আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – আনারস খাওয়ার সঠিক সময়

পাইন গাছের শক্ত, শুষ্ক ফল অর্থাৎ মোচক/মোচা (Cone) এর সঙ্গে ইউরোপবাসি আনারসের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিল। সে কারণে দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপের অভিযাত্রীরা প্রথম এই ফল দেখে নাম রেখেছিল পাইনাপল (পাইন + আপেল)। সেটা ষোড়শ  শতকের কথা। তখনকার অপরিচিত ফল আনারস এরপর খুব অল্প সময়েই  সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বলা যায় এই ফলটি এখন বিশ্বের প্রধান ফলগুলোর একটি। এখন প্রায় সব দেশেই আনারসের চাষ হয়। 

আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আনারস কাটতে দক্ষতার প্রয়োজন হয়। সুন্দর করে কাটা আনারস খাওয়ার তৃপ্তিই আলাদা। পাশাপাশি অনেকে আধপাকা বা পাকা আনারস রান্না করেও খান।মাংস বা মাছের সঙ্গে আনারস অতুলনীয়। কেবল সালাদ খেতে চাইলেও আনারসের জুড়ি নেই। আনারসের সালাদ যেমন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ তেমনি  সুস্বাদুও। এ ছাড়া টাটকা আনারসের জুস  শরীরের ক্লান্তি  দূর করে ঝরঝরে করে তোলে। 

আপনিও হয়তো আনারস খাচ্ছেন কিন্তু জানেন না আনারসের উপকারি ও আপকার সম্পর্কে । আনারস আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি। চিন্তার কোনই কারন নেই আজকের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। শুধু কি তাই। এ পোস্টে আমরা আরো জানাবো সকালে খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়। তো চলুন শুরু করা যাক-

আনারস খাওয়ার উপকারিতা

আনারস সুস্বাদু একটি মৌসুমী ফল। কিন্তু আনারস নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, আনারস এবং দুধ একসঙ্গে খেলে বিষক্রিয়া হয়। এটা কুসংস্কার ছাড়া কিছুই নয়। আনারস একটি অ্যাসিটিক এবং টক জাতীয় ফল। দুধের মধ্যে যেকোনো টক জাতীয় জিনিস দিলে তা ছানা হয়ে যায় বা ফেটে যেতে পারে। 

ফলে হতে পারে বদহজম, পেট ফাঁপা বা পেট খারাপের মতো সমস্যা। তবে এতে বিষক্রিয়ার কোন আশঙ্কা নেই। আনারসের অনেক উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। আনারসের উপকারিতাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

১। পুষ্টির অভাব পূরণ করেঃ পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল হচ্ছে আনারস। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। এসব অপরিহার্য উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২। হজম শক্তিকে উন্নত করেঃ আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে ও আনারসের গুরুত্ব অনেক। আনারসে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম থাকে তা হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই বদহজম বা হজমজনিত যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আনারস খাওয়া উচিত।

৩। ভাইরাসজনিত ঠান্ডা ও কাশি প্রতিরোধ করেঃ আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় তা ভাইরাসজনিত ঠান্ডা ও কাশি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া জ্বর, জন্ডিস প্রতিরোধে আনারস উপকারী। এছাড়া নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যাথা এবং ব্রংকাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসেবে আনারসের রস খেতে পারেন।

৪। শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ আনারসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে। এছাড়া এতে কোন ফ্যাট না থাকায় পরিণত পরিমাণে আনারস খেলে বা আনারসের জুস পান করলে তা শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। আনারস তাই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের পথ্য হতে পারে। দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা- ধমনীর মধ্য দিয়ে সারা শরীর সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে।

৫। দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়ঃ আনারসে ক্যালসিয়াম থাকায় তা দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। নিয়মিত আনারস খেলে দাঁতের জীবাণুর সংক্রমণ কম হয়। ফলে দাঁত ঠিক থাকে। এছাড়া মাড়িতে কোন সমস্যা সমাধান করতে আনারস বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬। চোখের যত্নে আনারসঃ আনারস চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়ার রোগ “ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন” রোগটি হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে থাকে। আনারসে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০% পর্যন্ত কমে যায়। ফলে সুস্থ থাকে আমাদের চোখ।

