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন এরপরে আপনি খেতে পারবেন কেননা স্বল্প পরিমাণে খেজুর খাওয়ার ফলে কোনও ক্ষতি হয় না।
তৃতীয় ত্রৈমাসিকে খেজুর খাচ্ছেন এই বিষয়টি আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। কেননা এটি একটি প্রাকৃতিক রেচক বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে সংকোচনের সহায়তায় প্রসব শ্রম অনেক কমিয়ে দেয় এবং প্রসব প্রক্রিয়াটিকে অনেক সহজ ও স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। এজন্য প্রসবের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রসবের তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন ছয়টি করে খেজুর খাওয়া শুরু করুন। এতে আপনার অনেক উপকারে আসবে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া যাবে কি
অনেকেই প্রশ্ন করেছেন গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া যাবে কি বা গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে কি হয়। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া যাবে তবে খাওয়ার নিয়ম গুলো মেনে তারপরে খাবেন। কারণ গর্ভবতী নারীদের সবসময়ই যে কোন খাবার খাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। আপনি যদি সতর্কতা অবলম্বন করে খেজুর খেতে পারেন তাহলে খেজুরের পুষ্টি ও গুনাগুন পাবেন।
আর যদি বেশি উপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুন পাওয়ার লোভে বেশি বেশি পরিমাণে খেজুর খান। তাহলে এর ফলাফল ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। তাই খেজুর খাওয়ার আগে অবশ্যই খেজুর খাওয়ার নিয়ম গুলো জেনে খাওয়া উচিত। শুধু খেজুরের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য এমন নয় প্রত্যেকটি খাবারের ক্ষেত্রেই এমনটা প্রযোজ্য।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া কেন জরুরি
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার প্রচলন নতুন নয়। একটা সময় যখন চিকিৎসাসেবা এতটা সহজলভ্য ছিল না, তখনও কিন্তু গর্ভবতী নারীদের খেজুর খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এর বড় কারণ হলো, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খেলে লেবার পেইন অনেকটা কম হয়।
এটি মনগড়া কোনো কথা নয়, বরং অনেকগুলো গবেষণা শেষে এমন তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকরা। গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে তা ইউটেরাসের সংবেদনশীলতা কমিয়ে তাকে শক্তিশালী করে। এতে প্রসব ব্যথা অনেকটাই কম হয়। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া অনেক উপকারী।
কেননা খেজুরে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। কারণ গর্ভের শিশু এবং গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য বিকাশের প্রয়োজন। এজন্য অবশ্যই খেজুর খাওয়া উচিত। খেজুরের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো মা ও শিশুকে সুস্থ রাখে। শিশুর বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
খেজুরে থাকা ফাইবার ও ওমেগা ফ্যাটি এসিড শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে কার্যকরী। একজন গর্ভবতী মা তার শরীর এবং শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষায় নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন।
১। গবেষণা কী বলছে
আমেরিকার ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থার পয়ত্রিশ সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ছয়টি করে খেজুর খেলে তা মা ও অনাগত শিশুর জন্য বেশ উপকারী হয়। সেইসঙ্গে সন্তান জন্ম দেওয়াও অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
২। বাড়তি শক্তি যোগ করে
সন্তান প্রসবের আগে এবং প্রসবের সময় একজন নারীর অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য প্রয়োজন পড়ে অতিরিক্ত শক্তির। খেজুরে থাকে অনেক বেশি নিউট্রিয়েন্টস। যে কারণে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খেলে গর্ভবতী মায়ের শরীরে বাড়ে শক্তির মাত্রা। সেজন্য প্রসবের সময় বাড়তি শক্তির যোগান সে সহজেই দিতে পারে।
৩। কার্বোহাইড্রেটস
খেজুরে থাকে প্রচুর কার্বোহাইড্রেটস। এছাড়াও থাকে ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ, যা শরীরে শক্তি যোগায়। এছাড়া এই ফলে গ্লুকোজও থাকে পর্যাপ্ত, যা গর্ভাবস্থায় ধরে রাখা খুব বেশি জরুরি। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খাওয়ার বিকল্প নেই।
৪। প্রসব প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করে
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এসে প্রতিদিন ৬০-৮০ গ্রাম খেজুর খেলে সার্ভিক্স মজবুত হয়। এর ফলে কৃত্রিমভাবে কিংবা ওষুধ দিয়ে প্রসব ব্যথা সৃষ্টি করার দরকার হয় না। এই প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই ঘটে থাকে।
৫। দ্রুত রক্ত উৎপাদন করে
সন্তান প্রসবের সময় শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে যায়। এর ফলে মায়ের শরীর দুর্বল হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরে নিয়ম করে খেজুর খেলে তা শরীরে দ্রুত রক্ত উৎপাদন করে। এতে মা তার হারানো শক্তি বেশ দ্রুত ফিরে পান।
লেখকের শেষ মতামত
খেজুর গর্ভবতী মায়ের শরীরের রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে। গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রচুর পরিমাণে যেসব পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয় সেগুলো নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে পাওয়া সম্ভব হয়।
এই ছিল আজকের গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে কি হয় সম্পর্কিত সকল তথ্য এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন।
আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া যাবে কি না তা জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও গগর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।