হরলিক্স এর উপকারিতা ও অপকারিতা – হরলিক্স খেলে কি হয়

আপনি কি জানেন, সারাবিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ হরলিক্স পান করে। কিন্তু এই হরলিক্স আসলেই কি কাজ করে? নাকি কেবল বিজ্ঞাপনের মোহে আমাদের বোকা বানায়? 

হরলিক্স এর উপকারিতা ও অপকারিতা

অনেকেই মনে করেন, হরলিক্স খেলে শরীর শক্তিশালী হয়। পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি বাড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতারও উন্নতি হয়। আবার অনেকে বলেন, হরলিক্সে বেশি চিনি থাকে। যা ওজন বাড়াতে পারে।

কিন্তু আসল সত্যিটা কি? হরলিক্স কি আসলেই কাজে দেয়? প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে জেনে নিতে হবে হরলিক্স এর উপকারিতা ও অপকারিতা। তা নিয়েই থাকছে আজকের এই লেখাটি। যেখানে আমরা উপকারিতা ও অপকারিতার পাশাপাশি কত বছর বয়স থেকে খেতে হবে, কিভাবে বানাতে হবে সব তথ্যই রেখেছি। আশা করি ভালো লাগবে। 

হরলিক্স কি?

হরলিক্স এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কো বিস্তারিত আলোচনা করার পূর্বে চলুন জেনে নিই এই হরলিক্সের পরিচিতি। হরলিক্স হলো এক ধরণের মাল্টিগ্রেইন হেলথ ড্রিংক। আর এই ড্রিংক তৈরি হয় মূলত গম, বার্লি, দুধ এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলের সাহায্যে। আর এই ড্রিংক দুধের সাথে মিশিয়ে পান করতে হয়। যা শরীরের পুষ্টি ঘাটতি পূরণে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। যদিও হরলিক্সে প্রায় ১৫-২০% চিনি থাকে। পাশাপাশি এতে থাকে: 

  • শক্তি ও ফাইবার সরবরাহকারী গম এবং বার্লি
  • হাড় ও দাঁত মজবুত মজবুতে ক্যালসিয়াম
  • শিশুদের ব্রেন ডেভেলপমেন্টে সহায়ক DHA
  • ভিটামিন C, D, আয়রন এবং জিঙ্ক পেশি গঠনে সাহায্যকারী প্রোটিন

হরলিক্স খাওয়ার বয়স

এবার হরলিক্স খাওয়ার বয়সের ব্যাপারে। মনে রাখবেন বয়সভেদে এই সময়ে কিন্তু তারতম্য থাকে। কারণ সব বয়সের জন্য এক ধরনের হরলিক্স কখনোই উপযুক্ত নয়। যার কারণে বাজারে বিভিন্ন বয়স অনুযায়ী আলাদা আলাদা হরলিক্স পাওয়া যায়। যেমন:

  • ৩-৬ বছরের বাচ্চার জন্য Baby Horlicks
  • ৭-১২ বছরের বাচ্চার জন্য Junior Horlicks
  • ১২+ বছরের বাচ্চার জন্য Horlicks Classic
  • নারীদের ক্যালসিয়াম ও আয়রনের ঘাটতি পূরণে Horlicks Women’s Plus
  • সবশেষে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য Horlicks Lite

বলে রাখা ভালো ৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের কিন্তু কোনোভাবেই হরলিক্স দেওয়া যাবে না। আর হ্যাঁ! উপরের সবকটি হরলিক্সই কিন্তু বাংলাদেশে পাওয়া যাবে। 

আরো পড়ুনঃ-  পালং শাক খাওয়ার নিয়ম - পালং শাকের উপকারিতা

হরলিক্স কখন খেতে হয়?

হরলিক্স খাওয়ার বয়স যেমন আলাদা আলাদা, ঠিক তেমনই হরলিক্স খাওয়ার সময়ও আলাদা। অনেকে মনে করেন, যে কোনো সময় হরলিক্স পান করা যায়। যা একেবারেই ভুল ধারণা। কিছু নির্দিষ্ট সময় আছে, যখন হরলিক্স পান করলে দেখবেন অনেক দ্রুত উপকৃত হচ্ছেন। 

যেমন সকালে নাস্তার সময় হরলিক্স পান করলে দেখবেন সারাদিনের এনার্জি শরীরে চলে এসেছে। রাতে ঘুমানোর আগে পান করতে পারলে দেখবেন গভীর এবং আরামের ঘুম হচ্ছে। পাশাপাশি এক্সারসাইজের পরও হরলিক্স পান করা যেতে পারে। এতে করে দেখবেন শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে। 

তবে হ্যাঁ! কখনোই এই হরলিক্স খালি পেটে খাবেন না! নতুবা শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

