ওটস কিভাবে তৈরি করতে হয় – ওটস খাওয়ার নিয়ম

বর্তমানে ওটস একটি জনপ্রিয় খাদ্যশস্য। আমাদের দেশের ধান, গমের মতোই ওটস জমিতে চাষ করতে হয়। ওটস প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ থাকার কারণে মানুষের খাদ্য হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ওটস দেহের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। 

ওটস কিভাবে তৈরি করতে হয়

শুধু বড়দের জন্য নয় ওটস আজকাল শিশুদের ক্ষেত্রেও জনপ্রিয় খাদ্য হিসেবে পরিচিত। ওটসের তৈরি বিস্কুট, প্যানকেক শিশুদের খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। আজকাল অনেক মা ওই শিশুদের ওটসের তৈরি খাবার খাওয়াচ্ছে, কারণ ওটসের তৈরি খাবার শিশুদের কষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। 

ওটস কি

ওটস হল এক ধরনের খাদ্যশস্য যা Avena sativa নামক ঘাসের বীজ থেকে তৈরি। ওটস হল ফাইবার, প্রোটিন, বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানগুলির একটি ভালো উৎস। মূলত এটি শীত প্রধান দেশে অর্থাৎ ঠান্ডা আবহাওয়া ভালো জন্মায়।  পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এর বিভিন্ন উপকারিতার কারণেও মানুষের খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

এটি দিয়ে বিস্কুট, কেক। রুটি ইত্যাদির মত খাবার তৈরি করা হয় যা খাওয়া খুবই স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর। ধান, গমের মতো মানুষ চাষাবাদ করে থাকে। প্রায় ৪০০০ বছর আগে থেকে মানুষ এটি চাষ করে আসছে। এই খাদ্যশস্যে রয়েছে অন্য খাদ্য খাদ্যশস্যের তুলনায় উচ্চমানের পুষ্টিগুণ। গবেষণায় দেখে গেছে যে এতে আছে অতি উচ্চমাত্রায় দ্রবণীয় সহজে দ্রবণীয় বেটা-গ্লুকোন।

ওটস এর পুষ্টি উপাদান

ওটস পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ একটি শস্য।এতে প্রচুর ফাইবার ও অ্যাভিন্যান্থ্রামাইড থাকে, পুষ্টিবিদদের মতে, এটি দুনিয়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর একটি শস্য। আগে গবাদি পশু ও ঘোড়ার খাদ্য হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হতো ওটস কিন্তু বর্তমানে এটি মানুষের খাদ্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে পোল্যান্ড ও রাশিয়া ওটস চাষের জন্য বেশ সমৃদ্ধ। এর পাশাপাশি কানাডাতেও প্রচুর পরিমাণে এটি চাষ হয়। কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবারের দারুন একটি উৎস হল ওটসের তৈরি খাবার। অন্য যেকোনো খাদ্যের চেয়ে বেশি প্রোটিন ও ফ্যাট রয়েছে এই খাদ্যশস্যে।

আধা কাপ বা ৭৮ গ্রাম ওটস থেকে যে পুষ্টি উপাদান পাবেনঃ

  • ফসফরাস-৪১ শতাংশ
  • ম্যাঙ্গানিজ-১৯১ শতাংশ
  • কপার- ২৪ শতাংশ
  • আয়রন- ২০ শতাংশ
  • ম্যাগনেসিয়াম- ৩৪ শতাংশ
  • ফোলেট-১১ শতাংশ
  • জিঙ্ক ২০ শতাংশ
  • ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন -৩৯ শতাংশ
  • ভিটামিন বি৫প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড- ১০ শতাংশ
  • কার্বোহাইড্রেট- ৫১ গ্রাম
  • প্রোটিন -১৩ গ্রাম
  • ফ্যাট ৫- গ্রাম
  • ফাইবার ৮ গ্রাম

এছাড়াও রয়েছে সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬ বা পিরিডক্সিন, ভিটামিন বি৩ বা নায়াসিন ইত্যাদি এবং ক্যালরির পরিমাণ হলো ৩০৩।

ওটস কিভাবে তৈরি করতে হয়

ওজন কমাতে ওটস খাওয়ার নিয়ম, ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করেছি চলুন এখন ওটস কিভাবে তৈরি করতে হয় সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা থেকে জেনে নেই। ওটস প্রস্তুতির প্রক্রিয়া সহজ এবং এটি বিভিন্নভাবে করা যায়। ওটস তৈরির দুটি সাধারণ পদ্ধতি দেয়া হলো:

১। ক্লাসিক ওটস তৈরির পদ্ধতি

উপকরণ:

  • ১/২ কাপ কাঁচা ওটস
  • ১ কাপ পানি বা দুধ (অল্প চর্বিযুক্ত দুধ ব্যবহার করতে পারেন)
  • একটি চিমটি লবণ (ঐচ্ছিক)
  • মিষ্টি এবং অন্যান্য টপিংস (যেমন: ফল, বাদাম, মধু, দারচিনি, ইত্যাদি)

প্রস্তুতি

  • একটি ছোট প্যানে ১/২ কাপ কাঁচা ওটস এবং ১ কাপ পানি বা দুধ মেশান। আপনি পানি বা দুধের পরিমাণ স্বাদ অনুযায়ী সামঞ্জস্য করতে পারেন।
  • প্যানটি মিডিয়াম তাপে গরম করুন। মিশ্রণটি ফুটতে শুরু হলে তাপ কমিয়ে দিন।
  • মিশ্রণটি প্রায় ৫-১০ মিনিট রান্না করুন। মাঝে মাঝে নাড়ুন যেন ওটস জ্বালাপোড়া না করে।
  • রান্নার শেষে একটি চিমটি লবণ যোগ করতে পারেন যদি চাইলে। এটি স্বাদ বাড়াবে।
  • রান্না হয়ে গেলে, আপনার পছন্দমতো টপিংস যোগ করুন। ফল, বাদাম, মধু, দারচিনি বা অন্যান্য প্রিয় উপকরণ ব্যবহার করুন।
  • গরম গরম পরিবেশন করুন এবং উপভোগ করুন।

২। মাইক্রোওয়েভে ওটস তৈরির পদ্ধতি

উপকরণ:

  • ১/২ কাপ কাঁচা ওটস
  • ১ কাপ পানি বা দুধ

প্রস্তুতি

  • একটি মাইক্রোওয়েভ নিরাপদ বাটিতে ১/২ কাপ কাঁচা ওটস এবং ১ কাপ পানি বা দুধ মেশান।
  • বাটিটি মাইক্রোওয়েভে ২-৩ মিনিট রান্না করুন। রান্না হয়ে গেলে একবার ভালো করে নাড়ুন।
  • প্রয়োজনমতো টপিংস যোগ করুন এবং পরিবেশন করুন।
আরো পড়ুনঃ-  গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন - গরমে ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন

ওটসের অন্যান্য প্রকার

  • ওভারনাইট ওটস: কাঁচা ওটসকে দুধ বা পানিতে ভিজিয়ে এক রাত ফ্রিজে রাখুন। সকালে আপনার পছন্দের টপিংস যোগ করে পরিবেশন করুন।
  • বেকড ওটস: বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে ওভেনে বেক করুন। এটি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ব্রেকফাস্ট হতে পারে।

এই পদ্ধতিগুলির যেকোনোটি ব্যবহার করে আপনি দ্রুত এবং সহজে একটি পুষ্টিকর ওটস প্রস্তুত করতে পারবেন।

ওটস কি দিয়ে তৈরি হয়

ওটস একটি ধরনের শস্য যা ওট (Avena sativa) গাছের বীজ থেকে প্রস্তুত করা হয়। ওটস তৈরি করার জন্য শস্যগুলো নিম্নলিখিত ধাপে প্রক্রিয়া করা হয়:

  • কাটা: প্রথমে, ওটের শস্যগুলো সংগ্রহ করা হয়।
  • পরিষ্কার ও শেলিং: শস্যগুলো পরিষ্কার করা হয় এবং বাইরের শক্ত শেলের খোসা তোলা হয়।
  • স্টিমিং: শস্যগুলো স্টিম করা হয়, যা তাদের নরম করে এবং রান্নার জন্য প্রস্তুত করে।
  • রোলিং: স্টিম করা শস্যগুলো রোলিং মিলের মাধ্যমে চাপা বা পিষে ফ্ল্যাট করা হয়। এই ধাপে বিভিন্ন ধরনের ওটস তৈরি হয়, যেমন রোলড ওটস, স্টিল-কাট ওটস, এবং ইনস্ট্যান্ট ওটস।
  • প্যাকেজিং: প্রক্রিয়া শেষ হলে, ওটস প্যাকেজিং করা হয় এবং বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়।