৭। ত্বকের যত্নে আনারসঃ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি। যা আমাদের শক্তির যোগান দেয়। এতে থাকা প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে। ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়। এছাড়া দেহে তৈলাক্ত ত্বকসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে।

৮। হাড়ের সমস্যাজনিত রোগ প্রতিরোধ করতেঃ আনারসে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকে। যা হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এতে থাকা ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে শক্তিশালী ও মজবুত। তাই খাবার তালিকা নিয়মিত পরিমাণ আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যা যেকোনো রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

আরো পড়ুনঃ-  রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় কখন - কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত

৯। কৃমিনাশক হিসেবেঃ কৃমিনাশক হিসেবে আনারসের রস ভালো কাজ করে। নিয়মিত আনারস খেলে কয়েকদিনের মধ্যে কৃমির উৎপাত বন্ধ হয়ে যায়। কৃমি দূর করতে সকালবেলায় ঘুম থেকে জেগে আনারস খাওয়া উচিত।

১০। ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেঃ ফ্রি রেডিক্যাল বা মুক্তমূলক মানবদেহের কোষের উপর বিরূপ ক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে। দেশি আনারসে আছে উচ্চ মাত্রায় পানিতে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং পানিতে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা দেহকে ফ্রি রেডিকেল থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। ফলে ক্যান্সার রোগের মত মারাত্মক রোগের বাসা বাঁধতে বাঁধাগ্রস্থ করে।

১১। ব্যথা থেকে মুক্তি পেতেঃ শরীরের কোন অংশে ব্যথা হলে আনারস থেকে উপকার পেতে পারেন। আনারস ফলের রস লাগালে মুখের ঘা বা যেকোনো ঘা সেরে যায়।

১২। জন্ডিস দূর করতেঃ পাকা আনারসের ১০ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম রসের ২ গ্রাম হঁলুদের গুঁড়া মেশান। এতে ৩গ্রাম চিনি মিশিয়ে খান। এটি জন্ডিস রোগে বেশ উপকার দিবে।

১৩। ডায়াবেটিকস রোগীদের উপকার করেঃ আনারসের রসের উপকারিতা দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আনারসের ১০০ মিলিগ্রাম রসে তিল, হরদ, আমলকি এবং জামুনের বীজ প্রতিটি ১০ গ্রাম শুকিয়ে গেলে গুঁড়ো করে নিন। এইগুলো ৩ গ্রাম সকাল সন্ধ্যা সেবন করুন। এটি ডায়াবেটিসের খুবই উপকারী। এই সময়ে সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।

১৪। কুষ্ঠ রোগ দূর করতেঃ কুষ্ঠরোগেও আনারসের রসের উপকারিতা পাওয়া যায়। তাজা আনারস ফলের রস লাগালে কুষ্ঠ ও চর্মরোগে উপকার পাওয়া সম্ভব।

১৫। জ্বরের চিকিৎসায়ঃ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনেকেই জ্বরে ভূগে থাকেন। আনারসের ঔষধি গুণ এই ব্যথা উপশম এর সাহায্য করে। আনারসের রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে জ্বর দ্রুত সেরে যায়।

খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে সকাল বেলা আনারস পানি খেলে শরীরের উপকার হয়। আনারসে আছে এনজাইম ব্রোমিলিন ও আন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি। দুটো উপাদানই রোগ নিরাময় বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা, দুটোই সমানভাবে রয়েছে। তাই চলুন জেনে নিই, খালি পেটে আনারস খেলে কি উপকার পাওয়া যায় না অপকার হয়।

