সবার বুদ্ধিমত্তা সমান হয় না। কেউ কেউ স্বাভাবিকভাবে বুদ্ধিমান হয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং কিছু মানুষ অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যায়। কিছু অভ্যাস রয়েছে যদি আমরা সেগুলোকে আমাদের জীবনযাপনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তাহলে বুদ্ধিমত্তার স্তর বেড়ে যেতে পারে।
বিজ্ঞান বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জানাচ্ছে, প্রতিটি মানুষ তাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে পারে! কিছু দক্ষতাপূর্ণ কাজ শেখার মাধ্যমে এবং সেই সকল কাজ প্রতিনিয়ত চর্চা ও রপ্ত করার মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে খুব চমকপ্রদভাবে।
উপস্থিত বুদ্ধি কি
উপস্থিত বুদ্ধি বলতে সাধারণত কোনও ব্যক্তির তাৎক্ষণিক ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে বোঝায়। এটি এমন একটি মানসিক দক্ষতা যা ব্যক্তিকে যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত ও সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করে। এই ধারণাটি প্রায়ই বুদ্ধিমত্তা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার সাথে যুক্ত।
উপস্থিত বুদ্ধি বৃদ্ধির উপায়
আমাদের মোটামুটি সকলেরই কমবেশি বুদ্ধি রয়েছে। কিন্তু উপস্থিত বুদ্ধি খুব কম সংখ্যক জনের মধ্যেই রয়েছে। আবার যে কয়েকজনের মধ্যে উপস্থিত বুদ্ধি রয়েছে সেটা আবার কার্যকারিতা পায় না। এর কারণ হলো আপনি উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগ করতে জানেন না।
উপস্থিত বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য
- দ্রুত চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ: উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিরা দ্রুত চিন্তা করে এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।
- পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানো: তারা নতুন বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।
- সৃজনশীলতা: সমস্যা সমাধানে তারা সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করে।
- আত্মবিশ্বাস: তাদের মধ্যে উচ্চ মাত্রার আত্মবিশ্বাস থাকে, যা তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
- অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ব্যবহার: তারা পূর্বের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানকে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে সক্ষম।
উপস্থিত বুদ্ধির উদাহরণ
- ক্রীড়াবিদ: একজন ফুটবল খেলোয়াড় মাঠে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিপক্ষের কৌশল ভেঙে দেয়।
- নেতা বা ব্যবস্থাপক: একজন নেতা সংকটের সময় দ্রুত ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
- শিল্পী বা লেখক: তারা মুহূর্তের অনুপ্রেরণায় সৃজনশীল কাজ করে।
উপস্থিত বুদ্ধি ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু বুদ্ধিমত্তা নয়, বরং পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানো এবং দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।
এখন আপনাদের সঙ্গে উপস্থিত বুদ্ধি বাড়ানোর যে উপায়গুলো আলোচনা করব সেগুলো পরীক্ষিত। গবেষণায় দেখা গেছে, উপস্থিত বুদ্ধি বাড়াতে হলে এগুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে।
তো চলুন জেনে আসি কি সেই কার্যকরী উপায় যেগুলো মানুষের উপস্থিত বুদ্ধি বাড়াতে কাজে লাগে। মানুষের উপস্থিত বুদ্ধি বাড়ানোর উপায় গুলো নিম্নরূপঃ
১। উপস্থিত বুদ্ধি বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করা।
২। ব্রেনের রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ ঘন্টা ঘুম দরকার।
৩। উপস্থিত বুদ্ধি বাড়াতে হলে হাইজেনিক খাবার খাওয়াটাও জরুরি। কেননা উপস্থিত বুদ্ধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে হাইজেনিক খাবার ওতপ্রতভাবে জড়িত রয়েছে।
৪। হাঁটলে বা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন সঠিক থাকে তাই প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা হাঁটা চলা করতে হবে। এটি আপনার উপস্থিত বুদ্ধি বৃদ্ধির জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে।
৫। প্রতিদিন বিভিন্ন জটিল বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করতে হবে এতে করে আপনার উপস্থিত বুদ্ধি বাড়বে। মূলত প্রথমদিকে বিষয়টি কঠিন মনে হলেও তা ধীরে ধীরে সহজ হয়ে যাবে।