এই প্রক্রিয়া অনুযায়ী, বিভিন্ন ধরনের ওটস প্রস্তুত করা হয়, যেমন স্টিল-কাট, রোলড, এবং ইনস্ট্যান্ট ওটস, যা রান্নার সময় এবং পুষ্টিগুণের পার্থক্য তৈরি করে।

ওটস খাওয়ার নিয়ম

ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি-৬, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সেলেনিয়াম। অনেকেই মনে করেন রাতের বেলায় ওটস খেলে হজমে এবং পেটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। 

১। রাতে ওটস খাওয়ার নিয়ম

ওটস খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। আপনি চাইলে রাতের বেলায় ভারী মিল হিসেবে ওটস খেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ওটস দিয়ে তৈরি খিচুড়ি অথবা ওর মিষ্টি অথবা টক দই এর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে ওটস একটি ভারী খাবার হওয়ায় সামান্য খেলেও পেট ভরে যায়। 

তাই রাতে ডিনারে পরিমিত পরিমাণে ওটস খাওয়ার চেষ্টা করুন। রাতের বেলায় প্রয়োজনের অধিক ওটস খেলে পেটে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে।

২। সকালে ওটস খাওয়ার নিয়ম

যারা বিভিন্ন রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এবং ডায়েটে ওটস রাখতে চাচ্ছেন তাদের জন্য ওটস খাওয়ার সব থেকে ভালো সময় হলো সকালবেলা। সকালবেলা ওডস খেতে হলে অবশ্যই আগের রাতে ভিজিয়ে রেখে দিন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সবচেয়ে উপকারী ওটসগুলো হলো: স্টিল কাট ওটস, রোল্ড ওটস (ওল্ড ফ্যাশন্ড নামে পরিচিত), ইন্সট্যান্ট ওটস ইত্যাদি। 

তবে যারা ওজন কমানোর জন্য সকালবেলা ওটস খেতে যাচ্ছেন তারা নিয়মিত খান এবং রান্না করা ওটস এড়িয়ে চলুন। চলুন এক নজরে দেখে নেই সকালে ওটস খাওয়ার নিয়ম গুলো কি কি?

  • ওটসে প্রচুর পরিমাণে ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’ পাওয়া যায়। এটি হজম শক্তি উন্নত করার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই সারারাত ওরস ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা মধু যোগ করে ওটস খেয়ে নিন একবাটি। এতে করে আপনার সারাদিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
  • ওটস এর সাথে বিভিন্ন রকমের ফল যেমন: আপেল, কলা, আম ইত্যাদি যোগ করলে ওটস এর টেস্ট বেড়ে যায়। শিশুদেরকে ওটস খাওয়াতে চাইলে ও এই ফলগুলো যোগ করতে পারেন। আপনি চাইলে যে কোন সিজনাল ফল ওটসে যোগ করে খেতে পারেন।
  • ওটস এর সাথে বিভিন্ন রকমের বাদাম যোগ করে খেতে পারেন। এতে করে পুষ্টি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ওটস এবং বাদাম শক্তির একটি ভালো উৎস।
  • ওটস এর সাথে বিভিন্ন রকম সবজি যোগ করে খিচুড়ি তৈরি করে খান। বিভিন্ন রকম সবজির যোগ করলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাবেন। যাও হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করবে।
  • সকাল বেলার নাস্তা হিসেবে ওটস এর সাথে পরিমাণ মতো দুধ যোগ করে উপরে এক চিমটি চিয়া সিড ছড়িয়ে খেতে পারেন।
  • ভেজানো ওটসে কোকো পাউডার যোগ করে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে টেস্ট কয়েকগুন বেড়ে যায়।
  • সকাল বেলা পার্ফেক্ট নাস্তা হিসেবে ওটস এর সাথে এক মুঠো ড্রাই ফ্রুট মিশিয়ে খেতে পারে।

উপরিউক্ত সবগুলো প্রক্রিয়াতেই সকালবেলা ওটস খাওয়া যেতে পারে। আপনি আপনার রুচি অথবা টেস্ট অনুযায়ী যেকোনো একটি রেসিপি পছন্দ করুন এবং সেই অনুযায়ী নিয়মিত সকালে জলখাবার হিসেবে ডায়েট রুটিনে ওটস রাখুন।

ওটস খাওয়ার উপকারিতা

ওটস স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে পরিচিত, যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি উচ্চ ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন, এবং খনিজ সমৃদ্ধ, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন দিক থেকে উপকার করে। তবে, যেকোনো খাবারের মতোই, ওটসেরও কিছু অপকারিতা থাকতে পারে। ওটস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের অংশটি পড়ুন।