আনারস সকালে খালি পেটে পানি তৈরি করা খুবই সহজ। আনারসের খোসা ফেলে একে ছোট ছোট টুকরা করে কাটুন। একটি গ্লাসের মধ্যে পানি নিয়ে কয়েক টুকরা আনারসের পানিসহ আনারস সকালে খালি পেটে খেয়ে নিন। অবশ্য আপনার শরীর যদি অন্য কোন সমস্যা থাকে, তাহলে এই পানি না খাওয়াই ভালো। তাই যেকোন খাবার নিয়মিত খাবার আগে শরীরের অবস্থা বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তা খাবেন।

প্রদাহের সাথে লড়াই করেঃ ব্রোমিলিনের মধ্যে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী উপাদান। ব্রোমিলিন শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। প্রদাহ রোধ করে নিয়মিত আনারস খাওয়া আরথ্রাইটিসের ব্যথা কমায়।

লিভার ও অন্ত্রঃ সকালে খালি পেটে আনারস খেলে, ব্রোমিলিন আন্টিপ্যারিসটিক রয়েছে। আনারস নিয়মিত খেলে লিভার ও অন্ত্রের উপকার করে।

ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করেঃ আনারসের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম। এটি আমাদের শরীরকে শক্তিশালী রাখে। এটি ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।

দাঁত ভালো রাখেঃ আনারসের মধ্যে থাকা ব্রোমিলিন দাঁতকে ভালো রাখতে কাজ করে থাকে।

দৃষ্টিশক্তি ভালো করেঃ আনারসের মধ্যে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। এটি চোখের জন্য ভালো। প্রতিদিন আনারস খাওয়া বয়সজনিত চোখের সমস্যা কমাতে কাজ করে থাকে। এছাড়াও ব্রোমিলিন বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে।

আনারস খাওয়ার অপকারিতা

এলার্জির আক্রমণঃ আনারস খাওয়ার ফলে অনেক নারী ও পুরুষের দেহে এলার্জি দেখা দিতে পারে। খাওয়ার ফলে এলার্জির উপসর্গ হলে ঠোঁট ফুলে যায় ও গলায় সুরসুরি বোধ হয়। তাই আনারস খাওয়ার আগে তা কেটে লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে নেয়া উচিত। যাতে এভাবে ধুয়ে নিয়ে খেলে কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

রক্তের চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়ঃ আনারসে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি। আনারসে দুটি চিনি উপাদান সুক্রোজ ও ফুক্টোজ বা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু দেহের ক্ষতি এটি খাওয়ার উপর নির্ভর করে এবং আনারসের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহ রক্তের চিনর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

কাঁচা আনারস মুখ ও গলার জন্য ক্ষতিকরঃ কাঁচা আনারসে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে এসিডিটি যা আমাদের মুখের ভেতর ও গলার শ্লেষ্মা তৈরি করে। এই ফলটি খাওয়ার পর মাঝে মাঝে অনেকের পেটে ব্যথা হতে পারে।

দাঁতের জন্য ক্ষতিকরঃ আনারস আমাদের দাঁতের জন্য উপকার করলেও আবার অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। যাদের দাঁতে কেভিটিস ও জিঞ্জিভাইভিটিস এ সমস্যা আছে, তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো।

আনারস খাওয়ার নিয়ম 

অনেকে জানেন না আনারস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।আনারাস শরীরের জন্য অনেক উপকারী হওয়ায় আপনার জানা দরকার আনারস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। তাই এখনো আমরা আপনাকে এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানাবো। আনারস খাওয়ার নিয়মগুলি  নিম্নরূপ 

আরো পড়ুনঃ-  গরমে ত্বকের যত্নে কিছু কার্যকরী টিপস

আমরা যদি আনারসের সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই উপযুক্ত আনারস নির্বাচন করতে হবে। এজন্য সর্বপ্রথম  একটি রসপূর্ণ ও পরিপক্ক আনারস বেছে নিতে হবে। 

স্বাস্থ্যকর পরিমাণ খেতে হবেঃ আনারস আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী হলেও,পরিমাণের বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তাই আনারস স্বাস্থ্যকর  পরিমাণ খাওয়া উচিত। সাধারণত 1 থেকে 2 কাপ আনারস পর্যাপ্ত হতে পার। 