হরলিক্স খেলে কি হয়

এবার আমি সরাসরি পয়েন্টে৷ হরলিক্স কিন্তু ভালো দিক খারাপ দিক দুদিক নিয়েই ড্রিংকস ওয়ার্ল্ডে নিজের প্রতিনিধিত্ব করছে। ভালো দিকটা জানলে একদিকে যেমন আপনার নিয়মিত এই হরলিক্স পান করার অভ্যাস সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে ঠিক তেমনি অপরকারিতা সম্পর্কে আইডিয়া রাখলে স্বাস্থ্যঝুঁকিও এড়িয়ে চলা যাবে। চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে হরলিক্স এর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিই। 

হরলিক্স এর উপকারিতা

হাড় ও দাঁত মজবুত করে: হরলিক্স এর উপকারিতার পয়েন্টগুলিতে সবচেয়ে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় এই হাড় ও দাঁত মজবুত করার বিষয়টি। হরলিক্সে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন D থাকে। যার কারণে নিয়মিত হরলিক্স পানে হাড় ও দাঁত যথেষ্ট মজবুত এবং রোগমুক্ত থাকে। 

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং দাঁত ক্ষয় প্রতিরোধ করে। বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ও বয়স্কদের হাড়ের ক্ষয়রোধে কাজে আসে এই ক্যালসিয়াম। তবে হ্যাঁ! এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত চিনি মেশানো হরলিক্স এড়িয়ে চলতে হবে। 

ব্রেন ডেভেলপমেন্টে সাহায্য করে: যাদের ব্রেন দূর্বল, পড়াশোনা মনে থাকে না, বারবার গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ভুলে যান তারা হরলিক্সে থাকা DHA (Docosahexaenoic Acid) এবং ভিটামিন B12 এর সাহায্য নিতে পারেন। বলে রাখা ভালো DHA হলো এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড৷ মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সহায়তা করতে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। 

অন্যদিকে ভিটামিন B12 আমাদের ব্রেইনের নার্ভ সিগন্যালিং ঠিক রাখতে সাহায্য করে। যার দরুন আপনার মানসিক অস্থিরতা অনেকটাই কমে আসবে। আমরা সবাই জানি ছোট থেকে সঠিক পুষ্টি গ্রহণ না করলে মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আর এক্ষেত্রে সেই অভাব দূরীকরণে আপনিও বাচ্চার প্রতিদিনকার খাবার রুটিনে রাখতে পারেন এই হরলিক্স। 

আরো পড়ুনঃ-  পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার উপকারিতা - পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কি

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: হরলিক্স এর উপকারিতা হিসাবে যে পয়েন্টটিকে একেবারেই এড়িয়ে চলা যায় না সেই পয়েন্টটি হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি। হরলিক্সে রয়েছে ভিটামিন C, D, আয়রন ও জিঙ্ক। আর এসব পুষ্টি উপাদান শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করবে। 

বিশেষ করে ভিটামিন C আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করবে। যা শরীর থেকে ক্ষতিকর ফ্রি-র‍্যাডিক্যাল প্রতিরোধ করে এবং ইনফেকশন কমাবে। শুধু কি তাই? এর পাশাপাশি ভিটামিন D আপনার রোগ প্রতিরোধী কোষের কার্যকারিতা বাড়িয়ে শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। 

শক্তি বাড়ায়: হরলিক্স মাল্টিগ্রেইন উপাদান সমৃদ্ধ ড্রিংকস। গম, বার্লি ও দুধের নির্যাসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী পুষ্টি উপাদানের সাহায্য তৈরি করা হয় হরলিক্স। আর এসব উপাদান ধীরে ধীরে আপনার দেশে শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। যা আপনাকে দীর্ঘক্ষণ কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করবে। 

বিশেষ করে যারা নিয়মিত ভারী কাজ করেন এবং দেহে প্রচুর শক্তি দরকার তাদের উচিত নিয়মিত হরলিক্স পান করা। বিশেষ করে সকালের নাস্তার সময় হরলিক্স খেলে দিনভর দেহে প্রচুর শক্তি পাওয়া যায়। 

হজমে সহায়ক: হরলিক্স এর উপকারিতা হিসাবে সবশেষে যে পয়েন্টটি আসে সেটি হলো হজমশক্তি বৃদ্ধি। গবেষণা বলছে, হরলিক্সে থাকা ডায়েটারি ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এই ফাইবার মূলত পানির সঙ্গে মিশে লিভারের কার্যক্রমকে সক্রিয় রাখে। 

যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে যা যাদের ওয়াশরুমে অনেক সময় নষ্ট হয় তাদের উচিত হরলিক্স খাওয়ার নিয়ম মেনে নিয়মিত হরলিক্স পান করা। এতে করে খুব অল্প সময়ে গ্যাস, বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে। 

তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত হরলিক্স খেলে কিন্তু দেহে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট এবং চিনি জমে যাবে। এই পরিস্থিতি আবার আপনাকে বদ হজমের মতো সমস্যায় ভোগাবে।

হরলিক্স এর অপকারিতা

সুস্থ থাকতে এবং দ্রুত ফল পেতে কিন্তু হরলিক্স এর উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই জানা জরুরি। এতে করে আপনার শরীর হরলিক্স নেবার উপযুক্ত কিনা, কতটুকু নেওয়া উচিত সবকিছুই বেরিয়ে আসবে। যাইহোক! হরলিক্সের ক্ষতিকর দিকগুলো হলো: 

  • হরলিক্সে অতিরিক্ত অর্থ্যাৎ প্রায় ১৫-২০% চিনি থাকে
  • এই ড্রিংকস ব্যাক্তির ডায়াবেটিস ও ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে
  • অতিরিক্ত খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে যায়
  • খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে
  • ডায়াবেটিস বা স্থূলতার সমস্যা থাকলে জটিলতা বেড়ে যেতে পারে
  • হরলিক্সের অতিরিক্ত কৃত্রিম ফ্লেভার শরীরে হরমোনাল সমস্যা তৈরি করতে পারে
আরো পড়ুনঃ-  আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ছোটদের ও বড়দের হরলিক্স খাওয়ার নিয়ম

হরলিক্স এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তো জানলেন! যদিও এই জানা-ই যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি আপনাকে জানতে হবে হরলিক্স খাওয়ার নিয়ম। এক্ষেত্রে ছোট এবং বড়দের জন্যে আলাদা আলাদা নিয়ম মানতে হবে। যেমন:

ছোটদের হরলিক্স খাওয়ার নিয়ম: ছোটদের হরলিক্স খাওয়ার নিয়ম নিয়ম হিসাবে শুরুতে বয়সের বিষয়টা ক্লিয়ার করে নিতে হবে। ৩-১২ বছরের শিশু থাকলে তাদের নিয়মিত ১-২ চা চামচ হরলিক্স ১ কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে দিতে পারেন। আর কিশোর-কিশোরীদের জন্য অর্থ্যাৎ যাদের বয়স ১৩-১৮ বছর তাদের জন্য দরকার ২-৩ চা চামচ হরলিক্স ১ কাপ দুধে মেশানো ড্রিংকস! 

বড়দের হরলিক্স খাওয়ার নিয়ম: এবার আসি বড়দের হরলিক্স খাওয়ার নিয়মের ব্যাপারে। আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের বেশি হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে ৩-৪ চা চামচ হরলিক্স গরম দুধ বা পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে হবে। তবে হ্যাঁ! খুব বেশি হরলিক্স পান করবেন না! নতুবা হরলিক্সে থাকা অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমা হতে পারে।

লেখকের শেষ মতামত

আশা করি হরলিক্স এর উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় দিক মাথায় রেখে তবেই হরলিক্স পান করবেন। এনার্জি বুস্টার হিসাবে কিন্তু হরলিক্স ভালোই কাজ করে। তবে অবশ্যই নিয়ম মেনে খেতে হবে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। 

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

হরলিক্স কীভাবে খেতে হয়?

হরলিক্স খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো দুধ বা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে তারপর পান করা। ১-৩ চা চামচ হরলিক্স এক কাপ দুধে মিশিয়ে খেতে পারেন। আর ভালো রেজাল্ট পেতে এই ড্রিংক সকালে নাস্তার সময় বা রাতে ঘুমানোর আগে ট্রাই করতে পারেন। 

নরমাল পানিতে হরলিক্স খাওয়া যাবে কি?

হ্যাঁ যাবে! নরমাল পানিতে হরলিক্স খাওয়াতে কোনো ভুল নেই। তবে এতে ভালো স্বাদ ও পুষ্টিগুণ মিস করতে পারেন। তাছাড়া অনেকের দুধ হজমে সমস্যা হয়। তাদের জন্য গরম বা কুসুম গরম পানিতে হরলিক্স মিশিয়ে পান করাটা জরুরি। 

খালি পেটে হরলিক্স খাওয়া যায় কি?

একেবারেই না! খালি পেটে হরলিক্স খেলে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া খালি পেটে হরলিক্স চিনি পড়লে দেহের রক্তে শর্করার মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং সব ধরণের জটিলতা এড়াতে হরলিক্স খাওয়ার আগে কিছু খাবার খেয়ে নিতে পারেন। যাতে অ্যাসিডিটির কোনো সমস্যা না হয়।

Leave a Comment