৬। আবার আপনি যদি উপস্থিত বুদ্ধি বাড়াতে চান তাহলে আপনার মস্তিষ্ককে সবসময়ই কোন না কোন কাজে লাগাতে হবে। এতে করে যেই উপকার তা পাবেন সেটা হল যে মস্তিষ্ক অলস থাকলে বুদ্ধি বাড়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
৭। উপস্থিত বুদ্ধি বাড়ানোর কিছু গেমস রয়েছে যেগুলো খেলা্র মাধ্যমে আপনার বুদ্ধি আগের তুলনায় উন্নত হবে। এর মধ্যে অন্যতম একটি গেম হলো দাবা খেলা। এটি আমাদের উপস্থিত বুদ্ধি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
৮। উপস্থিত বুদ্ধি বৃদ্ধি করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ধূমপান এবং মধ্যপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ এগুলো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যার ফলে আপনার বুদ্ধি বাড়ার পরিবর্তে দিন দিন কমে যায়।
৯। আমাদের বুদ্ধি বাড়ানোর আরেকটি অন্যতম উপায় হল রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি সারাদিন কি কি কাজ করেছেন যেগুলো একবার মনে করার চেষ্টা করা। এতে আপনার বুদ্ধি আরও বাড়তে থাকবে।
১০। প্রতিদিন নতুন কিছু শিখার চেষ্টা করা। এটি বুদ্ধি বাড়ানোর আরেকটি পদক্ষেপ হতে পারে। কেননা আপনি যদি প্রতিদিন নতুন কিছু শিখার চেষ্টা ক্রএন তাহলে আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং উপস্থিত বুদ্ধিও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
১১। ব্যস্ততা হতে পারে নিজেকে বুদ্ধিমান করে তোলার আরেকটি উপায়। যতটা সম্ভব হয় আপনি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুন। এর পাশাপাশি নতুন নতুন কাজ করার চেষ্টা করুন। মোটকথা আপনি যত নতুন কাজ করবেন খেয়াল করে দেখবেন আপনি ততই বেশি শিখবেন এবং আপনার বুদ্ধিও তত বেশি বেড়ে যাবে।
কোন গ্রুপের রক্তের মানুষ বেশি বুদ্ধিমান হয়
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া পরিচালিত এক গবেষণায় জানা গেছে, B+ রক্তের গ্রুপের মানুষদের মস্তিষ্ক অন্যান্য রক্তের গ্রুপের তুলনায় তীক্ষ্ণ হয়। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, এই ব্লাড গ্রুপের ব্যক্তিদের চিন্তা করার ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা এবং স্মৃতিশক্তি তুলনামূলকভাবে বেশি কার্যকর।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, B+ রক্তের গ্রুপের ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে পেরিটোনিয়াল এবং টেম্পোরাল লোব অন্যান্যদের তুলনায় বেশি সক্রিয় থাকে। ফলে, তাঁরা যেকোনো সমস্যার সমাধান দ্রুত খুঁজে পেতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, B+ রক্তের গ্রুপের মানুষের রক্ত সঞ্চালন অন্যান্য রক্তের গ্রুপের তুলনায় উন্নত। যখন মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়, তখন মস্তিষ্কের কোষগুলি আরও সক্রিয় হয়, যা তাঁদের চিন্তার গতি এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। এর ফলে তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে তথ্য মনে রাখতে পারেন এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, এই রক্তের গ্রুপের ব্যক্তিরা যে কোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে পারেন এবং দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। তাঁদের সৃজনশীলতাও অন্যান্য রক্তের গ্রুপের তুলনায় বেশি, যা নতুন আবিষ্কারে সহায়ক হতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন, B+ ব্লাড গ্রুপের মানুষের আইকিউ তুলনামূলকভাবে বেশি, যা তাঁদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
একদল গবেষকদের মতামত হচ্ছে, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ এবং উন্নত রক্ত সঞ্চালন এর কারণে B+ রক্তের গ্রুপের মানুষদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা অন্যান্য রক্তের গ্রুপের চেয়ে অধিকতর হয়ে থাকে। যার ফলে, যেকোন ধরণের সমস্যার সমাধান তারা খুব সহজেই বের করতে পারে বিধায় তাঁদের বুদ্ধিমত্তা অন্যদের তুলনায় বেশি তীক্ষ্ণ হয়।
বুদ্ধি বিকাশের উপায়
বুদ্ধি বিকাশ একটি জটিল ও বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া, যা শুধু বুদ্ধিমত্তা (IQ) নয়, বরং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (EQ), সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং সামাজিক দক্ষতাকেও অন্তর্ভুক্ত করে। বুদ্ধি বিকাশের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল রয়েছে, যা ব্যক্তিকে তার মানসিক, শারীরিক, এবং সামাজিক দক্ষতাগুলো উন্নত করতে সাহায্য করে। নিচে বুদ্ধি বিকাশের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. নিয়মিত পড়াশোনা ও জ্ঞান অর্জন করা