বিশুদ্ধ পানি দ্বারা পরিষ্কার করুনঃ আনারস খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই  বিশুদ্ধ পানি দ্বারা পরিষ্কার করা উচিত। এতে আনারসে থাকা বিভিন্ন ধুলোবালির অবশিষ্ট  কমে যায়।

চিনি বা মিষ্টির পরিমাণঃ আনারসে চিনির পরিমাণ থাকায়  অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি যোগ করা হলে তা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 

সকালে খালি পেটে আনারস ফল ও জুস খাওয়া ভালো। যারা প্রতিদিন সকালে নিয়মিত ব্যায়াম  করেন, শুরুর পূর্বে এবং পরে  আনারস খাওয়া খুবই ভালো। তবে আনারস  রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে,যে কারণে রাতে ঘুমানোর আগে আনারস খেলে  তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি ঘুমের ব্যাঘাত  হতে পারে। 

তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, কোন প্রধান খাবার এবং কোন ফল খাওয়ার মাঝে অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিটের ব্যবধান থাকা দরকার। কারণ আনারসে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায়, ফাইবার হজম হতে সময় বেশি লাগে বিধায়  ভোজনের সমস্যা হতে পারে। 

যারা আনারস ফল হিসেবে খাওয়ার চেয়ে জুস করে খেতে পছন্দ করেন,জুস তৈরি করার সময় চিনি মেশানো থেকে বিরত থাকতে হবে। 

আনারস খাওয়ার সঠিক সময়

আনারস খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি আনারস খাওয়ার সঠিক সময় হল সকাল বেলা তবে বাসি পেটে খেলে উপকার বেশি হয় তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা ক্রিয়েট করতে পারে তাই কিছু খাবার পরেই আনারস খাওয়া উচিত যেমন যাদের বুক জ্বালা করার সমস্যা রয়েছে তাদের বাসে পেটে কখনোই খাওয়া উচিত নয় নয়তো পাকস্থলীর সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে এটি মূলত সঠিক সময় হল সকাল এবং বিকেল দুই সময়েই খেতে পারেন এই দুইটি সময় হলো সঠিক সময় বলে গণ্য করা যায় তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলতে হবে যেমন যাদের অ্যালার্জি রয়েছে এবং যাদের আনারস খেলে সমস্যা ক্রিয়েট হয় তাদেরকে এর থেকে বিরত থাকতে হবে।

আনারস খেলে কি এলার্জি হয়

অনেকেই রয়েছেন যাদের আনারস খেলে গলা চুলকায়, গলা খুসখুস করতে থাকে। যে কারণে অনেকে আনারস খেতে চান না। তাই আনারস স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অনেকে এই ফল খেতে পছন্দ করেন না। অনেকে মনে করেন তাদের আনারসে এলার্জি রয়েছে তাই সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু তা নয়। আনারস কাটার সময় এবং খাওয়ার আগে ছোট একটা টোটকা মানলে দূর হতে পারে এ সমস্যা।

আনারসে কেটে কয়েক ঘন্টা নুন জলে ডুবিয়ে রাখুন। দু’চামচ লবণ দিয়ে জলে গুলে নিন। এই চলে আনারসে টুকরাগুলো কয়েক ঘণ্টা ডুবে রাখুন। তারপর ওই আনারসটা খান। দেখবেন এবার আর গলা চুলকাচ্ছে না বা অস্বস্তি হচ্ছে না। আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। ঠিক তেমনি অপকারিতার মধ্যে এলার্জি অন্যতম।

কারণ আনারস খেলে গলা চুলকানি প্রদাহ দেখা দিতে শুরু করে ফলের রাজা না হলেও আনারসের গুনাগুন অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে আনারসে জুড়ি মেলা ভার আনারসের মধ্যে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আনারসের এলার্জির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল স্থানীয় চুলকানি এবং আমবাত।