  • উচ্চমাত্রার ফাইবার, বিশেষ করে বিটা-গ্লুকান, যা হজমে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
  • দীর্ঘ সময় পেট ভর্তি রাখে এবং অতিরিক্ত স্ন্যাকিং কমাতে সহায়ক।
  • বিটা-গ্লুকান কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, এবং অন্যান্য খনিজ সরবরাহ করে।
  • অ্যাভেনানথ্রামাইডস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • প্রোটিন এবং ভিটামিন চুলের জন্য উপকারী।
  • ফাইবার হজম প্রক্রিয়া সুস্থ রাখতে সহায়ক।
  • প্রোটিন পেশীর উন্নয়নে সাহায্য করে।
  • তন্তু ও পুষ্টি উপাদান মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • মেটাবলিজম উন্নত করতে সহায়ক।
  • স্থির শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • অ্যালার্জির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক।
  • ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমায়।
  • কম পরিমাণে ক্যালোরি এবং উচ্চ পুষ্টি উপাদান।
আরো পড়ুনঃ-  মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম - মুলতানি মাটি কি

প্রতিদিন কত গ্রাম ওটস খাওয়া উচিত

ওজন কমাতে ওটস খাওয়ার নিয়ম, ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করেছি চলুন এখন প্রতিদিন কত গ্রাম ওটস খাওয়া উচিত? সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা থেকে জেনে নেই। প্রতিদিন ওটসের পরিমাণ আপনার স্বাস্থ্য লক্ষ্য এবং পুষ্টির চাহিদার ওপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পরিমাণের কিছু নির্দেশনা নিম্নরূপ:

  • সাধারণ ব্যবহারের জন্য: প্রতিদিন ৫০-৭৫ গ্রাম কাঁচা ওটস খাওয়া উপযুক্ত, যা রান্নার পর প্রায় ১ কাপ হয়। এটি একটি স্বাস্থ্যকর প্রাতঃরাশ হিসেবে কাজ করে।
  • ওজন কমানোর জন্য: ৪০-৫০ গ্রাম কাঁচা ওটস পর্যাপ্ত, যা রান্নার পর প্রায় ৩/৪ কাপ হয়। এটি কম ক্যালোরি এবং বেশি ফাইবারযুক্ত।
  • মাসল বিল্ডিং বা উচ্চ প্রোটিন ডায়েটের জন্য: প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ৭০-১০০ গ্রাম কাঁচা ওটস খাওয়া যেতে পারে। এটি বেশি ক্যালোরি এবং প্রোটিন সরবরাহ করে।
  • বাচ্চাদের জন্য: ২০-৩০ গ্রাম কাঁচা ওটস যথেষ্ট, যা রান্নার পর প্রায় ১/২ কাপ হয়।

বিশেষ স্বাস্থ্য লক্ষ্য বা খাদ্য পরিকল্পনার জন্য, একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সঠিক পরিমাণ নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে।

বাচ্চাদের জন্য ওটস এর উপকারিতা

ওটস একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য ওটসের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য ওটসকে সুপার ফুড হিসেবে গণ্য করা হয়। বাচ্চাদের জন্য ওটসের উপকারিতাগুলো হল-

  • ৬ মাস বয়স থেকে শিশুদের ওটস খেতে দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • ওটস খাওয়ার ফলে শিশুরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার হাত থেকে রক্ষা মুক্তি পায়।
  • হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
  • ওটস খেলে শিশুদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • বাচ্চাদের ওটস ক্ষতি করে দিক খাওয়াল মস্তিষ্কের দ্রুত বিকাশ ঘটে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে বাচ্চারা মুক্তি পায়,
  • শিশুদের হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে,
  • ওটস খেলে শিশুদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়,
  • শিশুদের বিকাশ নিশ্চিত হয়।
  • ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, এবং জিঙ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
  • স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট হিসেবে কাজ করে যা দিনের শুরুতে সঠিক পুষ্টি দেয়।
  • নিয়মিত ওটস খাওয়া শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়ক।
  • বাচ্চাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা উন্নত করতে সহায়ক।

ওটস বাচ্চাদের জন্য একটি মূল্যবান খাদ্য হতে পারে, তবে এটি শিশুদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আগে তাদের বিশেষ পছন্দ এবং খাদ্য সংবেদনশীলতা বিবেচনায় রাখা উচিত।