বুদ্ধি বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো নিয়মিত পড়াশোনা করা এবং নতুন জ্ঞান অর্জন করা। বই পড়া, গবেষণা করা, এবং বিভিন্ন বিষয়ে জানা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- বই পড়া: বই পড়ার মাধ্যমে নতুন ধারণা, তথ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা যায়। এটি মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা: শুধু একটি বিষয়ে নয়, বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন মস্তিষ্ককে বহুমুখী চিন্তা করতে সাহায্য করে।
- গবেষণা ও অনুসন্ধান করা: নতুন তথ্য অনুসন্ধান এবং গবেষণা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে এবং জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়।
২. মনোযোগ ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা
মনোযোগ এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বুদ্ধি বিকাশের অন্যতম প্রধান উপাদান।
- মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা: একটি কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি মস্তিষ্কের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
- পর্যবেক্ষণ করা: চারপাশের পরিবেশ, মানুষের আচরণ, এবং ঘটনাগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। এটি বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- মেডিটেশন ও মাইন্ডফুলনেস: মেডিটেশন এবং মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন মনোযোগ ও মানসিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।
৩. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি করা
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বুদ্ধি বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
- যৌক্তিক চিন্তা করা: যুক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- সৃজনশীল সমাধান করা: সমস্যার সমাধানে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
- চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা: কঠিন সমস্যাগুলো এড়িয়ে না গিয়ে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করুন। এটি মস্তিষ্কের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
৪. সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করা
সৃজনশীলতা বুদ্ধি বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
- নতুন ধারণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা: নতুন ধারণা নিয়ে চিন্তা করুন এবং সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন।
- শিল্প ও সংস্কৃতির চর্চা করা: শিল্প, সংগীত, সাহিত্য, এবং অন্যান্য সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ করুন।
- মস্তিষ্কের ব্যায়াম করা: পাজল, ক্রসওয়ার্ড, এবং অন্যান্য মস্তিষ্কের খেলা খেলুন।
৫. আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (EQ) বিকাশ করা
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (Emotional Intelligence) ব্যক্তির সামাজিক ও আবেগীয় দক্ষতাকে নির্দেশ করে।
- আত্ম-সচেতনতা হওয়া: নিজের আবেগ ও অনুভূতিগুলো বুঝতে শিখুন।
- অন্যের অনুভূতি বুঝা: অন্যের আবেগ ও অনুভূতিকে সম্মান করুন এবং সেগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন।
- আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা: আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করুন।
৬. শারীরিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি
শারীরিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
- নিয়মিত ব্যায়াম: ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
- সুষম খাদ্য: মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন, এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম: ঘুম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
৭. সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা
সামাজিক দক্ষতা বুদ্ধি বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
- যোগাযোগ দক্ষতা: কার্যকরী যোগাযোগ দক্ষতা গড়ে তুলুন।
- দলগত কাজ: দলগত কাজে অংশগ্রহণ করুন এবং অন্যের সাথে সহযোগিতা করুন।
- সমাজসেবা: সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করুন। এটি সামাজিক বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করে।