খুব কমই আনারসের এলার্জির ফলে অ্যানাফিলাক্সিস এর মত আরো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়। অ্যানাফিলাক্সিসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শ্বাস নিতে অসুবিধা, দ্রুত স্পন্দন, চেতনা হ্রাস এবং রক্তচাপ কমে যাওয়ার মত সমস্যা। এজন্য আনারস খাওয়ার পর ঘন ঘন সংবেদন থেকে মুক্তি পেতে, খাওয়ার পরপরে গরম পানি দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন।

এটি প্রোটিজ এনজাইম ব্রোমেলাইনকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে। যা সংবেদন সৃষ্টি করে। দুধ পান করা বা দই খাওয়াও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়

আমাদের দেশের অনেকে মনে করেন, গর্ভবতী মা আনারস খেতে পারবে না। কারণ এতে গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। এতে করে গর্ভপাতের কোন প্রমাণ বিজ্ঞানীরা হাতে এই মুহূর্তে পায়নি। অন্যান্য অনেক ফলের মত এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং অনেক বেশি ফাইবার থাকার গর্ভবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

আনারসে ব্রোমিলিন নামের এক ধরনের উপাদান রয়েছে। যা পূর্বের গর্ভপাতের জন্য ব্যবহার করা হতো, কিন্তু এটি আনারসে এর পরিমাণ অনেক অনেক কম। ১০টি আনারস যদি কেউ একেবারে খায় তাদের যে পরিমাণ ব্রোমিলিন গ্রহণ করবেন, তাতে গর্ভপাতের ঝুঁকি মাত্র ৩০ শতাংশ। এখন বলুন ৩/৪ টুকরোর বেশি আনারস কেউ খেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ-  কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ

মজার বিষয় হলো আনারস ছাড়াও কমলা, আমড়া এবং টক জাতীয় ফলে ব্রোমিলিনের উপস্থিতি আনারসের চেয়ে বেশি। গর্ভাবস্থায় আপেল, কমলা, আম, আনারস তরমুজ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এমনিভাবে পাকা পেঁপে খেতেও কোন সমস্যা নাই। তবে কাঁচা পেঁপে ও আধা পাকা পেঁপে ল্যাটেক্স প্রোডাক্ট থাকায় গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে।

আনারস খেলে কি গ্যাস হয়

অন্যান্য ফলের চেয়ে আনারসের স্বাদ আলাদা। এই কারণে মানুষ আনারস খুবই পছন্দ করে খায়। আনারস এমন একটি ফল যা ক্ষুধা বাড়ায়, ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তপিত্ত রোগে উপকার করে। এতে জ্বর কমায়, কম প্রসাবের সমস্যায় উপকার দিতে পারে। পেটের গ্যাস, ব্যথা এসিডিটি ও শারীরিক দুর্বলতা দূর করে। এর পাকা ফল রক্তপাতজনিত রোগ দূর করতে পারে নিমিষে।

এসিডিটি সমস্যা আনারসের রসের উপকারিতা নিতে পারেন। পাকা আনারসের ১০ মিলিগ্রাম রসে ভাজা হিং এর ১২৫মিলিগ্রাম মিশিয়ে নিন। এটি ২৫০ মিলিগ্রাম শিলা লবণ এবং ২৫০ মিলিগ্রাম আদার রস যোগ করুন। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এটি পান করলে এসিডিটি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পাকা আনারস ফলের ১০০ মিলিগ্রাম রসে ৬৫ মিলিগ্রাম সেরা পটাশিয়াম নাইট্রাইড।

২৫০ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম পিপলি এবং হঁলুদের গুঁড়া মেশান। এটি খেলে এসিডিটির সমস্যা সেরে যাবে। ফলের রস ২৫ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম এখানে উপকারিতা এবং রোগের প্রতিকারের কার্যকারিতা খুব সহজ কথায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। যাতে আনারস খেলে পণ্য উপকার পাওয়া যায়। তবে রোগে আনারস ব্যবহার করার আগে যেকোন আয়ুর্বেদিক ঔষধ সেবন করতে হবে।