বাচ্চাদের ওটস খাওয়ার ক্ষতিকর দিক

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনেক বাবা-মা-ই স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার কারণে বাচ্চাদের ওটস খাইয়ে থাকেন। একেবারে শিশু বয়সেও ওদের ওটস খাওয়ানোর অভ্যাস দেখা যায়। তবে এই অভ্যাস একেবারে স্বাস্থ্যকর নয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরের জন্য ওটস অনেক উপকারী।

কিন্তু শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য এটি একেবারে উপকারী নয়। শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ওটস। বিশেষজ্ঞরা আরো জানিয়েছেন যে, একেবারে ছোট বাচ্চাদের ওটস খাওয়ানো উচিত নয়। এর ফলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে ওদের স্বাস্থ্যে।

বাচ্চাদের ওটস রান্নার নিয়ম

ওটস খুবই স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর খাবার। বড়দের কাছে যেমন ওটস পছন্দের খাবার তেমনি বাচ্চারাও ওটসের তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার খুব বেশি পছন্দ করে। ওটসের মধ্যে উচ্চ মানের প্রোটিন ও ফাইবার রয়েছে, পাশাপাশি ক্ষতিকার স্যাচুরেটেড ফ্যাট কোলেস্টেরল ও সোডিয়াম কম পরিমাণে থাকে।

এছাড়াও এগুলি ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, জিংক ও তামা হিসেবে ক্ষুদ্রকণায় সমৃদ্ধ, যা শিশুদের একটি বৃত্তাকার পুষ্টিকর প্রোফাইল দেয়।ওটসও অত্যন্ত বহুমুখী। একাধিক রান্নায় এগুলি বিভিন্ন উপকরণের সাথে মিশ্রিত করা যায়।

আরো পড়ুনঃ-  রুই মাছের বৈশিষ্ট্য - রুই মাছের উপকারিতা জানুন

তাছাড়া ওটসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ওটস বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। ওটসের তৈরি কয়েকটি রান্নার নিয়ম নিচে দেওয়া হল-

১। ভেজি ওটমিল মিশ্রণঃ

  • প্রস্তাবিত বয়স: ৬ মাস
  • প্রস্তুতির সময়: ১০-২০ মিনিট

উপকরণঃ

  • ৫ টেবিল চামচ রোলড ওটস
  • ১ কাপ দুধ
  • এক চামচ ভার্জিন অলিভ অয়েল
  • গাজর, পালং শাক, সয়াবিন আগে থেকে সিদ্ধ করা সবজিগুলি বাচ্চা ৫ চামচ।

প্রস্তুত প্রণালীঃ 

একটি সসপ্যানে সমস্ত সবজিগুলির সাথে তেল মিশিয়ে নিন এবং বাদামী না হওয়া পর্যন্ত অল্প আছে রান্না করুন। প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত দুধে ওটসগুলি রান্না করুন, তারপরে সবজিগুলিতে মেশান এবং একটি মিক্সারে ঢালুন। আপনি মসৃণ পিউরি না বা পর্যন্ত মিশ্রিত করুন।

২। আম ওটস পোরিসঃ

  • প্রস্তাবিত বয়স: ৬ মাস
  • প্রস্তুতির সময়: ১০ মিনিট

উপকরণঃ

  • রোলড ওটস ৩ টেবিল চামচ
  • ৫ টেবিল চামচ পাকা আমের শাঁস
  • ১ কাপ দুধ
  • ১ চামচ মধু

প্রস্তুত প্রণালী

ওটস দুধে নরম হওয়া পর্যন্ত অল্প আছে রান্না করুন। এগুলিকে একটি পাত্রে স্থানান্তর করুন এবং আমও মধু মিশিয়ে নিন। তারপর ভালোভাবে নেড়ে ঘন করে নিন।

৩। কলা সিরিয়াল পোরিজ

  • প্রস্তাবিত বয়স: ৬ মাস
  • প্রস্তুতির সময়: ১০-২০ মিনিট

উপকরণ

  • ওটস ৩ চামচ
  • ১ কাপ পানি
  • ম্যাশ করা কলা ৫চামুচ
  • ১ চামচ মধু

প্রস্তুত প্রণালী

প্রথমে ওটসের মধ্যে পানি দিয়ে হালকা আছে অনবরত নেড়ে রান্না করে নিন। চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ রেখে দিন। শেষে কলার পেস্ট এবং মধু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।