৮. নতুন ভাষা শেখা
নতুন ভাষা শেখা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ভাষা শেখার মাধ্যমে মস্তিষ্কের ব্যায়াম করা: নতুন ভাষা শেখা মস্তিষ্কের নতুন নিউরাল পথ তৈরি করে।
- সংস্কৃতি বোঝা: নতুন ভাষা শেখার মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যায়।
৯. নেতিবাচক চিন্তা এড়ানো
নেতিবাচক চিন্তা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে।
- ইতিবাচক চিন্তা করা: ইতিবাচক চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলুন।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা: মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করুন।
- আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা: নিজের ক্ষমতায় বিশ্বাস রাখুন এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন।
১০. অভিজ্ঞতা অর্জন করা
অভিজ্ঞতা বুদ্ধি বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
- ভ্রমণ: নতুন স্থান ভ্রমণ এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা।
- নতুন অভিজ্ঞতা: নতুন কাজ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করুন।
- ভুল থেকে শেখা: ভুলগুলো থেকে শিখুন এবং সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করুন।
বুদ্ধি বিকাশ একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা নিয়মিত চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নত করা যায়। উপরের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা, এবং সামাজিক দক্ষতাগুলো উন্নত করতে পারেন। এটি শুধু ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, পেশাদার জীবনেও সাফল্য অর্জনে সাহায্য করবে।
বুদ্ধিমান মানুষের লক্ষণ
একবার তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ও বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘বুদ্ধিমত্তার সত্যিকারের লক্ষণ জ্ঞান নয় বরং কল্পনাশক্তি।’ যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় বেজবল খেলোয়াড় মাইকেল জর্ডান বলেছিলেন, ‘প্রতিভা খেলা জিততে সহায়তা করে কিন্তু দলবদ্ধ কাজ ও বুদ্ধিমত্তা মানুষকে চ্যাম্পিয়ন করে তোলে।’ মহান এই দুই ব্যক্তি যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তাদের থেকে বুদ্ধিমত্তার এই সংজ্ঞাকে খুব হালকা মনে হতে পারে।
তবে বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা নিয়ে নানা জন নানা কথা বলেছেন। তবে কয়েকজন শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী এমনকি ইন্টারনেট ঘেঁটে বুদ্ধিমান মানুষের সাধারণ পাঁচটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য তুলে আনা হয়েছে। পাঠকদের সুবিধার্থে এগুলো উল্লেখ করা হলো:
১। দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা কিছু মানুষ দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন, আবার কেউ কেউ খুব সকালে কাজের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। তবে মনোবিজ্ঞানীরা এই দুই প্রকৃতির মানুষের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছেন। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা মানুষগুলোই বেশি বুদ্ধিমান হন।
সাইকোলজি টুডে সাময়িকী মার্কিন তরুণদের মধ্যে এক গবেষণা পরিচালনা করে। সেই গবেষণা অনুযায়ী দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা তরুণরাই সবচাইতে বেশি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলো।
২। ১৬-এর আগে সম্পর্ক নয় যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যারোলাইনার গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যাদের বুদ্ধিমত্তা বা আইকিউ ৭০-এর চেয়ে কম এবং ১১০-এর চেয়ে বেশি ছিল, তাঁরা সবাই কুমার বা কুমারী (ভার্জিন)। গবেষণায় ৩৯ দশমিক ৮ কিশোর পাওয়া যায় যারা গড় বুদ্ধিমত্তার অধিকারী এবং সম্পর্কে জড়িয়েছিল। এছাড়া ২৯ দশমিক ৯ কিশোরের বুদ্ধিমত্তার স্তর মেলে ১১০।
৩। ধূমপান করে না ধূমপানের ক্ষতিকর দিকের কথা বলা হয়েছে অনেক। তবে, ধূমপান যে সত্যিকার অর্থেই আপনার বুদ্ধিমত্তা লোপ করে সে সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে গবেষণায়। ইসরায়েলের একটি হাসপাতাল প্রায় ২০ হাজার প্রাপ্ত বয়স্ক তরুণের মধ্যে গবেষণা করে দেখা গেছে, যে যত বেশি ধূমপান করে, তার বুদ্ধি তত কম। এমনকি যারা দিনে পুরো এক প্যাকেট সিগারেট খান, তারা অধূমপায়ীদের তুলনায় কম বুদ্ধিমান হন।