আনারস খেলে তাই বলতে পারব, গ্যাস হয় না। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে অবশ্যই আপনার শরীরের ওপর প্রভাব পড়বে এবং গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

আনারস খাওয়ার পর কি খাওয়া উচিত নয়

আমরা সকলেই জানি যে আনারসের সঙ্গে দুধ খেলে বিষক্রিয়া হতে পারে তাই অনেকেই আনারস খাওয়ার পর বা দুধ খাওয়ার পর আনারস খাই না অথবা আনারসের পর দুধ খায় তবে এটির কারণে বিষক্রিয়া হয়ে মৃত্যুবরণও করতে পারে তাই এ খাদ্যগুলো একত্রে খায় না অনেকেই।

 তবে এটা একসঙ্গে না খাওয়াই ভালো কারণ এই দুইটি উপাদান একত্রে খাইলে পেট খারাপ এবং পেটে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে তাই এ খাবারটি একত্রে না খাওয়াই ভালো তবে এটি কোন বিষক্রিয়া করে না বা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না তবে কোন ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে তাই এই দুইটি উপাদান একত্রে না হওয়াটাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় তাই এই দুইটি খাবার একত্রে না খাওয়ায় উচিত। 

হার্টের রোগী আনারস খেতে পারবে কি?

হ্যাঁ, হার্টের রোগীরা সাধারণত আনারস খেতে পারেন, তবে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি:

  • ১. পরিমিত পরিমাণে: আনারসে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে, তাই অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো।
  • ২. রক্ত পাতলা করার ওষুধ: যদি রোগী ওয়ারফারিনের মতো রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তবে আনারস খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, কারণ আনারস রক্ত পাতলাকারী প্রভাব রাখতে পারে।
  • ৩. পটাশিয়ামের মাত্রা: আনারসে পটাশিয়াম থাকে, যা হার্টের জন্য উপকারী, তবে কিডনি সমস্যা থাকলে পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

সর্বদা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকা নির্ধারণ করা উচিত।

আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয়

যেকোনো সময় আনারস খাওয়া যায়। ঋতুস্রাবের সময় এটি জরায়ুর প্রাচীর ফলাতে সাহায্য করে। এতে থাকার রাসায়নিক উপাদান গুলো পিরিয়ড চক্রের গতি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এদিকে গর্ভাবস্থায় প্রথম কয়েক মাসের সময় আনারস খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ এই রাসায়নিক উপাদানগুলি গর্ভপাত ঘটাতেও পারে। আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা সমানভাবে রয়েছে। 

তাই খাওয়ার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে খাওয়া উচিত। আনারসে ব্রোমেলাইন নামক প্রোটিওলাইটিক রসে ও আনারসের কাণ্ডে পাওয়া যায়। তাই চলুন জেনে নেয়, আনারস খেলে পিরিয়ডের কেমন প্রভাব পড়ে সে সম্পর্কে।আনারস খাওয়ার সময় পিরিয়ডের প্রভাব-

  • আপনার পেশি শিথিল করে। ফলে এভাবে মাসিকের বাঁধা প্রতিরোধ করে।
  • আপনার পিরিয়ড প্ররোচিত করে।
  • পিরিয়ডের প্রথম কয়েকদিন রক্ত প্রবাহ বাড়ায় কারণ ব্রোমেলেন জরায়ুর আস্তরণকে নরম করে এবং রক্ত ক্ষরণের সাহায্য করে।

লেখকের শেষ মতামত

পরিশেষে বলতে চাই আপনি যেই খাবারই খান না কেন পরিমিত পরিমানে খাওয়ার চেষ্টা করবেন এবং অবশ্যই সঠিক নিয়ম অনুযায়ী খাবেন তাহলে দেখবেন সেই খাবারে বেশ ভালো উপকার পাবেন। এই ছিল আজকের  আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত সকল তথ্য। এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকি।

তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে  আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও  আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।

Leave a Comment