৪। ওটস প্যানকেক

  • প্রস্তাবিত বয়স: ১০ মাস
  • প্রস্তুতির সময়: ২৫ মিনিট

উপকরণঃ

  • দুধ ১ কাপ
  • অলিভ অয়েল বা সয়াবিন তেল এক চামচ
  • ২ চামচ মধু
  • ১ চামচ ভেনিলা এসেন্স
  • ১ চিমটি লবণ
  • ২ টি ডিম
  • গুঁড়ো রোলড ওটস ২ কাপ
  • ১ চামুচ বেকিং পাউডার

প্রস্তুত প্রণালীঃ

ওটস লবণ এবং বেকিং পাউডার দিয়ে মিশ্রিত করুন। মিশ্রণের মধ্যে দুধ, অলিভ অয়েল, ভ্যানিলা এসেন্স, ডিম ও মধু যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে ফেটিয়ে নিন । প্যানের মধ্যে অলিভ অয়েল দিয়ে গ্রিজ করে পেন গরম করে নিন। বাদামি রং হওয়া পর্যন্ত রান্না হতে, দিন তারপরে এটিকে ঘুরিয়ে পুনরাবৃত্তি করুন। এটি মধু বা ঘি যোগে পরিবেশন করতে পারেন।

বাচ্চাদের ওটস এর দাম

বাজারে শিশুদের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির ওটস পাওয়া যায়। আর কোম্পানি ভেদে ওটসের দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়। নিচে বিভিন্ন কোম্পানির ওটস দাম দেওয়া হল-

  • হেলদি ব্রেকফাস্ট কুইকার ওটস-৫০০ গ্রাম ৫১৪ টাকা
  • কাউহেড বেবি ওটস ইনস্ট্যান্ট অর্গানিক রোলড ওটস-৫০০ গ্রাম ৫৩৫ টাকা
  • টুইনফিশ প্রিমিয়াম ওটস চকো-৪০০ গ্রাম ৪৫০ টাকা

বাচ্চাদের জন্য কোন ওটস ভালো

বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওটস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সব ওটস শিশুদের শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। তাই আজকে আমরা জানবো শিশুদের জন্য কোন ভালো। ওটসের মধ্যে স্টীল কাট এবং রোলড ওটস সবচেয়ে হেলদি কিন্তু স্টিল কাট ওটস রান্না করতে অনেক সময় লাগে আর এটি শিশুরা সহজে খেতে পারে না।

 তাই শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো অপশন হচ্ছে খাওয়ানো। রোলড ওটসটি ইনস্ট্যান্ট ওটসের মত সব জায়গায় পাওয়া যায় না এবং দামও বেশি। বাইরে দেশে শিশুদের মূলত রোলড ওটস অথবা স্টিল কাট ওটস দেওয়া হয়। কারণ ইনস্ট্যান্ট ওটসটি অনেক রকম প্রসেসের কারণে নিউট্রিশন হারিয়ে ফেলে।

ওটস শিশুদের শরীরে পরিপূর্ণ পুষ্টির যোগান দেয়। এটি শিশুদের শরীরে খনিজ এবং ভিটামিনের ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে। ওটস শিশুদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর যোগান দেয় এবং দ্রুত হজম হতে সাহায্য করে। তাছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম ওটসে ৬৯.৬৫ গ্রাম শর্করা এবং ৯ গ্রাম ফাইবার থাকে।

প্রতি ১০০ গ্রাম ওটসে প্রোটিনের পরিমাণ ১৩.০৭ গ্রাম এবং ফ্যাটের পরিমাণ ৮ গ্রাম। বাচ্চাদের জন্য সবথেকে ভালো ওটস এর নাম হল:

  • Organic baby oats,
  • Cow head organic rolled oats,
  • Quaker White oats,

লেখকের শেষ মতামত

ওটস প্রচুর পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ একটি খাদ্যশস্য। ভাত বা রুটির বিকল্প হিসেবেও ওটস ব্যবহৃত হয়।ওটসের বহু গুণাগুণ থাকলেও অনেক সময় ওটসের কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তবে বড়দের জন্য পুষ্টিকর হলেও শিশুদের জন্য অনেক সময় ক্ষতিকর।

তাই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ওটস কিভাবে তৈরি করতে হয়, ওটস খাওয়ার নিয়ম, শিশুদের জন্য কোন ওটস ভালো, ওটসের উপাদান, ওটসের ক্ষতিকর দিকসহ আরো অন্যান্য দিক নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছি।

আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে ওটস কিভাবে তৈরি করতে হয় তা জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও ওটস কিভাবে তৈরি করতে হয় সেই সম্পর্কে জানতে পারবে। 

Leave a Comment