৪। রাজনৈতিকভাবে উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও ধর্মে অনীহা কেন রাজনৈতিকভাবে উদার দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধর্মের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণকারী ব্যক্তিরাই বেশি বুদ্ধিমান সেবিষয়ে গবেষণা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, যে যত বুদ্ধিমান তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক উদারতা তত বেশি। অনেক ক্ষেত্রে ধর্মের প্রতি অনীহা থাকা ব্যক্তিদেরও বুদ্ধিমান হতে দেখা যায়।
৫। কঠিন পরিণাম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নিয়তি আর ভাগ্যের মধ্যে একটা পার্থক্য থাকে। বুদ্ধিমানেরা এই পার্থক্যটুকু জানেন। ধরা যাক, একজন মানুষ ৯৮ বছর বয়সে একটি লটারি জিতলেন। আর এরপর দিনই তিনি মারা গেলেন। এটা তাঁর নিয়তি না। বরং খারাপ ভাগ্য। বুদ্ধিমানেরা এই পার্থক্যটুকু জানেন।
অক্সফোর্ড অভিধানে বলা হয়েছে, ‘মানুষ কোনো কাজ বা ঘটনায় যা আশা করে যখন তাঁর একদম বিপরীত ফল পায় তখনই তাঁকে ভাগ্যের পরিহাস বলে।’
জ্ঞান বুদ্ধি বৃদ্ধির দোয়া
জ্ঞান মানুষের অনন্য সম্পদ। এটা আল্লাহপ্রদত্ত অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। যার জ্ঞান নেই, তার কোনো আলাদা মূল্য নেই। এই কারণে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভুত কল্যাণ প্রাপ্ত হয়। আর উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানসম্পন্ন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৯)
জ্ঞান বৃদ্ধির অনেক দোয়া ও আমল কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এসব আমল করলে ও দোয়া পড়লে— আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান বৃদ্ধি করে দেন। কল্যাণকর জ্ঞান ও ইলম দান করেন। তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত বেশি বেশি করে এসব দোয়া পড়া ও আমল করা।
নিম্নে পাঠকদের সুবিধার্থে সহজ দুইটি দোয়া উল্লেখ করা হলো।
উপকারী জ্ঞান লাভের দোয়া
ِاللَّهُمَّ انْفَعْنِي بِمَا عَلَّمْتَنِي، وَعَلِّمْنِي مَا يَنْفَعُنِي، وَزِدْنِي عِلْمًا وأعُوْذُ بِاللَّهِ مِنْ حَالِ أهْلِ النَّار
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মানফা-নি বিমা আল্লামতানি, ওয়া আল্লিমনি মা ইয়ানফাউনি ওয়া জিদনি ইলমা, ওয়া আউজুবিল্লাহি মিন হালি আহলিন নারি।
অর্থ : হে মহান আল্লাহ! আপনি আমাকে যা শিখিয়েছেন, তা দিয়ে আমাকে উপকৃত করেন, আমার জন্য আপনি যা উপকারী মনে করেন, তা আমাকে শিখিয়ে দিন এবং আমার ইলম (জ্ঞান) বাড়িয়ে দিন। এবং আমি আপনার কাছে জাহান্নামিদের অবস্থা থেকে হেফাজতের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করি।
উপকার: আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. এই দোয়া করতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৯; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫১; ইবনু আবি শায়বা, হাদিস : ১০/২৮১)
জ্ঞান বৃদ্ধি হওয়ার দোয়া
اللَّهُمَّ فَقِّهْنِي فِي الدِّينِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ফাক্কিহনি ফিদ দ্বিন
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে দ্বিনের জ্ঞান দান করুন।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, একবার নবী করীম (সা.) শৌচাগারে গেলেন, আর আমি তখন তার জন্য অজুর পানি কাছে রাখলাম। তারপর তিনি বের হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কে রেখেছে? আমি রেখেছি জানানো হলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহুম্মা ফাক্কিহহু ফিদ দ্বিন।’ অর্থ : ‘ইয়া মাবুদ! আপনি দ্বিনের জ্ঞান তাকে দান করুন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৩)
উল্লেখ্য, অন্য কারও জন্য দোয়া করার ক্ষেত্রে হাদিসে উল্লিখিত শব্দে দোয়া করতে হবে। আর নিজের জন্য করতে চাইলে ওপরের মতো করে পড়তে পারবে।মহান আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকের আমল সমূহ কবুল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখকের শেষ মতামত
এই ছিল আজকের উপস্থিত বুদ্ধি বৃদ্ধির উপায় এবং বুদ্ধি বিকাশের উপায় সম্পর্কিত সকল তথ্য সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে উপস্থিত বুদ্ধি বৃদ্ধির উপায় জানতে পেরেছেন।
এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও উপস্থিত বুদ্ধি বৃদ্ধির উপায় এবং বুদ্ধি বিকাশের উপায় সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।